somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউঃ টেল নো ওয়ান

০৬ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যে কোন মুভির খোজ পেলে আমি মুভি দেখার আগে খুজে দেখার চেষ্টা করি যে মুভিটা কোন বই থেকে এডাপ্ট করা কি না । এডাপ্ট করা হলে মুভি দেখার আগে বইটা পড়ার চেষ্টা করি । এবং প্রতিবারই দেখা যায় একটা মুভি থেকে বই অনেক গুণ ভাল ভাবে কাহিনীটাকে ফুটিয়ে তুলেছে। এই মুভিটার বেলাতেও এর ব্যতীক্রম নয় ! বইটির নাম টেল নো ওয়ান । লেখক হারলান কোবেন । বইটি প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে । বই থেকে ২০০৬ সালে একই টাইটেল নেম দিয়ে ফ্রাঞ্চ ভাষার একটা মুভি তৈরি হয় !

বইয়ের কাহিনী আগে বর্ণনা করা যাক ।

ডাক্তার ডেভিড বেক এবং এলিজাবেথ ছোট বেলা থেকেই এক সাথে রয়েছে । তাদের বাবারাও বন্ধু মানুষ ছিল । ডেভিডের দাদার কেনা সম্পত্তি লেক চারমেইনে তারা পরিবারসহ আসতো সময় কাটাতে । এক সাথে লেক সাতার কাটতো । তারপর একদিন বেক আর এলিজাবেথ এই লেকের পাশে এক গাছে নিজেদের নাম লিখে এবং প্রথম চুমু খায় । তারপর থেকেই প্রতিবছর একই সময় তারা এই লেক আসে দুজন এনাভার্সারি পালন করতে ।

গল্পের শুরু এমন এক এনিভার্সারির সময় দিয়ে । বেক আর এলিজাবেথ আসে লেকের সাথে । দুজন নাম লেখা স্থানের নিচে একটা ডাক দেয় তারপর লেকে গিয়ে সাতার কাটে । এই সময়ে এলিজাবেথ লেকের উপরে উঠলে বেক কিছু সময় পরে এলিজাবেথের চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায় । এলিজাবেথকে বাঁচাতে গেলে কেউ বেকের মাথায় বেজ বল ব্যাট জাতীয় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে এবং তাকে পানিতে ফেলে দেয় ।

পরে এলিজাবেথের লাশ পাওয়া যায় । পুলিশ খুনিকেও বের করে ফেলে । ২১ জনকে খুন করা এক খুনি এলিজাবেথকে খুন করেছে এটাই বের হয়ে আসে । খুনির সাজাও হয় !

তারপর আট বছর পার হয়ে গেছে । মুল কাহিনীর শুরু এখানেই । একদিন কাজের মধ্য ডা. বেকের মেইলে একটা মেইল আসে । মেইলটা সে মুছেই দিচ্ছিলো তখনই দেখতে পারে সেখানে সংক্ষিপ্তাকারে বেক আর এলিজাবেথের নামের দুই অক্ষর দেওয়া আছে এবং গুনে গুনে একুশটা দাগ দেওয়া আছে । ঠিকই গাছটার মত যেখানে তারা নিজেদের নাম লিখেছিল এবং প্রতিবছর সেখানে গিয়ে একটা দাগ দিয়ে আসছো । এই বছর সেখানে একুশটা দাগ দেওয়ার কথা ।
ইমেলের নিচে একটা হইপার লিংক দেওয়া থাকে কিন্তু সেটা কোন কাজের না । নিচে কিস টাইম । বেক বুঝতে পারে যে সেই সময়টার কথা বলা হচ্ছে যে সময় প্রথমবারের মত বেক আর এলিজাবেথ চুমু খেয়েছিলো । সেই সময়েই যখন বেক যখন হাইপার লিংকে ক্লিক করে তখন একটা সিসিটিভির ফুটেজের ভিডিও চালু হয় এবং সেই ভিডিও তে সে তার মৃত স্ত্রীকে দেখতে পায় ।
তারপর আরেকটা সংকেত দিয়ে মেসেজ পাঠায় তার মৃট স্ত্রী । তাকে একটা নির্দিষ্ট সময়ে দেখা করতে বলা হয় । তার সাথে এও বলা হয় যে কাউকে কিছু না বলতে । কারন ওরা দেখছে ।
বেক বুঝতে পারে না এই ওরা কারা ? কারা দেখছে !

এদিকে লেক চাইমেইনের সম্পত্তির পাশে দুজন গুন্ডার মৃত দেহ পাওয়া যায় । তাদের পাশের একটা ভারী বেজবল ব্যাট পায় পুলিশ এবং এই ব্যাটে লেগেছিল বেকের রক্ত । তাদের সাথে পাওয়া যায় একটা লকারের চাবি । লকারের ভেতরে পাওয়া যায় একটা পিস্তল এবং এলিজাবেথের কিছু ছবি । ছবিতে দেখা যায় এলিজাবেথের শরীরে আঘাতের চিহ্ন । সেটা থেকে এফবিআই সন্দেহ করে যে এলিজাবেথকে তার স্বামী বেথই খুন করেছে এবং খুন করে সেই সিরিয়াল কিলারের নাম দিয়েছে । এফবিআই বেকের পেছনে লাগে । একই ভাবে অন্য কেউও বেকের পেছনে লেগে । তাকে অনুসরন করে ।
এরই মাঝে বেক ফেসে যায় আরও এক খুনের ঝামেলায় । এলিজাবেথের পুরাতন এক ফটোগ্রাফার বন্ধুর সাথে বেক দেখা করে এলিজাবেথের সেই ছবির কথা জিজ্ঞেস করে । এবং সেই রাতেই সে খুন হয় ! খুনের পিস্তল আর গ্লোভ পাওয়া যায় বেকের ডাস্টবিনে ! তার নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয় ।

আর্ত্মসমর্পন করতে বলা হয় তাকে কিন্তু এলিজাবেথ তাকে বিকেল ৫টার সময় দেখা করতে বলা হয়েছে । পুলিশের কাছে ধরা দিলে তো এলিজাবেথের সাথে দেখা হবে না । এখন সে কি করবে ?

এই ভাবে কাহিনী অতি দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে । বেক বুঝতে পারে না যে তার স্ত্রী আদৌও বেঁচে আছে কি না ! নাকি এফবিআই তার সাথে কোন খেলা করছে । এলিজাবেথ যদি দেখাই দিবে তাহলে এতো লুকোচুরি করছে কেন ? কে তাদের দেখছে ? কে তার উপর নজর রাখছে ! এর সাথে জড়িয়ে আছে খুব আর শক্তিশালী কেউ ! কিন্তু এলিজাবেথের আর তার পেছনে কেন লেগেছে তারা ? কি করেছে সে ?

এই সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায় শেষ । তবে একেবারে শেষে পরপর দুটো টুইস্ট এসে হাজির হয় ! প্রথম টুইস্টটা আমি পড়তে পড়তেই বুঝে গিয়েছিলাম যদিও কিন্তু একেবারে শেষ টুইস্টটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না !

মুভির কাহিনীও মোটামুটি একই রকম ! তবে বইতে যেমন সব কিছু ডিটেইল আকারে দেওয়া মুভিতে সেটা নেই । মুভিতে অনেক কিছু বাদ রয়েছে এবং সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে বইয়ের শেষ টুইস্টটা মুভিতে নেই ।

অনেক দিন পরে আমি এরকম টান টান উত্তেজনার বই পড়ালাম । বলা চলে একেবারে এক টানে বইটা পড়ে শেষ করেছি । অনেক গল্প থাকে যেখানে বাড়তি অনেক কথা বার্তা লেখা থাকে । এই বইটাতে তেমন কিছু নেই । কিছুই না । প্রতিটা পৃষ্ঠা এখানে দরকারী । একটা পাতাও এড়িয়ে যাওয়ার মত নেই ।

টেল নো ওয়ান মুভি দেখার আগে অবশ্যই বলবো যেন বইটা আগে পড়বেন । ইংরেজি বইটার পিডিএফ পাওয়া যাবে অনলাইনে । বাতিঘর থেকে বইটার অনুবাদও বের হয়েছে ২০১৭ সালে । এটার পিডিএফ পাওয়া যাবে অনলাইনে । তবে বইটা রকমারি থেকে কিনতে পারেন । এছাড়া যারা বই পড়তে পছন্দ করেন না তারা মুভিটা দেখতে পারেন । যদিও ফ্রেঞ্চ ভাষায় তবে সাবটাইটেল দেওয়া পাওয়া যাবে সাথেই । টরেন্ট থেকেই মুভিটা নামিয়ে নিতে পারেন । নেটফ্লিক্সে মুভিটা পাওয়া যাবে কি না এই প্রশ্ন করবেন না ! নেটফ্রিক্সের সার্চ বাক্সে সার্চ দিলেই সেটা আপনার বুঝতে পারার কথা । আপনি যে নেটফ্লিক্স চালান সেটা মানুষ কে শোনানোর প্রয়োজন নেই ।

বইটা কিনতে রকমারিতে ক্লিক করুন

মুভির ট্রেইলারটি দেখতে পারেন এই ইউটিউব লিংক থেকে । ট্রেইলারটি কিঞ্চিৎ নিউডিটি আছে । ১৮ প্লাস ট্যাগ দিলাম আগে থেকে ।

সামুতে টরেন্ট লিংক দেওয়া নিষেধ নয়তো মুভির ডাউনলোড লিংক দিয়ে দিতাম । কিকএস টরেন্টে গিয়ে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন মুভিটা !

ছবি উৎস- kanopy.com
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ১:২২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×