somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমনব্লগঃ কির্সতং - রুংরাং সামিটের গল্প

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কির্সতং পাহাড়ের অবস্থান বান্দরবানের চিম্বুক রেঞ্জে। এই পাহাড়ের উচ্চতা ২৯৫০ ফুট । কোথাও আবার লেখা আছে ২৯৮৯ ফুট । রুংরাং পাহাড়টার উচ্চতা কির্সতং থেকে ৩০০ ফুটের মত কম । কির্সতং শব্দটা মারমা শব্দ । কিরসা ও তং মিলে শব্দটা তৈরি হয়েছে । কিরসা শব্দটার অর্থ ছোট পাখি আর তং শব্দের অর্থ পাহাড় । এই পাখি পাহাড়ের চুড়ায় দেখা যায় এবং এখন তা প্রায় বিলুপ্ত প্রায় । এই গেল ইন্টানেটের তথ্য । এখন পাহাড় ভ্রমনের গল্প শুরু করা যাক !

গতবছর ঠিক এই সময়েই বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্তবে সামিট করেছিলাম । সেখান থেকে ফিরে এসে মনে হয়েছিলো যে এতো পরিশ্রমের সামিট আর করবো না । এরপরে আরও কয়েকটা ট্যুর দিয়েছি ঠিকই তবে সেগুলোতে এতো পরিশ্রম ছিল না । কিন্তু এই বছরে আবার ঠিক একই সময়ে এমনই একটা ট্রেকিং কপালে লেখা ছিল সেটা বুঝতে পারি নি ।

এবছরের শুরুটা হয়েছিলো সমুদ্র দিয়ে । এতো জলদি যে আবার পাহাড়ের দিকে দৌড় দিবো ভাবতে পারি নি । গত বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের বাস ছিল ফকিরাপুল থেকে । এর আগে সব বান্দরবান ট্যুরে আমরা সরাসরি হাজির হয়েছি বান্দরবানে তবে এবার আমরা উঠলাম কক্সবাজারের বাসে । বাস থেকে আমরা নেমে পড়লাম চকরিয়াতে । সেখান থেকে আবারেও বাসে করে এলাম আলীকদমে । সকালের নাস্তা খেয়ে চাঁদের গাড়িতে করে আমরা থানচির দিকে রওয়া দিলাম । আলীকদম থেকে ২১ কিলো নামের একটা স্থানে এসে আমাদের চাঁদের গাড়ি থামলো । এখান থেকেই মূলত আমাদের ট্রেকিং শুরু হল । নিচের ইটের রাস্তা থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু ।



একটু দুর যেতে রাস্তার পাশে এই রকম চমৎকার পাহাড় দেখা যাচ্ছিলো । পাহাড়ের এই দৃশ্যই আমার সব থেকে পছন্দ । যতই দেখি এই দৃশ্য কোন ভাবেই পুরানো হয় না ।




অন্যান্য সব ট্রেকিংয়ের চেয়ে এই ট্রেকিংটা একটু কষ্টের ছিল কারণ এখানে আমাদের খাবারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমাদের নিজেদেরকে বহন করতে হয়েছিলো । এছাড়াও আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে পানি । পুরো যাত্রা পথে কোথাও কোন পানির দেখা আমরা পাবো না । যা পানি আমাদের নিজেদের বহন করে নিতে হবে ! যখন আমরা হাটা শুরু করলাম তখন দুপুর বারোটা বাজে । কড়া রোডের মাঝে হাটা শুরু হল । আমার গন্তব্য খেমচং পাড়া নামের একটা পাড়া । সেখানে যেতে আমাদের পুরো দিন লেগে যাবে । সত্যিই তাই ।

আমরা হাটছি তো হাটছি । হাটা যেন আর আমাদের শেষ হয় না । কাধের ব্যাগটা যেন ভারী থেকে ভারী হচ্ছে । পা যেন আর চলে না । তবে আশে পাশের দৃশ্য আমাকে ঠিকই মুগ্ধ করছিলো । আমি প্রায়ই সবার থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছিলাম । একা নির্জনে হাটছিলাম আর চার পাশে তাকাচ্ছিলাম । মনে হচ্ছিলো যেন এখানে আমি হাটছি অনন্তকাল থেকে । আমাদের মোটামুটি ১০/১২টা পাহাড়ে উঠতে হয়েছিলো এবং নামতে হয়েছিলো । আর আগেই বলেছি যে এই ট্রেকিংয়ে আমাদের পানির কষ্ট ছিল । কারণ কোন ঝর্ণা কিংবা ঝিরি ছিল না রাস্তায় ! যাত্রা পথে কিছু পথের দৃশ্য দেখা যাক ! গাছ গুলো কত বড় বড় আর পুরানো !



















তবে একটা জিনিস খেয়াল করলাম যাত্রা পথে । পথে প্রচুর গাছ কাটছে কেউ । কিছু মানুষ এই বনের গাছ কেটে পাচার করছে । পথের পাশে গাছে আগুন ধরিয়ে দেওয়া রয়েছে কাটা অবস্থায় পড়ে আছে কত গাছ ! নিচের কয়েকটা ছবি দিলাম ।


এগুলো দেখার কেউ নেই ।

যাই হোক আস্তে আস্তে রাত নেমে আসছিলো । অন্ধকার নেমে আসতে পাহাড়ি পথে ।



আমরা যখন পাড়াতে পৌছালাম তখন সত্যিই অন্ধকার নেমে গেছে । আমাদের মোট ১৪ জনের দল ছিল । এর ভেতরে চারজন গ্রুপ এডমিনের কথা না শুনে একটু বেশি সামনে চলে গিয়েছিলো । একটা স্থানে ডান দিকে নিচে নেমে যেতে হত তারা সেখানে নেমে যায় নি । সত্যিই বলতে আমিও সেই পথটা না চিনে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলাম । তবে বেশি দুর না গিয়ে আবার ফিরে এসেছিলাম । এই ব্যাগ রাখার স্থান থেকেই ডানে নামতে হত । তারা চলে গিয়েছিলো সামনে !



পাড়াতে গিয়ে আমরা যখন দেখলাম তারা আসে নি এডমিন আর গাইড সাথে পাড়ার আরও দুজন মিলে তাদের খুজতে বের হল । তবে ভাগ্য ভাল যে তাদের শেষ পর্যন্ত খুজে পাওয়া গেল !
আমরা সত্যি বেশ ভয় পেয়েছিলাম । যদি তাদের খুজে না পাওয়া যেত তাহলে কি যে হত তা আমরা নিজেও জানি না ।

এই পাড়ার নাম খেমচং। পাড়াটা অন্য পাহাড়ি পাড়ার মতই । মানে আমি আগে যে সব পাড়াতে রাতে থেকেছি এটাও সেই রকমই ! তবে এরা একটু কম পরিস্কার পরিছন্ন । তার মূল কারণ হচ্ছে এখানে পানির কোন উৎস নেই । পাড়ার দুই পাশে ছোট দুইটা ঝিরি আছে । ঝিরি বলতে পাথরের দুইটা গর্ত টাইপের । পাহাড় থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ে সেখানে জমা হয় এবং এই পানি দিয়েই পুরো পাড়ার পানির চাহিদা মিটে । এছাড়া আর কোন পানির উৎস এখানে নেই । আমরা অনেক কষ্টে সেই পানি দিয়ে হাত মুখ ধুলাম । তারপর ফিরে এলাম ঘরে । গাইডের রান্না তখন প্রায় শেষ । এই পাড়ার আরও একটা জঘন্য ব্যাপার হল এখানে টয়লেটের অবস্থা খুবই জঘন্য ! নিচ দিয়ে ফাঁকা । কেউ ওয়াশ রুমের দিকে হাটা দিলে দুই তিনটা শুকর সেই ওয়াশরুমের নিচে চলে যায় । ফাঁকা স্থান দিয়ে তাকিয়ে থাকে উপরে !

রাতে প্রচুর শীত ছিল । আমি রীতিমত কাঁপছিলাম । যেই ঘরে আমরা ছিলাম সেই ঘরে দরজার পাল্লা নেই । দেওয়ালেও ছিদ্র অনেক । সেখান থেক বাতাস আসছে নিয়মিত । রাতে খেয়ে আমরা দ্রুত শুয়ে পড়লাম । কাল আমাদের লম্বা হাটা । কালকে আমাদের উঠতে হবে কির্সতং এ ।

আজকের গল্প এখানেই শেষ । কালের শুরুটা হবে কালকে ....

একেবারে প্রথম ছবিটা বাদ দিয়ে আর অন্য সব ছবি আমার কম দামী মোবাইল ক্যামেরাতে তোলা !

শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:২০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×