আমাদের দেশে একটা কথা প্রচলিত আছে যে শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি । তবে নিজের বাপের বাড়ির মত সুখ শান্তি বোধকরি আর কোথাও নেই । এমন কি সেটা নিজের বাড়িতেও নেই । নিজের বাড়ির বেলাতে হয়তো অনেকের মনে হবে যে নিজের বাড়ির থেকে বাপের বাড়ি শান্তি বেশি হয় কিভাবে ! ব্যাপারটা অন্য রকম ভাবে ভাবুন । আপনি যখন নিজের বাড়ি থাকবেন, তখন সেই বাড়ির সব কিছুর দায়িত্ব আসলে আপনার । সব কিছু আপনাকে করতে হবে । সকল ঝামেলাও আসলে আপনাকে সামলাতে হবে । অন্য দিকে বাপের বাড়ি হল এমন জায়গা যেখানে আপনি কোন প্রকার চিন্তা ভাবনা ছাড়াই সময় পার করে দিতে পারবেন । কারণ আপনার মাথার উপর আপনার বাবা রয়েছে । সব কিছু দেখা শোনা করবে সে ! আমি এখনও সৌভাগ্যবান যে এই আরাম টুকু আমি এখনও উপভোগ করি ।
ঢাকাতে আমি রয়েছে প্রায় ১৫ বছর । ঢাকাতে আমি যখন থাকি তখন সব কাজ কর্ম আমার নিজেকে করতে হয় । এমন কি গোসলের পরে আমার হাফপ্যান্ট পর্যন্ত আমি ধুই । খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে কেনা কাটা সব কিছু আমাকেই করতে হয় । সেই জীবনের প্যারা অবশ্যই আছে । কিন্তু সেই সাথে আছে অপার স্বাধীনতা । আমি বলা চলা যখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারি । যা ইচ্ছে খেতে পারি, চাইলেই যেদিক সেদিক চলে যেতে পারি । সকালের খাবার দুপুরে দুপুরের গোসল রাত বারোটাতেও করতে পারি । রাত বারোটা পর্যন্ত বাড়ির বাইরেও থাকতে পারি । কেউ কোন প্রশ্ন করার নেই । মোটামুটি এই জীবনেই আবি অভ্যস্ত । মানুষ আমাকে কিছু করতে বলবে কিংবা কারো কথা শুনে জীবন যাপন করতে হবে সেটা আমার ঠিক পছন্দ না । তবে অনেকে আবার এই টুকু পড়েই ভাবতে পারেন যে হয়তো খুব উৎশৃঙ্খল জীবন যাপন করি আমি । করতে পারি তার মানে এই যে করি । আমি সারা জীবন নিয়ম মেনে চলা মানুষ । কিন্তু সেই সাথে এটাও আমি খুব ভাল করে জানি যে চাইলেই আমি এই নিয়ম গুলো ভাঙ্গতে পারি । এটাই আমার স্বাধীনতা । তবে বাসায় আসলে সেই স্বাধীনতা খানিকটা হলেও খর্ব হয়ে যায় ।
ছুটির ভেতরেও সময় করে ঘুম থেকে উঠতে হচ্ছে সময় করে খেতে হচ্ছে । যদিও এখানে এই খাওয়া ছাড়া আমার আপাতত আর কোন কাজ নেই । ঘুম থেকে উঠি, খাই, তারপর আবার বিছানায় যাই , বই পড়ি নয়তো মুভি দেখি তারপর আবারও খাই । তারপর গোসল করি তারপর দুপুরের খাবার খাই । তারপর আবারও বিছানাতে যাই তারপর আবারও খাই এভাবেই আসলে দিন চলে যাচ্ছে । শেষ কবে এভাবে এতো সুখে দিন কাটিয়েছিলাম মনে করতে পারছি না । গতবার যখন বাসায় এসেছিলাম তখন আমার শরীরে একটু মাংস জমেছিলো তবে এবার কেন জানি আমার ওজন দুই কেজি কমে গেছে । আমার মায়ের ধারণা হয়েছে যে ঢাকায় আমি ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করি না । তাই এই কদিনে কেবল খাইয়ে খাইয়ে আমার শরীরে কিছু মাংস যুক্ত করার চেষ্টায় আছে ।
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় আমি এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা অনুভব করি । ঘরবাড়ি একেবারে অন্ধকার হয়ে যায় । ঢাকাতে তো কখনই পরিবেশ নিস্তব্ধ হয় না তবে এখানে হয় । রাত গভীর হলে এখানে কয়েক দিন আমি শেয়ালের ডাক শুনেছি । আগে আমাদের বাড়ির আশে পাশে অনেক বাঁশ ঝাড় আর ঝোড় জঙ্গল ছিল । সন্ধ্যা হলেই সেখান থেকে শেয়ালের ডাক ভেসে আসতো । এখন অবশ্য আশে পাশে অনেক বাড়িঘর হয়ে গেছে । সব কিছু পরিস্কার হয়ে উঠেছে । তারপরেও এখনও মাঝে মাঝে শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে । আরও একটা ব্যাপার একদম বদলায় নি সেটা হচ্ছে ট্রেন যাওয়ার শব্দ । আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে ট্রেন লাইন যায় নি । অনেক টা দুর দিয়েই গেছে । তবে রাত যখন গভীর হয় তখন সেই দুর থেকেই ট্রেন যাওয়ার শব্দ হুইসেলের আওয়াজটা শোনা যেত । এখনও সেটা যায় । প্রতিরাতেই এই শব্দটা শুনছি ।
ঢাকা থেকে বাসায় আসার সময় ভেবেছিলাম যে কাজ কর্ম কোন কিছু নেই এই কদিন খুব ব্লগ পোস্ট লিখবো কিন্তু এখানে এসে এই ব্লগের কথা ঠিক মনেই পড়ছে না । সারাদিন শুয়ে বসে থাকলেও বাসায় লোকজন রয়েছে । তারা আসছে নানান কথা বার্তা বলছে, আমি বই পড়তে পারছি, মুভি দেখছি অনেক । এই কদিনে কত গুলো মুভি আর টিভি সিরিজ দেখেছি হিসাব নেই । এখনও সেটাই দেখা চলছে । চলবে সামনের আরও কয়েকটা দিন । তবে একটা ব্যাপার আমি একটু অবাকই হচ্ছি। ঢাকাতে থাকা কালিন সময় সপ্তাহের ছুটি একদিন পার হয়ে দুইদিনের দিন আমার মাথা গরম হয়ে যেত বসে থাকতে থাকতে । কিন্তু নিজের বাড়িতে এসে এই একটা সপ্তাহ একেবারে শুয়ে বসে কাটিয়ে দিলাম আমার অন্য কিছু মনে হচ্ছে না । বরং খুবই শান্তি শান্তি লাগছে । সম্ভবত নিজের পরিবারের সাথে থাকার কারণেই ।
আশা করি আপনাদের সময়ও আপনাদের পরিবারের মানুষ গুলোর সাথে ভাল কাটছে ।
হ্যাপি হলিডে ! এবং সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



