ছবির এই বাসাতেই আমরা ছিলাম
প্রথম পর্ব
রাতের বেলা খাওয়া দাওয়ার পরে আমাদের মাঝে আলোচনা হয়েছিলো যে আগামীকাল আমরা কিভাবে পাহাড়ে উঠতো । আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল যে আমরা একবারে তিনটা পাহাড়ের সামিট করবো । তবে সেটা করতে গেলে ঝামেলা যা হত যে আমাদের মাঝে কে কেমন হাটতে পারে সেটার ব্যাপারে আমাদের টিম লিডারের কোন ধারণা ছিল না । রেমাক্রি থেকে এই দলিয়ান পাড়া পর্যন্ত হাটতে গিয়ে আমরা দুইজনের হাটার গতি দেখে মনে হল এরা কি পারবে কিনা !
তাই পরিকল্পনা সাজানো হল যে আগে সহজ পাহাড়টা সামিট করা হবে । তারপর পরের দিন কোন বড় পাহাড়টাতে উঠবো । আরেকটা কারণ হচ্ছে আমরা যে পথ দিয়ে যোগী হাফংয়ের চুড়াতে উঠবো সেই পথে আর্মির সাথে দেখা হওয়ার একটা সম্ভবনা থাকে । যদি আর্মির সাথে দেখা হয় তাহলে অবধারিত ভাবে আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিবে । আমাদের আর পাহাড়ে ওঠা হবে না । তাই ব্যাকআপ রাখা দরকার । যদি যোগীতে যাওয়ার পথে ধরাও পড়ি তাহলে পরের দিন আরেকটা সুযোগ থাকবে ঐ পাহাড়ে ওঠার ।
পরিকল্পনা হল যে আমরা খুব সকালে উঠবো । এবং সেই সকালেই রওয়ানা দিবো অন্ধকার থাকতে থাকতে । এই কারণেই রাতে খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম । ঢাকাতে আমার ঘুমাতে বেশ রাত হয় । অন্তত রাত দুইটাই বাজে প্রতিদিন । এখানে সাড়ে আটটা নয়টার ভেতরে ঘুমিয়ে পড়া অসম্ভব মনে হল । তবে কেন জানি সাড়ে নয়টার ভেতরেই ঘুমিয়ে পড়তে সক্ষম হল । সম্ভবত সারাদিনের জার্নি ক্লান্তির কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছিলো ।
রাত তিনটার সময় ঘুম ভেঙ্গে গেল । আমরা উঠে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম । খাওয়া দাওয়া বলতে গরম গরম খিচুড়ি আর ডিম ভাজি । আমরা যাদের বাসায় ছিলাম সেই আমাদের জন্য সকল রান্না বান্না করছিলো ।
আমাদের যোগীতে যাওয়ার জন্য আলাদা গাইড ঠিক করা ছিল । সে ঠিক সময়ে এসে হাজির হল । আমাদের সাথেই খাওয়া দাওয়া করলো । আমরা প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে ব্যাগে । বিশেষ করে আমাদের পানি নিতে বলা হল । কারণ যোগীতে উঠে ফিরে আসার পর্যন্ত আমাদের সাথে বহন করে নিয়ে যাওয়া পানিই সম্বল । আমরা আর পানি পাবো না ।
অন্ধকারের ভেতরে যখন হাটা শুরু করলাম তখন চারটা বাজে । আমরা ছয়জন সাথে আমাদের গাইড । মোট সাত জন হাটা শুরু করলাম । বছর দুয়েক আগেও এই যোগীতে যাওয়ার পথ ভয়ংকর রকম দুর্গম ছিল । তবে এখন এখানে রাস্তা হয়ে গেছে ।
এই কারণে যোগীতে যাওয়াটা আগের তুলনায় সহজ হয়ে গেছে অনেক। তবে সহজ হয়েছে মানে এই না যে যে কেউ এখানে হাটতে পারবো পাহাড়ের রাস্তা মানেও সেই খাড়া রাস্তা । উঠতে নামতে একেবারে খবর খারাপ হয়ে যায় ।
চলার পথের পাহাড়
যোগীতে মোট চারটা চুড়া আছে । আমরা যখন প্রথম চুড়াতে পৌছালাম তখন ঘড়িতে বাজে সাড়ে সাতটা ।
দুরে যে উচু উচু দুইটা চুড়া দেখটে পাচ্ছেন ঐদুইটা হচ্ছে জোতলং আর আয়ানত্লাং । ও দুটোতে আমরা আগামী কাল উঠবো । এটা হচ্ছে প্রথম চুড়া থেকে তোলা ছবি ।
দ্বিতীয় চুড়ার ছবি নিচে
তিন নম্বর চুড়াতে ঘাস ভর্তি । ওটাও যাওয়ার পথে পড়ে । ওটার ছবি তোলা হয় নি । এখানে একেকটা চুড়ার সাথে আরেকটা চুড়া ব্রিজ লাইন দিয়ে যুক্ত । আমরা ৪র্থ চুড়ায় যখন উঠলাম তখন সম্ভবত সাড়ে আটটা কিংবা নয়টা বাজে । সঠিক সময়টা মনে নেই ।
আমরা এই চুড়াতে বসেই বিশ্রাম নিলাম । সবাই ছবি তুলল । এখানে বসে আমরা সাথে করে নিয়ে আসা খাবারও খাওয়া শুরু করলাম । তব এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল যে আমরা একটা খাবারের খোসা কিংবা প্যাকেট পাহাড়ের কোথাও ফেলি নি । সব ব্যাগে করে নিচে এসেছি পাড়াতে ।
তারপর আমরা দশটার দিকে আবারও ফেরার পথ ধরলাম । তবে এবার আমাদের বেশ কষ্ট হয়ে গেল । কারণ তখন তীব্র রোদ দেখা দিয়েছে । আসার সময় অন্ধকার ছিল, সকাল ছিল তাই আমরা বেশ আরামেই চলে এসেছি । তবে এবার আমাদের হালুয়া টাইট হয়ে গেল গরমে । এবং একটা পর্যায়ে এসে আমাদের সবার পানি শেষ হয়ে গেল ! আমি যদিও পানি কম খাই তবুও আমার পানিও শেষ হয়ে গেল । সেই সাথে আমাদের একটা ভয় ছিল যে যেকোন সময়ে আর্মির গাড়ি চলে আসতে পারে । যদি চলে আসে তখন কী হবে সেটার ঠিক নেই ।
এটা হচ্ছে আর্মি যাওয়ার রাস্তা। এইটা ক্রস করার পরে একটু নিশ্চিত হলাম আমরা । তবে পানির চিন্তা দুর হল না ।
আমাদের গাইড ছিল বেশ পেছনে দলের হাটতে না পাড়া একজনের সাথে । আমরা চলে এসেছিলাম বেশ সামনে । একবার ভুল পথে চলে গিয়েছিলাম । পরে আবার ফিরে আসতে হয়েছিলো । সেই গরমে কষ্টটা খুব বেশি হয়ে গিয়েছিলো ।
পাড়াতে যখন ফিরে আসি তখন দুপুর দেড়টার মত বাজে । সবাই গরমে ত্যাক্ত আর বিরক্ত । দুপুরে আরাম করে গোসল দিলাম । তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটু শুয়ে পড়লাম । কালকে আমাদের বড় কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে । বিকেলের দিকে পাড়া বেড়াতে বের হলাম ।
দলিয়ান পাড়াতে মোট ২৫টা বম পরিবারের বাস । শাক্তি চুক্তির আগে নাকি এখানে একশটার বেশি পরিবার থাকতো । পাড়ার লোকেদের জন্য এখানে দুইটা দোকান আছে । সেখানে কোক বিস্কুট চিপস পাওয়া যায় । একটা চার্চ আছে এখানে ।
প্রতি রবিমার এখানে প্রার্থনা হয় । তখন নিচের একটা পাড়া থেকে একজন ফাদার আসেন এখানে ।
নদুই বছর আগে যখন এই পাড়াতে এসেছিলাম তখন অন্য ঘরে ছিলাম । নিচের এই ঘরটা বাহাদুর ভাইয়ের । এখানেই ছিলাম সেবার ।
আবারও রাত নয়টার ভেতরে আমরা রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়লাম। আগামীদিনেও আমাদের সকালেই বের হতে হবে । তবে আগামী দিনে আমাদের খুব ভোরে বের হতে হবে না । আর আর্মির ভয়ও থাকবে না । কারণ আমরা যে পথে যাবো সেখানে কেউ যায় না ।
মনের ভেতরে একটা শান্তি লাগছিলো এই ভেবে যে অবশেষে যোগী হাফংয়ে উঠতে পারলাম । অনেক দিনের একটা ইচ্ছে পূরণ হল ।
বাকি লেখা আগামী লেখায়
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:০৭