আজকের পোস্ট যদিও কোন গল্পের না । তবে পোস্ট শুরু হোক ছোট একটা রূপকথার গল্প দিয়েই ।
অনেক কাল আগের কথা । কোন একটা ছোট গ্রামে এক কৃষক বাস করতো । তার ছিল বাগান করার সখ । সে নিজের বাড়ির সামনে এক টুকরো জমিতে ফুল আর ফলের বাগান তৈরি করেছিলো । দিনের কাজ শেষ করে সে অবসরে সে তার সুন্দর বাগানে কাজ করতো । গাছের পরিচর্যা করতো । তার বাগানে নানান ফুল ফুলে ভরে উঠতো প্রতি ঋতুতেই । ফুলের গন্ধে তার মন ভরে উঠতো । এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিলো । একদিন বাগানে ঢুকতে গিয়ে কৃষক দেখতে পেল বাগানের কয়েকটা গাছ কেউ খেয়ে ফেলেছে । কয়েকটা গাছের ডাল ভাঙ্গা । পরদিনই ধরে ফেলল কাজটা কে করেছে । গ্রামের এক বৃদ্ধ রামছাগল তার বাগানে ঢুকে এই কাজ করেছে ।
কৃষকের খুব মেজাজ খারাপ হল । তবে সে মানুষ ভাল ছিল । সে রাম ছাগলটাকে ডেকে বলল, শোন ভায়া, তুমি যে কাজটা করছো সেটা মোটেই ভাল কোন কাজ না । খাওয়ার জন্য ঘাস আছে সেগুলো খাও । সুন্দর গাছ খেয়ে বানাগের সৌন্দর্য্য নষ্ট কর না ।
রাম ছাগল বলে কথা । সে কী আর ভাল কথা শোনে ! পরদিন আবারও একই কাজ করলো । কৃষক আবারও তাকে ডেকে বুঝালো । তৃতীয়দিন যখন এই একই কাজ করলো কৃষক তখন বুড়ো রাম ছাগলের পেছনে একটা কষে লাথি মারলো তারপর বাগান থেকে বিদায় করে দিল । এবং সেই দিনই বাগানের চারিদিকে ব্যাড়া দিয়ে দিল ।
এখন একে তো রাম ছাগল তার উপরে বয়স হয়েছে । সে পরদিন আবারও বাগানে এসে হাজির হল । এবং বাগানে ব্যাড়া দেখে খুব চটে গেল । তারপর নিজের ব্লগপোস্ট থেকে পোস্ট করলো কিছু কিছু কৃষক আমাকে তাদের বাগান থেকে ব্যান করে রেখেছে । ইহা আমার পাতা স্বাধীনতার পরিপন্থি । ইদানীং শান্তিতে এদিক ওদিক কিছুই খাওয়া যায় না । এরা কেমন কৃষক ! এরা দেশের উন্নতি কেমনে করবে ....
গল্প আপাতত এখানে শেষ । গল্প পড়ে মনে হতে পারে আরে এটা আবার কেমন গল্প । রাম ছাগল আবার কিভাবে পোস্ট লিখে ! মানুষ আবার রাম ছাগলের সাথে কথা বলে কিভাবে !
আরে ভাই, এই জন্যই বললাম রূপকথার গল্প । গল্পের গরু আকাশে ওড়ে । এখানে গল্পের ছাগল ব্লগ পোস্ট লিখতেই পারে !
যাই হোক, এবার আসল কথায় আসা যাক । কদিন আগের কথা । ফেসবুকে আমি একটা স্থানে খুব সাধারণ মন্তব্য করেছি । মন্তব্যে কোন গালী ছিল না, কোন খারাপ ভাষাও ছিল না । তবে মন্তব্যটা ছিল একটা বিশেষ জাতির স্বভাব সম্পর্কে । মন্তব্য করার কয়েক মিনিট পরেই আমার কাছে নোটিফিকেশন এসে হাজির হল যে আমার মন্তব্যটা ফেসবুকে রুলস ভঙ্গ করেছে । বুঝলাম কেউ রিপোর্ট করেছে । আমার ওয়ার্নির দেওয়া হল যে এরপর যেন এমন মন্তব্য আর না করা হয় । তাহলে আমাকে রেস্ট্রিক্ট করা হবে । রেস্ট্রিক্ট বলতে তিন দিন আমি কোথায় মন্তব্য করতে পারবো না, লাইক কমেন্ট করতে পারবো না ।
সামুতেও এই সিস্টেম রয়েছে । কেউ নিয়মের বাইরে মন্তব্য করলেই তাকে শাস্তি পেতে হয় । নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কমেন্ট ব্যান অথবা আজীবন ব্যান । এটা কর্তৃপক্ষ করে থাকে । অর্থ্যাৎ আপনি যদি কোন অপরাধমূলক কাজ করেন তাহলে আপনাকে শাস্তিস্বরূপ এই কমেন্টব্যান দেওয়া হয়েছে । এর অর্থ দাড়াচ্ছে, আপনি অপরাধী । আপনি নিয়ম ভেঙ্গেছেন । কিন্তু কেউ কেউ এই ব্যাপারটাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করে যেন সে আসলে অপরাধি না, সে হচ্ছে ভিক্টিম ।
এই গেল এক ধরনের কমেন্ট ব্যান । আরেক ধরনের কমেন্টব্যান হচ্ছে কোন নির্দিষ্ট ব্লগার অন্য কোন নির্দিষ্ট ব্লগারকে নিজের ব্লগে মন্তব্য করা থেকে যখন বিরত রাখতে চান তখন ব্লাক লিস্টে তার তুলে দেন । আগে একটা সময় আমি মনে করতাম কমেন্ট করাটা মোটেই ভাল কোন কাজ না । কিন্তু বর্তমানে কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যাক মানুষের কমেন্টের ধরন তার মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখে আমার ঐ গল্পের কৃষক আর রাম ছাগলের কথা মনে পড়ে যায় । তখন মনে হয় যে মানসিক শান্তি এবং পোস্টের সৌন্দর্য্য বজায় রাখার জন্য কমেন্ট ব্যান অপশান যদি কেউ ব্যবহার করে তাতে দোষের কিছু নেই ।
এই যে এই ধরনের কমেন্ট ব্যান কিন্তু কেউ হুট করে করে না । কিংবা চেনা না জানে এমন কাউকেও কমেন্ট ব্যান সাধারনত করে না । যদি নিজের ব্লগে কেউ কাউকে কমেন্ট ব্যান করে তার অর্থ হচ্ছে সেই নির্দিষ্ট ব্লগারকে সে খুব ভাল করেই চেনে। সে তার মন্তব্যের ধরন, মানসিকতা সম্পর্কে জানে । এবং এটাও ধরে নেওয়া যায় যে আগে সেই ব্লগারের সাথে তার মন্তব্য প্রতিমন্তব্যের ঘটনা ঘটেছে ।
এখন অনেকে এই ভুল ধারণা পেষণ করতে পারে যে আমার মন্তব্য আসলে খুব ধারালো, ব্লা ব্লা ব্লা আর এই ধার সহ্য করতে না পেয়ে আমাকে কমেন্ট ব্যান করেছে । ওয়েল, পাগলের সুখ মনে মনে হলে যা হয় আর কি । বর্তমান এই সময়ে আসলে তর্কে কেউ কারো থেকে কম না । আরও ভাল করে বলল অনলাইনটা এখন এমন হয়ে গেছে যে কিছু একটা নিয়ে তর্ক শুরু হলে সেটা চলতেই থাকে । আপনি যে যুক্তিই দেন না কেন নিশ্চিত থাকতে পারেন যে প্রতিপক্ষের কাছে আপনার মন্তব্যের জবাব থাকবেই । যদি কেউ আপনার মন্তব্যের জবাব দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তবে ভাববেন না যে আপনার সাথে সে তর্কে হেরে গেছে, সে জাস্ট আপনার সাথে তর্ক করতে আর আগ্রহী নয় । এই ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন ।
এটা কোন ভাবেই ভাববেন না যে আপনার মন্তব্যের ভয়ে সে আপনাকে কমেন্ট ব্যান করেছে । আপনার মন্তব্যের জবাব দেয় নি কিংবা কমেন্ট করতে দিচ্ছে না এর মানে হচ্ছে মানুষ হিসাবে আপনাকে সে মোটেই দাম দিচ্ছে না আপনার কমেন্টের কোন মূল্য নেই তার কাছে। এই কথাটা বললাম কারণ সামুতে এখন কমেন্ট খরা চলছে । ব্লগে সবাই চায় নিজের পোস্টে মন্তব্য পড়ুক । কিন্তু একবার ভাবুন, কমেন্ট নেই, তারপরেও তারা যাচ্ছে না যে আপনার মত কারো মন্তব্য পোস্টে পরুক । কী তুচ্ছো আপনি তার কাছে !
আবার আরও একটা ব্যাপারেও কেউ কমেন্ট ব্যান খেতে পারে । অনেকেই আছে মন্তব্য করার সামান্য টুকু সৌজন্যবোধ টুকু বজায় রাখতে পারে না । তাদের মন্তব্যের কারণে পোস্টের সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে যায় । এমন ঘটনা আপনারা অনেকেই লক্ষ্য করে দেখেছেন । ব্লগার শের শায়েরী কিংবা ভুয়া মফিজের চমৎকার কিছু পোস্টের সৌন্দর্য্য কিভাবে কেবল মন্তব্যের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে । এই কারণেও কোন কোন ব্লগার কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্লগারকে কমেন্ট ব্যান করে রাখেন যাতে যারা পোস্টটাকে নষ্ট না করতে পারে ।
আমি অবশ্য কমেন্ট ব্যান করতে পছন্দ করি না মোটেও । আমার এই নয় বছরের ব্লগিং জীবনে আমি হাতে গোনা দশজনকে কমেন্ট ব্লক করেছি, যাদের প্রায় সবাকেই কমেন্টব্যান করেছি খারাপ ভাষা ও ছবি ব্যবহার করার কারণে । আর কয়েকজনকে ব্যান করেছি মাল্টিনিক থেকে এসে তর্ক করার কারণে । যারা নিজের আসল নিকে সাধু হয়ে থাকে আর মাল্টি নিক দিয়ে কথা বলতে আসে তাদেরকে আমার কাপুরুষ মনে হয় । এদের সাথে তর্ক করার কোন মানে নেই ।
এই ছাড়া ব্যান করার কথা আমার মাথায় আসে না । বরং আমি যে কাজটা করি সেটা হচ্ছে কমেন্টের জবাব দেই না । আমার কাছে এর থেকে বড় অপমানের আর কিছু নেই । আমি আমার পুরো ব্লগিং জীবনে যাদের পোস্টে মন্তব্য করেছি যদি সেই পোস্টের মন্তব্যের উত্তর তারা না দিয়ে থাকে তাহলে মনে থাকলে সেই তাদের পোস্টে আর কোন দিন মন্তব্য করি নি । এটা আমার কাছে অপমানজনক মনে হয়েছে । ঠিক এই কাজটাই আমি অন্যদের বেলাতেই করি । কেউ যদি পোস্ট বহিঃভুত, অপ্রাসাঙ্গিক মন্তব্য করে তাহলে তার মন্তব্যের জবাব আমি এড়িয়ে যাই । তার মন্তব্য পেরিয়ে নিচের জন্য মন্তব্যের জবাব দিই । এতে করে কী হয় ! মন্তব্যকারী অপমানিতবোধ করে । আমার কাছে মন্তব্যের জবাব না দেওয়ার অর্থ হচ্ছে তুমি কি বললে, তাতে আমার আসলে কিছু যায় আসে না কিংবা দেখো তোমার মন্তব্য আমার কাছে তুচ্ছ, এতোই তুচ্ছো যে সেটার জবার দেওয়ার প্রয়োজন আমি মনে করি না ।
কমেন্ট ব্যানের ব্যাপারটাও খানিকটা এই রকমই । উপরের কারণ গুলো ছাড়াও কমেন্টব্যান মানে হচ্ছে তুমি আসলে কি বলবে সেটা আমার কাছে মোটেও জরূরী নয় । তুমি হচ্ছো তুচ্ছো ! তবে কমেন্ট ব্যান করলে সেটা অন্য ব্লগাররা দেখতে পারে না । তুচ্ছ করার ব্যাপারটা কেবল এই দুইজনই জেনে থাকে কিন্তু যখন আপনি কারো মন্তব্যের জবাব দিলেন না তখন সেটা অন্য অনেক ব্লগারই দেখতে পেল । তুচ্ছো করার ব্যাপারটা অনেকে জেনে গেল । এটা আমার কাছে বেশি অপমানের মনে হয় !
যাই হোক আজকের পোস্ট এখানেই শেষ । এটা কোন সিরিয়াস পোস্ট না । এমনি মনে হল কিছু একটা লিখি তাই লিখলাম । এই পোস্ট পড়ে কেউ আবার অফেন্ডেড হয়ে যাইয়েন না । যদি অফেন্ডেড ফিল করে থাকেন, করেন, তাতে কিছু যায় আসে না আসলে ।
ভাল থাকুক সব সময় ।
Photo by Steve DiMatteo from Pexels
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:১৮