মেলায় আরেকটা নিষিদ্ধ বইয়ের নাম ''প্রেসিডেন্টের লুঙ্গি নাই'' । কোন বইয়ের নাম যে এমন হতে পারে তা বইটি না দেখলে আমার বিশ্বাস হত না । অবশ্য আমাদের দ্বারা সবই সম্ভব এটাও ভুলে গেলে চলবে না । আগেই বলে নিই এই বইটাও আমি কেবল মাত্র পড়েছি বইটা নিষিদ্ধ হয়েছে বলেই । নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের একটা আগ্রহ বেশি থাকে সব সময় । আমার আসলে জানার আগ্রহ ছিল যে বইতে এমন কী আছে যা বইটাকে নিষিদ্ধ করতে হবে ।
বইতে সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা হয় নি । এমন কি এটা আসলে কোন বাস্তবধর্মী কাহিনীও নয় । বইতে একটা কল্পনার রাজ্যের গল্প রূপকথার আদলে বর্ণনা করা হয়েছে । বইটি একজন এতিম তার নিজের জবানীতে বর্ণনা করেছেন । সে প্রথমে হিন্দু ছিল পরে পরে সে মুসলমান নাম ধারণ করে । তার নাম এখন খালিদ বিন ওয়ালিদ । ইতিহাসের বিখ্যাত যোদ্ধার নামে ।
কল্পনার এক আজব দেশ তৈরি করা হয়েছে পোকামাকড়েরা । দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছে এই সব পোকামাকড় গুলো । বইয়ের একদম শুরুতেই দেশের প্রেসিডেন্টকে তুলে নিয়ে যেতে তার বাসায় এসে হাজির হয় টিকটিক ভাই এবং মাকড়শা ভাই। এখানেই তারা খালিদকে বলে প্রসিডেন্টকে তারা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে তার শরীর খারাপ । তার জন্য কিছু জামা কাপড় গুছিয়ে দিতে ।
এখানে বলে রাখা ভাল যে প্রেসিডেন্ট যখন দেশের রাজা ছিল তখন সে এই ছোট খালিদকে নিয়ে এসেছিলো নিজের কাছে । তারপর নিজের ছেলের মত করে মানুষ করেছে । এই খালিদ এখন প্রেসিডেন্ডের সব কিছ দেখা শোনা করে । তার কখন কী প্রয়োজন সেটা সমাধান করে ।
যখন মাকড়শা আর টিকটিকি বলে প্রেসিডেন্টের জন্য লুঙ্গি দিতে তখন খালিদ বলে যে ''স্যারের তো লুঙ্গি নাই । প্রেসিডেন্টের তো লুঙ্গি নাই'' । পুরো বই য়ে এই একবারই শব্দ গুলো ব্যবহার করা হয়েছে ।
প্রেসিডেন্টকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । এরপর নানান স্থান থেকে নানান মানুষ আসতে থাকে । খালিদ নিজেদের ভাষায় তাদের বর্ণনা করতে থাকে । এক সময়ে তাকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পোকামাকড়দের হেড কোয়াটারে । তাকে এবার হুমকি দেওয়া হয় সে যাতে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষি হয় । যদি না হয় তবে তার নামে ধর্ষনের মামলা দেওয়া হবে । এবং এই মামলা দেওয়ার জন্য তারই দলের একজন নেত্রীকে তার সামনে নিয়ে আসা হয় ।
তবে শেষ পর্যন্ত খালিদকে আর প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সাক্ষি দিতে হয় না । সে মুক্তি পেয়ে যায় ।
বইটা মূলত লেখা হয়েছে খানিকটা মেফরিক ভাবে । এখানকার বেশ কয়েকটি চরিত্রের নাম বেশ হাস্যকার ভাবে তুলে ধরা হলেও লেখকদের ভেতরে অন্য কোন মিলিং বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। যেমন নাম আছে শ্রমিক ভাই, বড়ো ম্যাডাম, ছোট ম্যাডাম, স্বচ্ছ ভাই, প্রলোভব আপা ইত্যাদি । এসব চরিত্র দিয়ে লেখক রাজনীতির অঙ্গনে বিশেষ কিছু চরিত্রকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন । লেখক লেখার ভেতরে ধর্মের কথা এসেছে । এসেছে মুসলমানদের যুদ্ধের সময়কার কথা । আগেরকার দিনে রাজা বাদসাদের হারেমখানার কথা । তিনি আসলে এই সব মিলিয়ে কোন একটা স্বৈর সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়েছেন রূপক ভাবে ।
সত্যি বলতে কি, এই বই পড়ে আমি মোটেও আরাম পাই নি । লেখকের লেখার হাত খুব বেশি মজবুত নয় । অধ্যায় গুলো পড়তে গিয়ে আবার বারবার মনে হয়েছে যেন লেখক খানিকটা জোর করে লেখা গুলো লিখেছেন ।
বইয়ের লেখকের সম্পর্কে আমার আগে কোন ধারণা ছিল না । আগে আমি ইনার নামও শুনি নি কোন দিন । আজকে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখলাম লেখক এক সময়ে এরশাদের উপদেষ্টা ছিলেন এবং সব থেকে বড় পরিচয় হচ্ছে তিনি মুসা বিন শবসের ছেলে । এটা তথ্য আমাকে চমকৃত করলো ।
উপরের ছবি boierpathshala.com থেকে নিচের ছবিটি আমার কমদামী ক্যামেরায় তোলা
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৪৬