১. আমার ওয়েবসাইটে গুগল এড চালু করা আছে । যে কেউ আমার সাইট ভিজিট করে সে কিছু এড দেখে। যাদের এই ব্যাপারে ধারণা আছে তারা জানেন যে কী ধরনের এড একজন ভিউয়ার দেখবে সেটার উপর আমার কোন প্রকার হাত নেই । মূলত সেই ভিজিটর সারা দিন নিজের ব্রাউজার ব্যবহার করে যে ধরনের সাইটে যান, গুগল সেই তথ্য এনালাইজ করে ঠিক সেই ধরনের কিংবা তার কাছাকাছি ধরনের এড তাকে দেখাবে । যেমন আপনি যদি সারাদিন মোবাইল কম্পিউটারের ব্যাপারে অনলাইনে ঘাটাঘাটি করেন তাহলে আপনি আলিবাবা/এমাজনের মোবাইল/পিসির এড দেখতে পাবেন । তো গতকাল কী হয়েছে, একজন পাঠক আমার ইনবক্সে একটা স্ক্রিন শট পাঠিয়ে বলল যে দেখেন আপনার সাইটে এই এড আসে । সেটা একটা এডাল্ট এড ছিল । সে ভেবেছে যে হয়তো আমিই এড সেট করেছি । কিন্তু সে আসলে জানে না যে এই এডাল্ট এড সে দেখছে তার কারণ হচ্ছে সে সারাদিন কোন এডাল্ট সাইটে ঘুরাফেরা করেছে । এইভাবে নিজের একটা দিক আমার সামনে প্রকাশ পেয়ে গেছে ।
ঠিক এমন একটা ঘটনা অনেক দিন আগে সামুতে ঘটেছিল । একদিন হঠাৎ একজন ব্লগার প্রথম আলো সাইটের একটা এডের পোস্ট স্ক্রিনশন নিয়ে এক জ্বালাময়ী পোস্ট দিল । লিখলো যে প্রথমআলোর মত একটা সাইটে কি করে কি অশালীন এড দেখাচ্ছে । ওদের লজ্জা হওয়া ঊচিৎ । কিন্তু বেচারার এডসেন্সের এই ফিচারের কথা জানা ছিল না সম্ভবত । প্রথম আলোর দোষ ধরতে গিয়ে বেচারার নিজের অকাজের পরিচয় মানুষ পেয়ে গেল। তারপর ব্লগাররা তাকে যেই ধোলাই দিল । তাকে আর কোণ দিন সামুতে পোস্ট দিতে দেখি নি ।
২. সামু ব্লগের সকল ব্লগারদের সাথে আসলে ব্যক্তিগত ভাবে কোন চিন পরিচয় নেই । একেবারে প্রথম যখন এখানে লেখালেখি শুরু করেছিলাম তখন হঠাৎ করেই কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছিলো । ব্লগের বাইরেও তাদের সাথে একটা সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিলো । তাদের কারো কারো সাথে এখনও বেশ ভাল সম্পর্ক রয়েছে । তবে তারা সবাই ব্লগ ছেড়েছেন । বর্তমানে সামুতেে যাদেরকে পছন্দ করি কিংবা অপছন্দ করি তাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত কিংবা ব্লগের বাইরে কোন প্রকার সম্পর্ক বিদ্যমান নয় । যা সম্পর্ক কেবল মাত্র তা এই ব্লগেই । অর্থ্যাৎ আপনাকে যদি আমি পছন্দ করি তাহলে তা আপনার পোস্ট কিংবা মন্তব্য পড়েই পছন্দ করেছি একই ভাবে অপছন্দ করাটাও । তবে কী অপছন্দের ব্যাপারটা আমার খুব বেশি দিন মনে থাকে না । একজনের মন্তব্য খুব বেশি অপছন্দ হল প্রথমে কয়েকদিন তার কথা মনে থাকবে তারপর সেই নিকের কথা আর মনেই থাকবে না । দেখা যাবে কদিন পরে ঠিকই তার পোস্ট পড়ছি ভাল লাগলে লাইক দিচ্ছি । তবে হ্যা অযাচিত ভাবে যে মানুষ ব্যক্তিক্রম করেছে তার থেকে অপছন্দের মনভাবটা সহজে দুর হয় নি । সেটাতে সময় লেগেছে ।
৩. গত পরশু দিন একটা খবর চোখের সামনে এল। বাংলাট্রিবিউনের একটা নিউজ। খোজ করলে আপনারাও পেয়ে যাবেন আশা করি। খবরটা হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । এমনটা হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। মেধাবী ছাত্ররা শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাবে এমনটাই স্বাভাবিক । কিন্তু এই নিয়োগের একটা বিশেষত্ব রয়েছে যা নিয়ে নিউজ টা হয়েছে । আমরা জানি স্বাধারনত শিক্ষক হয় ডিপার্টমেন্টের সব থেকে মেধাবী ছাত্ররা । অন্তত এমন কেউ যাদের রেজাল্ট একেবারে প্রথমসারির দিকে থাকে । কিন্তু যিনি শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন তার রেজাল্ট প্রথম বিভাগে তো নয়ই, দ্বিতীয় বিভাগের ভেতরে সে হয়েছে দশম তম । এই শিক্ষক নিয়োগ প্রাপ্ত ছাত্রটি তাদের ক্লাসে একমাত্র যে কিনা একটা বিএসসির একটি কোর্সে ফেল করেছে । আরও একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে চান্স পান নি । পেয়েছিলেন তার বাবা শিক্ষক বলে, সেই কোটা থেকে । এমন উপযুক্ত একজন ছাত্র শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন দেখে আমি খুব বেশি আনন্দিত ।
এই ব্যাপারে আমার নিজের একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি । আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আমাদের ঠিক একই রকম একজন স্যার ছিলেন । স্যার ছিলেন রেজাল্টের দিক দিয়ে সেই ক্লাসের ২৫ তম মেধাবী । কিভাবে সে নিয়োগ পেয়েছিলেন সেদিকে না যাই । পেয়েছিলেন সেটাই বড় কথা । সৌভাগ্যক্রমে দুইটা কোর্স আমরা পেয়েছিলাম। মাশাল্লাহ স্যার যে কী চমৎকার ভাবে পড়াতেন আর বুঝাতেন আমরা সবাই হা করে শুনতাম । সে যে কি বলতো সে নিজেও জানতো না। একটা টপিকের একটা লাইন বলতে গেলে তাকে সামনে রাখা বই তিনবার দেখতে হত । কিছু একটা প্রশ্ন করলেই রেগে যেতেন । এই দুইটা কোর্সে আমরা যে কি পড়েছিলাম সেটা আমাদের ক্লাসের কেউ কোন দিন কইতে পারবে না । খুব সম্ভবত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ ডিপার্টমেন্টের ছাত্রছাত্রীরাও আমাদের মত অভিজ্ঞতার স্বীকার হতে চলেছে । একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন খারাপ অযোগ্য শিক্ষক যখন নিয়োগ পায় তখন সেটার ইফেক্ট বুঝতে অন্তত বছর পাঁচেক সময় লাগে । এবং সেই ইফেক্ট সেই ডিপার্টমেন্টে সেই অযোগ্য শিক্ষক চলে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ সময় ধরে থাকে ।
৪. ইদানীং বই পত্র কম কম পড়া হচ্ছে । ইদানীং বলতে মাস দুয়েক ধরে এমন হচ্ছে । বই পড়তে একটা দারুন অসল লাগে । এর থেকে মনে হয় মুভি কিংবা টিভি সিরিজ দেখাটাকে বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয় । গতদিন এমন একটা টিভি সিরিজ দেখে শেষ করলাম । মোট ছয় পর্বের ছোট একটা সিরিজ । নাম ''বিহাইন্ড আর আইস''। আমার কাছে কাহিনীটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে । কাহিনী শুরু হয় ডিভোর্সী লুইস রাতে একজনের সাথে দেখা করতে যায় । কিন্তু যার সাথে দেখা করতে যায় সে আসতে পারে না । মন খারাপ করে যখন সে চলে আসবে তখনই এক লোকের সাথে ধাক্কা খায় । পরে সেখানেই দুজন গল্প করে । বেশ কিছু সময় কাটায় ক্লাবে । ফেরার সময়ে একে অন্যকে চুমু খায় ওরা। তারপর ফিরে আসে । পরদিন লুইস যখন নিজের অফিসে যায় তখন গিয়ে দেখে গতরাতের সেই লোকটাই হচ্ছে ওর অফিসের নতুন সাইক্রাইয়াটিস্ট ডেভিড। লুইস তারই সেক্রেটারি । একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয় ।
তারপর ছেলেকে স্কুলে রেখে আসতে গিয়ে এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খায় লুইস । মেয়েটাকে রাস্তা থেকে তুলতে গিয়ে দেখে সেই মেয়ে আর কেউ না, সেই ডেভিডের স্ত্রী এডেল । দুইজনের সাথেই লুইসের সম্পর্ক তৈরি হয় । এডেল তাকে তাকে বলে যে সে যে লুইসের সাথে পরিচিত এটা যেন ডেভিড না জানে । লুইস বলে না । এদিকে ডেবিডের সাথে লুইসের একটা অবৈধ সম্পর্কে তৈরি হয় অন্য দিকে এডেলের সাথে লুইসের একটা বন্ধুত্ব পূর্ন সম্পর্ক তৈরি হয় । গল্পের ফাঁকে এডেলের অতীত জীবনের অংশ দেখানো হয় । এডেলরা বেশ বড়লোক থাকে । ডেভিডের বাবা এডেলদের স্টেটে কাজ করতো । এক দিন এডেলদের বাড়িতে আগুন লাগে । এডেলের বাবা মা মারা যায় এবং ডেভিড এডেলকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করে । তবে এটা এডেলকে মানসিক আঘাত করে । তখন তাকে একটা হাসপাতালে পাঠানো হয় । সেখানেই রব নামে একজনের সাথে এডেলের বন্ধুত্ব হয় । পরে তারা বেস্টফ্রেন্ড হয়ে যায় । হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে রব পরে এডেলের বাসায় বেড়াতে যায় । সেখানে ডেবিড আসে এবং রবকে পছন্দ হয় ওর । এক সময়ে ডেভিডের সাথে এডেলের বিয়ে।
এদিকে যখন ডেভিড জানতে পারে যে এডেল আর লুইসের সাথে পরিচিত তখন ডেভিডের মাথা খারাপ হয়ে যায় । সে লুইসকে চাকরি থেকে বের করে দেয় । তবে লুইস গোপনে এডেলের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যায় । একটা সময়ে মনে হয় যে ডেভিডই হচ্ছে আসল দোষী । সে রবকে খুন করেছে । এভাবেই শেষ পর্যন্ত যে কাহিনী কোন দিকে এগিয়ে যায় সেটা দেখতে হলে সিরিজটা দেখতে হবে । এক বসাতেই সিরিজটা দেখে শেষ করে ফেলা সম্ভব । একটু মনযোগ দিয়ে দেখলেই আসল টুইস্টটা ধরে ফেলা সম্ভব । তবে যদি সেটা না ধরতে পারেন তাহলে শেষে গিয়ে খুব মজা পাবেন আশা করি ।
Photo by Jason Rosewell on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:৩৯