somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৩টি ন্যানো গল্প অথবা অন্য কিছু !!

২৩ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


1
সুমনের একটু মন খারাপ হল ! একটু না বেশ ভালই মন খারাপ হল মিতুর মেসেজটা দেখে ! ফেসবুক ইনবক্সে মেসেজটা যেন বারবার বুকে বিঁধছে !
"আমাকে স্টাটাসে ট্যাগ দিবা না তো ? এতো নোটিফিকেশন ভাল লাগে না"
অথচ একটা সময় মিতু নিজেই রাগ করতো ওকে কোন স্টাটাসে ট্যাগ না করলে ! একবারের কথা সুমনের মনে আছে । একটা গল্পে সুমন ওর এক বান্ধবীকে ট্যাগ দিয়েছিল । তারপর সে কি রাগ মিতু । দুদিন কথা বলাই বন্ধ ! কথা বলতে গেলেই সুমি মুখ বাকিয়ে বলত যাও তোমার ঐ বান্ধবীর সাথে কথা বল গিয়ে ! আমার সাথে কথা বলা লাগবে না !
তারপর থেকে সুমন মোটামুটি ওর একান্ত ভাবনা গুলো কিংবা ওর পছন্দের কোন গল্পে মিতুকে ট্যাগ দিতো !
আজকে তাহলে এমন কথা কেন বলল ও !
কোন কারনে রাগ করেছে ?
রাগ করেছে বলে এমন করে বলবে ?
সুমনের আসলেই বেশ মন খারাপ হল !

পিসিটা বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিল ! একটু দুরে ওর কালো মোবাইল টা পড়ে রয়েছে ! সকাল থেকে মোবাইলটা হাতে নেওয়া হয় নি ! আসলে বাসায় থাকলে ফোন গুলো কোথায় থাকে কে জানে ? দেখাও হয় না !

আজকে সকাল থেকেই একটু ব্যস্ত ছিল সুমন ! সকাল বেলা বাইরে বের হয়েছে এসেছে দুপুর বেলা ! তারপর রান্নার কাজ শুরু ! আজকে বাসায় কেউ নেই ! ওকেই রান্না করতে হয়েছে ! রান্না করতে করতে বেজে গেল প্রায় তিনটা ! গোসল সেরে যখন পিসির সামনে বসলো তখন হারিয়ে গেলে নিজের জগৎ !
সুমনের নিজের জগৎ বলতে ওর গল্পের জগৎ ! এই গল্প লেখার সময়ে সুমনের অন্য কোন দিকে লক্ষ্য থাকে না ! নাওয়া খাওয়া সব বাদ ! আজকে কদিন থেকেই সুমনের মাথায় একটা গল্প ঘুরপাক খাচ্ছিল ! এক বৈঠকে গল্পটা নামিয়ে ফেলল ! যখন লেখা শেষ তখন প্রায় পাঁচটা বেজে গেছে ! সুমন একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানার পাশে পরে থাকা মোবাইল টা চেক করে দেখে সেখানে মিতু ফোন !
দুবার !
ফোন যে দিবে সেই টাকাও নেই ! দুদিন ধরে মোবাইলে টাকাই রিচার্য করা হচ্ছে না ! চট জলদি নিচে গিয়ে ফোন রিচার্য করে নিয়ে এল ! ফোন দিল কিন্তু ফোন ধরার নাম নেই !
কি হল আবার ! ফোন কেন ধরে না !
মনে হয় ব্যস্ত আছে !

বিছানায় শুয়ে শুয়ে মিতুর কথা ভাবতে লাগলো ! মেয়েটা এমন করে বলতে পারলো !
যাক ! বলেছে তো আর কি হয়েছে ! বিছানার পাশে পরে থাকা অন্য মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখে এখানেও মিতু ফোন ! ঐ ফোনটাতে ফোন দিয়ে পায় নি তারপর এটাতে দিয়েছে !
একটা মেসেজও পাঠিয়েছে দেখা যাচ্ছে !
কোন দরকার নিশ্চই !

কিন্তু মেসেজটা ওপেন করে সুমনের মন টা আরও একটু খারাপ হয়ে গেল ! মানুষের কি ব্যস্ততা থাকে না ! ফোন না হয় ও ধরতে পারে নি তাই বলে এমন করে বলতে হবে !
একবার ভাবলো একটা রিপ্লাই দেয় কিন্ত পরে আর দিলো না !
মিতুর উপর খুব মন খারাপ হল ! মেয়েটা কি বুঝে না কাছের মানুষটির সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় ? কাছের মানুষের একটু কঠিন আচরন কি পরিমান কষ্ট দেয় !



2

-আপু আইসক্রিম খাবো !
-একটা থাপ্পড় দিবো ! এই জন্য তোকে আনতে চাই না ! চুপ করে দাড়িয়ে থাক !

বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোরের কাউন্টারের পাশে বসে ছিলাম ! আর জেনারেল স্টোরের ক্যাশিয়ার মোমিনের সাথে কথা বলতে বলতে আইসক্রিম খাচ্ছিলাম ! তখন মেয়েটি তার ছোট ভাই টিকে নিয়ে হাজির ! আমাকে আইসক্রিম খেতে দেখেই পিচ্চি টা আইসক্রিম খেতে চেয়েছে । কিন্তু তার বদলে খেল ধমক !

মেয়েটি আমার দিকে একটু তাকিয়ে দোকানের অন্য প্রান্তে চলে গেল ! কর্মচারী আরিফের দিকে তাকিয়ে বলল
-এই দুই কেজি আলু দাও তো !
-কোনটা দিমু ? নতুন না পুরান !

মেয়েটি কিছু বলতে যাবে আমি একটু উচু গলায় বললাম
-আরে দেখছো না মানুষটা নতুন পরান আলু কেন দিবা ! নতুন টা দাও !
তাকিয়ে দেখি মেয়েটি আমার দিকে কেমন চোখে তাকালো ! সে খানে আর যাই হোক বিরক্তি যে ছিল না এটা ঠিক বুঝতে পারছিলাম ! আর থাকবেই বা কেন ? প্রতিদিন ছাদে মেয়েটির সাথে আমার প্রায়ই চোখাচোখি হয় !

আমি আরিফ কে বলল
-আরিফ, ভাল করে ঠিক মত ওজন করে দিও ! চিন পরিচয়ের লোক !
মেয়েটি আবারও আমার দিকে তাকাল ! মোমিন কে এই ফাঁকে আরেক টা আইসক্রিমের কথা বললাম !
কিছু পেতে হলে কিছু ইনভেস্ট তো করতেই হয় !
মেয়েটি কেনা কাটায় ব্যস্ত তখনই আমি আইসক্রিম হাতে পিচ্চি কে ডাক দিলাম ইশারায় !
পিচ্চিটা কয়েকবার আপুর দিকে তাকিয়েও আমার দিকে আস্তে আস্তে পা বাড়ালো ! আমার হাত থেকে আইসক্রিম টা নিয়ে আবার হাটা দিল আগের জায়গায় !

-এই তুই আইসক্রিম কোথায় পেলি ?
পিচ্চি তখন আইসক্রিম খাওয়ায় ব্যস্ত ! কেবল আমার দিকে ইশারা করিয়ে দিল ! মেয়েটি আবারও আমার দিকে একটু রাগ হওয়ার ভান করলো ! এমন একটা ভাব যেন আমি তার ভাই কে আইসক্রিম কিনে দিয়ে মহা অন্যায় করে করে ফেলেছি ! কিন্তু সেই চোখের দৃষ্টিতে খুব একটা লাভ হল বলে মনে হল না !

কেনা কাটা সেরে মেয়েটি তার ভাইকে হাটা দিল ! আমিও পেছন পেছন হাটা দিলাম ! দেখা যাক সামনে কি হয় !


3
প্রবল বাতাস হচ্ছে । আমাকে একেবারে উড়িয়ে নিয়ে যাবে যেন । বন্ধুরা বীচে দৌড়াদৌড়ি করছে । আমি নোনা জলের ভিতর দাড়িয়ে আছে খালি পায়ে । প্যান্ট একটু গোটানো কিন্তু যখন সাগর থেকে পানি ছুটে আসছে তার প্যান্টের অনেক খানিই ভিজিয়ে দিচ্ছে । আমার সেদিকে লক্ষ্য নেই, আমার দাড়িয়ে থাকতে ভাল লাগছে । বিশেষ করে যখন ঢেউয়ের পানি ফিরে যাচ্ছে সাথে পায়ের নিচের বালিও নিয়ে যাচ্ছে । এক ধরনের শুড়শুড়ি লাগছে ।
এমন সময় দেখলাম নিশি পাশে এসে দাড়ালো । ওর পরনে কালো রংয়ের প্যান্ট আর একটা সাদা গেঞ্জি । চুল গুলো প্রবল বাতাসে উড়ছে । নিশির সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । মুখটা একটু বিষন্ন ।
মেয়েটা এখনও মন খারাপ করে আছে । ঐদিনের পরে ওকে একটুও হাসতে দেখি নি । আমার সাথে একটু কথাও বলে নি । রাগ করে আছে ।
এই প্রবল বাতাসে আমার শীত ধরিয়ে দিয়ে অথচ ও চুপ করে দাড়িয়ে আছে । আমি ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে গায়ের চাদরটা ওর গায়ে জড়িয়ে দিলাম । বললাম
-শীত লাগছে না তোর ?
আমার কথার জবাব না দিয়ে নিশি চাদরটা একটু ভাল করে জড়িয়ে নিল । দুজন প্রবল বাতাসের ভিতর সমুদ্র পানিতে পা ডুবিয়ে তাকিয়ে রইলাম দুর সমুদ্রের দিকে । দুজনের মনেই প্রিয় মানুষটির কথা ...
-একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস ?
বেশ খানিকটা সময় পর নিশিই প্রথম কথা বলল ।
-কোনটা ?
-এই যে ঢেউ গুলো ।
-কি লক্ষ্য করবো ? দুরে তাকিয়ে দেখ । পুরো বিশাল সাগরটা আমাদের সামনে রয়েছে । তুই আমি এখানে দাড়িয়ে । ঠিক আমাদের জীবনটার মত ।
আমি চুপ করেই রইলাম । নিশি বলেই চলল
-দেখছিস একটার পর ঢেউ তোর পায়ের উপর এসে পড়ছে । কিছু বালি পায়ের উপর এসে পড়ছে আবার ঢেউ এর সাথে চলে যাচ্ছে ।
আমি নিশির দিকে তাকিয়ে খানিকটা বোঝার চেষ্টা করলাম ও ঠিক কি বলার চেষ্টা করছে । নিশি বলল
-দেখ অপু তুই চাইলেই কিন্তু পায়ের নিচের সব গুলো বালু কনা ধরে রাখতে পারবি না । কিছু বালু চলে যাবে ঢেউয়ের সাথে কিছু নতুন বালু কথা নতুন স্থান করে নিবে ।
আমি মনে হয় একটু বুঝতে পারছি ও কি বলতে চাইছে । নিশি বলেই চলল
-পুরানো বালু কথা চলে যাওয়াতে তুই কিন্তু পরে যাচ্ছিস না । নতুন কিছু বালু কিন্তু সেই শূন্যস্থান ঠিকই পুরন করে দিচ্ছে । এখন তুই কোনটার সাথে যাবি সিদ্ধান্ত তোর ।

আমি চুপ করে রইলাম । কি বলবো বুঝতে পারছি না ।


4
দরজা খুলে দেখি এক সুন্দরী মেয়ে দাড়িয়ে । বললাম

-আপনি কে ? অপনাকে তো ঠিক চিনলাম না ।

মেয়েটি হেসে বলল
-আমি চিনি !

আরে এই মেয়েকে তো আমি চিনি না । আগে তো দেখি নি । এই মেয়ে আমাকে চিনলো কেমনে ? ফেসবুকের কোন মেয়ে বাসা চিনে চলে এল নাকি ?

-ইয়ে মানে আপনি চিনলে তো হবে না । আমাকেও চিনতে হবে ।

-না না । আমার নাম চিনি । আপনার রুমমেট নয়ন আমায় বয়ফ্রেন্ড ! ওকে একটু ডেকে দিন না ভাইয়া !

ভাইয়া ? শ্লার সব মেয়ের কেবল ভাইয়াই হয়ে রইলাম ! ফুসসসস !



5
-তুমি আসবে না ?
-নাহ !
-সত্যি আসবে না ?
-দেখো একটু বোঝার চেষ্টা কর ! আজকে ছুটির দিন তার উপরে ২১শে ফেব্রুয়ারি ! বই মেলায় আজ কি পরিমান ভীড় হবে তুমি জানো ?
-আমি কিছু শুনতে চাই না । তুমি আসবে কি না বল ?
-দেখো বাবু । একটু বোঝার চেষ্টা কর । তোমাকে নিয়ে ভীড়ের ভিতর যাওয়াটা কি পরিমান কষ্ট কর হবে জানো ?
-আচ্ছা, তার মানে তুমি বলতে চাও আজকে আমি হুমায়ুন স্যারের বই কিনবো না ? আজকে স্যারের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে ।
-আজকে না কিনলে কি হবে ? কাল কিনবা !
-তারমানে তুমি বলতে চাও আমার অন্য সব বন্ধুরা আজকে বই কিনবে আর আমি কালকের জন্য বসে থাকবো !
-আহা ! এমন টা ভাবছো কেন ? তুমি বুঝতেও পারছো না যে ওখানে কি পরিমান ভীড় হবে । কি পরিমান ঠ্যালাঠ্যালি হবে !
-আমি বুঝতে পারছি ! তোমার যেতে হবে না ! তুমি ফোন রাখো !
-একটু বোঝার চেষ্টা কর !
-তুই ফোন রাখ !
-শুনো !
-তুই ফোন রাখ আর যদি আমাকে ফোন দিয়েছিস !!

নিশি ফোন টা রেখে দিল ! মেজাজটা ওর খুব খারাপ হচ্ছে ! মেজাজ খারাপ হলে নিশি সবাইকে তুই তোকারি করে । সবার সাথেই খারাপ ব্যবহার করে ! বিশেষ করে অপুর সাথে ।
আজ বিকেল বেলা হুমায়ুন স্যারের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে । আর নিশি যদি আজকে সেটা পড়তে না পারে তাহলে ?
আজকে রাতে ওর ঘুমই আসবে না !
নিশি ঠিক করলো অপুর জন্য আজকে ও অপেক্ষা করবে না ! দরকার নেই এমন মানুষের । নিজের মনের মানুষটার জন্য এই টুকু কাজ করতে পারবে না !
ফাজিল পুলা !
থাপড়ায়ে দাঁত ফেলে দেওয়া উচিৎ !

নিশি মনে মনে বলল
"তুই দুরে যা, তোর দরকার নাই ! আমি একাই বই কিনতে পারবো" !!

কিন্তু যতটা সহজ ভেবেছিল ততটা সহজ হল না ! বিকেল বেলা নিশি একাই গিয়ে হাজির হল শাহবাগে !
এতো মানুষ !!
নিশি নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না ! ভেবেছিল ভীড় হবে কিন্তু তাই বলে এতো ভীড় ?
নিশি ঠিক মত হাটতে পারছে না ! ক্ষনে ক্ষনেই ধাক্কা লাগছে যার তার সাথে ! আর মানুষ গুলোও কি পরিমান অসভ্য !
প্রায় ঘন্টা খানের লাইনে দাড়িয়ে থাকার পরে নিশি হাজির হল মেলার গেটটার একটু কাছে । গেটটার কাছে এসে নিশির মাথা ঘুরে গেল !
পুরো গেট জুড়ে কম করে হলেও হাজার খানেক মানুষ একে অন্যের সাথে ঠ্যালঠ্যেলি করে ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করলো !
নাহ !

নিশির রাস্তার ডিভাইডারের উপরে দাড়িয়ে অসহায় মুখে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ভীড়ের দিকে ! কিছুতেই যাওয়া সম্ভব না ! কখন ভীড় কমবে তার কোন ঠিক নেই !
এখন কি করবে ?
নিশির অপুর কথা মনে পড়লো ! আসলেই ওর পক্ষে এই ভীড়ের ভিতরে যাওয়া সম্ভব না ! তাহলে ?
অপু !

অপুর কথা মনে হতেই হঠাৎ করেই ওর ফোন টা বেজে উঠলো !
অপুর ফোন !

-হ্যালো !
অপুর কন্ঠটা কেমন একটা কৌতুক পূর্ন মনে হল !
-বল !
-কই বাবু তুমি ?
-বই মেলার গেটের সামনে ?
-যাবা না ভিতরে ?
-তুমি ঠিক বলেছিলে ! আমার পক্ষে এখানে যাওয়া সম্ভব না !
-হুম ! আমি বললাম তোমার তো বিশ্বাস হল না । এখন ?
-আচ্ছা সরি ! আমি বাসায় যাচ্ছি ! বই কাল কিনবো !
-কিন্তু আজকে তো রাতে তোমার ঘুম আসবে না !
-না আসলে কি আর করা !
-হুম ! একটু পিছনে তাকাও !

নিশি চট করে পিছনে তাকিয়ে দেখে অপু দাড়িয়ে আছে ! কাছে এসে বলল
-চল কলা ভবনের সামনে বসি ! এখানে খুব ভীড় !
-আচ্ছা চল ! আর শুনো ! সকালের আচরনের জন্য আমি সরি !
-ওকে বাবু কোন ব্যাপার না !

দুজন হাটতে হাটতে চলে গেল কলা ভবনের সামনে ! এখানেও বেশ ভীড় ! তবুও দুজন একটা জায়গা দেখে বসে পড়লো !
হঠাৎ অপু নিজের কোমর থেকে একটা প্যাকেট বের করে দিল !
-এটা কি ?
-খুলে দেখো !
নিশি প্যকেটা খুলে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পরলো না !
হুমায়ুন স্যারের বই ! যেটা কিনতেই ও কিনতে এসেছে !
-এটা কোথায় পেলে ?
-কিনেছি !
-কিভাবে ?
-তুমি চেয়েছ আর আমি কিনবো না ? তা কি হয় বল ?
-তাই বাবু ?

নিশির মনটা আসলেই ভাল হয়ে গেল এক নিমিশেই ! এই ছেলেটা আসলেই একটা পাগল ! ওর আনন্দের জন্য না জানি এই ভিড়ের ভিতর ঢুকে কিভাবে বইটা কিনে এনেছে ! আর ও সকালবেলা কি ব্যবহারটই না করলো !
এখন মনে হচ্ছে ও নিজেই একটা পাজি মেয়ে !!



6
-ভাবতেছি কদিন ফেসবুক বন্ধ করে রাখবো ।
-তাই বাবু ? ওকে বন্ধ করে রাখো ।
-এই কি বললা ? বন্ধ করে রাখতে কেন বললা ?
-আরে বাবু তুমি বললা না ?
-আমি বললাম আর তুমি রাজি হয়ে যাবা ?
-যাবো না ?
-কেন রাজি হবা ? তুমি বলবা না যে, না বাবু তুমি যেও না । তোমাকে ছাড়া আমার ভাল লাগবে না । তুমি যেও না ।
-তাই বাবু ?
-ও আচ্ছা আমি চলে গেলে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবা, মেয়েদের পোষ্টে গিয়ে লুলামি করতে পারবা, তাই না ?
-
-আমি কিছু বুঝি না, না ?
-এই সব কি বল বাবু ?
-আই হেইট ইউ !
-আই লাভ ইউ ।
-বদ পুলা । বাদ একটা ।
-বাবু ।
-টিংকু একটা । আই হেইট ইউ ।
-আই লাভ ইউ ।



7
-হুম !
-কি ?
-আমি তোমার সাথে কথা বলবা না, এইটা বলার জন্য ফোন দিছি !
-তাই বাবু ?
-হুম ! আই হেইট ইউ !
-আই লাভ ইউ !
-কোন লাভ নেই ! আমি তোমার সাথে কোন কথা বলবো না !
-ওকে বাবু !
- /:)
-বাবু !
-এই ঢং করলে হবে না !
-বাবু বাবু !
-আই হেইয় ইউ !
-আমার বাবু !
-আই ডোন্ট লাভ ইউ ! হুহহহহ !
-আই লাভ ইউ !
-আই লাভ টিংকু !
-হুম জানি তো ! কারে ভালবাসো যে তোমার কথাই শুনে না !



8
টিংকুর গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে গেছে । এই দুঃখে টিংকু মদ খাওয়া শুরু করে দিল । বেশ কয়েকদিন পরে একদিন রাতের বেলা মাতাল অবস্থায় টিংকু হাজির হল তার গার্লফ্রেন্ডের বাসা গিয়ে হাজির ।
-তুমি

-হুম

-তুমি কিভাবে এল ?

-বাধরুমের পাইপ বেঁয়ে । আগে যেমন আসতাম । মাঝে মাঝে পাইপ বেঁয়ে যখন আসতাম তখন ভুল করে পাশের বাড়ির পিংকির ঘরে চলে যেতাম । মনে নেই ?

-না মানে তুমি পাইপ বেঁয়ে কিভাবে আসতে পারলে ?

-কেন ? তোমাদের বাধরুমে পাইপ নাই নাকি ? বাধরুমে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছ ?

-দেখো । আমি এখন অন্যের ঘরে বৌ ।

-ওরে কালমুখি আমার ঘরে আসলে তুই কি এমপি হইতি ? আমারে বিয়ে করলেও তো তুই ঘরের বৌই হইতি । ফাজিল বিলাই ।


9
সুমন এতো জোরে দরজাটা বন্ধ করলো মীরার মনে হল যেন দরজা মনে হয়ে ভেঙ্গেই গেল ! স্বভাবিক সময় হলে হয় তো এই মীরা সুমনের সাথে একটা তর্ক বাঁধিয়ে দিত কিন্তু এখন তেমন কিছু করলো না !
কেবল সুমনের চলে যাওয়া পথে দিকে তাকিয়ে রইলো !

একটু আগে সুমনের সাথে মীরার প্রচন্ড ঝগড়া হয়েছে । বলতে গেলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়ে গেছে ! এক পর্যায়ে সুমনের হাত উঠে গিয়েছিল কিন্তু শেষ মুহুর্তে সুমন নিজেকে সামলে নিয়েছে !
পরিস্কার বলে দিয়েছে এভাবে আর চলতে পারে না ! আমি চলে যাচ্ছি !
মীরা কেবল নিশ্চুপ চোখ তাকিয়ে তাকিয়ে সুমনের চলে যাওয়া দেখলো ! কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না ! সুমন তো এমন ছিল না ! বিয়ের আগে ছেলেটা তো এমন ছিল না ! ও নিজেও তো এমন ছিল ! সব কিছু বদলেছে ! বদলাচ্ছে !

মীরা আর সুমন এক জায়গায় চাকরি করার সুবাধে দুজনের পরিচয় ! আস্তে আস্তে কথা বলা শুরু তারপর অফিসের বাইরেও দেখা হতে লাগলো ! দুজনই দুজনকে পছন্দ করতো । কিছু কিছু বিষয়ে হয়তো অমিল ছিল কিন্তু সেগুলো খুবে বেশি বড় কিছু মনে হয় নি কারো কাছেই !
মীরার এখনও সেদিনের কথা মনে আছে যেদিন সুমন ওকে বিয়ের জন্য প্রোপোজ করেছিল ! অন্য রকম ভাবে প্রোপোজ !

অফিসেই ! মীরা নিজের কেবিনে বসে ছিল, সমুন এসে বলল
-আপনি কি তরকারীতে লবন দেখতে পারেন ?
-সরি ! ঠিক বুঝলাম না !
-না মানে, যখন তরকারী রান্না করেন তখন কি একবারে লবন দিয়ে দেন নাকি বারবার দিয়ে চেক করতে হয় ?
-কি বলছেন এই সব ?
-আহা ! বলেন না ?
-না ! আমার হাতের আন্দান ভাল ! একবারই লবন দেওয়া লাগে ! কেন ?
-যাক বাঁচালেন !
-কেন ? বলবেন তো ?
-না মানে আমি রান্না চমৎকার করি কিন্তু আমার লবনে একটু সমস্যা ! আপনি যদি লবনটা ঠিকঠাক করে দিয়ে দেন তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না আমাদের সংসারে !
-আমাদের সংসার ?
কথা টা বলেই মীরার কেন জানি খুব লজ্জা লাগলো ! সুমন কেবল একটা প্রশ্ন করলো আপনার আপত্তি নেই তো ? এমন রান্না জানা বর কিন্তু আর কোথাও পাবেন না ! টু ইন ওয়ান বলতে পারেন !

তারপর দিন গুলো কেমন দ্রুত কেটে গেল ! দেখতে ওরা দুজনেই সংসার শুরু করে দিল ! দিন গুলো ভালই যাচ্ছিল কিন্তু দুজনের ভিতরের সেই অমিল গুলো সামনে আসতে লাগলো ! সমস্যা সেখান থেকেই শুরু !
দুজনেই একটু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল কিন্তু তবুও মাঝে মাঝে ঝগড়া লেগেই যেত ! আজকেও তেমন একটা ঝগড়া বেঁধে গেল !

মীরা কিছু চুপ করে বসে থাকলো ! চোখের পানি মুছলো ! কি করবে বুঝতে পারছে না ! সুমন বাসা ছেড়ে চলে গেছে এটা ভাবতেই ওর আবারও কান্না আসতে লাগলো ! উঠতে যাবে ঠিক তখনই দরজা খুলে সুমন ঘরে ঢুকলো !
মনে হয় কিছু একটা ভুলে গেছে । নিতে এসেছে ! মীরা নিজের চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে বলল
-কিছু ভুলে গেছো ?
-হুম !
-কি ?
-তোমাকে !

অনেক কষ্টে আটকে রাখা পানি টুকু আবারও চোখ ফেটে বেরিয়ে পড়লো ! কোন কিছু না ভেবে মীরা সুমনের দিকে দৌড়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো ! তারপর আরও জোরে কেঁদে উঠলো !

সব কিছুই বদলে যায়, সব কিছুই বদলাচ্ছে কিন্তু দুজনের ভিতরকার ভালবাসা টুকু এখনও বদলাই নি ! কিংবা বদলাবে না কোনদিন !


10
তিথির বাবা চট করেই আমাদের ব্যাপার টা ধরে ফেললেন ! পাশাপাশি বাসা, তাই বাসায় নালিশ আসতে খুব বেশি সময় লাগলো না !
রাতে ভাত খাওয়ার সময় আব্বার মুখ দেখলাম গম্ভীর ! আশা করেছিলাম খাওয়ার মাঝখানেই তিনি আমাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলবেন !

আমি কোন দোষ করলেই তিনি মুখ গম্ভীর করেন বলেন
"আমি তো দুষ্ট গরু রাখবো না ! দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল ! তুমি আজকেই আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবা ! ক্লিয়ার ?

আমি ক্লিয়ার ব্যাপার টা মাথা নিয়ে ভাত খেতে লাগলাম ! আজকে চিংড়ি মাছে ঝোলটা বেশ স্বাধ হয়েছে ! আমি মাকে বললাম
-মা আরেক পিচ দাও তো চিংড়িটা !
মা ভয়ে ভয়ে আমার পাতে আরেক পিচ চিংড়ি তুলে দিলেন ! দিয়েই বাবার দিকে আরেকবার তাকালেন ভীত চোখে ! আমি অন্য কোন দিকে না তাকিয়ে খেতে লাগলাম !

খাওয়া শেষ করে যখন হাতে পানি ঢালছি তখন আব্বার গম্ভীর গলা শুনতে পেলাম !
-খাওয়া ভাল হয়েছে ?
-জি আব্বা !
-এবার সোজা নিজের ঘরে যাবা ! নিজের ব্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাবা ! তুমি দুষ্ট হয়ে গেছো ! আমি দুষ্ট গরু আমার গোয়ালে রাখবো না ! বিষয়টা ক্লিয়ার হয়েছে ?
-জি আব্বা ক্লিয়ার হয়েছে !

মা খানিকটা নিচু কন্ঠে বলতে গেলে এই রাতে বেলা ছেলেটা ....?
কথার মাঝ খানেই আব্বা মা কে থামিয়ে দিল !
-যেই ছেলে এই বয়সে অন্যের মেয়ের সাথে ফুটুস ফাটুস করতে পারে তার কাছে রাত কোন সমস্যা না ! সেই ছেলে লায়েক হয়ে গেছে !
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপার তুমি এখনও দাড়িয়ে আছো ? যাও ! এখনও বিদেয় হও !

আমি ঘরে চলে গেলাম ! মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখালম চার্য আছে কি না ! না থাকলে সাথে চার্যারটাও নিতে হবে ! বালিশের নিচে হেড ফোন ছিল, সেটা পকেটে নিলাম, তারপর ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম !
যাওয়ার দেখি মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে !

একটু হাসার চেষ্টা করলাম ! মাও একটু হাসলো ! এটাই তো আর প্রথম না ! আগে হয়েছে ! খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই ! তবুও মায়ের মন বলে কথা !

আমার মনে আছে প্রথম যেদিন বাবা আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি ! সকাল বেলার কথা ! স্কুলে বৃত্তি কোচিংয়ে আমি বেশ কয়েকদিন ফাঁকি দিয়েছিলাম ! সেই খবর বাবার কাছে এই এসে পৌছেছিল রাতের বেলা !
তিনি সকাল বেলা আমাকে বাসা থেকে চলে যেতে বললেন ! আমি খানিকটা অবাক হয়ে কেবল বাবার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ! এখন আর অবাক হই না !

আমি কানে হেড ফোন লাগিয়ে ছাদে চলে এলাম ! কিছুক্ষন গান শোনা যাক । রাতে আব্বা ঘুমিয়ে পড়লে তখন আবার বাসায় যাওয়া যাবে ! মা নিশ্চই জেগে থাকবে !

আসলে ঘটনা তেমন কিছুই হয় নি ! তিথিকে বেশ কিছুদিন থেকেই পছন্দ করি ! মেয়েটাও আমাকে পছন্দ করে । তার উপর আমাদের ফ্ল্যাট আবার পাশাপাশি ! টুকটাক দেখা তারপর কথা ! এর পর প্রতিদিন কথা হতে লাগলো, ছাদের দেখা হতে লাগলো প্রতি বিকেল বেলা !
মোবাইলেও কথা হত তবে কম ! অবশ্য আমার তাতে কোন সমস্যা হচ্ছিল না ! বেশ ভালই দিন কাটছিল দুজনের !

গতকাল বিকেল বেলা ঝামেলা বাঁধলো ! ছাদে বসে দুজন কথা বলছি এমন সময় তিথির বাবা এসে হাজির ! তিথি কে এক চড় মেরে নিচে নিয়ে গেলেন ! আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষন !

-এই !
খানিকটা চমকে উঠলাম ! কে ডাকে ? এই রাতের বেলা ভুত নাকি ? কান থেকে হেড ফোন খুলে কান পেতে রইলাম আবার শোনার জন্য !
-এই !
তিথির গলা !
এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি অন্ধকার থেকে তিথি বের হয়ে এল !
-তুমি এখানে ?
-তোমার জন্য বসে আছি ! বাবা মোবাইল নিয়ে নিয়েছে ! তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিল !
-তোমার বাবা জানে ?
-বাবা রাতে বেশিক্ষন জেগে থাকতে পারে না ! সেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে !
-আর তোমার আম্মা ?
-আম্মু ব্যাপার না ! আম্মাকে আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি ! তোমার বাসার কি অবস্থা ?
-ঐ একই কথা ! আমি দুষ্ট গরু গোয়ালে রাখবো না ! প্রস্থান কর !
-ভাল ! তা সারা রাত কি এখানেই থাকবা ?
-তুমি থাকলে অবশ্য থাকা যায় !
-এই খবরদার কিন্তু দুষ্টামী করবা না বলছি !
-দাড়াও ! দুষ্টামী কারে কয় তোমাকে দেখাচ্ছি !
-এই !
বলতে বলতে তিথি ছাদের অন্য দিকে দৌড় দিল ! আমি ছুটলাম তার পিছু পিছু !

ছাদের নিচে দুই পিতা ঘুমিয়ে আছে আর ছাদের উপর তাদের সন্তান গল্প করে রাত পার করে দিচ্ছে !!
আহা !!


11
মেয়েটি বলল
-তোমাকে অনেক মিস করবো ?
ছেলেটি বলল
-তাহলে ছেড়ে যাচ্ছ কেন ?
-যাবোই তো । সব দোষ তোমার !
-কি সব দোষ আমার না ? সব দোষ তোমার ?
-তোমার দোষ !
-তোমার দোষ !

এর পর দুজন পরস্পর বিপরীত মুখে হাটা শুরু করলো ! কিছুদুর যাওয়ার পরেই মেয়েটির মনে হল সব দোষ না হলে কিছুটা দোষ তার আছেই ! এই টুকু স্বীকার করে নিলেই হত ! এই ভেবে যখনই মেয়েটি ঘুরতে যাবে তখনই দেখলো ছেলেটি ঠিক তার পেছনে দাড়িয়ে !
-কেন এসেছো ?
মেয়েটি জানতে চাইলো !
-এমনি !
-এমনি ?
-না, মানে সব দোষ তোমার একার না ! আমারও কিছুটা আছে !
মেয়েটি বলল
-আমারও দোষ ছিল ! তবে তোমার বেশি দোষ !
ছেলেটি আর কি বলবে ! বলল
-আচ্ছা আমারই বেশি দোষ ! তুমি যে খানিকটা দোষ স্বীকার করেছ এতেই চলবে !



12
সকাল বেলার ঘুম এখন একটু তাড়াতাড়িই ভাঙ্গে সুমনের । আজকে আরও একটু সকাল বেলাতেই ভেঙ্গেছিল । কালকে থেকে একটু মন খারাপ ছিল, তাই বেশি রাত জাগে নি । সকাল বেলাতে নিজের কম্পিউটারের সামনে বসে তাই সময় কাটাচ্ছিল ! এমন সময় মোবাইলের মেসেজ টোন টা বেজে উঠলো !
কে আবার মেজেস পাঠালো ! খুব বেশি দরকার না পড়লে কেউ সুমনকে ফোন অথবা মেসেজ পাঠায় না ! তাও আবার এতো সকালে ! কৌতুহল নিয়ে মেসেজ টা দেখতেই সুমনের চোখ কপালে উঠলো !
মিতুর মেসেজ !
এতো সকলে ওর তো ঘুম ভাঙ্গারই কথা না, তাহলে ?
কিন্তু মেসেজ টা খুলতেই সুমন আরও একটু বেশি অবাক হয়ে গেল । মিতু লিখেছে

‘জনাবের ঘুম ভাঙ্গলে একটু নিচে আসবেন ? ফোন তো ধরেন না, তাই মেসেজ পাঠালাম”

মানে কি ? নিচে বলতে মিতু কি বোঝাতে চেয়েছে ?
ব্যাপারটা বুঝতে আরও কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো ওর ! দৌড়ে চলে গেল জানালার কাছে ! চোখ কপালে ঊঠলো ! ওর ঘর থেকে বাড়ির সামনের রাস্তাটা দেখা যায় । সুমন দেখলো মিতু সেখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ! কালো রংয়ের একটা কামিজ পরা । মাথায় ওড়না দেওয়া !

এই মেয়ে এখানে কি করে ?
সুমন জলদি ফোন দিল মিতু কে ।
-তুমি ? তুমি এখানে কি কর ?
-আমি ? এখানে কি করি ? এই যে দেখো না তোমাদের বাড়ির সামনে একটা পচা ড্রেন রয়েছে, এটা থেকে যে চমৎকার দুর্গন্ধ বের হচ্ছে এটার স্মেল নিতে এসেছি !
-মিতু ! এটা কি ধরনের কথা ?
-গাধার মত প্রশ্ন করলে উত্তর কি দিবো ? আমি এই সাত সকালে এখানে কি করতে আসবো জানো না ? নাকি বুঝো না ?
-আচ্ছা আচ্ছা বাবা ! কুল কুল ! রাগ করতে হবে না ! মাথা ঠান্ডা কর ! আমি আচ্ছি !
-তাড়াতাড়ি আসেন ! আমি কিন্তু এখানে বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না !
-আচ্ছা আমি আসতেছি !

রাস্তায় নামতেই মিতু চোখে একটু আনন্দ দেখা গেল । সকাল বেলা সুমনের মন হঠাৎ করেই অনেক বেশি ভাল হয়ে গেল মুহুর্তেই । গত কালকের মন খারাপের বিষয়টা মনেই রইলো না আর !
কাছে আসতেই সুমন বলল
-তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে !
-হয়েছে ! সুন্দর বলতে তুমি কি বোঝাচ্ছো আমি খুব ভাল করে জানি ! তোমার জন্য এইসব ছাইপাস আমাকে পরতে হয় ! তা না হলে এই ল্যাগিংস কি মানুষ পরে !
-তোমাকে কিন্তু আসলে অনেক চমৎকার মানিয়েছে !
-চুপ থাক !
সুমন মনে মনে হাসে । মিতু আগে ক্খনই এই পোষাক টা পড়তে চাইতো না । সুমনের জোড়াজুড়িতে এখন একটু পরে । বিশেষ যখন ওর সাথে দেখা করতে আসে ! আর আজকে তো বিশেষ কারন রয়েছে !

-কোথায় যাবা বল ?
-জাহান্নামে যাবো !
-এখান থেকে কোন গাড়ি তো ডাইরেক্ট যায় না ওখানে ! কি করি বল তো ?
-চল হেটে হেটে যাই !

সময়টা কিভাবে কেটে গেল দুজনের কেউই টের পেল না ! দুপুর বেলা যখন মিতুকে বাসে পৌছে দিতে গেল তখন সুমুন বলল
-আই এম সরি !
-কেন ?
-কালকের জন্য ! যদিও আমি একটু বিজি ছিলাম তবুও মোবাইলের দিকে আমার একটু লক্ষ্য রাখা দরকার ছিল !
-আমিও সরি ! আসলে তুমি ফোন না ধরলে কিংবা যখন কথা বলতে ইচ্ছা করে তখন যদি তোমাকে কাছে না পাই কি যে কষ্ট লাগে তোমাকে বোঝাতে পারবো না ! খানিকটা অভিমানও হয় ! মনে হয় কেন তুমি আমাকে ফোন কর না ? আমার থেকে বেশি জরুরী কি এতো কাজ তোমার ?
-আচ্ছা বাবু আর হবে না এমন ! ঠিক আছে ?
-হুম ঠিক আছে !

মিতুকে বাসে তুলে দিয়ে সুমন দাড়িয়েই রইলো । বাস যখন চলতে শুরু করলো তখন মিতু জানালা দিয়ে হাত নাড়লো ! জানলা দিয়ে তাকিয়ে রইলো !
মিতুর মন টা একটু খারাপই হল ! মনে হল আরেকটু সময় সুমনের কাছে থাকতে পারলে ভাল হত ! নেমে যাবে নাকি ? যদিও দুপুরের ফিরবে বাসায় বলে এসেছিল বিকেল বেলা গেলেও খুব একটা সমস্যা হবে না !

মিতু কি করবে ঠিক বুঝতে পারলো না । হঠাৎ মিতু দেখলো সুমন দৌড় শুরু করেছে বাসটার পেছন পেছন !
আরে কি করে ছেলে টা এভাবে কেন দৌড়াচ্ছে ?
আশ্চার্য ! এমন কেন করছে ?

দৌড়াতে দৌড়াতে বাসটার গেট টার কাছে পৌছে গেল সুমন ! তারপর এক লাফে বাস টাতে উঠে পড়ল ! যখন গেট দিয়ে বাসে ঊথছে তখন মিতু চোখ সুমনের দিকে ! সুমন চুপ করে এসে বসলো মিতুর পাশে !
মিতু রাগত স্বরে বলল
-এরকম করার মানে কি ? যদি কিছু হএয় যেত ! এভাবে কেউ দৌড়ায় ?
-কি করবো ?
সুমন একটু কাচুমচু কন্ঠে বলল
-আরও কিছুটা সময় তোমার সাথে থাকতে মন চাইলো যে ! তোমার বাসা পর্যন্ত যাই ? যে টুকুই থাকা যায় কাছাকাছি !

হঠাৎ করেই মিতুর চোখটা কেন জানি ভিজে উঠলো । এমন পাগল ছেলেকে ছেড়ে কিভাবে থাকবে ও !

প্রিয় মানুষটার উপরে কিছুতেই রাগ করে থাকা যায় না, কেবল দুজনের কেউ একজন একটু আগে হাত বাড়ালেই হয় ! অন্যজন ঠিকই সেই ডাকে সাড়া দেয়, দিতে বাধ্য !


13
-এই তুমি কোথায় ?
-এই তো বেইলী রোডে ?
-ওখানে কি কর ?
-একটু পরে মর্নিং শীফট ছুটি হবে তো তাই অপেক্ষা করছি !

কিছুক্ষন ফোনের ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ শোনা গেল না, আমি বুঝতে পারছি নিশি নিজের রাগকে দমানোর চেষ্টা করছে ! তবে কতক্ষন পারবে ঠিক বুঝতে পারছি না ! নিশি বলল
-আমার সাথে ব্রেক আপ হয়েছে গতকাল আর এর ভিতরেই নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিলে ?
-কি করবো বল ! সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না ! তেমনি টাংকি মারা কোন ব্রেকআরের জন্য অপেক্ষা করে না !
-তোকে আমি কাছে পাই ! তোর আজকে খবর আছে !
-আরে আশ্চার্য ! তুমি কেন ভুলে যাচ্ছ ? তুমি এখন আর আমার গার্লফ্রেন্ড নও ! সুতরাং তোমার এই রাইট নেই !
-তোর রাইটের আমি খ্যাতা পুড়ি ! তুই থাক ওখানে ! আমি আসতেছি ! আজকে তোর আসলেই খবর আছে !

নিশি ফোন রেখে দেয় ! আমি মনে মনে হাসি !
একটু পরেই নিশি বেইলী রোডে যাওয়ার জন্য বের হবে ! কিন্তু গেট দিয়ে বের হওয়ার পরেই আর সেখানে যেতে চাইবে না ! গেটের কাছেই একজন রোগা পাতলা চশমা পরা ছেলে তার জন্য অপেক্ষা করছে সেই কখন থেকে !

এই তো গেট খুলছে ! নিশি বের হচ্ছে ! আমি অপেক্ষা করতে থাকি আমাকে এখানে দেখে নিশির চেহারাটা কেমন হবে !!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:১৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুই পাগল তোর বাপে পাগল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



রাতে অর্ধেক কাউয়া ক্যাচাল দেইখ্যা হুর বইল্যা— মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে একটা চাপ দিয়া, স্ক্রিন লক কইরা, বিছানার কর্নারে মোবাইলটারে ছুইড়া রাখলাম।

ল্যাপটপের লিড তুইল্যা সার্ভারে প্রবেশ। বৃহস্পতিবারের রাইত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যত দোষ নন্দ ঘোষ...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×