somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমনব্লগঃ যোগী-যোতলং-আয়ানত্লং সামিট (৩য় পর্ব)

১৫ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের দিনের গল্পের পর থেকে শুরু করছি ।

রাতে খাওয়া শেষ করে আমাদের গ্রুপ লিডার ঠিক করলেন যে গতদিনের মত আমাদের সকাল সকাল রওয়ানা দিতে হবে । তবে আজকে আমার ভোর তিনটার সময় ওঠার দরজার নেই । কারণ পথে আমাদের আর্মির সাথে দেখা হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই ।

সকাল বেলা তার একটু দেরি করে আমরা বের হলাম । তখনও যদিও অন্ধকার । আজকে আমাদের ভেতর থেকে একজন পাড়াতেই রয়ে গেল । কালকে হেটে তার শরীরের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে । আমরা মোট ৫জন এবং সাথে আমাদের গাইড রওয়ানা দিলাম ভোর সোয়া ৫টার দিকে ।
পাড়া থেকে বের হয়েই আমরা কিছু দুর যাওয়ার পরেই আমাদের গাইড বলল আমরা কেউ যেন কোন কথা না বলি । কারণ আর্মির ক্যাম্প না থাকলেও বিজিবির ক্যাম্প আছে । আমরা একেবারে নিশ্চুপ ভাবে হাটতে শুরু করি । আমাদের মনে যদিও ভয় ছিল না । কারণ যদি বিজিবির হাতে ধরা পড়ি তবে খুব একটা বড় কিছু হবে না । বিজিবি কেবল আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিবে । তারপরেও একটা অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিলো মনে ।

এমন একটা স্থান এল যেখানে বিজিবি ক্যাম্পের বেড়া দেখা যাচ্ছিলো । যদিও সেখান থেকে কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছিলো না । যদি এই সময়ে কেউ এই বেড়ার ওপাশে চলে আসে আমাদের দেখে ফেলবে কোন সন্দেহ নেই । আমরা দ্রুত পায়ে জায়গাটা এগিয়ে চললাম । একটা সময়ে আমরা নিরাপদ স্থানে চলে এলাম ।

এরপর মূলত আমাদের পাহাড়ে ওঠা শুরু হল । আমরা এতো সময়ে বলতে লেগে তুলনা মূলক ভাবে সমতল এলাকাতেই হেটে পার হয়েছি । ঘন্টা খানেকের উপরে হাটার পরে আমরা পাহাড় চড়া শুরু করলাম ।
দুই বছর আগে যে পথে আমরা যোতলংএ উঠেছিলাম এই বার খেয়াল করে দেখলাম যে আমরা অন্য পথে যাচ্ছি । এমনটা আসলে স্বাভাবিক ব্যাপার । সব সময়ই পাহাড়ে ওঠার পথা গাইডেরা পরিবর্তন করে ।

তবে একটু পরেই সেই আগের ফিলটা পাওয়া শুরু করলাম । একের পর এক পাহাড়ে উঠছি তো উঠছি যেন শেষ নেই । পাহাড়ের এই রাস্তা গুলোতে হাটতে আমার বরাবরই পছন্দে । দুর দুরান্তে আসলে কোন মানুষজনের দেখা নেই । সামনে কাউকে যে দেখতে পাবো এমন কোন সম্ভবনা নেই । কেবল পাহাড়ে কখনো উপড়ে ওঠা আবার কখনো নিচে নামা । এভাবে এগিয়ে চলতে হবে ।
আজকে আমাদের টিমের সবাই বেশ চটপটে । কাউকে খুব বেশি পেছনে ফেলে যেতে হচ্ছে না ।

আমি সব সময় এগিয়ে থাকি । আমার থিউরি হচ্ছে যদি আমি খুব দ্রুত হাটতে পারি তাহলে আমি আগে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাই । ধরেন একটা পাহাড়ে উঠতে কারো ২০ মিনিট লাগে । আমি সেটা দ্রুত হেটে ১০/১২ মিনিটে উঠে পড়ি । তারপর সেখানে গিয়ে ৮ মিনিট বিশ্রাম করি । এই রকম করেই পাহাড়ে চড়তে ভাল লাগে আমার ।



আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা হেটে চললাম । কখনো উচু আবার কখনো নিচু । এই উঠছি আবার এই নামছি । তবে এবার পথ আগের বারের থেকে একটু সহজ ছিল । আমরা যখন আবারও যোতলংয়ের চুড়ায় পৌছালাম তখন ঘড়িতে বাজে সাড়ে এগারোটা । এতো জলদি যে উপরে উঠে যাবো বুঝতে পারি নি ।



চুড়ায় বসে সময় কাটালাম কিছু সময় । সাথে করে নিয়ে আসা খাবার খেলাম । ছবি তুললাম । সামিট নোট লিখলাম । তারপর আবারও রওয়ানা দিলাম । তবে এবার আমরা ফেরার পথে নয় বরং অন্য পথে যাবো । আমরা যাবো এবার আয়ানত্লাংয়ের দিকে । আয়ানত্লাংয়ের চুড়াটা মূলত যোতলং হতে যোগীর যাওয়ার পথের মাঝের একটা চুড়া ।



এই যোতলং হতে আয়ানত্লাংয়ের দিকে যাওয়ার পথটা সব থেকে বেশি দুর্গম । এতো সময় আমরা পাহাড়ি পথেই এসেছি কিন্তু এই পথ সম্পূর্ন বাঁশ ঝাড়ের পথ । তাও আবার বড় বাশ ঝাড় ন সব ছোট ছোট পথ । আমার পরনে ছিল হাফ হাতা টিশার্ট । এই কারণ হাতে প্রচুর খোঁচা খেতে শুরু করলাম । রাস্তা মাঝে এমন হচ্ছে যেখানে আমাদের হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে হচ্ছে । পুরোটা পথ আমাদের জন্য বেশ দুর্গম ছিল । ছিল কষ্টের । এখানে কাঠিন্যের মাত্রা আরও একটু বেশি ছিল গরমের কারণে । যোতলংয়ের ওঠার সময়টা ছিল সকালের দিকে তাই রোদের তেজ ছিল অনেক অল্প । তবে এখন তীব্র তেজে সূর্য দিল মাথার উপরে । গরম ছিল অনেক ।



তবে সকল কষ্টের যেমন শেষ আছে এই যাত্রারও শেষ হল । আমরা আয়ানত্লাং পৌছে গেলাম । ঘড়িতে সময় তখন দুইটা ৩৫। সেখানে একই ভাবে ছবি তুলে বিশ্রাম নিয়ে আবারও যাত্রা শুরু করলাম ।


এবারও কিন্তু যে পথে এসেছি সেই পথে ফিরছি না । আমরা গতদিন যোগীতে গিয়েছিলাম । আজকে এই আয়ানত্লাং থেকে যোগীতে গিয়ে হাজির হব । এখানে একটা রিজ লাইন রয়েছে । আমরা সেই পথেই যাবো । এখানেও পথ ঠিক আগের মতই দুর্গম আর বিরক্তিকর । আমরা এই নামছি তো এই উঠছি ।





গতদিনের পোস্টে বলেছিলাম যে পাহাড় কেটে পথ বানানো হচ্ছে । আমাদের মূল লক্ষ হচ্ছে সেই পথেই ওঠা । যোতলংয়ে ওঠার পর থেকে পাহাড় কাটা মেশিনের আওয়াজ আমাদের কানে আসছিলো । সময় যত এগিয়ে যেতে লাগলো সেই আওয়াজ ততই বাড়তে লাগলো । আমরা আসলে তত কাছে চলে আসছিলাম ।

একটা সময়ে অবশ্য সেই আর সেই আওয়াজ হল না । অর্থ্যাৎ কাজ শেষ করে ওরা চলে গেছে । আমরা যখন সেই মাটির রাস্তার নিচে পৌছালাম বিকেল চারটার মত বাজে । এখানেই সব থেকে ভয়ংকর ব্যাপার । আমরা যে পথে পাহাড়ে উঠবো বলে ঠিক করেছিলাম সেই পথটাই মাটি ফেলা হয়েছে আজই । মাটি এখানে একেবারে ঝুড়ঝুড়ে । আর গাছপালা কেটে, ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে । আমরা এখন উপরে উঠবো কিভাবে?

আমাদের গাইড বেশ চিন্তিত হয়ে উঠলো । কারণ উঠার কোন রাস্তা নেই । সে পথ খুজতে লাগলো । আমি তার পেছন পেছন উঠতে শুরু করলাম । সেই ভেঙ্গে উপড়ে পড়া গাছ বেয়ে উপরে উঠছি । বুকের ভেতরে ধুপধুপ করছে । যে কোন সময় গাছ নড়ে উঠতে পারে আমরা নিচে পরে যেতে পারি । একটা সময়ে একেবারে কাছে চলে গেলাম কিন্তু উপরে ওঠার আর কোন রাস্তা নেই । নেই ধরার কোন কিছু যা ধরে আমি উপরে উঠতে পারি । তবে গাইড খুব চটপটে । সে এক লাফে উপরে উঠে গেল। তার পা পিছলে গেলে কয়েকবার । মাটি সরেও গেল । তবে তার ক্ষিপ্ততা অনেক বেশি । পা চালিয়ে উপরে উঠে গেল সে । তারপর আমাকে উঠতে নির্দেশ করলো । উপরে সে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যদিও তা বেশ দুরে । আমাকে এখন বেশ কিছুটা সময় কোন কিছু না ধরেই যেতে হবে ।
আমি অনেক কয়বারই পাহাড়ে চড়েছি । পথ ছিল দুর্গম কিন্তু সব সময়ই ধরার কিছু না কিছুই ছিলই । তাই ভয় পাই নি কখনই । তবে এইবারের টা একেবারে আলাদা । এটার সাথে আসলে কোন কিছুর তূলনা চলে না । আমি উপরওয়ালার নাম দিয়ে উঠে পা বাড়ালাম । ভাগ্য ভাল যে গাইড আমাকে ধরেই টান দিল । একবার পা পিছলে গেলেও টানের কারণে উপরের দিকেই উঠে গেলাম ।

যখন উপরে উঠলাম তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে সত্যি সত্যি উঠে গেছি নিরাপদে । সুস্থির হতে বেশ সময় লাগলো । আমাদের গাইড আবার নিচে নেমে গেল তারপর একে একে সবাইকে তুলতে লাগলো । আমি উপরে ছিলাম তাদের টেনে তোলার জন্য । এই জন্য তাদের জন্য ব্যাপারটা আমার থেকেো একটু সহজ ছিল । এক আপু ছিল ডাক্তার । আমার থেকেও ১৫ বছরের মত বড় । যখন তাকে টেনে উপরে তুললাম । আমি বুঝতে পারছিলাম সে রীতি কাঁপছিলো । জীবনেও সে এমন কিছুর সাম্মুখিন হয় নি । নিচের ছবিতে দেখতে পারছেন আমরা সামনের ঐ নিচ থেকেউ এই পথে উঠে এসেছি ।




আজকের গল্প এখানেই শেষ হোক । বাকিটা আগামী পর্বে শেষ করা যাবে ।


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×