রোজার মাসের একটা আলাদা আবেদন রয়েছে । প্রতিবার যখন শুরু হয়, রোজা রাখা যখন শুরু করি তখন মনে হয় রোজার মাসটা কখন শেষ হবে কিন্তু যখনই রোজার মাসটা শেষ হতে চলে তখন মনে হয় এতো জলদি শেষ হয়ে যাচ্ছে ! আর কয়েকদিন থাকলে ভাল হত । কয়েক বছর ধরেই রোজার মাসটা পুরো ত্রিশ দিনেরই হয় । কিন্তু এইবার অনেক দিন পরে ২৯টা রোজা হল ।
অনেক কয় বছর আগের কথা । তখন স্কুলে পড়ি সম্ভবত । রোজা ২৯ রোজার দিন সন্ধ্যা বেলা আমরা চাঁদ দেখতে পেলাম না । তখন সংবাদের জন্য এতো ফেসবুক আর অনলাইন পত্রিকা ছিল না । এমন কি তখন বেসরকারি চ্যানেলও ছিল না খুব একটা । ডিস সংযোগ ছিল অনেক বড় কিছু । তখন সংবাদের জন্য সব থেকে বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম ছিল বিটিভির রাত আটটার সংবাদ । আমাদের এলাকায় আমরা কোথাও চাঁদ দেখতে পেলাম না । এমন কি রাত আটটার সংবাদেও জানালো হল যে কোথাও ঈদের চাঁদ দেখা যায় নি । পরের দিন ঈদ হবে না ।
আমরা যারা ছোট ছিলাম তাদের একটু মন খারাপ হল । ঈদের জন্য আরও একটা দিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে । আমরা যথারীতি তারাবির নামাজ পরতে চলে গেলাম । নামাজ শেষ করে বাসায় এলাম খাওয়া দাওয়া করলাম । রাত দশটার ইংরেজি সংবাদেও জানালো যে ঈদ হবে না । তবে এগারোটার দিকে একটা বিশেষ বুলেটিন চালানো হল । সেখানে জানালো হল যে কোন জায়গাতে নাকি চাঁদ দেখা গেছে । কাল কে ঈদ হবে । আমরা ছোটরা এবার হইহই করে উঠলাম । আবারও হঠাৎ করে সব কিছু যেন কর্ম ব্যস্ত হয়ে উঠলো । ঈদের সকালের রান্নার অনেক কিছুই আমাদের মা খালারা চাঁদ রাতের দিন ব্যবস্থা করে রাখেন অথচ সেইবার করা হয় নি চাঁদ দেখা যায় নি বলে । এগারোটার সময় আবারও সবাই নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন । অনেকে ছোট মামাকে দেখলাম আবারও বাজারের দিকে দৌড়াতে । তার নাকি কী কেনা বাকি আছে তখনও ।
আগে এই ২৯ রোজার দিন এলেই আমাদের মাঝে একটা উৎকন্ঠা কাজ করতো ! তখন বহিঃবিশ্বে কী হচ্ছে সেবস তাৎক্ষণিক জানার কোন উপায় ছিল না । একমাত্র উপায় চিল পত্রিকা আর বিটিভির সংবাদ । তাই সৌদিতে ঈদ হল কিনা সেটা সাথে সাথে জানার কোন উপায় ছিল না । আর আমাদের মত মফস্বল শহরের বেলাতে সেটা ছিল আরো সত্য । আমরা তখন সবার আগে নিজেরা ঈদের চাঁদ দেখার চেষ্টা করতাম । ইফতারের পরপরই আমরা বের হয়ে আকাশে চাঁদ দেখার চেষ্টা করতাম । কেউ বা দুরবিন দিয়ে আকাশে চাঁদ খুজে বের করতে চাইতো ! কেউ দেখলে অন্যকে হাতের ইশারাতে সেই চাঁদ দেখাতো । আমরা সেই চাঁদ দেখে আনন্দ করতাম । এখন অবশ্য সেই সব আর হয় না । চাঁদ এখন ফেসবুকেই দেখা যায় । কত বছর আমি নিজ চোখে চাঁদ দেখি নি সেই হিসাবও আমি ভুলে গেছি ।
প্রতিবার ২৮ রমজানে আমরা স্কুল বন্ধুরা মিলে একটা ইফতারের আয়োজন করি । গতকাল সেই আয়োজন ছিল । তখন যারা আমাদের সাথে স্কুলে পড়তো তাদের অনেকেই এসে হাজির হল গতকাল । একজনের সাথে দেখা হল প্রায় ১৭ বছর পরে । আরেকজনের সাথে ১৪/১৫ বছর পরে । ওদের চেহারার আমূল পরিবর্তন হয়েছে । একজন সিঙ্গাপুর থাকে । এই ঈদে বাসায় এসেছে । সেই স্কুল পাশ করেই চলে গিয়েছিলো । এইবারই প্রথম এল সে ইফতারে ।
আমি এই ইফতারটা খুব বেশি উপভোগ করি সব সময় । কারণটা হচ্ছে এই যে আমাদের এই স্কুলের বন্ধুরা, তাদের সাথে সেই স্কুলের সময়ে আমাদের ঠিক যেমন সম্পর্ক ছিল, আজকে এটো গুলো বছর পরে ঠিক সেই রকম সম্পর্কই রয়েছে । আমরা যেমন ভাবে একে অন্যের সাথে ইয়ার্কি ঠোট্টা করতাম প্রতিবার আমরা এই একই রকম আচরণ করি । আমাদের মাঝে সবার পজিশন ভিন্ন কিন্তু এই পজিশন আমাদের আচরণ বদলাতে পারে নি । কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুদের বেলাতে দেখি যারা আমাদের থেকে একটু ভাল পজিশনে চলে গেছে, তাদের আচরনও আলাদা হয়ে গেছে । সবার সাথে যে এমনটা হয়েছে তেমন নয় তবে বেশির ভাগের সাথেই এমন হয়েছে । তবে স্কুল বন্ধুদের সাথে এমনটা হয় নি এখন । সম্ভবত সামনেও আর হবে না ।
এবারের রোজাতে ঘুমানোর রুটিনের একটা পরিবর্তন এসেছিলো । আবার আশা করি আগের রুটিনে ফিরে যেতে পারবো । একেবারে সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়া আর ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠা । আজকে আর যেহেতু ভোর রাতে উঠতে হবে না তাই আজ থেকেই সেই রুটিন শুরু হোক আবার ।
রাত পোহালেই কাল ঈদ । ঈদ মানে সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া । ঈদের পাঞ্জাবীটা ঢাকাতে রেখে এসেছি । নতুন করে আর পাঞ্জাবী কেনা হয় নি ।
সবাইকে ঈদ মোবারক । আপনাদের সকলের ঈদ আনন্দে কাটুক এই কামনা করি ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:১৪