অবেশেষে দেখেই ফেললাম মারভেলের জাদুকর ডাক্তার আজিবের দ্বিতীয় মুভিটা । এটাকে ঠিক মুভি রিভিউ বলা যাবে না । মুভি দেখার পরে আমার অনুভূতি বলা যেতে পারে । এবং সেই সাথে মুভিতে কাহিনীর কিছু বর্ণনা থাকবে । সবার আগে বলি যে এই মুভি আপনি পিসির পর্দায় দেখে মজা পাবেন না । মুভিটাকে পরিপূর্ণ ভাবে উপভোগ করতে আপনাকে অবশ্যই থিয়েটারে গিয়ে দেখতে হবে । যদিও টু ডিতেও মুভিতে রিলিজ হয়েছে তবে থ্রি ডিতে দেখলে সেরাটা উপভোগ করতে পারবেন ।
মুভি দেখতে যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে এই মুভির প্রথম পার্টটা দেখতে হবে । নয়তো লাফ ফিয়ে কোথায় এসে হাজির হয়েছেন সেটা হয়তো বুঝতে পারবেন না । অনেকে পরামর্শ দিবে যে এন্ডগেম আর স্পাইডারম্যান নো ওয়ে হোম দেখতে দেখতে হবে তবে আমার মনে হয় না যে এন্ডগেমটা দেখার দরকার আছে । তবে দেখলে ক্ষতি নেই । নো ওয়ে হোমটা দেখলে আপনার মার্ভেলের পুরো কাহিনী গুলো যেমন একটার পর একটা এগিয়ে যেতে থাকে সেই ব্যাপারটা ধরতে পারবেন ।
তবে WandaVision' নামে মার্ভেলের একটা টিভি সিরিজ আছে । সেইটা দেখে শেষ করবেন । তাহলে মুভির কাহিনী আরও ভাল করে মাথায় আসবে । মার্ভেলের আরেকটা এনিমেশন সিরিজ আছে । নাম ''Marvel Studios' What If...?'' । এটা দেখলে আপনার মাল্টিভার্স সম্পর্কে আরও পরিস্কার ধারনা আসবে । সেই সাথে মুভির কিছু চরিত্র কেন আসলো আর কিভাবে আসলো সেটাও আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে । ব্যাস এই টুকু । এবার দেখা যাক মুভির ট্রেইলার ।
যারা একেবারেই মুভি সম্পর্কে কোন ধারণা পেতে চান না তারা এরপর থেকে পড়া বন্ধ করে দিতে পারেন । আমি যদিও সম্পূর্ন স্পয়েলার দিবো না তবে কাহিনীর কিছু কিছু বর্ণনা দিবো এর পর থেকে ।
আমি মুভি দেখতে গিয়ে বেশ কয়েকবারই আশ্চর্য হয়েছি । কারণ হচ্ছে মুভির ট্রেইলার দেখে আমি যেমনটা মনে করেছিলাম মুভির ভেতরে আসলে তেমন কিছুই না । সম্পর্ন অন্য ভাবে মুভির কাহিনী এগিয়েছে । মানে মুভির ট্রেইলার দেখে অনেকের কাছেই মনে হতে পারে যে ডক্টর স্ট্রেইঞ্জের লড়াই টা আসলে হবে অন্য ইউনিভার্সের ডক্টর স্ট্রেইঞ্জের সাথে । আমি তো অন্তত এমনটাই ভেবেছিলাম । কিন্তু ....।
আবারও বলছি এরপর খানিকটা স্পয়েলার শুরু হবে । এখানেই শেষ করুন পড়া !
এই মুভির থিম হচ্ছে আমাদের বিশ্ব এক বিশ্ব নয় । আরও আছে আমাদের মতই অনেক ইউনিভার্স । মানে হল আমি যেমন এখানে সামুতে ব্লগ লিখছি এরকম হাজার হাজার অপু তানভীর আছে যারা একই ভাবে সামুতে এখন বসে বসে ব্লগ লিখছে । এবং হুবাহু একই রকম না হলেও আমাদের জীবন যাপন কাছাকাছি । যেমন এখানে আমার একটা প্রেমিকা আছে অন্য বিশ্বে আমার হয়তো দুইটা প্রেমিকা আছে এমন ! আমরা যা নিজেদের স্বপ্নে দেখি সেগুলো আসলে মূলত অন্য ইউনিভার্সে আমাদের সাথে যা হয় সেগুলো। এই হল মাল্টিভার্সের ধারণা ।
এখন এই এক ইউনিভার্সের মানুষ অন্য ইউনিভার্সে যাওয়ার উপায় নেই । কিন্তু এমন একটা ক্যারেকটার আছে যা কিনা এক ইউনিভার্স থেকে অন্য ইউনিভার্সে চলে যেতে পারে । সেই চরিত্রের নাম আমেরিকা । তার নিজের শক্তির উপর নিয়ন্ত্রন নেই । কেবল মাত্র সে যখন ভয় পায় তখনই পোর্টাল খুলে ফেলে আর অন্য ইউনিভার্সে চলে যায় । মুভির শুরুতেই দেখা যায় যে স্ট্রেইঞ্জের সাথে আমেরিকা পালাতে থাকে । তাদের পেছনে এক ভয়ংকর ডিমন তাড়া করে আসে । এই স্ট্রেইঞ্জ কিন্তু আমাদের বিশ্বের স্ট্রেইঞ্জ না । সে অন্য ইউনিভার্সের স্ট্রেইঞ্জ । এক সময় সে মারা পড়ে এবং আমেরিকা পোর্টাল খুলে চলে আসে আমাদের পরিচিত ইউনিভার্সে । এখানে ডক্টর স্ট্রেইঞ্জ তাকে সেই ডিমনের হাত থেকে রক্ষা করে । আমেরিকা তখন জানায় যে এই ডিমন তার পেছনে পড়ে আছে । এবং তাকে কিডন্যাপ করে তার শক্তি নিয়ে যেতে চায় ।
নায়করা যা করে । আমেরিকা কে রক্ষা করতে চায় । সাহায্যের জন্য সে গিয়ে হাজির হয় ওয়ান্ডার কাছে । কিন্তু সেখানে গিয়ে বড় ধাক্কাটা খায় । সেই সাথে আমিও বড় ধাক্কাটা খাই । কারণ আমি ভেবেছিলাম যে মুল ভিলেন হবে ডক্টর স্ট্রেইঞ্জের ইভেল ভার্শন । কিন্তু মুভির আসল ভিলেন হচ্ছে ওয়ান্ডা । সেই ই আমেরিকা কে ধরতে ডিমন পাঠিয়েছিলো ! এবং এখন সে জানে যে আমেরিকা কোথায় আছে । কেন সে এমন টা করছে সেটা মুভি দেখলেই বুঝতে পারবেন ।
মুভিটার ডক্টর স্ট্রেইঞ্জ হলেও আসলে এই মুভিটা দেখার পরে আপনার মনে হতে পারে যে স্কারলেট উইচ মানে ওয়ান্ডাই আসলে এই মুভির আসল চরিত্র । তার স্ক্রিন টাইণ চরিত্র গঠন অনেক বেশি শক্তিশালী এই মুভিতে ।
এরপর স্ট্রেইঞ্জ আসলে ওয়ান্ডার কাছ থেকে আমেরিকাকে রক্ষার জন্য পালিয়ে বেড়ায় । অন্য এক ইউনিভার্সে গিয়ে হাজির হয় । সেখানে আবার শীল্ড কিংবা এভেঞ্জার বলে কিছু নেই । সেখানে আছে ইলুমিনাটি । সেটাও সুপার হিরোদের গ্রুপ । এখানে মার্ভেলের পরিচিত কিছু সুপার হিরোদের দেখা যায় । কাদের কাছের দেখা যায় সেটাও বললাম না । কিছু সারপ্রাইজ থাকুক !
ওয়ান্ডা সেখানেও পৌছে যায় । এবং এক পর্যায়ে আমেরিকাকে নিয়ে চলে । আর অন্য দিকে স্ট্রেইঞ্জকে পাঠিয়ে দেয় অন্য একটা ইউনিভার্সে । এই ইউভার্সের অবস্থা এমন কেন সেটা আপনারা হোয়াট ইফ সিরিজটা দেখলে কিছুটা বুঝতে পারবেন ।
শেষ পর্যন্ত ডক্টর স্ট্রেইঞ্জ কিভাবে আমেরিকাকে ওয়ান্ডার হাত থেকে রক্ষা করে কিংবা আদৌও রক্ষা করতে পারে কিনা সেটার স্পয়েলার দিলাম না ।
মার্ভেলের মুভির সব থেকে ভাল দিক হচ্ছে আলো । মুভিতে সব সময় প্রচুর আলো থাকে । যা চোখকে আনন্দ দেয় । ডিসির মত এতো অন্ধকার নয় । এই মুভির বেলাতেও একই ব্যাপার । আর মার্ভেলের গ্রাফিক্স ভিজুয়াল ইফেক্ট নিয়ে কোন কথা বলার দরকার নেই নিশ্চয়ই । মুভিটা আপনাকে কোন ভাবেই বোর হতে দিবে না । একটা পর একটা ঘটনা ঘটতেই থাকবে । ভরপুর একশন । মুভির সব থেকে খারাপ দিক হচ্ছে মুভিটা যেন খুব ছোট । ভাল জিনিস খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায় । দুই ঘন্টার মুভি । চোখের পলকে শেষ হয়ে যায় । মুভি দেখার পরে মনে হবে যে শেষ হয়ে এতো দ্রুত !
সো, আর দেরি করবেন না । যদি সুযোগ থাকে তবে অবশ্যই থিয়েটারে গিয়েই দেখে আসুন । যদি আপনি সুপারহিরো মুভি পছন্দ করে থাকেন তাহলে সময় এবং অর্থের অপচয় হবে না এই টুকু বলতে পারি ।
pic source
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২২ দুপুর ১:১৯