অনালাইনে চলাচলের অন্যতম শর্ত হচ্ছে আপনি যাই দেখবেন না কেন তা চোখ কান বুঝে বিশ্বাস করা যাবে না । দশ বছরের বেশি অনালইনে চলাচলের ফলে এই সত্যটা আমি পদে পদে শিখেছি । কখনই কারোটা দেখে শিখেছি আবার কখনও নিজে ঠকে শিখেছি । আপনি যখনই এই অনলাইনের কাউকে বিশ্বাস করবেন তখনই আপনাকে ঠকতে হবে । তারপরেও মানুষ মাত্রই ভুল করে ফেলে । বিশেষ করে যখন সেখানে মায়ের আবেগ জড়িতো থাকে ।
গত এক মাসে অনলাইনে থাকলে একটা নিউজ আপনাদের সবার চোখে পড়ার কথা । একজন মা দুপুরে পানি আনতে গিয়ে নিখোজ হয়েছেন । তারপরই খবর বের হয় যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল । সংবাদটা এইভাবে বের হয় যে জমির জন্য তাকে চাপ দেওয়া হয় । সে রাজি হয় নি । তারপরই সে গুম হয়ে যায় । একেবারে সত্যি ঘটনা মনে হয় । বিশেষ করে তার মেয়ের ফেসবুকে আবেগঘন স্টাটাস ব্যাপারটা হয়ে ওঠে আরও বিশ্বাসযোগ্য । তার কান্না ছবি আর ভিডিও ছড়িয়ে পরে পুরো ইন্টারনেট জুড়ে । টিভিতে প্রতিবেদন হল । ফেসবুকে সবাই সেই পোস্ট শেয়ার করে হাজারে হাজার ! মামলার আসামীরা গ্রেফতার হল !
সব শেষে তিনদিন আগে বের হয় আরও একটা সংবাদ । সেখানে দেখা যায় মেয়ে তার মায়ের লাশ সনাক্ত করেছে । আমাদের দেশে গুম হলে তাকে আর জীবিত উদ্ধার পাওয়া যায় কম ! তাই হল । লাস পাওয়া গেল । ভাবলাম তীব্র একটা জ্বালাময়ী ব্লগ পোস্ট লিখবো । সেই মোতাবেগ পোস্ট রেডিই করছিলাম ।
তবে একটু সন্দেহ ছিল । বিশেষ লাস শনাক্তের পরেই একটা বিশেষ প্রশ্ন জেগে ওঠে । যার লাশ শনাক্ত করা হয়েছে তার বয়স সর্বোচ্চ ৩৫ অন্য দিকে গুম হওয়ার মহিলার বয়স ৫০+ । কিন্তু মেয়ে একদম শিওর যে এটাই তার মা ? এখানে প্রথম খটকা লাগলো ! তারপরেও মনে হল যে মায়ের ব্যাপারে এই আবেগ আসলে কোন ভাবেই মিথ্যা হতে পারে না ।
কিন্তু কাল রাতে সব কিছু উল্টে গেল !
দেখা গেল মহিলা মোটেও গুম হন নি । বরং আত্মগোপনে ছিলেন । পুলিশ তাকে ঠিক খুজে বের করেছেন ! পরে জানা গেল তাকে জোর করে আটক করেনি । সে স্ব ইচ্ছেতেই আত্মগোপনে ছিলেন ! এবং সব থেকে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে এটাও ধারণা করা হচ্ছে যে তার মেয়ে এই ব্যাপারটা জানতেন ! জমি সংক্রান্ত বিবাদে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই এই কাজটা করা হয়েছে ।
কী একটা প্রহসন করা হল দেশের মানুষের সাথে !
কত বড় একটা প্রতারণা ! মানুষের আবেগের সাথে এই প্রতারনাটাকে কিভাবে করতে পারে কেউ ? বিশেষ করে যখন মায়ের আবেগ যেখানে জড়িতো থাকে ! আসলে আমাদের সবারই কিছু দুর্বল পয়েন্ট থাকে । তার ভেতরে মা ও তার সম্পর্কিত আবেগ অন্যতম । এটা সামনে এলে আমাদের মাঝে আসলে সন্দেহের কোন স্কোপই থাকে না । কিন্তু এখন থেকে সেটার মাঝেও দেখা দিবে সন্দেহ !
মরিয়ম মান্নান, শেইম অন ইউ !
আবারও সেই প্রথম লাইনে ফেরৎ যাই । অনালইনে যে কাউকেই বিশ্বাস করা যাবে সেটা যেন আরও একটু পোক্ত হল । কাউকে এবং কোন কিছুই প্রথমে বিশ্বাস করা যাবে । কিছু কিছু অফ লিমিট ছিল তবে বোধ করি সেখানেও এখন সন্দেহ প্রবেশ করলো । তবে সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে ভাগ্য ভাল যে এটা নিয়ে একটা পোস্ট করি নি । যদি পোস্ট করতাম তাহলে বেইজ্জতির শেষ থাকতো না ।
খবরের লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৫৪