somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ আন্দোলনে চল ...

০২ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘন্টা পড়েছে একটু আগেই । জাফর উল্লাহ রোল কলের খাতা নিয়ে ক্লাস রুমের দিকে এগিয়ে চলেছে । তার মেজাজ টা আজ বেশ চড়া । আজ সকাল থেকেই তার মেজাজ গরম হয়ে রয়েছে । গত কয়েক দিন থেকেই দেশে যা হচ্ছে তা তিনি কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না । সব চেয়ে বড় কথা তার নিজের ক্লাসের ছেলেই কি না এই আন্দোলনে গেছে ।

তিনি বুঝতে পারছেন না এখানে ছাত্ররা কেন রাস্তায় নামবে ? আরে দোষী ড্রাইভারকে তো পুলিশ ধরেছে । ব্যাস খেল খতম !
কিন্তু না এখানে আবার আন্দোলন !
আজকে আন্দোলন বের করবেন তিনি ।

কলেজে আসতেই প্রিন্সিপালের রুমে তার ডাক পড়ে । প্রিন্সিপাল তাকে ভাল চোখে দেখে । অবশ্য এই জন্য তাকে বেশ কিছু কাজও করতে হয় । আজও তেমনই একটা কাজ করতে বলা হয়েছে তাকে । তাকে বলা হয়েছে তার ক্লাসে কেউ আন্দোলনে গিয়েছিলো কি না সেটা খোজ বের করতে । তারপর সেই ছাত্রকে তার কাছে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে । তার ভাষ্যমতে একজন দুইজনকে টিসি দিয়ে বের করে দিলেই আর কেউ আন্দোলনে যাওয়ার সাহস পাবে না ।

প্রিন্সিপালের কাছ থেকে কাছ থেকে কথাটা শুনেই জাফর উল্লাহ মনে মনে ঠিক করে নিয়েছেন কাকে তিনি আজকে টিসি দেওয়ার জন্য ধরবেন । গতকাল রাতেই তিনি টিভিতে ছেলেটাকে দেখেছেন । ছেলেটার নাম সবুজ । খুব ভাল করে চেনে তাকে । তার কাছে একদিন পড়তে গিয়েছিলো তারপর আর যায় নি । তার নাকি ভাল লাগে নি পড়ানো । আজকে তাকে মজা দেখাবেন ।

ক্লাস রুমে ঢুকতেই জাফর উল্লাহ চোখ তুলে সবাইকে দেখলেন । তার চোখ খুজতে লাগলো পরিচিত সেই চেহারাটা ।
এই তো পেয়ে গেছেন ।
পেছনের বেঞ্চের আগের বেঞ্চে বসেছে । তিনি খাতাটা জোড়ে শব্দ করে রাখলেন টেবিলের উপর । তারপর সবার উদ্দেশ্য করে বললাম
-তোদের সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে । শত মানা করা স্বত্ত্বেও তোরা রাস্তায় নেমেছিস ? কে কে গেছিস আন্দোলনে ?


সবাই মাথা নিচ করে দাড়িয়ে রয়েছে । জাফর উল্লাহ আবার চিৎকার করে উঠলো ।
-কে কে গেছিস ?

কেউ কোন কথা বলল না । তিনি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন । সবাই একটু ভয় পেয়েছে তার কন্ঠ শুনে ।
-বস সবাই ।
সবাই চুপ করে বসে পড়লো । তারপর জাফর উল্লাহ বলল
-সবুজ দাড়া !

সবুজ খানিকটা ইতস্তত করে আবার উঠে দাড়ালো । ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো সাদা কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা । জাফর উল্লাহ বলল
-তুই কেন গিয়েছিস আন্দোলনে ? মানা করার পরেও !
সবুজ কিছু বলল না । চুপ করে রইলো ।
-খুব নেতা হয়েছিস ? খুব বড় নেতা ? বেড়িয়ে আয় ! তোর আর কলেজে পড়তে হবে না । আজই তোকে টিসি দিয়ে বের করে দেব । বেরিয়ে আয় এখনই !

সবুজ কিছুটা সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো জাফর উল্লাহর দিকে । তারপর ব্যাগটা কাধে নিয়ে বেঞ্চ থেকে বের হওয়ার জন্য যেই এক পা বের করেছে তখনই জাফর উল্লাহ দেখতে পেল দ্বিতীয় সারি থেকে একজন উঠে দাড়ালো । এই ছেলেটা তার কাছে প্রাইভেট পড়ে । রাজিব নাম । তার খুব পছন্দের একটা ছেলে । আর তিনি এও জানেন সবুজকে এই রাজিব একদম দেখতে পারে না । তার কাছে বের কয়েকবার সবুজের নামে নালিশ দিয়েছে । জাফর উল্লাহ ভাবলো রাজিব নিশ্চয় সাক্ষি দেওয়ার জন্য উঠে দাড়িয়েছে । কিন্তু রাজিব বলল
-স্যার আমিও গিয়েছিলাম সবুজের সাথে । ওকে টিসি দিলে আমাকেও দিতে হবে !

জাফর উল্লাহ অবাক হয়ে তাকালেন রাজিবের দিকে । এমন কি সবুজও অবাক হয়ে তাকিয়েছে রাজিবের দিকে । সে ভাবতেও পারে নি রাজিব এমন একটা কথা বলতে পারে । জাফর উল্লাহ অবাক হলেও সামলে নিলো । তারপর বলল
-তোরা দুজনেই বেরিয়ে আয় !

রাজিব বের হতে যাবে তখন পেছন থেকে আরও দুজন ছেলে দাড়িয়ে গেল । দুজন এক সাথেই বলল
-স্যার আমরাও গিয়েছিলাম !

জাফর উল্লাহ কেবল অবাক হয়ে দেখলেন পরের এক মিনিটের মাথায় ক্লাসের প্রত্যেকটা ছেলে দাড়িয়ে গিয়েছে । সবাই গতদিন রাস্তায় নেমেছে । জাফর উল্লাহ কি করবেন বুঝতে পারলেন না । তিনি তখনই ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলেন । এক প্রকার দৌড়েই চলে গেলেন প্রিন্সিপালের ঘরে । ঘটনা খুলে বলতেই প্রিন্সিপালের চোখ আকাশ উঠলো । তারপরেও তিনি বললেন
-সবাইকে এখানে নিয়ে আসো ।
-কিন্তু স্যার পুরো ক্লাস !
-তো কি হয়েছে ? আপনি জানেন না এই কলেজের গভার্নিং বডিতে কে আছে ! কিছুতো একটা করতেই হবে ।

জাফর উল্লাহ কিছু বলতে গিয়েও বলল না । তিনি খুব ভাল করেই জানেন প্রিন্সিপাল কার কথা বলছে । আর কোন কথা বলল না । ঘর থেকে বের হতে যাবেন তখনই আরেক অবাক করা দৃশ্য দেখলেন । প্রত্যেকটা ক্লাস রুম থেকে পিলপিল করে ছাত্ররা বের হয়ে আসছে । সবাই এসে জড় হচ্ছে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে ।

জাফর উল্লাহ আর প্রিন্সিপাল দুজনেই নিজেদের দরজার সামনে এসে দাড়িয়েছে । কারো মুখে কথা নেই ।
ভীড় থেকে একজন সামনে এগিয়ে এল । তারপর বলল
-স্যার সবাই রাস্তায় নেমেছি । আমার ভাই আর বোনের খুনের বিচার চাইতে নেমেছি । খুনের বিচার চাওয়া যদি অপরাধ হয় তাহলে আমরা সবাই অপরাধী । আপনি আমাদের সবাইকে বের করে দিন !


প্রিন্সিপাল কিছুটা সময় কেবল অবাক হয়েই ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে রইলো । কি তীব্র সেই চাহনী । তিনি তাকিয়ে থাকতে পারলেন না । নিজের কাছেও লজ্জিত লাগছে তার । একটু আগে তিনি কি ভাবছিলেন আর এখন কি দেখলেন !


ছাত্ররা দেখলো তাদের প্রিন্সিপাল ঘরের ভেতরে চলে গেল । ছাত্ররা দাড়িয়েই রইলো । ঠিক ৫ মিনিটের মাথায় স্কুলের মাইকে প্রিন্সিপাল স্যারের কন্ঠ শোনা গেল ।

"প্রত্যেক ক্লাস টিচারদের অনুরোধ করা যাচ্ছে আন্দোলনে যেতে ইচ্ছুক ছাত্রদের সাথে যাওয়ার জন্য । ছাত্রদের নিরাপত্তার দিকটা বিশেষ ভাবে দেখার জন্য বলা হচ্ছে তাদের । ছাত্রদের ন্যায্য দাবীর সাথে আমি একাত্বতা জানালাম"

পুরো কলেজ ক্যাম্পাসের ছাত্ররা একসাথে উল্লাস করে উঠলো । তাদের আন্দোলন চলবেই । আগে তো স্যারদের ভয়ে ভয়ে রাস্তায় নামতো তারা আজ থেকে স্যারেরা তাদের এই ন্যায্য আন্দোলনে সাথে আছে । চল চল সবাই আন্দোলনে চল !

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০৩
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×