আমরা যখন প্রেম ভালোবাসায় থাকি তখন আমরা যেন অন্য জগতে বাসবাস করি । ভালোবাসার মানুষটির সাথে সংযুক্ত সব কিছু আমাদের কাছে তখন অন্য রকম লাগে। যে কাজ অন্য সময় অতি সাধারণ মনে হয় সেই কাজই যদি ভালোবাসার মানুষটি করে তাহলে সেটি লাগে অসাধারণ । হুমায়ূন আহমেদের একটা বইতে একটা লাইন পড়েছিলাম যেখানে মেয়েটির থুতু ফেলা দেখেই প্রেমিকার মনে হয় আহা এমন চমৎকার ভাবে কেউ বুঝি আর থুথু ফেলতে পারে না ! এই রকম ভাবে আরো কত কিছু যে আমাদের সাথে ঘটে যখন আমরা প্রেমে পড়ি । এসব আরও বেশি ঘটে আমি এসব ঘটার আগেই নিজ থেকে তা বেশি বেশি কল্পনা করে নি ।
ছোট বেলা থেকে আমি খাবার দাবার কেবল আমার মায়ের হাতেই খেয়েছি । এছাড়া অন্য কারো হাতে খেতে অভ্যস্ত ছিলাম না । এই কারণটা হচ্ছে মা ছাড়া অন্য কারো হাতে খেতে খেলে আমার কেমন যেন একটা বমি বমি ভাব চলে আসতো । এই কারণে নিজ হাত আর মায়ের হাতের খাওয়া ছাড়া অন্য কারো হাতেই খাই নি । কিন্তু প্রেমের গল্প পড়েছি যে প্রেমিকা যখন যখন আদর করে প্রেমিকে খাইয়ে দেয় তখন সেই খাবার বড় অমৃত লাগে । মনে হয় যেন এর থেকে স্বাদের খাবার বুঝি দুনিয়াতে আর একটাও নেই । এমন কি আমি নিজেও আমার গল্পে এই জিনিস ব্যবহার করেছি । যদিও বাস্তব অভিজ্ঞতা আমার একেবারেই অণ্য রকম ।
তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি সম্ভবত । কোন এক ছুটিতে গিয়েছি বাসায় । ঢাকার মত আসলে এতো সহজে মফস্বল শহরে প্রেমিকার সাথে দেখা হওয়ার কোন উপায় নেই । সব সময় এই ভয় থাকে যে যে কেউ দেখে ফেলতে পারে । তবে আমাদের তখন একটা মোটামুটি নিরাপদ স্থান ছিল দেখা করার । তার বড় চাচাতো বোনের বাসায় । আমাদের যে কয়বার দেখা হয়েছে তা ঐ বাসাতেই । যদিও সেখানে শান্তিমত কথা বলার উপায় ছিল না খুব একটা । বোনের ছেলে মেয়েরা সব সময়ই ড্রয়িং রুমে ঘুরে বেড়াতো । তাদেরকে সাথেই নিয়ে গল্প করতে হত । নেই মামার চেয়ে কানা মামাই ভাল । এটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হত !
সেইবার বাসায় গিয়ে যোগাযোগ করলাম তার সাথে । আবদার করলাম যে আমার জন্য ভূনা খিচুড়ি রান্না করতে হবে নিজের হাতে । ঐ যে সেই একটা প্রিএজামশন যে প্রেমিকার হাতের রান্না করা খাবার নিশ্চিত ভাবেই খুব স্বাদের হবে । এর আগে একবার তার হাতের রান্না করা চটপটি আমি খেয়েছিলাম । তখন যে কী মনে হয়েছিলো এখন সেটা ভাল ভাবে মনে হয় । তবে যেহেতু প্রেমে ছিলাম খুব তাই স্বাদের মনে হয়েছিল।
সময় সত খবর এল যে রান্না হয়েছে। আমাকে যেতে হবে । আমি নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে হাজির হলাম । ড্রয়িং একটু পরেই প্লেট ভর্তি খিচুড়ি নিয়ে সে হাজির হল । আমার তখন প্লান ছিল কেবল খিচুড়ি খাওয়া । অন্য কিছু না । কিন্তু যখন সে আসলো তখন হঠাৎ কী যে মনে হল আমি বললাম যে আমাকে খাইয়ে দিতে হবে । যদিও আমি তখনও নিশ্চিত ছিলাম না যে সে রাজি হবে । তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে সে রাজি হয়ে গেল । হাত ধুয়ে এসে আমার পাশে বসেই প্রথম নলা মুখে তুলে দিল আমার মুখে !
আমি ভেবেছিলাম এই খাবার যখন মুখে যাবে আমার কতই না ভাল লাগবে । কিন্তু আমার তীব্র বিস্ময়ের সাথে অনুভব করলাম যে খিচুড়ি মোটেই স্বাদ লাগলো না । কোন বিশেষ কিছুও মনে হল না । খিচুড়ি ঠান্ডা ছিল । এবং এই রান্না মোটেও স্বাদের ছিল না । আর সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে আমার হঠাৎ কেমন যেন একটু বমি বমি ভাব এল । আগেই বলেছিলাম যে মায়ের হাত বাদ দিয়ে অন্য কারো হাতে খেতে গেল আমার এমন মনে হয়, সেটাই হচ্ছিলো । তবে সেটা অনেক কষ্টে আমি দমন করেছিলাম ।
এতো দিন ধরে আসলে যা জেনে এসেছিলাম তার দেখা গেল সব কিছু টুকুই মিথ্যা । প্রেমিকার রান্না করা খাবার মোটেই আমার কাছে অমৃতের মত মনে হল না এমন কি তার হাতের ছোয়ার ফলেও কোন খাবার বাড়তি স্বাদের হয়ে উঠলো না । আমি মন খারাপ করে বাড়িতে চলে এলাম । এরপরে অবশ্য এই রান্নার আবদার আমি আর করি নি । তবে অন্য কিছু খাওয়ার আবদার করেছিলাম ।
pic source
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০২৩ সকাল ১০:৫১