somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ শুরুটা হয়তো এখানেই...

০৬ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



খাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে নাতাশা প্রশ্নটা করলো । মনে মনে এখনও একটু দ্বিধান্বিত সে । বারবার মনে হচ্ছে যে আদিবকে এভাবে লাঞ্চে নিয়ে আসাটা মোটেই ঠিক হয় নি । এতে ছেলেটা আরও বেশি প্রশ্রয় পাবে । অবশ্য নাতাশা জানে যে আজকে লাঞ্চের দাওয়াত না দিলেও আদিব কোন ভাবেই তার পিছু ছাড়তো না । ছাড়বে না । নাতাশা নিজেও বুঝতে পেরেছে ভাল ভাবে । এই ছেলে তাকে ছেড়ে যাবে না । আজকে সে কারণটা জানতে এসেছে । আদিব কেন এভাবে ওকে পছন্দ করে । কোন কারণ আছে কি?

নাতাশা আবারও বলল, আপনি কেন আমাকে পছন্দ করেন?
আদিবকে আজকে খুব বেশি খুশি দেখাচ্ছে । এতোদিন পরে মনে হচ্ছে নাতাশা মেয়েটা একটু নরম হয়েছে । অবশ্য নরম না হলেও আদিব কোন ভাবেই হতাশ হত না । নাতাশার পিছুও ছাড়তো না। এতো সহজে তো ছাড়তোই না । মেয়েটাকে তার এতো ভাল লেগেছে যে আদিব খুব ভাল করেই জানে যে কোন ভাবেই এই মেয়েকে ছেড়ে অন্য কোন মেয়েকে তার আর ভাল লাগবে না ।

আদিব গ্লাসের পানিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল, আপনি দেখতে সুন্দর । ভাল চাকরি করেন । অনেক টাকা মালিক আপনার বাবা । আর কি লাগে বলুন !
আদিব কথাটা এমন ভাবে বলল যে নাতাশা হেসে ফেলল । তারপর বলল, আমাকে কেউ পছন্দ করে না । আমি খুব ভাল করে জানি ।

এই কথাটা অনেকটা সত্য । অফিসে নাতাশাকে খুব একটা মানুষ পছন্দ করে না । বস হিসাবে নাতাশা খুব কড়া । সবাইকে এতো ঝাড়ি দেয় । দৌড়ের উপরে রাখে। আদিব নিজেও কত যে বকা শুনেছে । নাতাশার কারণে বেশ কয়েকজন চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলেও গেছে । নাতাশা আবার বলল, আমার কিছু সমস্যা আছে আমি জানি । আমি নিজের রাগকে খুব কমই নিয়ন্ত্রন করি । এই কারণে মানুষজন আমাকে এড়িয়ে চলে । আমার খুব একটা বন্ধু বান্ধবও নেই । তারপরেও আপনি আমাকে পছন্দ করেন । কেন? কারণটা আমি জানতে আগ্রহী !

আদিব একটা বড় মাংসের টুকরো মুখে দিতে দিতে বলল, শুনবেনই ?
-হ্যা ।

আদিব কী যেন ভাবলো । তারপর মুখের খাবার টুকু পেটে চালান করে দিয়ে আরও একটু পানি খেল । তারপর বলল, আমাকে তো বাইক চালাতে দেখেছেন ? আমার একটা সাইকেলও আছে । মাঝে মাঝে ছুটির দিনে আমি সাইকেল চালাই । আপনার এখানে জয়েন করার মাস খানেক পরের কথা । একদিন সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি । কোন নির্দিষ্ট জায়গা নয় । এমনি ঘুরে বেড়াচ্ছি । হাতিরঝিলে যাওয়ার জন্য সিগনাল জ্যামে অপেক্ষা করছি । এমন সময় দেখলাম এক বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালাকে । সত্যি বলতে কি এতো বৃদ্ধ যে কী বলবো! লোকটার জন্য এতো মায়া জমলো । রিক্সা টানতে পারছে কি পারছে না । কেউ তার রিক্সায় উঠে নি সম্ভবত । তখনই দেখলাম একজন তার রিক্সায় উঠলো । আমি একটু দুরে দাড়িয়ে ছিলাম । আর মুখে মাস্ক থাকার কারণে আপনি সম্ভবত আমাকে দেখেন নি । আমার সত্যিই কৌতুহল হল । আপনি সব সময় গাড়িতে চলাচল করেন । এখানে হেটে এসে রিক্সায় উঠবেন, বিশ্বাস হল না । একটু তাকাতেই আপনার কালো রংয়ের গাড়িটা আমি দেখতে পেলাম । আপনি গাড়ি থেকে নেমে রিক্সাতে উঠেছেন ।

আদিব কথা বলার সময় নাতাশার দিকে তাকিয়ে ছিল । নাতাশার চোখ তখন খাবারের দিকে । তবে সে কিছুই খাচ্ছে না । কিছু যেন চিন্তা করছে । আদিব আবার বলতে শুরু করলো, আমি কৌতুহল নিয়ে পিছু নিলাম । আপনি রিক্সা করে মগবাজারের দিকে গেলেন । আপনার গাড়িটা আপনার পিছু পিছু আসছিলো । আমিও । আপনি মগবাজার পর্যন্ত গেলেন । তারপর নেমে আবারও নিজের গাড়িতে উঠলেন । আপনি সেদিন রিক্সা ভাড়া বাবত সম্ভবত কয়েক হাজার টাকা দিয়েছিলেন । ব্যাগে যত টাকা ছিল সব তাই না ? কেবল মাত্র রিক্সাওয়ালাকে টাকাটা দেওয়ার জন্য রিক্সাতে উঠেছিলেন ।

নাতাশা একবারও তাকায় নি আদিবের দিকে । এই ঘটনা যে আদিব দেখে ফেলবে সেটা কোন দিন ভাবতে পারে নি সে । আদিব আবার বলল, তবে আমার সব থেকে কোন টা নাড়া দিয়েছে জানেন? আমি আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম । আপনার চোখে ঐ বৃদ্ধ লোকের জন্য পানি চিকচিক করছিলো ! একটা অচেনা মানুষের কষ্ট দেখে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন। কী অদ্ভুত তাই না ? আমি যখন প্রথম এই অফিসে আসি তখন আপানকে বদরাগি আর বদমেজাজীই ভেবেছি । অথচ সেদিন এই বদরাগের ভেতরে একটা কোমল মন খুজে পেলাম । ঐদিন রাতে আমি একটুও ঘুমাই নি । এক ফোটাও না । ভোরের আলো ফোটার পরে আমি খানিকটা আবিস্কার করলাম যে আমি আপনার প্রেমে পড়েছি । তখনই ঠিক করে নিলাম যে জীবনে আপনাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না । যদি আপনি রাজি না হোন তবে আর কাউকে বিয়েই করবো না । কারণ আপনার প্রতি যে ভাল লাগা আমার জন্ম নিয়েছে সেটা আর কারো প্রতি কোন দিন নিবে না ।

কয়েক মুহুর্ত কেটে গেল । কেউ কোন কথা বলল না । আদিব হঠাৎ বলল, আমার কেন জানি মনে হয় আপনিও আমাকে পছন্দ করেন ।
এবার নাতাশা আদিবের দিকে তাকালো । বলল, বলেছে আপনাকে ! আমি কাউকে পছন্দ করি না ।
-না মানে এই যে আমাকে লাঞ্চে নিয়ে এলেন! আমার এতো জ্বালাতন স্বত্ত্বেও আমাকে স্যাক করেন নি । যতই উপরে উপরে রাগ দেখান না কেন আমাকে আপনি ঠিকই পছন্দ করেন । আমি জানি ।
নাতাশা বলল, আপনি ঘোড়ার ডিম জানেন । আপনাকে আজকে লাঞ্চে নিয়ে এসেছি কারণ সত্যটা জানার ছিল । আর এটা এমন কোন আহামরি জায়গা না । অফিসের পাশের একটা দোকান । চলুন লাঞ্চ আওয়ার শেষ । কাজে লেগে যান । আপনি আগে যান আমি আসছি । যান দেরি করবেন না ।
-এক সাথে যাই?
-জি না । এক সাথে যেতে হবে না । আপনার খাওয়া শেষ । এখনই উঠুন ।

আদিব একটু উহা না হু করে উঠে গেল । ওয়েটার বিল নিয়ে একটু পরে । নাতাশা আদিবের চলে যাওয়া দেখলো । মনে মনে একটু হাসলো কেবল । আদিব মিথ্যা বলে নি । আদিবের জন্য একটা সফট কর্নার নাতাশার আছে । এটা তৈরি হয়েছে অনেক আগেই । সম্ভবত সেদিন আদিবের প্রথম কী দ্বিতীয় দিন ছিল অফিসে । অফিসে আসার আগেই আদিবের সাথে দেখা হয়েছিলো রাস্তায় । দেখা হয়েছিলো বলতে নাতাশা দেখেছিলো আদিব কে । একজন বৃদ্ধলোক কোন ভাবেই রাস্তা পার হতে পারছিলো না । কয়েকবার চেষ্টা করেও পারে নি । তখনই দেখলো একটা বাইক রাস্তায় আড়াআড়ি থেমে থেমে লোকটাকে বেরিকেড দিয়ে রাস্তা পার করিয়ে দিল । সামান্য একটা দৃশ্য । তবে নাতাশার এতো ভাল লাগলো দৃশ্যটা দেখে । কিন্তু যখন বাইকটা ওর সামনে সামনে চলতে লাগলো এবং ওর অফিসের পার্কিংয়ে থামলো তখন অবাক না হয়ে পারলো না । আদিব যখন হেলমেটটা খুলল তখন নাতাশা ওকে চিনতে পারলো । তারপর থেকে ছেলেটার প্রতি একটা আলাদা ভালো লাগা সৃষ্টি হয়েছে ।

বিল দিয়ে রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে বের হতেই দেখলো আদিব দাড়িয়ে আছে হাতে দুটো আইসক্রিম নিয়ে । একটা নাতাশার দিকে বাড়িয়ে বলল, খাওয়ার পরে আমি সব সময় আইসক্রিম খাই । নিজের জন্য কেনার পরে মনে হল আপনি দুপুরের খাবার খাওয়ালেন । আপনাকে না দিয়ে খেলে পেট খারাপ করবে ।
নাতাশা অন্য সময় হলে হয়তো রেগে যেত । তবে আজকে হেসে উঠলো । এই ছেলে তাকে যে ভয় পায় না সেটা সে অনেক আগেই বুঝেছে । নাতাশা হাত বাড়িয়ে আইসক্রিমটা নিল । আদিব বলল, আচ্ছা আপনাকে কি তুমি করে বলতে পারি?
-খবরদার না । অফিসে আবার তুমি কিসের?
-আচ্ছা তাহলে অফিসের বাইরে ?
-না ।
-আচ্ছা কেবল ফোনে ?
-না ।
-তাহলে কেবল মেসেজে ?
-বলেছি না । কোন ভাবেই না ।
-আচ্ছা ঠিক আছে । আসলে আপনি তুমিতে কিছু যায় আসে না । মনের টানই বড় টান । তাই না ?
নাতাশা বলল, কোন মনের টান ফান নেই । বুঝেছেন । যান কাজ করুন ।

নাতাশা যদিও বলল চলে যেতে তবে কেন জানি ওর মনে হল আদিব না যাক । বরং ওর মনে হল যে আজকে এখন যখন ওরা অফিসে ঢুকবে তখন যেন সবাই দেখে ওদের । এমনটা ওর কেন মনে হল সেটা নাতাশা নিজেও জানে না । তবে এটা সে স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে যে পাশে বকবক করতে থাকা এই ছেলেটাকে সে কোন ভাবেই নিজের থেকে দুরে রাখতে পারবে না আর খুব বেশি দিন ।



এইটা আসলে গল্পই । তবে গল্পটা বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণীত । প্রথম ঘটনার বৃদ্ধ রিক্সা চালকের মত একজনকে সিগনাল জ্যামে আমি দাড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম । হাতিরঝিলে যাওয়ার মুখে । বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালার এতোই বৃদ্ধ যে খালি রিক্সাই টেনে নিয়ে যেতে পারছেন না । মানুষজন তাই তার রিক্সায় উঠে নি সম্ভবত । আমি ঠিক তার পাশেই দাড়িয়েছিলাম । আমি তখন দেখলাম অন্য একটা রিক্সা হতে একজন মেয়ে নেমে এসে বৃদ্ধর জামার পকেটে একটা টাকার নোট গুজে দিয়ে চলে গেল ! মেয়েটার মুখ দেখে একটা বিষাদের ছায়া আমি দেখেছিলাম ! সেই কষ্ট যে এই বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালার জন্য ছিল সেটার ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ ছিল না । সেদিন বাসায় এসে গল্প লিখেছিলাম । ঘটনা মনে রাখার জন্যই গল্পটা লেখা । যতবার গল্পটা আমি পড়বো ততবার আমার সেই মেয়েটির কথা মনে পড়বে ! আদিবের ঘটনা অবশ্য একটা ভিডিওতে দেখা । সেখানে এভাবে বাইক আড়াআড়া নিয়ে এক বৃদ্ধকে রাস্তা পার করিয়ে দিয়েছিলো ছেলেটা !


গল্পটি আগে নিজেস্ব ব্লগসাইটে প্রকাশিত

pic source
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১২:০৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×