কাসেম টিভির স্টুডিও ! একজন সুদর্শনা উপস্থাপিকা দেখা যাচ্ছে ! হাসি মুখে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে । ক্যামেরা ফোকাস করলো তার চেহারা দিকে ! উপস্থাপিকা বলে উঠলো
-সুপ্রিয় দর্শক মন্ডলী আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই কাসেম টিভি লাইভ নির্বাচন টকিজ অনুষ্ঠানে ! আমি সালেহ নাসরিন নিপা ! আজকে আমাদের সাথে উপস্থিত আছেন বেলতলা-১ আসন থেকে নির্চবাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থী, নেতা জনাব আবুল গাব্বাস আলী !
ক্যামেরা ঘুরে উপস্থাপিকা থেকে চলে চলে গেল সাদা পাঞ্জাবীর উপর কালো হাফ হাতা কোর্ট পরা অর্ধ-বয়সী এক লোকের দিকে । ইনি আমাদের বেলতলা-এক আসন থেকে বর্তমান নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ।
স্টুডিওর সেটটা দেখা যাচ্ছে ! একটা বড় সাদা রংয়ের টেবিলের পিছনে উপস্থাপিকা এবং অতিথি বসে আছে । দুজনের সামনেই একটা করে চা কিংবা কফির কাপ রাখা ! সামনে কিছু কাগজ পত্র ! আর দুজনের পিছনের দেওয়া একটা বড় ৪২" এলইডি টিভি দেখা যাচ্ছে ! যেখানে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের চিত্র দেখা যাচ্ছে !
উপস্থাপিকা নিপা বলল
-জনাব, আপনার কেমন লাগছে আমাদের অনুষ্ঠানে আসতে পেরে ?
-জি ! খুবই ভাল লাগছে । তার চেয়েও বেশি ভাল লাগছে এই নির্বাচনে অংশ গ্রহনের সুযোগ পেয়ে ! আপাকে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এতেই আমি খুশি !
-জি ! আপনার চেহারা দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে ! তা আপনি কি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ?
বিগলীত হাসি দিয়ে জনাব আবুল গাব্বাস আলী বললেন
-আশাবাদী কেন বলছেন ম্যাডাম ! আমি তো নিশ্চিত আমিই জিতবো !
বলেই মনে হল জনাব আবুল গাব্বাস আলী একটু থতমত খেয়ে গেলেন ! দেশের সবার সামনে সব কথা বলা ঠিক কি না ঠিক বুঝতে পারছেন না ! এই টিভি রিপোর্টার গুলো খুব টাউট টাইপের হয় । কোন কথার আবার কি মানে বের করে ফেলবে কে জানে !
নিপা বলল
-আপনি এতো নিশ্চিত হচ্ছেন কিভাবে ? যেখানে আমরা জানি ১৫৪ আসনে আলরেডি সবাই বিনা প্রতিদন্তীতায় নির্বাচিত হয়ে গেছে ! তা আপনিও কি তেমনই একজন ?
-আরে না না । কি যেন বলেন । আমার এখানে তেমন কিছুই না ! আমার বেলতলা-১ আসন থেকে আরো ৫ জন নির্বাচনে দাড়িয়েছে । আমাকে জিততে হবে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে !
-শুনে ভাল লাগলো ! তা আমরা এই রকম একটা তথ্য শুনতে পেয়েছি যে এবার নাকি ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি হবে একদমই কম ! তা এই বিষয়ে আপনার মতামত কি ?
-দেখুন ! আমি তো অন্য ভোট কেন্দ্রের কথা আমি বলতে পারবো না ! তবে আমার এলাকায় সবাই ভোট কেন্দ্রে যাবে । সবাই ভোট দিবে !
-ও আচ্ছা ! তাই নাকি ? তাহলে চলুন আমরা সরাসরি চলে যাই বেলতলা-১ আসনের একটা ভোট কেন্দ্রে । সেখানে আছেন আমাদের প্রতিনিধি আনোয়ারুল কবির !
ক্যামেরা চলে গেল পেছনের দেওয়ালে ঝুলানো এলইডি টিভির দিকে ! একজন লাল শার্ট পরা যুবক কে দেখা গেল মাইক্রফোন হাতে দাড়িয়ে ! পিছনে দুইটা লাইন দেখা যাচ্ছে ! একটাকে মহিলা অন্যটাতে পুরুষ ! তবে মহিলাদের লাইনটা বেশ ছোট মনে হচ্ছে যেখানে পুরুষদের লাইনটা বেশ লম্বা !
বোঝা যাচ্ছে মাইক্রোফোন হাতে যুবকের নাম আনোয়ারুল কবির !
নিপা বলল
-হ্যালো ! আনোয়ার ! আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন ? হ্যালো আনোয়ার !
একটু বিরতি তারপরেই লাল শার্ট পরা আনোয়ারের গলার স্বর শোনা গেল !
-হ্যা নিপা ! আমি আপনাকে শুনতে পাচ্ছি ! আমি আপনাকে শুনতে পাচ্ছি !
-আচ্ছা আনোয়ার আপনি বেলতালার কোন ভোটার কেন্দ্রে আছেন ? একটু যদি আমাদের কে বলতেন ? ওখানকার পরিস্থিতি কেমন দেখছেন !
-ধন্যবাদ নিপা ! আমি এখন .... আমি এখন বেলতলার গাবগাছ ভোট কেন্দ্রে আছি । আপনি আমার পেছনেই দেখতে পাচ্ছেন যে এখানে অনেক আনন্দ উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে ভোটাররা ভোট দিচ্ছে ! ভোটারের উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে বেশ ভালই ! সব মিলিয়ে এখানে একটা উৎসব উৎসব পরিবেশ বিরাজ করছে ! নিপা !
-আপনাকে ধন্যবাদ আনোয়ার ! যদি কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বলতে পারেন কি না দেখেন ! আমরা তাদের অনুভুতি সারাদেশের মানুষদেরকে দেখাতাম !
-অবশ্যই নিপা !
টিভিতে দেখা যাচ্ছে লাল শার্ট পরা আনোয়ার একজন ২৫/২৬ বছর বয়সী সবুজ রংয়ের জামা পরা যুবকের দিকে মাইক্রোফোন টা নিয়ে গেল !
আনোয়ার জানতে চাইলো
-আপনার কেমন লাগছে ভোট দিতে পেয়ে !
-জি খুব ভাল লাগছে ! মনে হচ্ছে আমি আজকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ন কাজ টি করতে পারছি !
-ধন্যবাদ !
ক্যামেরা চলে গেল কালো পাঞ্জাবী পরা আরেক যুবকের কাছে !
-আপনার কেমন লাগছে ভোট কেন্দ্রে আসতে পেরে !
-জি ! আনন্দ লাগছে । এই সরকার আমাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করছে । আমরা আবার এই সরকারকে দেখতে চাই !
-আপনাকে ধন্যবাদ !
-নিপা আপনি দেখতে পাচ্ছেন সবাই খুব আনন্দ উৎসবের ভিতর ভোট দিচ্ছে ! নিপা !
-ধন্যবাদ আনোয়ার আমরা আবার আপনার সাথে যোগাযোগ করবো !
ক্যামেরা চলে এল অতিথি জবাব আবুল গাব্বাস সাহেবের দিকে !
জনাব অতিথি বলল
-দেখলেন তো সবাই কেমন নিশ্চিন্তে ভোট দিচ্ছে !
-জি ! তা তো দেখাই যাচ্ছে !
তিন ঘন্টা পরে !
-হ্যালো আনোয়ার আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন !
-হ্যা নিপা আমি শুনতে পাচ্ছি !
-আপনা পিছনে এখনও বেশ লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে ! আপনি আরো কয়েজন ভোটারের সাথে কথা বলতে পারবেন ?
-হ্যা ! নিপা আমি পারবো !
ক্যামেরা চলে গেল এক কালো পাঞ্জাবী পরা যুবকের দিকে !
-ভোট দিতে পেয়ে ....।
আনোয়ার প্রশ্নটা করতে গিয়ে থেমে গেল !
নিপা স্টুডিও থেকে বলল
-কি হল আনোয়ার ! কোন সমস্যা ?
আনোয়ার একটু সরে এসে বলল
-না নিপা ! তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ঘন্টা তিনেক আগে আমি এই লোক কে তার অনুভুতি জানতে চেয়েছি ! তখনও লোকটা লাইনের মাঝে ছিল এখনও তাই আছে ।
-তাই নাকি ?
স্টুডিওর অতিথির মাঝে কেমন একটা তাড়াহুড়া দেখা গেল ! তিনি বললেন
-আরে না না ! আমি তো একে দেখি নি ! এই বারই তো প্রথম !
-হুম হতে পারে । আনোয়ার আপনার মনে হয় ভুল হচ্ছেন !
আনোয়ার বলল
-হতে পারে ! সে
সেই যুবক কেই বলল
-আপনার অনুভুতি কেমন ভোট দিতে পেরে ?
কালো পাঞ্জাবী পরা যুবক বলল
-জি ! আনন্দ লাগছে । এই সরকার আমাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করছে । আমরা আবার এই সরকারকে দেখতে চাই !!
-নিপা আপনি শুনতে পাচ্ছেন ?
-ধন্যবাদ আনোয়ার আমরা আবার আপনার কাছে আসবো !
আরো দুই ঘন্টা পর !
আনোয়ার ভোটারদের আরেক দফা অনুভুতি জানতে চাচ্ছে ! ভোটারের লাইন এখনও সেই আগের মতই আছে !
ভোটার দের কাছে যাওয়ার সময় আনোয়ারের আবার সেই কালো পাঞ্জাবী পরা যুবকের সাথে দেখা হয়ে গেল !
-জনাব আপনাকে মনে হচ্ছে আগেও দেখেছি !
-জি না ! আমি প্রথমই এলাম ! এখানে !
-তাই !
-জি !
-কিন্তু আপনার মতই একজন দেখতে একটু আগে ভোট দিয়ে গেছে ! আমার কাছে ভিডিও আছে !
-আপনি ভুল দেখেছেন ! ও আমার জমজ ভাই ! আমাদের চেরারা দেখতে একই রকম ! কিন্তু আমরা আলাদা !
-ও আচ্ছা ! আচ্ছা আমারই মনে হয় ভুল হচ্ছে ! তা আপনার অনুভুতি কেমন ভোট দিতে পেরে ?
-জি ! আনন্দ লাগছে । এই সরকার আমাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করছে । আমরা আবার এই সরকারকে দেখতে চাই !
রাত আটটা । কাসেম টিভি স্টুডিও ।
-সুপ্রিয় দর্শক আমরা আবারও ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে ! এখন আমাদের ফলাফল জানার পালা ! আমাদের সাথে আবারও এসে হাজির হয়েছেন বেলতলা-১ আসন থেকে নির্চবাচনে অংশ নেওয়া নেতা জনাব আবুল গাব্বাস আলী ! আমরা সরাসরি চলে যাবো ফলাফলে !
-হ্যালো আনোয়ার আপনি কি আমাদের সাথে আছেন ?
-হ্যা ! আমি আপনাকে শুনতে পাচ্ছি !
-নির্বাচনে ফলাফল কি আপনি জানতে পেরেছেন ? আপনার ওখানের ফলাফল কি ?
-হ্যা নিপা একটু আগে ফলাফল ঘোষনা হয়েছে ! এখানে সব গুলো কেন্দ্র মিলে জনাব আবুল গাব্বাস আলী মোট ৫ লাখ সাতশ বাইশ টা ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে ! কিন্তু.....
-কি কিন্তু আনোয়ার ?
-আসলে বেলতলা-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ নয়শ আশি টি !
-এটা কিভাবে সম্ভব ?
-নিপা এটা তো আমিও বুঝতে পারছি না ! এখানে উপস্থিত কেউ ঠিক বুঝতে পারছে না !
স্টুডিওর ক্যামেরা এবার চলে গেল জয়ী প্রার্থীর দিকে !
উপস্থাপিকা তাকে প্রশ্ন করছে
-একটু আগে আপন শুনতে পেয়েছেন আপনি জয়ী হয়েছেন ! আপনার কেমন লাগছে ?
-আমি জনাতাম জনগন আমাকে নিরাশ করবে না ! জয় আমাদের হবেই ! আমরা চেতনাধারী আমাদের জয় সুনিশ্চিত !
-আর একটা বিষয় ঠিক বুঝতে পারছি না ঠিক ! আসলে সেখানে মোট ভোটার চার লাখ আপনি কিভাবে পাঁচ লাখ পেলেন ?
-আরে এটা বুঝলেন না ? আমাকে এবং আমার দলকে দেশের লোক এতো ভালবাসে যে অন্য এলাকা থেকে মানে যেখানে ভোট হয় নি প্রতিদন্তিতার অভাবে, সেই এলাকা লোক ছুটে চলে এসেছে ভোট দেওয়া জন্য ! এই থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে আমার এবং আমাদের দলের উপর দেশের মানুষ কত নির্ভর করে !
-জি দর্শক আমরা আবারও আপনাদের মাঝে ফিরে আসবো নির্বাচনের আরো খবর নিয়ে ! ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন !
আপনারও আমার সাথেই থাকুন ! এই কাল্পনিক গল্পের সাথে ভবিষ্যতের কোন ঘটনা মিলে গেল লেখক দায়ী নয় কোন ভাবেই । তবে আগামী নির্বাচনে এমন কিছু হয়ে গেলে কিংবা কোন ভোট কেন্দ্রে একই কালো পাঞ্জাবী পরা ভোটার একাধিক বার দেখা দিলে চিন্তা নিবেন না ! মনে করবেন এরা জমজ ভাই ! সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়েছে !
আলোচিত ব্লগ
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ
মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!
বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন