সকাল বেলা।
খায়রুদ্দিন সাহেবের মাঝে মাঝেই পথের মাঝখানে বাথরুমের বেগ চপে যায় ! এমন না যে একটু আগে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে সে কাজটা সেরে আসেন নাই । তিনি একটা পাব্লিক টয়লেট থেকে ঢুকে পড়লেন ভেতরে ! কাজ সেরে বাইরে বের হতেই দরজার সামনে বসে থাকা লোকটা কে বললেন
-কত ?
পাব্লিক টয়লেটের সামনে বসে থাকা লোকটার নাম সবু । সে এটা ইজারা নিয়েছে এক বছরের জন্য ! সবু আজকে সকাল থেকেই খুব মজে আছে । দাঁত বের করে হেসে বলল
-কোনডা করছেন ?
-কোন টা করেছি মানে ?
খায়রুদ্দিন সাহেব একটু তেঁতে উঠলেন ! এমনিতেও তার পেট ক্লিয়ার হয় নি । এই বদমাইশ গুলো পাব্লিক টয়লেট দিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা ঠিক মত পরিস্কার করে না ঠিক মত !
-না মানে ছুডু কাম করছেন নাকি বড় টা ?
-বড় টা !
-ও তাইলে ৫ টাকা !
-ভ্যাট কত পার্সেন্ট ?
সামনে বসা লোকটা মনে হয় খায়রুদ্দিন সাহেবের কথা ঠিক মত বুঝতে পারলো না ঠিক মত !
বলল
-জে স্যার কি কইলেন বুঝি নাই !
-মানে বলতে চাচ্ছি ভ্যাট কত পার্সেন্ট ?
-স্যার ভেট কি ?
খায়রুদ্দিন সাহেব যেন আকাশ থেকে পড়লো ! এই জন্য আজকে দেশের এই অবস্থা ! লোক জন ঠিক মত জানেই না ভ্যাট কি ! যদি ঠিক মত জানেই না ভ্যাট কি তাহলে ভ্যাট দিবে কিভাবে ? দেশ কিভাবে এগিয়ে যাবে কিভাবে !
খায়রুদ্দিন সাহেব বলল লোকটা কে বলল
-ভ্যাট মানে হচ্ছে ভ্যালু এডেড ট্যাক্স ! ট্যাক্স মানে তো বুঝো !
-জে স্যার !
-এটাও সেরকম ! তবে পার্থক্য হচ্ছে এই ট্যাক্স যে কিনবে সে দিবে !
-কিন্তুক স্যার আপনে আমার কাছ থেকে কি কিনলেন ? আপনে তো আরও দিয়া গেলেন ?
এই বলে সবু খ্যাক খ্যাক করে হেসে ফেলল !
-আরে কিছু কিনি নি ? এই দেখো তোমার জায়গায় আমি বসে বসে আরামের কাজ টা করলাম । এই সার্ভিস টা জন্য তো আমাকে ভ্যাট দেওয়া উচিৎ ! তারপর মনে কর এই যে কেবল কাজই নয় এর সাথে পানি আছে তারপর ব্লিচিং পাউডার যেটা দিয়ে তুমি এসব পরিস্কার কর এই সবের জন্য খরচ হয় না ! সেগুলোর সার্ভিস তো আমার জন্য ই খচর হচ্ছে । সেি হিসাবে আমারই দেওয়া উচিৎ নয় ! বল বল কত পার্সেন্ট ভ্যাট !
-স্যার কত পার্সেন্ট হয় ? আপনে যা ভাল বুঝেন দিয়া দেন !
-হুম !
খায়রুদ্দিন সাহবে বলল
-এমনিতেই ভ্যাট হয় ১৫% কিন্তু এর পেছনে আরও একটু কম হওয়া উচিৎ ! সেবা মূলক তো ! এই ধর ৭% ! তাহলে ৫ টাকার ৭% ভ্যাট হয় ৩৫ পয়সা ! এই নাও
এই বলে খায়রুদ্দিন সাহেব পকেট থেকে ৫ টাকার সাথে একটা ২৫ পয়সা আর একটা ১০ পয়সার কয়েন বের করে দিল ! তারপর হাটা দিল !
সবু কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো খয়রুদ্দিনের দিকে । কি বলবে ভেবেই পেল না ! এই টা পাগল নাকি ! হাটা চলাও কেমন যেন অতি প্রকৃস্থিত মনে হচ্ছে !
সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হাতে পরে থাকা ২৫ পয়সা আর ১০ পয়সার কয়েনটার দিকে তাকিয়ে রইলো !
তখনই পেছন সবুর কাধে হাত রাখলো !
-কি ভাই কাকে দেখেন !
সবুর তাকিয়ে দেখে তাদের এলাকার এক মুদির দোকানদার ! পাশেই দোকান বলে বাসায় যাওয়ার থেকে এখানেই এসে কাজ শেষ করে !
-কি ? ঐ পাগলা তোমার এখানে কি করে ?
-পাগলা !
-আরে পাগলা ! আসল পাগলা ! মাথায় সারা দিন ভ্যাট ভ্যাট আর ভ্যাট !
-ক্যান !
-আর কইয়েন না ! একবার আমার দোকানে এসে কিনতে এসেছিল ১০০ গ্রাম সাগু ! কিনতে গিয়ে বলে দাম কত ! ভ্যাট কত ! আমার কত কিছু যে বুঝাই লো ! আরে আমি শুনেছি ঐ বেটার বিয়ের সময় নাকি বউরে দেনমোহর ঠিক করার সময় কয় ভ্যাট কত টাকা দিতে হবে ! তখন পাত্রী পক্ষ বুঝে গেলো যে এই লোকের মাথায় সমস্যা আছে । আর বিয়ে হয় নাই ! তারপর থেকে একলাই আছে !
সবু বলল
-ভাই কি হইছিল ? কন দেখি ? মেন্টাল কেইস টা কি ?
-আরে অনেক বছর আগে একবার দেশে সরকার ঠিক করছিল যে শিক্ষার উপরে ভ্যাট বসাবে ! এই লোক ছিল এর পক্ষে ! বুঝেনই তো কিছু দালাল থাকে না সরকার যাই করে না উঠে পরে লেগে যায় সেইটা জায়েজ করার জন্য ! সব জায়গা কেব্ল ভ্যাট ভ্যাট আর ভ্যাট ! সেই টাইপ ! তারপর কি হয় এই লোক ভ্যাট নিয়ে এতো প্যাঁচাল শুরু করে যে এর মাথা আস্তে আস্তে খারাপ হতে থাকে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার বলে শিক্ষার উপর থেকে ভ্যাট বসানো ঠিক না ! এটা তুলে দেওয়া ভাল !
কিন্তু এই লোক এতো গভীরে ঢুকে গেছিলো তার উপর এর ভ্যাট প্রত্যাহার করার ব্যাপার টা ঠিক মত মেনে নিতে পারে নাই ! মনে একটা ধাক্কা লাগে ! তখন থেকেই লোকটা উল্টা পাল্টা কাজ শুরু করে ! সব কিছুতেই কেবল ভ্যাট ভ্যাট আর ভ্যাট !
লোকে একে কি বলে ডাকে জানেন ?
-কি ?
-ভ্যাটম্যান ! রাস্তা দিয়ে হাটলে পাড়ার ছেলেপেলে দুর থেকে ভ্যাটম্যান বলে ডাক দেয় ! তাকে ক্ষেপায় ! সেই ক্ষ্যাপে যায় ! হা হা হা
আর কোন কথা হয় না ! মুদির দোকানদার ভেতরে চলে যায় ! সবু নিজের টুলের উপর বসে থাকে । ভাবতে থাকে ভ্যাট আর ভ্যাটম্যান নিয়ে !
আহা বেচারা !
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫২