somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমন ব্লগঃ বিলাইছড়ি ভ্রমনের গল্প

৩১ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


করোনার কারণে ঘুরাঘুরি বাদ বলা চলে একেবারে । শেষ ঘুরতে গিয়েছিলাম সেই ফেব্রুয়ারিতে । আর ঢাকা থেকে বের হওয়া বলতে কেবল ঈদে গিয়েছিলাম গ্রামে । তাছাড়া পুরোটা সময় ঢাকাতেই বসে থাকতে হয়েছে । গ্রাম থেকে আসার পর থেকেই কোথাও যেতে ইচ্ছে করছিলো । তবে শারীরিক কিছু কারণে যেতে ইচ্ছে করছিলো না কোথায় । বান্ধুপি যখন বলল যে চল যাই রাঙ্গামাটি, প্রথমে মানাই করে দিলাম । বললাম যে যাবো না । শরীর ভাল না । পেট খারাপ ! তবে কোথাও যাওয়ার লোভ আর সামলানো যায় নি । পরে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়ে নিলাম ।

গত বৃহস্পতিবার রাতে আমরা রওয়ানা দিলাম রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে । এখানে বলে রাখি ফেসবুকে এখন বেশ কিছু সুপরিচিত ট্যুর গ্রুপ আছে যারা নিয়মিত এই রকম ট্যুরের আয়োজন করে থাকে । এই রকম একটা গ্রুপের সাথে প্রায় তিন বছর ধরে যুক্ত রয়েছি আমি । ঘুরাঘুরি তাদের সাথেই হয়ে থাকে । ছাত্র জীবনে যত ট্যুর দিয়েছি সব গুলোর আয়োজক থাকতাম আমি সহ কয়েকজন । টিকেট কেনা থেকে শুরু করে যাত্রার যাবতীয় ঝামেলা আমরা সামাল দিতাম । তাই এটার ঝামেলা কতখানি সেটা জানি । এখন এই কাজটাই এই গ্রুপ গুলো করে । আমরা কেবল টাকা দিই বাদ বাকি সব কিছুর দায়িত্ব তাদের । ঝামেলা বিহীন ভাবে ঘুরে আসি ।

যাই হোক গল্প শুরু করা যাক । সকালে পৌছিয়ে গেলাম কাপ্তাই । বান্দরবানে আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি তবে রাঙ্গামাটিতে এই প্রথম । কাপ্তাইয়ে নেমে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে নিলাম । এখানে একটা কথা বলে রাখি যে কাপ্তাইয়ে আসলে ফ্রেশ হওয়ার জন্য খুব একটা ভাল ব্যবস্থা নেই । একটা পাবলিক টয়লেট দেখতে পেলাম যেটা খুব একটা যুতসই ছিল না । হোটেলেও টয়লেট জাতীয় কিছু ছিল না । বান্দরবানের অবশ্য এই ঝামেলা নেই । সেখানে বেশ ভাল পরিস্কার ব্যবস্থা আছে প্রতিটি হোটেলের সাথেই ।

নাস্তা করে আমরা ট্রলারে চেপে বলসাম । সেখান থেকে ঘন্টা দুয়েকের ট্রলার যাত্রা করে হাজির হলাম বিলাইছড়ি উপজেলাতে । মূলত এটাই আমাদের বেজ পয়েন্ট । সেখানে আমাদের জন্য আগে থেকেই রিসোর্ট বুকিং দেওয়া ছিল । এখানে ব্যবস্থা বেশ ভাল । ফ্রেশ হয়ে নিলাম এখান থেকেই । নাস্তা খাওয়াই ছিল তাই আর খাওয়ার দরকার ছিল না খুব একটা ।

শুক্রবার আমাদের দুইটা ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার কথা । ঝর্ণা দুইটার নাম হচ্ছে 'ন কাটা' আর 'মুপ্পাছড়া' । দুইটা ঝর্ণাই একই জাগয়াতে । বলা যায় যে দুটো আসলে একই ঝর্ণা । একটা উপরে আরেকটা নিচে । উৎস একই স্থান । আমরা আবার ট্রলারে রওয়ানা দিয়ে দিলাম ।

যাওয়ার পথের দৃশ্য ।
মোটামুটি ঘন্টা দেড়েক জার্নি করে পৌছালাম আসল জায়গায় । এরপর পায়ে হাটা পথে । আমরা সবাই হাটা শুরু করলাম। বান্দরবানে যে কঠিন পথ আমি পাড়ি দিয়েছি তার তুলনাতে এই পাহাড়ে ওঠানামাটা আসলে একেবারে দুধভাত বলা যায় ! তবে যারা প্রথমবার তাদের জন্য একটু কষ্টেরই হবে ।
আমরা প্রথমে পৌছালাম ন কাটা ছড়িতে । ছবিতে আসলে এই সৌন্দর্য্য কোন ভাবেই বোঝা যাবে না । দেখতে হবে সরাসরি । তাহলেই আসল সৌন্দর্য্য বোঝা যাবে । তবুও দিলাম কয়েকটা ছবি ।


ন কাটা ছড়ি



ন কাটা থেকে আমার গন্তব্য এবার মুপ্পাছড়ার দিকে । যাওয়ার পথে আরও একটা ঝর্না পড়লো !


এই যাত্রা পথে বেশ মজা হয়েছিলো । আমাদের গ্রুপের এক অংশ আগেই রওয়ানা দিয়েছিল । আমরা ইচ্ছে করেই পেছনে ছিলাম। হাটা দিলাম কিছু সময় পরে । তবে যে বাঁকে যাওয়ার কথা ছিল সেদিকে না গিয়ে অন্য দিকে হাটা দিলাম । পথ ভুল হল । আবার ফিরে এসে অন্য আরেক দিকে যাওয়া শুরু করলাম । কিছুদুর গিয়ে সেটাও দেখলাম ভুল । এরপর তিনবারের বার সঠিক পথটা খুজে পেলাম । এই পথটা একেবারেই পাথুরে ছিল । ঝর্ণার ঝিরি পথ দিয়েই আমরা গিয়ে হাজির হলাম মুপ্পাছড়াতে । তবে এটাতে পানির পরিমান একটু কম ছিল । যদিও আমার কাছে এটাও দেখতে চমৎকার লাগছিলো । ছবিতে মনে হবে যে একদম পানি কম কিন্তু বাস্তবে সেখানে হাজির থাকলে ঝর্ণাটার সৌন্দর্য আরও ভাল ভাবে উপভোগ করা যাবে !

ছবি দেখে অনেকে হতাশ হতে পারেন তবে বিশ্বাস করুন যে বাস্তবে এটা অনেক বেশি সুন্দর !

তারপর ফেরার পালা । একই পথে ধরে আবারও আমরা ফিরে এলাম । একই ভাবে ট্রলারে করে হাজির হলাম আবারও বিলাইছড়ির সেই রিসোর্টে । তখন প্রায় চারটা বেজে গেছে । গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া করতে করতে সাড়ে ৫টা বেজে গেল । সন্ধ্যার পরে আমরা বাজার ঘুরে দেখলাম । বিলাইছড়িতে বলতে গেলে সব কিছু রয়েছে । উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটা দেখতে বেশ সুন্দর । থানাটা আরও বেশি সুন্দর । একেবারে বিশাল বিল্ডিং ।

পরদিন খুব ভোরে আমরা রওয়ানা দিলাম । আজকে আমাদের গন্তব্য হচ্ছে ধুপপানি ঝর্ণা । মূলত এটাই হচ্ছে ট্যুরের আসল গন্তব্য । ছয়টার আগে আর্মি অনুমতি দেয় না যেতে । ক্যাম্পেই অপেক্ষা করতে হল কিছু সময় । ছয়টা বাজলো তারপর আমাদের যাত্রা শুরু হল । স্রোতের বিপরীতে আমাদের ট্রলার চলছিলো । তাই যেতে সময় লাগছিলো বেশ খানিকটা । সাড়ে নয়টার সময় দ্বিতীয় আর্মি ক্যাম্পে আমরা এন্ট্রি করলাম । তারপর আরও মিনিট বিশেষ ।

ট্রলারে যাওয়ার পথে ।


এরপর ঘাটে ট্রলার থামলো । আমাদের আবারও যাত্রা শুরু । মূলত ঘাট থেকে ধর্ণাতে যেতে আড়াই থেকে তিন ঘন্টার মত সময় লাগে ! ঘাট থেকে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত এক ঘন্টার সমতল ভূমির হাটা এবং সেখান থেকে পাহাড়ে ওঠা আরও দেড় থেকে দুই ঘন্টার পথ । কিন্তু আমাদের এই সমতল ভূমিতে হাটাটা বেশ ঝামেলার হয়ে গিয়েছিলো । গতদিন রাতে বৃষ্টি হয়েছিলো । তাই পথ ছিল কাদায় পরিপূর্ন । যে সে কাদা না, ভয়ংকর কাদা । এই পথ টুকু আসলেই খুব বিরক্তিকর ছিল । আমি দুইবার আছাড় খেয়ে পড়ে গেলাম । একবার তো একেবারে কাদার ভেতরে । সারা শরীর কাদায় মাখামাখি !


তবে পাহাড়ে ওঠার পর থেকে অবশ্য আর কাদা ছিল না । এই যাওয়ার পথটা পরিশ্রমের ছিল কিন্তু সেই সাথে উপভোগের । পাহাড়ে আমার হাটতে সব সময় ভাল লাগে । মাঝে কিছুটা পথ ছিল ঝিরির মধ্য দিয়ে । সেটাও চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা ।

এই যে রাস্তা নেমে গেছে নিচে !

ঐ দেখা যায় একটা পাড়াতে যাওয়ার পথে ।
এরপরে আমরা পৌছালাম ধুপপানি ধর্ণাতে । সত্যি বলতে কি জাদিপাই ঝর্ণার পরে এতো চমৎকার একটা ঝর্ণা দেখতে পেলাম । এই সৌন্দর্য্য আসলে কোন ভাবেই ভাষার প্রকাশ করা সম্ভব না । এমন কি এটা ছবিতেও দেখে বোঝা সম্ভব না । যারা সেখানে গিয়ে নিজ চোখে দেখেছে কেবল তারা বুঝতে পারবে । পানির যে কী তীব্র একটা শক্তি এই ঝর্ণার সামনে গেলে সেটা বুঝা যাবে আরও ভাল করে ।

ধুপপানি ঝর্ণা



অনেকটা সময় এখানে কাটিয়ে আবারও আমরা ফেরার পথ ধরলাম ! ঘাটে ফিরে এসে আগে দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম । যাওয়ার সময়ই বলে গিয়েছিলাম খাবারের কথা । উপজাতিরা এখানে আমাদের জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছিলো । ট্রলারে বসে খাওয়া শেষ করলাম । তারপর আবারও সেই ট্রলার জার্নি !

ফেরার পথে ।

এখানে পানি কিছুটা শান্ত ।

ঐ যে আমাদের ফিরে যাওয়ার পথে ।

রিসোর্টে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে গেল । আমরা আবার ফ্রেশ হয়ে রওয়ানা দিলাম বিলাইছড়ির উদ্দেশ্যে । সন্ধ্যা সাতটার আগে আবার আর্মি ক্যাম্পে এন্টি করতে হবে । নয়তো আবার ওরা যেতে দিবে না !


এই ছবিটা রিসোর্টের ব্যালকোনি থেকে তোলা । দুরে সূর্য ডুবে যাচ্ছে । কী অদ্ভুত এক মায়াময় দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিলো ।


সাড়ে আটটার দিকে আমরা আবার কাপ্তাই এসে পৌছালাম । একই হোটেলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সাড়ে নয়টার বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম । ঝর্ণা ভ্রমনের শেষ এখানেই । আবার হয়তো সামনে অন্য কোথাও যাওয়া হবে । কবে যাওয়া হবে কে জানে ! ততদিন আবারও এই সিমেন্টের জঙ্গলে পড়ে থাকতে হবে ....

সব গুলো ছবি আমার কমদামী মোবাইলে তোলা ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:২৯
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×