somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্লবোরো ম্যান - এক বিজ্ঞাপনই একটি কোম্পানিকে রক্ষা করেছিলো

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য তার পন্যের বিজ্ঞাপন একটা গুরুত্বপূর্ন ব্যাপর । অনেকেই মনে করেন যে পন্যের গুণগত মান ভাল হলে সেই পন্যের বিজ্ঞাপনের দরকার হয় না । কিন্তু যারা ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তারা জানেন যে পণ্যের বিজ্ঞাপন কতখানিক গুরুত্বপূর্ণ । ক্ষেত্র বিশেষে এই বিজ্ঞাপন প্রচারণা একটা ডুবতে থাকা কোম্পানিকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে । আজকে তেমনই একটা বিজ্ঞাপনের গল্প শোনাই ।

আপনারা ''মার্লবোরো'' সিগারেটের নাম সবাই শুনে থাকবেন । উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশ নাগরিক ফিলিপ মরিসের হাত ধরে খুব স্বল্প পরিসরে এই ব্র্যান্ডের যাত্রা শুরু হয় । বিশ শতকের শুরুর দিকে এই সিগারেট আমেরিকাতে সিগারেট কোম্পানিতে হিসাবে রেজিস্টার্ড হয় যদিও ১৯২৩ সালের আগ পর্যন্ত কোন সিগারেট বাজারজাত করা হয় নি । শুরুতে এই সিগারেট কেবল মাত্র হোটেল এবং রিসোর্টে সরবারহ করা হত । পরে ১৯৩০ সালের দিকে এই সিগারেটটা লেসিডস ব্র্যান্ড হিসাবে প্রচার করা হয় । ব্র্যান্ডটির স্লোগানই ছিল ''Mild As May'' মে মাসের মতই কোমল । মূলত ফিলিপ এই ফিল্টার্ড সিগারেট বাজারে এনেছিলো বিপুল পরিমান মহিলা সিগারেট প্রেমিদের আকর্ষণ করার । সেই সময়ে অন্যান্য ব্রান্ডের তুলনাতে মার্লোবোরো স্বাধ গন্ধ একেবারেই কোমল ছিল ।

এরপর ১৯৫০ সালের দিকে গবেষণায় সিগারেটের খাওয়ার খারাপ দিক গুলো বের হয়ে আসে তখন একটা ভুল প্রচারণা চালু হয় যে ফিল্টার্ড সিগারেট খাওয়াটা বুঝি নিরাপদ এবং এতে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি কম হয় কিংবা হয় না । তবুও মার্লোবোরো ব্যবসা টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিলো । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কোম্পানির বিক্রি ছিল মুল বাজারের এক পার্সেন্টেরও কম । তখন কোম্পানি ঠিক করলো যে কেবল মেয়েদের ব্র্যান্ড নয় এটাকে তৈরি করতে হবে পুরুষের ব্র্যান্ড । কিন্তু যা আগে থেকেই মেয়েদের পন্য হিসাবে পরিচিত পেয়েছে তাকে পুরুষের সহজে গ্রহন করার কথা নয় । তারা সেটা করলোও না । সেই পঞ্চাশের দশকে পুরুষেরা এই ক্যান্সারের ঝুকির থেকেও নারী সিগারেট হাতে ধরা পরাটাকে বেশি ভয় পেত । যদি কেউ তাদের মেয়েদের সিগারেট খেতে দেখে তাহলে তাদের পৌরষত্বে আঘাত লাগবে । ফলে কোম্পানী প্রায় বন্ধই হয়ে যেতে বসলো ।

এই মার্লোবোরো ব্র্যান্ডের রেপুটেশনকে ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয় শিকাগোর বিখ্যাত বিজ্ঞাপন নির্মাতা লিও বার্নেটকে ।

pic source

তখন সকল টোবাকো কোম্পানি তাদের সিগারেটের প্রচারণা চালাচ্ছে এই বলে যে ফিল্টার্ড সিগারেটে ক্ষতির পরিমান কম কিংবা তাদের বানানো ফিল্টার সব থেকে উন্নত এই বলে । কিন্তু লিও সেই দিকে না গিয়ে একেবারে উল্টোপথে হাটা শুরু করলো । লিও সিগারের ক্ষতির কথা না বলে বরং সে ঠিক করলো যে এই সিগারেটের সাথে পৌরুষদীপ্ত একটা ভাব তুলে ধরবেন । এবং তিনি তাই করলেন । ঠিক হল যে সব থেকে পৌরুষাদীপ্ত কিছু মানুষকে মডেল হিসাবে ব্যবহার করবেন । এবং তাদের হাতে সিগারেট দিয়ে দেখাবেন যে এটা তাদের পৌরুষত্বকে বৃদ্ধি করছে । ১৯৫৫ সালে প্রথম এই থিম থেকে এক কাউবয়কে হাজির করা হয় বিজ্ঞাপনের চিত্রে । এবং এতেই কাজ হয়ে যায় ।

মার্লবোরো ম্যানের বিজ্ঞাপন গুলো দেখতে এই ওয়েব সাইটে প্রবেশ করুন

এক বছর আগেও যে কোম্পানিটি বিক্রির অভাবে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিলো সেই কোম্পানি আমেরিকার সর্বাধিক বিক্রিত পন্যের তালিকাতে ৪র্থ স্থানে চলে । পরের বছরে বিক্রি আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল । এই বিজ্ঞাপন এতোই জনপ্রিয় হল যে এই বিজ্ঞাপনে মডেলদের আলাদা একটা নামে পরিচিত পেতে শুরু করলো । মার্লোবোরো ম্যান ।

শুরুতে পেশাদার মডেলদের কাউবয়ের সজ্জায় সাজিয়ে বিজ্ঞাপনের মডেল বানানো হত । তবে লিও এই বিজ্ঞাপনকে আরও জীবন্ত করতে সত্যিকারের কাউবয়দের নিয়ে আসার পরিকল্পনা করলেন । তিনি খুজে বের করেন ড্যারেন উইনফিল্ডকে । তিনি আমেরিকার একটি রাঞ্চের সত্যি কারের কাউবয়ের কাজ করতেণ । তাকে বানানো হল মার্লবোরো ম্যান ।

pic source

উইনফিল্ড ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এই মার্লোবোরো ম্যানের চরিত্রে বিজ্ঞাপনে কাজ করেন । যদিও আরও অনেক কাউবয় এই মডেল হয়েছেন এর মাঝে তবে উইনফিল্ডের মত এত জনপ্রিয় আর সফল আর কেউ ছিল না । উইনফিল্ডই ছিল সর্বকালের সব থেকে সেরা মার্লোবোরো ম্যান । কেবল আমেরিকাতেই নয়, এই মার্লবোরোম্যানদের হাত ধরে ব্র্যান্ডটি পৌছে যায় বিশ্বের নানান দেশে । অন্যান্য কোম্পানিও একই ভাবে বিজ্ঞাপন তৈরির চেষ্টা করেছেন তবে মার্লোবোরোম্যান মত সফলতা তারা পান নি ।

তবে এই বিজ্ঞাপনের যেমন জনপ্রিয়তা ছিল সেই সাথে সমালোচনাও ছিল অনেক । অনেকের কাছে একটা ক্ষতিকর দিককে এই ভাবে জনপ্রিয় করে তোলাটা মোটেই ভাল কিছু মনে হল না । সত্যিই কিন্তু তাই যে কাজ করলে মানুষের মৃত্যু হয় সেই কাজকে মহিমান্বিত করাটা কোন ভাবেই প্রশংসাযোগ্য হতে পারে না । স্বয়ং এই মার্লোবোরো ম্যান মডেলদের ভেতর থেকেই চারজন মডেল এই ধুমপানত জনিত কারণে মারা যায় ।

মোটামুটি নব্বই দশক পর্যন্ত মার্লবোরো ম্যানদের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল । তবে ধুমপানের খারাপ দিক নিয়ে নিয়ে মানুষজনের ভেতরে আরও সচেতনা চালু হলে ধীরে ধীরে এই জনপ্রিয় মডেলদের দিন শেষ হয়ে আসতে থাকে । অনেক দেশই তামাক পন্যের বিজ্ঞাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা চালু করে । দুই হাজার সালের পর বলতে গেলে এই বিজ্ঞাপন গুলো একেবারে হারিয়ে যায় ।

আমাদের দেশে এক সময় সিগারেটের বিজ্ঞাপন দেখা যেত । জাহিদ হাসানের বিজ্ঞাপনের কথা আমার মনে পড়ে । কোন এক জাহাজ ডেকে সে সিগারেট টানে । তারপর নায়িকা এসে তাকে জড়িয়ে ধরে । এক সময়ে আমাদের দেশেও মনে করা হত যে সিগারেট পৌরুষত্বের প্রতীক । যদিও এই বোরবাকগিরির ধারণা অনেক কমে এসেছে ।

সিগারেট সহ সকল তামাকজাত পন্য থেকে দুরে থাকুন।


তথ্যসুত্র

Wkipedia.org
Marlboro Man
The Real Marlboro Man
রহস্য পত্রিকা - ইসমাইল আকরাম
মানুষের চিন্তাধারা বদলে দিয়েছে যেসব বিজ্ঞাপন


pic source
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×