somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নস্টালজিক রমনা পার্ক আর মিন্টুরোডের দিন গুলো

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমরা আমাদের কাজ কর্ম আর জীবন নিয়ে এমন ব্যস্ত সব সময় আমাদের এক সময়ে যা ভাল লাগতো যা এক সময়ে পছন্দ ছিল সেই সব কাজ করতে ভুলে যাই । কিংবা সেই সব কাজ যা এক সময়ে আমাদের আনন্দ দিতো, এখনও আনন্দ দিবে তারপরেও সেই কাজ গুলো আমরা করি না কিংবা করতে পারি না । আমাদের অনেক কাজ কেবল মনের ইচ্ছেই নয়, বরং সেই সাথে আরো কত কিছুর সাথে যে জড়িতো তার কোন ঠিক নেই । তাই হয়তো চাইলেও আমরা সেই কাজ গুলো করতে পারি না । তবে আমি এই দিক থেকে অনেকটাই স্বাধীন । আমি সব সময় মনে যা এসেছে তাই করে এসেছি । কে কী ভাবলো সেটা নিয়ে এখনও খুব একটা চিন্তিত হই নি । সামনে কী হবে সেটা অবশ্য বলা যাচ্ছে না ।

গতকাল বই মেলাতে গিয়েছিলাম । এটা নিয়ে এই বছরে তৃতীয়বার বই মেলায় যাওয়া হয়েছে । তবে গতকালকে একটু ব্যতীক্রম ঘটনা ঘটেছে । অন্যান্য দিন আমি মেলায় সোজা যাই, বই কিনে সোজা বাসায় চলে আসি । আজকে শাহবাগে এসে রিক্সা নিতে যাবো তখনই আমার কী মনে হল আমি রিক্সা নিলাম না । প্লান ছিল সোজা রিক্সা নিয়ে মগবাজার যাবো । মগবাজারে একজনের সাথে দেখা করে আবার বাসায় ফিরে আসবো । রিক্সা হয়তো সোজা যেতে দিবে না তবে কাটাবন দিয়ে ঘুরে যেতে হবে । কিন্তু শাহবাগে কিছু সময় আমি বিমুঢ় হয়ে দাড়িয়ে রইলাম । ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমি এই শাহবাগের মোড়ে প্রায় প্রতিদিন আসা যাওয়া করতাম । তবে তারপর কালে ভাদ্রে এই পথে আসা হয় । আজকে শাহবাগের মোড়ে কিছু সময় দাড়িয়ে থেকে আমি গাড়ি ঘোড়া দেখতে থাকলাম । তারপর আস্তে আস্তে হাটা শুরু করলাম ।

আমার মনে আছে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন চলছে তখন আমার প্রায় প্রতিদিনের একটা রুটিন ছিল ক্লাস শেষ করে এই শাহবাগেই নেমে পড়তাম । তখন বাজতো বিকেল চারটা কিংবা সাড়ে চারটা । আমার টিউশনি থাকতি সন্ধ্যার সময় । সন্ধ্যার দিকে । মাঝে এই দেড় ঘন্টা আমার কোথাও যাওয়ার ছিল না । শাহবাগে না নেমে সোজা মোহাম্মাদপুর গেলে টাইটাই সময় হয়ে যেত । বাসায় গিয়ে আবার টিউশনিতে আসাটা একটা হ্যাপার ব্যাপার ছিল । তাই এই দেড় ঘন্টা এই এলাকাতেই ঘোরাঘুরি করতাম । শাহবাগ নেমে সোজা শেরাটনের সামনে দিয়ে হেটে শেরাটনের পেছনে যে রমনা পার্কটা রয়েছে সেখানে গিয়ে হাজির হতাম ।

তারপর সেখানেই একটা বেঞ্চে বসে চারিদিকের মানুষজন আর গাছপালা দেখতে শুরু করতাম । সাথে বই থাকতো । বঈ পড়তাম এখানে বসেই । এখানে ঘন্টা খানেক সময় চলে যেত চোখের পলকে । কত মানুষ এখানে আসতো । বুড়ো জোয়ান থেকে শুরু করে পিচ্চি পাচ্চা । মাঝে মাঝে দেখতাম কোনার দিকের কোন বেঞ্চে কাপলরা বসে আছে । কী সব করছে তা না হয় নাই বললাম । আমার এসব দেখতে ভালই লাগতো । আমি আমার কত গল্পই এখানে বসে লিখেছি তার কোন ঠিক নেই । সময়ের কিছু আগেই বের হয়ে যেতা, পার্ক থেকে । তারপর হাজির হতাম মিন্টুরোডে । ঢাকা শহরের ভেতরে সব থেকে পছন্দের একটা জায়গার নাম হচ্ছে এই মিন্টুরোড । এখানে আমি কত সময় যে কাটিয়েছি তার কোন ঠিক নেই ।

গতকাল একই রকম ভাবে রমনা পার্কে গিয়ে হাজির হলাম । হাতে খুব বেশি সময় ছিল না । তবে একটা বেঞ্চে বসে রইলাম কিছু সময় । সাথে করে কিনে আনা বই পড়লাম কিছু সময় ধরে । পাশেই ঢাকার ব্যস্ততম রাস্তা । গাড়ির হর্নের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে তারপরেও একটা আলাদা শান্তি আছে এই পার্কে । বসে থাকলে কেবল বসেই থাকতে ইচ্ছে করে ।



ফিরে আসার সময় একটা কুকুরকে দেখতে পেলাম কী যেন খাচ্ছে । এটাকে দেখে একজনের কথা মনে হল । এখন এমনই হয়েছে । একটা ছবি তুলে নিয়ে এলাম ।



এরপর আবার হাটতে শুরু করলাম । মিন্টুরোডের সামনে গিয়ে হাজির হলাম ।



ভেবেছিলাম আরো কিছু ছবি তুলবো তবে সেটা না করে আমি আমার হাটা উপভোগ করতে শুরু করলাম । এরই মাঝে আযান দিয়ে দিল । এমনই হত আমার সেই অতীতে । প্রায় দিনই এই রাস্তায় হাটার সময় আযান দিয়ে দিতো । আমি টুকটুক করে হাটতে শুরু করতাম । এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে যেতাম । মাঝে মাঝে এই ফুটপাতের উপরে বসে পড়তাম । একেবারে ডিবি অফিসের সামনে গিয়ে প্রায় দিনই চা খেতাম । এখান ভাল চা পাওয়া যায় । এখনও পাওয়া যায় কিনা জানি না । আগের দোকানটা ছিল খুবই ছোট । দেওয়ালের গ্রিলের ওপাশে দাড়িয়ে চা বিক্রি করতো । এখন অবশ্য বেশ ভাল দোকান হয়েছে । একবার মনে হল চা খাই তবে খাওয়া হল না ।

আমি সাইকেল চালাতে শুরু করার পরে পায়ে হেটে এই রাস্তায় আসাই হয় না একদম । সাইকেলে গেলে পুরো রাস্তাটা এক রকম লাগে আর পায়ে গেলে অন্য রকম । কয়েকদিন আগে অবশ্য এই রাস্তায় এসেছিলাম । আমাদের ব্লগের একজনের সাথে সাইকেল চালাতে । সেই নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম ছবি সমেত !

বাসায় ফিরতে ফিরতে নয়টা বেজে গেল । রাতে শুয়ে শুয়ে বারবার ঘুরে ফিরে সেই মিন্টুরোড আর রমনা পার্কের দিন গুলোর কথা মনে হতে লাগলো । মাঝ দিয়ে প্রায় দশ বছর পার হয়েছে । অথচ আমার মনে হয় যেন সেই দিনই আমি পার করেছি । জীবন এখন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে । সামনে আরো কোন দিকে যাবে কে জানে ঢাকার জীবনের এই সময়টা আমার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ন হয়ে থাকবে সব সময় । এই রোডকে কেন্দ করে আমার বেশ কয়েকটা গল্প লেখা আছে । যতবার গল্প গুলো সামনে আসবে ততবার আমি ঘুরে ফিরে জীবনের এই দিনের কথা মনে হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:০১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিরাতাম মুসতাকিমের হিদায়াত হলো ফিকাহ, কোরআন ও হাদিস হলো এর সহায়ক

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:০৮



সূরাঃ ৬ আনআম, ১৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×