somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমনব্লগঃ যোগী-যোতলং-আয়ানত্লং সামিট (২য় পর্ব)

০১ লা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবির এই বাসাতেই আমরা ছিলাম

প্রথম পর্ব
রাতের বেলা খাওয়া দাওয়ার পরে আমাদের মাঝে আলোচনা হয়েছিলো যে আগামীকাল আমরা কিভাবে পাহাড়ে উঠবো । আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল আমরা একবারে তিনটা পাহাড়ে সামিট করবো । তবে আমাদের মাঝে কে কেমন হাটতে পারে সেটার ব্যাপারে আমাদের টিম লিডারের কোন ধারণা ছিল না । সেটার জন্য এতোটা পরিশ্রম করা সম্ভব হবে কিনা সেটা আগে থেকে জানা ছিল না । এটা রিস্ক হয়ে যাবে। রেমাক্রি থেকে এই দলিয়ান পাড়া পর্যন্ত হাটতে গিয়ে দুইজনের হাটার গতি দেখে টিম লিডারের মনে সন্দেহ জেগেছিলো ওরা কি পারবে কিনা !

তাই পরিকল্পনা সাজানো হল যে আগে সহজ পাহাড়টা সামিট করা হবে । তারপর পরের দিন বড় পাহাড়টাতে উঠবো । আরেকটা কারণ হচ্ছে আমরা যে পথ দিয়ে যোগী হাফংয়ের চুড়াতে উঠবো সেই পথে আর্মির সাথে দেখা হওয়ার একটা সম্ভবনা থাকে । যদি আর্মির সাথে দেখা হয় তাহলে তারা আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিবে । আমাদের আর পাহাড়ে ওঠা হবে না । তাই ব্যাকআপ রাখা দরকার । যদি যোগীতে যাওয়ার পথে ধরাও পড়ি তাহলে পরের দিন আরেকটা সুযোগ থাকবে ঐ পাহাড়ে ওঠার ।

পরিকল্পনা হল যে আমরা খুব সকালে উঠবো । এবং সেই সকালেই রওয়ানা দিবো অন্ধকার থাকতে থাকতে । এই কারণেই রাতে খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম । ঢাকাতে আমার ঘুমাতে বেশ রাত হয় । অন্তত রাত দুইটাই বাজে প্রতিদিন । এখানে সাড়ে আটটা নয়টার ভেতরে ঘুমিয়ে পড়া অসম্ভব মনে হল । তবে কেন জানি সাড়ে নয়টার ভেতরেই ঘুমিয়ে পড়তে সক্ষম হলাম। সম্ভবত সারাদিনের জার্নি ক্লান্তির কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছিলো ।
রাত তিনটার সময় ঘুম ভেঙ্গে গেল । আমরা উঠে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম । খাওয়া দাওয়া বলতে গরম গরম খিচুড়ি আর ডিম ভাজি । আমরা যাদের বাসায় ছিলাম সেই আমাদের জন্য সকল রান্না বান্না করছিলো ।

আমাদের যোগীতে যাওয়ার জন্য আলাদা গাইড ঠিক করা ছিল । সে ঠিক সময়ে এসে হাজির হল । আমাদের সাথেই খাওয়া দাওয়া করলো । আমরা প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে নিলাম ব্যাগে । বিশেষ করে আমাদের পানি নিতে বলা হল । কারণ যোগীতে উঠে ফিরে আসার পর্যন্ত আমাদের সাথে বহন করে নিয়ে যাওয়া পানিই সম্বল । পথে আমরা আর পানি পাবো না ।

অন্ধকারের ভেতরে যখন হাটা শুরু করলাম তখন চারটা বাজে । আমরা ছয়জন সাথে আমাদের গাইড । মোট সাত জন হাটা শুরু করলাম । বছর দুয়েক আগেও এই যোগীতে যাওয়ার পথ ভয়ংকর রকম দুর্গম ছিল । তবে এখন এখানে রাস্তা হয়ে গেছে ।



এই কারণে যোগীতে যাওয়াটা আগের তুলনায় সহজ হয়ে গেছে অনেক। তবে সহজ হয়েছে মানে এই না যে যে কেউ এখানে হাটতে পারবো । পাহাড়ের রাস্তা মানেও সেই খাড়া রাস্তা । উঠতে নামতে একেবারে খবর খারাপ হয়ে যায় ।
চলার পথের পাহাড়



যোগীতে মোট চারটা চুড়া আছে । আমরা যখন প্রথম চুড়াতে পৌছালাম তখন ঘড়িতে বাজে সাড়ে সাতটা ।



দুরে যে উচু উচু দুইটা চুড়া দেখতে পাচ্ছেন ঐ দুইটা হচ্ছে জোতলং আর আয়ানত্লাং । ও দুটোতে আমরা আগামী কাল উঠবো । এটা হচ্ছে প্রথম চুড়া থেকে তোলা ছবি ।
দ্বিতীয় চুড়ার ছবি নিচে



তিন নম্বর চুড়াতে ঘাস ভর্তি । ওটাও যাওয়ার পথে পড়ে । ওটার ছবি তোলা হয় নি । এখানে একেকটা চুড়ার সাথে আরেকটা চুড়া ব্রিজ লাইন দিয়ে যুক্ত । আমরা ৪র্থ চুড়ায় যখন উঠলাম তখন সম্ভবত সাড়ে আটটা কিংবা নয়টা বাজে । সঠিক সময়টা মনে নেই ।



আমরা এই চুড়াতে বসেই বিশ্রাম নিলাম । সবাই ছবি তুলল । এখানে বসে আমরা সাথে করে নিয়ে আসা খাবারও খাওয়া শুরু করলাম । তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল যে আমরা একটা খাবারের খোসা কিংবা প্যাকেট পাহাড়ের কোথাও ফেলি নি । সব ব্যাগে করে নিচে এসেছি পাড়াতে ।

তারপর আমরা দশটার দিকে আবারও ফেরার পথ ধরলাম । তবে এবার আমাদের বেশ কষ্ট হয়ে গেল । কারণ তখন তীব্র রোদ দেখা দিয়েছে । আসার সময় অন্ধকার ছিল, সকাল ছিল তাই আমরা বেশ আরামেই চলে এসেছি । তবে এবার আমাদের হালুয়া টাইট হয়ে গেল গরমে । এবং একটা পর্যায়ে এসে আমাদের সবার পানি শেষ হয়ে গেল ! আমি যদিও পানি কম খাই তবুও আমার পানিও শেষ হয়ে গেল । সেই সাথে আমাদের একটা ভয় ছিল যে যেকোন সময়ে আর্মির গাড়ি চলে আসতে পারে । যদি চলে আসে তখন কী হবে সেটার ঠিক নেই ।


এটা হচ্ছে আর্মি যাওয়ার রাস্তা। এইটা ক্রস করার পরে একটু নিশ্চিত হলাম আমরা । তবে পানির চিন্তা দুর হল না ।

আমাদের গাইড ছিল বেশ পেছনে দলের হাটতে না পাড়া একজনের সাথে । আমরা চলে এসেছিলাম বেশ সামনে । একবার ভুল পথে চলে গিয়েছিলাম । পরে আবার ফিরে আসতে হয়েছিলো । সেই গরমে কষ্টটা খুব বেশি হয়ে গিয়েছিলো ।

পাড়াতে যখন ফিরে আসি তখন দুপুর দেড়টার মত বাজে । সবাই গরমে ত্যাক্ত আর বিরক্ত । দুপুরে আরাম করে গোসল দিলাম । তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটু শুয়ে পড়লাম । কালকে আমাদের বড় কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে । বিকেলের দিকে পাড়া বেড়াতে বের হলাম ।
দলিয়ান পাড়াতে মোট ২৫টা বম পরিবারের বাস । শাক্তি চুক্তির আগে নাকি এখানে একশটার বেশি পরিবার থাকতো । পাড়ার লোকেদের জন্য এখানে দুইটা দোকান আছে । সেখানে কোক বিস্কুট চিপস পাওয়া যায় । একটা চার্চ আছে এখানে ।


প্রতি রবিবার এখানে প্রার্থনা হয় । তখন নিচের একটা পাড়া থেকে একজন ফাদার আসেন এখানে ।

দুই বছর আগে যখন এই পাড়াতে এসেছিলাম তখন অন্য ঘরে ছিলাম । নিচের এই ঘরটা বাহাদুর ভাইয়ের । এখানেই ছিলাম সেবার ।



আবারও রাত নয়টার ভেতরে আমরা রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়লাম। আগামীদিনেও আমাদের সকালেই বের হতে হবে । তবে আগামী দিনে আমাদের খুব ভোরে বের হতে হবে না । আর আর্মির ভয়ও থাকবে না । কারণ আমরা যে পথে যাবো সেখানে কেউ যায় না ।
মনের ভেতরে একটা শান্তি লাগছিলো এই ভেবে যে অবশেষে যোগী হাফংয়ে উঠতে পারলাম । অনেক দিনের একটা ইচ্ছে পূরণ হল ।

বাকি লেখা আগামী লেখায়
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:৩৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×