ঢাকা শহরের প্রধান রাস্তা গুলোতে ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক দেখা যায় না খুব একটা । তবে প্রধান সড়ক বাদ দিয়ে গলির ভেতরের রাস্তা গুলোতে ইজিবাইক চলে । মগবাজার মোড় থেকে গাবতলার দিকে যেতে নিয়মিত ইজিবাইক চলে । ফার্মগেট থেকে হলিক্রস স্কুলের সামনে দিয়ে তেজকুনি পাড়ার দিকে যেতে ইজিবাইক চলে । কিন্তু ঢাকার বাইরের শহর গুলোতে তিন চাকার ইজিবাইক ছাড়া সম্ভবত আর কিছু চলে না । আমার হোম টাউনে এখন ইজি বাইক ছাড়া আর কিছু চলে না । রিক্সা অল্প কিছু আছে তাও কেবল রাতের বেলা চলে । অন্য সব সময় ইজিবাইক চলে । করোনার আগে কক্সবাজার গিয়েছিলাম । সেখানেও কেবল ইজিবাইকই দেখেছিলাম । আজকে হাইকোর্ট সেসব বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে । আনুমানিক ৪০ লাখ ব্যাটারি চলিত অটো রিক্সা চলে দেশে । মানে চলতো । তার মানে হচ্ছে দেশে ৪০ লাখ মানুষের আয়ের উপায় অবৈধ হল আজ থেকে । দেশে নতুন করে আরও ৪০ লাখ বেকার যুক্ত হল ।
রিক্সার সাথে কেবল ব্যাটারি যুক্ত করে একধরনের যান চলে ঢাকার রাস্তায় । যদিও সেটা একদম অবৈধ তবুও চলে । এই ব্যাটারি চালিত রিক্সা খুবই ভয়ংকর একটা যান । এই রিক্সা গুলোর কন্ট্রোল একেবারে বাজে । এরা যে কি ভয়ংকর ভাবে ঢাকার রাস্তায় চলাচল করে সেটা বলার ভাষা নেই । এই রিক্সা কোন ভাবেই রাস্তায় চলতে দেওয়া উচিৎ নয় । নিচে ছবি দিচ্ছি দেখুন ।
সামান্য একটু গতি নিয়ে ঘুরতে গেলেই এই রিক্সা উল্টে যায় । এটা অবশ্য বন্ধ করা দরকার । এটা সম্পূর্ন অবৈধ ভাবে সাধারণ কারখানাতে তৈরি হয় । রিক্সার নিচে মটর, ব্যাটারি সেট করে এই রিক্সা গুলো বানানো হয় । এগুলো রাস্তাতে বড় বিপদজনক ভাবে চলে । যারা এই রিক্সাতে উঠেছেন তারা জানেন । এটা নিয়ে আসলে কোন কথা নেই । এটা অবশ্যই বন্ধ হওয়া দরকার ।
তবে ইজিবাইক নিয়ে হয়তো আবার দ্বিতীয়বার কথা বলার সুযোগ আছে । এটা হচ্ছে ব্যাটারি চালিত ইজি বাইকের ছবি।
গ্রামে গেলে আমি নিয়মিত এই ইজিবাইকেই চড়ি । এটা ছাড়া অবশ্য আর কোন বিকল্প নেই । তবে এটাতে চলড়ে এতোটাও অনিরাপদ মনে হয় না । এই ইজিবাইকের ব্রেক আর কন্ট্রোলও বেশ ভাল । উপরের রিক্সার মত বেপোরোয়া নয় মোটেও । এক সাথে সর্বোচ্চ আট জন উঠা যায় গাড়িতে । গাড়িটা বেশ দ্রুত চলে ।
এই ইজি বাইকের সব খারাপ দিক হচ্ছে একটা ইজিবাইকের পেছনে প্রতিমাসে প্রায় তিন থেকে চার হাজার টাকার বিদ্যুৎ পুড়ে। আমি এটা জানি কারণ আমার গ্রামের বাড়ির ঠিক পাশেই একটা অটোচার্যের গ্যারেজ ছিল । আমাদের এলাকার বিদ্যুতের একটা বড় অংশ চলে যায় এই অটোচার্জের পেছনে । যেখানে আমাদের বিদ্যুতের স্বল্পতা রয়েছে, সেই দিক থেকে হিসাব করলে এই অটো রিক্সা বন্ধ হয়ে একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে ।
তবে ভাল দিকও আছে. যেমন অটো বা ইজিবাইক আসার পরে প্রচুর মানুষের কর্ম সংস্থান হয়েছে । আমার নিজের গ্রামের বেশ কয়েকজন অটো চালায় । এখন তারা বেকার হয়ে যাবে । এছাড়া এই ইজিবাইকের কারণে সাধারন জগনের চলাচল অনেক বেশি সহজ আর সাশ্রয়ী হয়ে গেছে । যেমন আমাদের বাসা থেকে নিউমার্কেটে যতে রিক্সায় ৪০-৫০ টাকা লাগে সেখানে মাত্র ১০ টাকায় আমরা নিউমার্কেটে যেতে পারি । স্বল্প দুরুত্বে ইজিবাইকের থেকে সহজ আর সাশ্রয়ী যান আর হয় না । সবাই রিক্সা চালাতে পারবে না । চাইলেও রিক্সার যোগান বৃদ্ধি পাবে না । ইজিবাইক চলাচল বন্ধ হলে মানুষের চলাচলে কষ্ট হয়ে যাবে ।
একবার মনে আছে আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে ইজিবাইক ভাড়া করে মুজিব নগরে গিয়েছিলাম । সব মিলিয়ে মাত্র ৫০০ টাকা খরচ হয়েছিলো । একজন ইজিবাইক চালক সারাদিন চালিয়ে গড়ে ৬০০/৭০০ টাকার মতই আয় করে । এর ভেতরে ১০০/১২০ টাকা যায় চার্য দিতে । এই ইজিবাইকের আরেকটা দিক হচ্ছে প্রায় বছর বছর ইজিবাইকের ব্যাটারি বদলাতে হয় । এখানে একটা বড় ধাক্কা রয়েছে । প্রায় ৪০/৫০ হাজার লাগে । তবুও সব মিলিয়ে একটা সংসার চলে যায় মোটামুটি ভাবে ।
তবে আমার মনে হয় যে নির্দেশ থাকা স্বত্ত্বেও ইজিবাইক বন্ধ হবে না । আগে ইজিবাইক চলাচলে কোন বাঁধা ছিল না কিন্তু এখন আছে । এখন বাইক চলবে ঠিকই তবে সেটা চলতে গিয়ে ইজিবাইক চালকদের আলাদা ভাবে টাকা দিতে হবে । কাদের কে দিতে হবে সেটা আশা করি বলে দিতে হবে না । যে কারণে বন্ধ হয়েছিলো সেটা তো বন্ধ হবেই না বরং গরীব চালকদের উপরে একটা বাড়তি চাপ এসে পড়বে ।
শেষ কথা হচ্ছে এই যে ৪০ লাখ মানুষের আয় রোজগারের পথটাকে অবৈধ করে দেওয়া হল। এখন এরা করবে কী?
সরকারের কি কোন দায় নেই?
দেশে এতো বড় বড় ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেখানে কি গবেষণা করে এই ইজিবাইক গুলোর মান আরও উন্নত করা যায় না? আরও নিরাপদ করে রাস্তায় নামানো যায় না? একটু চেষ্টা করলেই যায় । সরকার একটু উদ্দ্যোগ নিলেই সেটা পারে । কিন্তু কথা হচ্ছে সরকার নিবে কি?
এই বেকার চালকেরা এখন কোথায় যাবে?
News link
pic source 01
pic source 2