
গতপর্বেই মূলত আমাদের সকল কঠিন এবং ঝুকিপূর্ণ হাটা শেষ হয়ে ছিলো । নিচে থেকে আমরা আবার উঠে এলাম । আপনাদের যদি মনে থেকে তাহলে ভাল তবে আরেকবার মনে করিয়ে দিই যে আমরা আবারও প্রথম দিন যেই পাহাড়ে (যোগী হাফং) উঠেছিলাম সেই পাহাড়ের পাদদেশে এসে হাজির হয়েছি । মূলত যারা হেভি ট্রাকার তারা এই তিন পাহাড় একদিনেই সামিট করে ফেলে । আমাদের মত সৌখিন পাহাড়ে বেড়ানো মানুষের জন্য একদিন তিন পাহাড়ে ওঠা একটু কষ্টের । তাই আমরা আলাদা পাহাড়ে উঠেছিলাম ।
তবে আমি আর আরও দুইজন কী মনে করে আমারা যোগীর প্রথম পাহাড়ে আরও একবার উঠে এলাম । একসাথে তিন পাহাড় সামিট হয়ে গেল আমাদেরও । আমাদের অন্যান্য সাথীরা ততক্ষনে গাইড সমেত হাটা দিয়েছে ফেরার পথে । আমাদের ফেরার পথ গতদিনের ফেরার পথ । আমরা আবার হাটতে শুরু করলাম । এবার পথ আমাদের চেনা । সুতরাং যে যার মত হাটতে শুরু করলো । হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই।
বিকেলের শেষ আলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে । আমরা হেটে চলেছি আপন মনে । আমাদের মনে গতদিনের মত কোন টেনশন কাজ করছিলো না যে হয়তো আর্মি চলে আসতে পারে । কারণ এই সময়ে আর্মির গাড়ি কখনই আসবে না ।
ফেরার পথেই অন্ধকার নেমে এল । তবে আমাদের খুব একটা চিন্তা ছিল না । আমাদের সবার কাছেই পর্যাপ্ত পরিমান আলোর ব্যবস্থা ছিল । আমাদের পথ হাটতে গতদিনের মত কষ্টও হচ্ছিলো না কারণ গতদিন আমরা হেটেছিলাম একেবারে কড়কড় রোদের নিচে । কিন্তু আজকে সূর্য একেবারেই মোলায়েম ছিল আমরা যখন এই পথে হাটা শুরু করলাম । এবং এক সময়ে সেটা তো ডুবেই গেল । আমরা ধীরে সুস্থে হাটতে পৌছে গেলাম পাড়াতে । যখন পাড়াতে পৌছায় তখন সাড়ে ছয়টার মত বাজে ঘড়িতে । মানে হচ্ছে আমাদের পুরো সামিট করতে মোট সময় লেগেছে ১২ ঘন্টার মত । আগের বার আমাদের সময় সময় লেগেছিলো ১৮ ঘন্টা । এবং শরীরের অবস্থাও একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছিলো । সেই তুলনাতে এইবার তো অনেক হেসে খেলে চলে এলাম ।
ফ্রেশ হয়ে আগে নাস্তা করলাম হালকা । তারপর রাতে বেশ ভাল খাওয়া দাওয়া হল । আজকে এই পাড়াতে শেষ দিন বলে ফিস্টের আয়োজন করা হল । এর আগে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান তরকারী ব্যবস্থা ছিল তবে আজকে সব হিসাব ছাড়া ।
হাটা মানেই পরিশ্রম তাই রাতে আবারও আগের দিনের মতই ঘুম দিলাম । সকালে ওঠার কোন তাড়া ছিল না । কিছু মোবাইলে টিপে ঘুমিয়ে পড়লাম । আমি আসলে শুয়ে শুয়ে একটা জিনিস টের পেলাম যে আমার মোবাইলে যে এপস গুলো আমি ব্যবহার করি তার সব গুলোই চলে নেট কানেকশনে । এই পুরো সময়ে আমি আমার মোবাইল কেবল মাত্র ছবি তোলার জন্য বের করেছি । অন্য কোন কাজে না । যদিও আমার ছবি তোলার শখও যে খুব একটা আছে সেটাও না । সেই হিসাবে মোবাইলের চার্যও যায় নি । হিসাব করলে পুরো তিন দিনে আমি মাত্র একবার মোবাইলে চার্য দিয়েছে । অন্য দিকে ঢাকাতে প্রটিদিন মোবাইলে চার্য দিতে হয়।
সকালে যদিও তাড়া ছিল না তারপরেও একদম সকালেই ঘুম ভেঙ্গে গেল । ফ্রেশ হয়ে আমি পাড়ার একদিন ওদিক হাটতে লাগলাম । সেদিন বিকেলে যেমন হাটতে বের হয়েছিলাম আজও তাই করলাম । একটু পরে দেখলাম আমাদের টিমের বাকিরাও যুক্ত হল । এই পাড়াতে মোট দুইটা দোকান রয়েছে । একটা একেবারে আমাদের পাশেই ছিল । মানে আমরা যে ঘরে ছিলাম সেটার পাশেই । আরেকটা ছিল একটু দুরে । এই দোকান দুটো যদিও সেখানে অনেক কিছু পাওয়া যায় তবে এই পাহাড়ি অঞ্চলের তুলনাতে বেশ ভাল কিছু পাওয়া যায় । আমরা দুরের দোকানে গিয়ে হাজির হলাম। এই দোকানের মালিক হচ্ছে আমাদের গতদিনের গাইড । সেই এটা চালায় । আমাদের দেখে হাসি মুখে বের হয়ে এল । চায়ের ব্যবস্থা হবে কিনা বলতেই বলল যে হবে । যদিও আমার আশা ছিল না আমি বললাম কফি হবে কিনা ! আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল যে হবে । এই পাড়াতে কফি পাবো আশা করি নি । জানলে আগেও আসতাম ।
চা পর্ব শেষ করে আবারও এদিক ওদিক হাটতে লাগলাম । সকালের খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেলা এগারোটার দিকে আমরা রেমাক্রির দিকে হাটা দিলাম । আগের মত হাটা চলা চলল । গল্প চলল । মাঝে দোকান ছিল একটা । সেখানে বসে আমরা আবারও চা খেলাম ।
রেমাক্রি যখন পৌছালাম তখন একটার মত বাজে । আমাদের নৌকা রেডিই ছিল । চড়ে বসলাম । যাত্রা শুরু হল থানচির দিকে ।
এবারের বর্ণনা সংক্ষিপ্ত । আমরা সাড়ে তিনটার দিকে পৌছালাম থানচি । হোটেলে খাওয়া দাওয়ার পরে আমাদের থেকে একজন বিদায় নিয়ে নিল । সে থাকে বান্দারবান শহরে । সেখানে যাবে সে । আমরা থানচি থেকে আলীকদম এবং আলীকদম থেকে চলে এলাম চকরিয়া । সেখানে রাতের খাওয়া হল । রাত দশটার সময় আমাদের বাস রওয়ানা দিল । ঢাকায় যখন পৌছালাম তখন ভোর ৫টা বাজে ।
আমাদের আরেকটা বান্দরবান ট্যুর শেষ হল ।
এবার এই ট্যুরের শেষ কয়েকটা ছবি যুক্ত করছি । যদিও আমার ক্যামেরা খুব বেশি ভাল না ।
আমরা যে বাসায় ছিলাম তার নম্বর। বাড়ির ছবি আগের পোস্টে দিয়েছি ।

আমাদের তার ৫ ছেলে । এর ভেতরে দুইজন। এদের নাম ভুলে গেছি ।

আমাদের ফেরার দিনের পথের ছবি

আরেকটা পথের ছবি

চলার পথে বেশ কয়েকটা ফুলের ছবি





চলার পথে যে দোকানে বসে চা খেয়েছিলাম তার নাম

এটা হচ্ছে একটা স্কুল

নৌকা দিয়ে ফেরার পথে

প্রতিবার যখন আমি পাহাড়ে উঠি আমার মনে হয় ঘোড়ার ডিম কেন এলাম এই পাহাড়ে । এর থেকে আরাম করে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে থাকলে ভাল হত । মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি যে আর না । এটাই শেষ । কিন্তু ঢাকাতে ফিরে আবারও মন আনচান করে যে কবে আবার যাবো পাহাড়ে ।
আপনারাও ঘুরে আসতে পারেন । এখন অনেক গুলো ট্যুর গ্রুপ আছে । এদের সাথে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো অনেক নিরাপদ এবং ঝামেলা বিহীন ।। আবারও সামনের কোন ট্যুরের গল্প নিয়ে হাজির হব ।
ভাল থাকুন সবাই ।
এই ট্যুরের সকল পর্ব
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




