somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমস্মৃতিঃ প্রেমিকার হাতে প্রথম অমৃত

২১ শে মে, ২০২৩ সকাল ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমরা যখন প্রেম ভালোবাসায় থাকি তখন আমরা যেন অন্য জগতে বাসবাস করি । ভালোবাসার মানুষটির সাথে সংযুক্ত সব কিছু আমাদের কাছে তখন অন্য রকম লাগে। যে কাজ অন্য সময় অতি সাধারণ মনে হয় সেই কাজই যদি ভালোবাসার মানুষটি করে তাহলে সেটি লাগে অসাধারণ । হুমায়ূন আহমেদের একটা বইতে একটা লাইন পড়েছিলাম যেখানে মেয়েটির থুতু ফেলা দেখেই প্রেমিকার মনে হয় আহা এমন চমৎকার ভাবে কেউ বুঝি আর থুথু ফেলতে পারে না ! এই রকম ভাবে আরো কত কিছু যে আমাদের সাথে ঘটে যখন আমরা প্রেমে পড়ি । এসব আরও বেশি ঘটে আমি এসব ঘটার আগেই নিজ থেকে তা বেশি বেশি কল্পনা করে নি ।

ছোট বেলা থেকে আমি খাবার দাবার কেবল আমার মায়ের হাতেই খেয়েছি । এছাড়া অন্য কারো হাতে খেতে অভ্যস্ত ছিলাম না । এই কারণটা হচ্ছে মা ছাড়া অন্য কারো হাতে খেতে খেলে আমার কেমন যেন একটা বমি বমি ভাব চলে আসতো । এই কারণে নিজ হাত আর মায়ের হাতের খাওয়া ছাড়া অন্য কারো হাতেই খাই নি । কিন্তু প্রেমের গল্প পড়েছি যে প্রেমিকা যখন যখন আদর করে প্রেমিকে খাইয়ে দেয় তখন সেই খাবার বড় অমৃত লাগে । মনে হয় যেন এর থেকে স্বাদের খাবার বুঝি দুনিয়াতে আর একটাও নেই । এমন কি আমি নিজেও আমার গল্পে এই জিনিস ব্যবহার করেছি । যদিও বাস্তব অভিজ্ঞতা আমার একেবারেই অণ্য রকম ।

তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি সম্ভবত । কোন এক ছুটিতে গিয়েছি বাসায় । ঢাকার মত আসলে এতো সহজে মফস্বল শহরে প্রেমিকার সাথে দেখা হওয়ার কোন উপায় নেই । সব সময় এই ভয় থাকে যে যে কেউ দেখে ফেলতে পারে । তবে আমাদের তখন একটা মোটামুটি নিরাপদ স্থান ছিল দেখা করার । তার বড় চাচাতো বোনের বাসায় । আমাদের যে কয়বার দেখা হয়েছে তা ঐ বাসাতেই । যদিও সেখানে শান্তিমত কথা বলার উপায় ছিল না খুব একটা । বোনের ছেলে মেয়েরা সব সময়ই ড্রয়িং রুমে ঘুরে বেড়াতো । তাদেরকে সাথেই নিয়ে গল্প করতে হত । নেই মামার চেয়ে কানা মামাই ভাল । এটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হত !

সেইবার বাসায় গিয়ে যোগাযোগ করলাম তার সাথে । আবদার করলাম যে আমার জন্য ভূনা খিচুড়ি রান্না করতে হবে নিজের হাতে । ঐ যে সেই একটা প্রিএজামশন যে প্রেমিকার হাতের রান্না করা খাবার নিশ্চিত ভাবেই খুব স্বাদের হবে । এর আগে একবার তার হাতের রান্না করা চটপটি আমি খেয়েছিলাম । তখন যে কী মনে হয়েছিলো এখন সেটা ভাল ভাবে মনে হয় । তবে যেহেতু প্রেমে ছিলাম খুব তাই স্বাদের মনে হয়েছিল।

সময় সত খবর এল যে রান্না হয়েছে। আমাকে যেতে হবে । আমি নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে হাজির হলাম । ড্রয়িং একটু পরেই প্লেট ভর্তি খিচুড়ি নিয়ে সে হাজির হল । আমার তখন প্লান ছিল কেবল খিচুড়ি খাওয়া । অন্য কিছু না । কিন্তু যখন সে আসলো তখন হঠাৎ কী যে মনে হল আমি বললাম যে আমাকে খাইয়ে দিতে হবে । যদিও আমি তখনও নিশ্চিত ছিলাম না যে সে রাজি হবে । তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে সে রাজি হয়ে গেল । হাত ধুয়ে এসে আমার পাশে বসেই প্রথম নলা মুখে তুলে দিল আমার মুখে !

আমি ভেবেছিলাম এই খাবার যখন মুখে যাবে আমার কতই না ভাল লাগবে । কিন্তু আমার তীব্র বিস্ময়ের সাথে অনুভব করলাম যে খিচুড়ি মোটেই স্বাদ লাগলো না । কোন বিশেষ কিছুও মনে হল না । খিচুড়ি ঠান্ডা ছিল । এবং এই রান্না মোটেও স্বাদের ছিল না । আর সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে আমার হঠাৎ কেমন যেন একটু বমি বমি ভাব এল । আগেই বলেছিলাম যে মায়ের হাত বাদ দিয়ে অন্য কারো হাতে খেতে গেল আমার এমন মনে হয়, সেটাই হচ্ছিলো । তবে সেটা অনেক কষ্টে আমি দমন করেছিলাম ।

এতো দিন ধরে আসলে যা জেনে এসেছিলাম তার দেখা গেল সব কিছু টুকুই মিথ্যা । প্রেমিকার রান্না করা খাবার মোটেই আমার কাছে অমৃতের মত মনে হল না এমন কি তার হাতের ছোয়ার ফলেও কোন খাবার বাড়তি স্বাদের হয়ে উঠলো না । আমি মন খারাপ করে বাড়িতে চলে এলাম । এরপরে অবশ্য এই রান্নার আবদার আমি আর করি নি । তবে অন্য কিছু খাওয়ার আবদার করেছিলাম ।


pic source
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০২৩ সকাল ১০:৫১
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×