somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ আজ নিকিতার মন খারাপ !

১৪ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে নিকিতার মন খারাপ । যদিও মন খারাপের খুব একটা কারন নেই তবুও মন খারাপ । সকাল বেলা মন ঠিকই ছিল । এমন কি যখন স্কুলে গেল লাল ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে তকনও নিকিতার মনটা ভাল ছিল । কিন্তু স্কুল থেকে ফেরার পথে নিকিতার মুখ একদম ভার ।

নিকিতার মা রেহেনা পারভিন মেয়ের মুখ ভার নিয়ে একটু চিন্তিত হলেন । নিকিতার বাবা সোবানুল হক মেয়ের মুখ ভার দেখলে খুব রাগ করেন । তখন তার মাথা ঠিক থাকে না । তার একটাই কথা । তিনি সব কিছু করছেন মেয়ের মুখের হাসির জন্য । সেই মেয়ের মুখই যদি ভার থাকে তাহলে এতো পরিশ্রম করে টাকা পয়সা উপার্জন করার মানে কি ? সোবানুল সাহেব বুঝতে চান না যে টাকা থাকলেই কেবল মেয়েদের মন ভাল করা যায় না । তাছাড়া এই বয়সের মেয়েদের মন কারন ছাড়া খারাপ থাকে !

গাড়ির ভিতর নিকিতা অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল । গাড়িটা অনেক্ষন ধরেই জ্যামে আটকে আছে । রেহেনা মেয়েকে ডাক দিলেন !
-মা মনি ?
-হুম !
-মন খারাপ ?
-উহু !
-তাহলে মুখ ভার কেন ?
-ভার না তো !
-মিথ্যা বলবা না ! আমার দিকে তাকাও । আমার দিকে তাকিয়ে বল !
নিকিতা রেহেনার দিকে ফিরে তাকালো না । জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েই রইলো !

রেহানা নিশ্চিত মেয়ের মন খারাপ । রেহানা মনে করার চেষ্টা করলো সকাল বেলা কিছু হয়েছে নাকি ?
কিছু মনে করতে পারলেন না । সকাল বেলা সব কিছু ঠিকই ছিল । এমন কি যখন মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়েছে তখনও মেয়ের মন ভাল ছিল । তাহলে ?

সারাটা পথ নিকিতা মুখ ভার করেই রইলো । কোন কথা বলল না । রেহানা নিশ্চিত স্কুলেই কিছু একটা হয়েছে । কারো সাথে ঝগড়া হয়েছে ?
তার মেয়ে এমনি তেই খুব লক্ষি ! কারো সাথে ঝগড়া করবে এটা ঠিক তার বিশ্বাস হয় না ।
তাহলে ?

বাসায় এসে তিনি নিকিতার ক্লাসমেইট সাদিয়াকে ফোন দিলো !
-স্লামুয়ালাইকুম আন্টি!
-ওয়ালাইকুময়াসসালাম ! ভাল আছো সাদিয়া ?
-জি আন্টি !
-আজকে তোমাদের ক্লাস কেমন ছিল ?
-ভাল আন্টি ?
-তোমাদের ক্লাসে কিছু হয়েছে আজকে ? কারো সাথে কোন সমস্যা ?
-না তো আন্টি ? কেন ?
-না ঠিক আছে এমনি !
-তবে আন্টি আজকে টিফিন পিরিয়ডের পর থেকে নিকিতার মুড কেমন যেন একটু খারাপ ছিল !
-কেমন খারাপ ?
-না মানে আমরা বেইলি রোডের কেএফসিতে লাঞ্চ করতে গিয়েছিলাম । ওখান থেকে আসার পরেই নিকিতা কেমন যেন চুপ মেরে গেছিল । তারপর আর খুব একটা কথা বলে নাই !
-তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে ?
-জি আন্টি ! কিন্তু নিকিতা কিছু বলে নি !
-আচ্ছা ! ঠিক আছে । তোমাকে ধন্যবাদ !

রেহানা ফোন রেখে দিল ! তার মানে ঐ টিফিন পিরিয়ডে কিছু একটা হয়েছে । কিন্তু কি হয়েছে ?

নিকিতার দরজা বন্ধ করে ঘরের ভিতর শুয়ে আছে । যদিও তার এখন দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকার কথা না । অন্যান্য দিন নিকিতা এই সময়টাতে ছাদে ঘুরে বেড়ায় । মাঝে মাঝে আপন মনে গান গায় ! তার গানের গলার ভাল । ক্লাস ফাইভ থেকে সে রীতিমত ওস্তাদ রেখে গান শিখেছে । স্কুলে যে কোন অনুষ্ঠান হলেই তার ডাক পরে ।

কিন্তু নিকিতা গান গায় একজন কে শোনানোর জন্য। একটু যদি সে কিছু বলে ! কিন্তু সেই মানুষটা কোন দিন কিছু বলে না গান শুনে। ছাদের এক কোনে চুপ করে বসে থাকে চুপ করে কানে হেড ফোন লাগিয়ে ! মাঝে মাঝে নিকিতার ইচ্ছা হয় এক টানে হেড ফোনটা খুলে ফেলতে !

টুকটাক কথা অবশ্য বলে নিকিতার সাথে । কিন্তু সবই পড়া শুনা টাইপের !
-কোন ক্লাসে উঠলে ?
-জি এইবার নাইনে !
-সাইন্স নাকি আর্টস ?
-সাইন্স !
-হায়ার ম্যাথ নিয়েছো তো ?
-হুম !
-ম্যাথে ভাল করা কিন্তু খুব জরুরী !
-জি !

আজে যাবে না যাবে না করেই নিকিতা সন্ধ্যার কিছু আগে ছাদের হাজির হল । ভেবেছিল জাদিদ ভাইয়ের দেখা আজকে পাবে না । জাদিদ ভাই প্রতিদিন বিকেলে মাত্র এক ঘন্টার জন্য ছাদের আসে । তার পরই আবার নিচে নেমে যায় । অন্য কোন দিকে তাকায় না । নিকিতার সাথে টুকটাক কথা বলেই নিচে চলে যায় ! সৌজন্য মুলক কথা ! সন্ধ্যা থেকে তার পড়াশুনা শুরু । সে খুব ভাল ছাত্র !

কিন্তু নিকিতা অবাক হয়ে দেখলো জাদিদ তখনও ছাদের সেই বাম পাশেই বসে আছে চুপ করে । কি যেন ভাবছে !

নিকিতা আজকে কোন গান গাইলো না, চুপ করে উল্টো দিকের রেলিং ধরে দাড়িয়ে রইলো ! হঠাৎ করেই নিকিতার কান্না আসতে লাগলো । আজকে স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে ওরা যখন কেএফসিতে গিয়েছিল লাঞ্চ করার জন্য তখনই সেখানে জাদিদের সাথে দেখা হয়েছিল নিকিতার । একটা মেয়ের সাথে জাদিদ বসে গল্প করছিল কোনার দিকের একটা টেবিলে বসে । দৃশ্যটা খুবই স্বাভাবিক !

বেইলি রোডের কেএফসিটা বিখ্যাত । এখানে অনেকেই আসে । জাদিদ ও আসতেই পারে । কিন্তু জাদিদের সাথে ঐ মেয়েটাকে দেখে নিকিতার মোটেও ভাল লাগে নি । একদম সহ্য হয় নি !
বার বার মনে হচ্ছিল জাদিদ ভাইয়ের পাশে কেন অন্য কোন মেয়ে থাকবে । কেন থাকবে ?

-নিকি ?
নিকিতার চমকে উঠে ফিরে তাকালো ! ওর পেছনে জাদিদ !
তাড়াতাড়ি চোখ মুছে বলল
-জি !
-কাঁদছো তুমি ?
-না । চোখের ভিতর কি যেন গিয়েছিল । তাই চোখ দিয়ে পানি পরছে !
-ও ! আজকে এতো দেরি করলে কেন ?
-মানে ?
-না কোন মানে নেই ! কোন মানে নাই !

জাদিদ মাথা নাড়লো ! আসলেই কোন মানে নেই । আজকে এমনিতেই অনেক্ষন সে ছাদে বসে আছে । প্রতিদিন মেয়েটা বিকেল বেলা ছাদে আছে । আপন মনে সারা ছাদ ঘুরে বেড়ায় ! গুন করে গান গায় ! জাদিদ কানে হেড ফোন লাগিয়ে সেই গান শুনে ! এমন একটা ভাব করে যেন তার দিকে কোন খিয়াল নাই । কিন্তু জাদিদের সব খিয়াল থাকে নিকিতার দিকে ! আজকে মেয়েটা এতো দেরী করলো কেন ?
তারপর যখন এল তখন কেমন মুখ টা ভার ভার ছিল !
কিছু ক হয়েছে ?

-এমনি বললাম ! আজে গান গাইবে না ?
নিকিতা অবাক হয়ে বলল
-আপনি আমার গান শুনেন ? আপনি তো কানে হেড ফোন লাগিয়ে রেডিও শুনে দেখি !
জাদিদ হাসল !
-আজকে গান ঐ হান টা গাও দেখি ! গত পরশু দিন গেয়েছিলে ! আজি মুখরতার শেষ প্রহরে !

নিকিতা সত্যি অবাক হয় ! বিশ্বাস তে চায় না আসলেই জাদিদ ওর গান শুনে । শুধু শুনে না মনেও রাখে ! আর একটু আগে যে নিকিতা কে বলল এতো দেরী করলো কেন তার মানে কি সে নিকিতার জন্য অপেক্ষা করছিল ! সত্যিই কি অপেক্ষা করছিল ??
কিন্তু কেন ?
তাহলে বেইলী রোড সেই মেয়ের সাথে সে কি করছিল !
নিকিতার বলল
-আজকে গান গাইবো না !
-কেন ?
-আজকে আমার মন খারাপ !
-কেন খারাপ !
-আপনার জন্য !
-আমার জন্য ?
জাদিদ খুব অবাক হয় । বলল
-আমি কি করলাম ?
-আপনি ঐ মেয়েটার সাথে কেন গিয়ে ছিলেন বেইলী রোডে !
জাদিদ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল । বলল
-বোকা মেয়ে ! তুমি আসলেই বোকা মেয়ে ! এখন রাখো এই সব । গানটা ধর জলদি ! আমি অপেক্ষা করে আছি !

ছাদের সিড়ি ঘরের দরজার কাছ থেকে রেহানা পারভিন পুরা দৃশ্যটা দেখতে পেলেন । একটু চিন্তিত হবার কথা তার মেয়ের মতি গতি তার কাছে মোটেই সুবিধার মনে হচ্ছে না । জাদিদ অন্য একটা মেয়ের সাথে বেউলী রোডে গেলে মেয়ের মন খারাপ কেন হবে !
তবে তিনি কিছু বললেন না । কারন নিকিতা এখন হাসছে । স্কুল থেকে ফেরার পথে যে মুখ ভার ছিল সেই মুখ ভারের ছায়া আর নাই এখন !
তিনি আসতে আসতে নিচে নেমে এলেন ! কিছুটা চিন্তিত হলেও কিছু না শান্তি লাগছে তার । আপাতত তিনি মেয়ের সমস্যা ধরতে পেরেছেন ।
পরে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিবেন !


Click This Link
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×