
কয়েক বছর আগে আমি গিয়েছিলাম কেউক্রাডং । সেইবার পুরো সময় জুড়েই বৃষ্টি হচ্ছিলো । বৃষ্টিতে পাহাড়ে চলাচলের একটা আলাদা সৌন্দর্য্য আছে । ঝামেলাও আছে অনেক । পুরো ট্যুর জুড়েই আমরা বৃষ্টির কবলে ছিলাম । সব ভালই ছিল কিন্তু যখন ফিরতি পথ ধরবো, তখন খেয়াল করে দেখলাম যে ব্যাগে আসলে কোন শুকনো কাপড় নেই । সব ভেজা । ভেজা কাপড়ে পাহাড়ের রাস্তায় হাটাটা মজাদার হতে পারে কিন্তু ঢাকার গাড়িতে আরামদায়ক সিটে এই ভেজা কাপড় মোটেই শান্তি দিবে না । বাধ্য হয়ে বান্দরবান থেকে আলাদা একটা ট্রাউজার আর টিশার্ট কিনতে হল । তারপর থেকে যতবার আমি কোথাও বেড়াতে গিয়েছি সব সময় একটা ট্রাউজার, টিশার্ট ব্যাকআপ হিসাবে রেখেছি । এমন অনেকবাবই হয়েছে যে ব্যাকআপ জামা কাপড় আমার দরজার পড়ে নি তবে কয়েকবার এই ব্যাকআপ কাপড় আমাকে রক্ষাও করেছে । এই যেমন সর্বশেষ যে ট্যুরে গেলাম তিনাপ সাইতারে, সেই ট্যুরটা ছিল মূলত একদিনের । সেই মোতাবেকই জামা কাপড় নিয়েছি । কিন্তু অভ্যাস বসত সেই ব্যাকআপ কাপড়ও নিয়েছিলাম । কিন্তু ট্যুর আমাদের একদিনের বদলে গিয়ে দাড়ালো দুই দিনে এবং ব্যাকআপটা কাজে লেগে গেল । নয়তো হয় ভেজা কাপড়ে ঢাকা আসতে হত, নয়তো নতুন করে একজোড়া কাপড় কিনতে হত!
তো সব কিছুর বেলাতে আমার এই ব্যাকআপ রাখার অভ্যাস অনেক দিনের । আগে পছন্দের যে কোন জিনিস আমি একের অধিক কেনার চেষ্টা করতাম সব সময় । প্রতিটি ক্লাসের ইংরেজি বইটা আমার সব ময় পছন্দের ছিল খুব। এই কারণে এই ইএফটি বইটা আমি সব সময় দুইটা কিনতাম । একটা থাকতো যত্ন করে অন্যটা দিয়ে পড়তাম । মাঝে মাঝে সেই নতুন বইটা নাড়াচাড়া করে দেখতাম ।
আমার ঘরে একটা সিলিং ফ্যান রয়েছে । আর আমার গরম এমনিতেই সব সসময় কম । ফ্যান বেশির ভাগ সময়েই বন্ধ করে রাখি । তারপরেও আলাদা ভাবে একটা টেবিল ফ্যান কিনে রাখা অনেক দিন ধরে । কেবল একটা ভাবনা থেকে যদি উপরের ফ্যানটা নষ্ট হয়ে যায় তখন কী হবে ! এবং এমনটা সত্যিই হয়েওছিল । একদিন রাতে বাসায় ফিরে ফ্যান চালু করতে গিয়ে দেখি ফ্যান আর চলে না । তখন এমন রাত হয়ে গেছে বাইরে গিয়ে ফ্যান ঠিক করা কিংবা কাউকে ডেকে আনার উপায়ও নেই । আর সেই সময়টা ছিট প্রচন্ড গরমের সময় । আমি খুব বেশি চিন্তিত হলাম না কারণ আমার কাছে এই ব্যাকআপ ফ্যান রয়েছেই । রাতে কোন কষ্টই হল না । পরদিন দেখা গেল ফ্যান না, সুইচ নষ্ট হয়েছে ।
আমার পিসিতে যে কোন কাজ করার সময় সব সময় একটা পেনড্রাইভ ঢুকিয়ে রাখি । আর কাজের ফাইলের একটা কপি সব সময় থাকে পেনড্রাইভে । বিশেষ করে কাজ করার সময়ই সেই ফাইলটা মুলত আমি সেভ করে রাখি পেনড্রাইভেই । এই ঘটনা ঘটে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে । এসাইনমেন্ট করতেছি । কাজ কর্ম প্রায় শেষ এমন সময়ে হঠাৎ করে আমার পিসি বন্ধ হয়ে গেল । ভাব চক্করে যা বুঝলাম তা হচ্ছে পিসির পাওয়ার সাপ্লাই নষ্ট হয়ে গেছে । তখন এমন এক অবস্থা যেন পিসি আর মাল্টিপ্লানে নিয়ে যাওয়ার সময় নেই । এদিকে এসাইনমেন্টও জমা দিতে হবে । যা করেছি সব তো রয়েছে পিসির ভেতরেই । হাজির হলাম সাইবার ক্যাফেতে । সেই এসাইনমেন্ট আবার নতুন করে সেখানে বসে বসে শেষ করতে হল । সেদিন থেকে কানে ধরেছি যে যা লিখবো আগে ব্যাকআপ রাখতে হবে । এরপর নেটের প্রচলন এতো সহজলভ্য হওয়ার পরে পেন ড্রাইভের সাথে সাথে গুগল ডকসেও রাখি । তবে আমার কাছে পেনড্রাইভই বেশি ভাল মনে হয় । বিদ্যুৎ চলে গেলে, নেটও চলে যায়, ডকস কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সেই হিসাবে পেনড্রাইভই ভাল । এছাড়া যখন স্টুডেন্টদের জন্য প্রশ্ন বা অন্য কোন নোটস প্রিন্ট করিয়ে নিয়ে যাই, তখনও পেনড্রাইভে সেই প্রশ্ন/নোটসের পিডিএফ ফাইল সাথে করেই নিয়ে যাই । বলা যায় যে কোন কারণে হাতের কাগজ হারিয়ে যেতে পারে কিংবা নষ্ট হয়ে যেতে পারে । তাহলে যেন সাথে সাথেই আবার প্রিন্ট করানো যায় ।
এই যে দেখেন গতকাল বিদ্যুৎ বিপর্যয় হল । আমার খুব একটা টেনশন ছিল না । এমন কি আজকে এখনও পর্যন্তও যদি বিদ্যুৎ না আসতো তারপরেও আমি ঠিকঠাক কাজ চালিয়ে নিতে পারতাম কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই । বিদ্যুৎ চলে দীর্ঘ সময় ধরে না থাকলে সব থেকে বড় সমস্যা হয় ফোনের চার্জ আর পানি নিয়ে । বিদ্যুৎ না থাকলে পানি উঠানো যায় না মটর দিয়ে । মানে ট্যাংকিতে যতপানি থাকে সেটাই ভরশা । সেটা শেষ হয়ে গেলে পানি শেষ ।
প্রতিদিন আমি গড়ে দুই লিটার পানি খাই । প্রতিদিন দুই লিটার পানিই আমি ফিল্টার থেকে ঘরের বোতলে ভরে আনি । তবে আমার ঘরে আরও দুই লিটারের একটা বোতল থাকে সব সময় । এটা রাখার কারণ হচ্ছে আমার এখানে গ্যাসের চাপ থাক কম । এমনও দিন আসে যে পানি গরম করা যায় না একদম । সেই জন্য সব সময় আলাদা ভাবে একটা বোতলে পানি থাকে । যেন একদিন পানি গরম না করতে পারলেও চলে যায় । অন্য দিকে ৫ লিটারের একটা বোতলে পানি থাকে । এটা হচ্ছে ওয়াশরুমের যাওয়ার জন্য । যদিও আমি যেখানে থাকি সেখানে কোন দিনই আমি পানির সমস্যায় পড়ি নি । তারপরেও ৫ লিটারের একটা পানির বোতলে আমি পানি ভরে রেখে দিয়েছি যদি কোন দিন দরকার পরে । কারণ খাওয়ার পানি আমি কিনে আনতে পারবো । হয়তো দুই একদিন গোসল না করেও কাটিয়ে দেওয়া যাবে কিন্তু ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পানি লাগবেই ।
একটা পাওয়ার ব্যাংক আছে আমার । স্বাধারণত আমার কেবল ট্যুরে যাওয়ার সময়ই পাওয়ার ব্যাংকটা দরকার পরে । এছাড়া এটার কোন ব্যবহার নেই । কিন্তু আমি এটা নিয়মিত চার্য দেই । বলতে গেলে সব সময়ই আমার পাওয়ার ব্যাংকে চার্য থাকে । আমার কেন জানি এটা মনে হয় যে এমন সময় আসতেই পারে যখন আর বিদ্যুৎ আসবে না । তখন এই পাওয়ার ব্যাংক আমার কাজে দিবে । এই কারণে সব সময়ই আমি চার্জ দিয়ে রাখি । আর এটা দিয়ে মোটামুটি ৪/৫বার চার্য দেওয়া যায় আমার মোবাইল । মোবাইলে চার্য থাকতো অনেক লম্বা সময় পর্যন্ত ।
এভাবে বলতে গেলে সব জিনিসের একটা ব্যাকআপ সব সময় থাকে । কেবল মাত্র একজন প্রেমিকা থাকার অবস্থায় আরেকটা ব্যাকআপ প্রেমিকা কোন দিন রাখতে পারলাম না । এটা করতে পারলে ভাল হত ! তাহলে একজনের সাথে প্রেম ছুটে গেলেও সাথে সাথেই আরেকজন এসে সেই শূন্যস্থান পূরণ করে দিতে পারতো ! হায় আমার পোড়া কপাল !
pic source
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




