somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি আম কুড়াতে সুখ

২৭ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জসীম উদ্‌দীনের মামার বাড়ি নামে একটা কবিতা আছে । যেখানের একটা লাইন আছে ''ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ'' । সত্যি ছোট বেলাতে এমন একটা সময় আমি পার করেছি আমার মামার বাড়ি । মামার বাড়ি বলতে তখন সেটা আসলে নানীর বাড়ি ছিল । এখনও আছে । আমি কখনোই অবশ্য মামা বাড়ি বলি নি । যদিও তখন নানীর বাড়িতে তখন আমার দুই মামা থাকতেন । এখনও মামারাই থাকেন । আমাদের কাছে সেটা সব সময় নানীর বাড়ি।

আমার জন্ম যশোর জেলাতে । যশোর থেকে আমার নানীর বাসা একদম কাছে । পাশের জেলাতে । তাই যে কোন ছুটিছাটা পেলেই আমরা নানীর বাড়িতে দৌড় দিতাম । এমন কী মাঝে মাঝে দুই একদিন স্কুল কামাই করেও নানীর বাড়িতে গিয়ে হাজির হতাম । ট্রেনে করা যাতায়াত ছিল সহজ । ভাড়াটাও ছিল কম । আমার যতদুর মনে পড়ে তখন ট্রেন ভাড়া ছিল ৪০/৫০ টাকা । আব্বা এসে আমাদের ট্রেনে তুলে দিতেন । নানীর বাড়ি এসে পৌছে যেতাম ।

নানীর বাড়িতে তখন বড় মামা দুই ছেলে মেয়ে সহ থাকতো । বড় মামাতো বোন আমার থেকে একটু বড় হলেও ওর সাথেই আমার ভাব ছিল সব থেকে বেশি । এই মিলটা আমাদের আমার ঢাকাতে আসা পর্যন্ত টিকে ছিল । ওর ছোট ভাই আমার থেকে কয়েক বছরের ছোট হলেও আমাদের সাথেই সব সময় ঘুরতো । নানী বাড়ি গেলে এই তিনজন সব সময় এক সাথে ঘোরাঘুরি চলতো ।

যখনকার কথা বলছি, সেই সময়ে আমার নানীর বাড়ির আশে পাশে আর কোন বাড়িঘর ছিল না । রাস্তার পাশে একটা বড় বাড়ি । বাঁ দিকে অনেকটা গেলে গ্রাম শুরু হয়েছে । পেছনে বড় একটা আম বাগান । আর ডান দিকেও বেশ কিছুটা দুরে জেলার বনবিভাগ তারপর বিজিবি ক্যাম্প ।

গরমের ছুটি হলেও আমরা এক দৌড়ে হাজির হয়ে যেতাম নানী বাড়ি । সেখানেই আমাদের দিন কাটতো । তখন প্রায় সময়েই সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসতো । সন্ধ্যার সময় ঝড় এলেই বাড়ির বড় আমাদের ঘরের বাইরে বের হতে দিতে চাইতেন না । বিশেষ করে আমরা আমাদের ছোট মামাকে বেশ ভয় পেতাম । তখনও সে বিয়ে থা করে নি । বাড়ির সব ছেলে মেয়ে গুলো তাকে খুব ভয় পেত । আমরা যে বেড়াতে এসেছি আমরাও পেতাম ।

যখনই ঝড় আসতো তখন সে প্রায়ই দরজার কাছে বসে বসে ঝড় দেখতো । আমরা বের হওয়ার সুযোগ পেতাম না । তবে যেহেতু বিকাল সন্ধ্যার সময় ঝড় আসতো, আর তার যেহেতু তখনও বউ নেই বাসায় তাই সন্ধ্যা হলেই সে সব সময় বাসায় থাকতো না । বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতো বাইরে । আমরা এই সুযোগে এক ছুটে চলে যেতাম পেছনের আম বাগানে । সেখানে তখন মাটিতে প্রচুর আম পড়ে থাকতো । আমরা গামছা নিয়ে যেতাম । সেই গামছা পেতে আমরা তিনজন কুড়াতে শুরু করতাম । মাঝে মাঝে আমার ছোট খালাও আমাদের সাথে এসে যোগ দিত । হাই স্কুলের পরে অবশ্য আর যশোরে থাকা হয় নি । তখন স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য নানীর বাড়ির ঠিক পাশেই আমাদের একটা নিজেদের বাড়ি হল । সেই সময়ে পুরো ঝড়ের সময়ই আমরা আম কুড়ানো চলতো ।

এখনও সেই আম বাগান রয়েছে তবে এখন আগের সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে । সেখানে নতুন করে আবারও আম বাগান করা হয়েছে । এবং এই আম বাগান আগের মত আর খোলা মেলা নেই । পুরো এলাকাটা ঘিরে দেওয়া হয়েছে । বাইরের কেউ যাতে সেখানে ঢুকতে না পরে সেই জন্য পাহাড়ার ব্যবস্থা করার হয়েছে । আসলে আগে এই আম বাগান নিয়ে একটা মামলা চলছিলো । তাই কেউ এটাকে দখলে নিতে পারে নি । আমি যখন এসএসসি পরীক্ষা দিই তখন এক পক্ষ মামলা দিতে যায় । এবং পুরো আম বাগানটা নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসে । আমাদের আম কুড়ানোর দিনও শেষ হয়ে যায় ।

হঠাৎ আম কুড়ানোর কথা কেন এল । ঈদের তৃতীয় দিন দুপুর বেলা হঠাৎ করেই ঝড় শুরু হল । মুহুর্তের ভেতরেই সব অন্ধকার হয়ে গিয়ে সেই বাতাস শুরু হতে শুরু হল । সেই সাথে বৃষ্টি । আমি তখন আমার ঘরের দরজা দিয়ে আমাদের বাড়ির পেছনের উঠানের দিকে উদাস মনে তাকিয়ে রয়েছে । আমাদের বাড়ির শেষ সীমানাতে একটা বড় আম গাছ রয়েছে । গত বছর এই গাছে একেবারে আম আসে তবে এইবার প্রচুর আম হয়েছে । ঝড় শুরুর সাথে সাথে দেখলাম গাছ থেকে টুপটাপ করতে করতে আম পড়তে শুরু করলো । আমার কেন জানি খুব ইচ্ছে করলো তখনই নিচে যাই আম গুলো কুড়িয়ে বাসায় নিয়ে আসি । তবে এখানে অবশ্য এতো তাড়াহুড়ার কিছু নেই ।

ছোট বেলা যখন আম কুড়াতে যেতাম তখন এই চেষ্টা থাকতো যে কে কার আগে আম কুড়িয়ে নিতে পারে । এখানে অবশ্য সেই ঝামেলা নেই । এই আম অন্য কেউ নিতে আসবে না । বের হব হবে করেও জানি আর বের হওয়া হল না । দরজা থেকে ঝড় দেখতে শুরু করলাম । ঝড় যখন কিছুটা থেমে গেছে দেখলাম ভাবি ছাতা নিয়ে নিচে গিয়ে আম কুড়াতে শুরু করেছে । দেখতে এক বালতি আম জমে গেল । তখনই আমার ছোট বেলার আম কুড়ানোর কথা মনে হল । সন্ধ্যার অন্ধকারে আমরা যখন পেছনের সেই আম বাগানে আম কুড়াতে যেতাম তখন কী এক উত্তেজনা কাজ করতো আমাদের মনে । একটা আম পাওয়ার সাথে সাথে সে কী আনন্দ । এই আনন্দের আসলে কোন তুলনা নেই ।

এই আমের দিনে আরেকটা ব্যাপার ছিল আম মাখানো । কাঁচা আম কেটে কিংবা ভর্তা করে মাখানো হত । আমরা ছেলে মেয়েরা গোল হয়ে বসে নিজেরাই সেই আম ঝালাই করতাম । সেই আম ঝালাইয়ের স্বাদ আর আর কোথাও কখনো পাওয়া সম্ভব নয় । ঝড়ের আমরা গুলো বাসায় আনার পরে মাকে বললাম যে কয়েকটা আম ঝালাই করে দিতে । কিছু সময়ে তা এসে হাজির হল । কতদিন পরে আম ঝালাই খেলাম মনেও নেই । বছরের এই সময়টা বাসায় আসা হয় না অনেক দিন । তাই ঝড়ে পড়া আমের ঝালাই খাওয়া হয় না । এইবার ভাগ্য গুনে পেয়ে গেলাম ।




আমাদের সেই সময়ের ব্যাপার গুলো এখন আর দেখা যায় না । এখনকার ছেলে মেয়েরা একেবারেই ভিন্ন ভাবে বড় হচ্ছে । বলছি না যে এটা খুব খারাপ । আসলে সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবন যাত্রার পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার ।




ব্লগারদের ব্লগিং টুলস নিয়ে একটা আলাদা পোস্ট দেওয়া ইচ্ছে আছে । সকল ব্লগারদের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যে যে ডিভাইস দিয়ে ব্লগে লেখেন তার একটা ছবি আমাকে পাঠাবেন । কিভাবে পাঠাবেন তার তথ্য এই পোস্টে পাবেন। সকলের কাছে অনুরোধ যে সবাই অংশ গ্রহন করবেন ।


সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×