somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মদিনের স্মৃতিকথা

২৫ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অতীতের সময়ে জন্মদিন পালন ব্যাপারটা আমাদের মত মধ্যবিত্তদের কাছে খুব বেশি বিলাসিতার ব্যাপার ছিল । একই ক্যাটাগরিতে পড়তো বিবাহবার্ষিকীর ব্যাপারটাও । এগুলো তখন ছিল কেবল এলিটদের ব্যাপার । আর যারা একটু সৌখিক ক্যাটাগরির ভেতরে তারা হয়তো পালন করতো তবে সেসব খুব একটা বাইরে আসতো না । এখন তো এই রকম ভাবে সোস্যাল মিডিয়া ছিল না । আমরা কেবলই এসব জানতে পারতাম যদি কখনও এই রকম অনুষ্ঠানে দাওয়াত পড়তো ।

ছোট বেলা থেকেই মধ্যবিত্ত পরিবারেই বড় হয়েছি । বিলাসিতা কোন কালেই আমাদের ছিল না । হ্যা, অভাবও আমি দেখি নি কখনো । একবার ঠিক হল আমার বড় ভাইয়ের জন্মদিন পালন করা হবে । আমার ভাজিতার জন্মের আগ পর্যন্ত এটাই ছিল আমাদের বাড়িতে পালন করা একমাত্র জন্মদিনের উৎসব । আমরা তখন থাকি যশোরের ঝুমঝুমপুরে। আমি যেহেতু তখন বেশ ছোট । স্কুলে তখনও ভর্তি হইনি । বড় ভাইয়ের জন্মদিন পালন হচ্ছে আমারটা হচ্ছে না এটা দেখে আমার মন খারাপ হবে দেখে একই সাথে দুইটা কেক কিনে আনা হল । বাবা তখন ফুড কন্ট্রাক্টর কোম্পানিতে চাকরি করে । বাইরে থেকে দেখলে আমাদের পরিবারটাকে বেশ সুখী পরিবারই মনে হত । ভেতর থেকেও তেমনই ছিল । তখন জীবন এতো জটিল ছিল না । আমরা ছোট দুই ভাই । কোন জটিলতা নেই । বাড়তি ঝামেলাও নেই । একটা বাড়তি অনুষ্ঠান পালন করাই যায় ।

বাবার তখন যশোরে বেশ চেনা শোনা কাজের কারণে । বেশ বড় করেই অনুষ্ঠান পালন করা হল । কত লোকজন এসে হাজির হল পরিবার সহ । সেই সাথে এল উপহার । কত রকমের যে উপহার এসে হাজির হল তার কোন ঠিক নেই । আমার কেবল ভাসা ভাসা সব কিছু মনে আছে । বাসার এলবামে তখনও অনেক ছবি এখনও আছে । নানার বাড়ি থেকে আমার ছোট মামা বড় মামার ছেলে মেয়েরাও এসেছিলো সেবার । সব মিলিয়ে চমৎকার একটা পারিবার আয়োজন ।

আমি তখন আশা করেছিলাম যে আমার ভাইয়ের জন্মদিনে যেহেতু অনুষ্ঠান হয়েছে আমার জন্মদিন যখন আসবে তখন আমারটাও পালন করা হবে । বাবা মা তখন আমাকে এই আশ্বাস দিয়েও ছিল । তবে বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও সেই অনুষ্ঠান আর পালন হয় নি । প্রতিবার জন্মদিন এলে তাই কেন জন্মদিন পালন হল আমার এটা নিয়ে আমার মন খারাপই থাকতো । একটা সময়ে অবশ্য আমি বুঝে গেলাম যে সেটা আর হবে না । তাই মন খারাপের ব্যাপারটা সয়ে গেল ।

এরপর জেলা পরিবর্তন হল স্কুল পরিবর্তন হল । তারপর জীবনে প্রথম প্রেমিকা । তখন পড়ি ক্লাস টেনে । সকালে পড়তে যাই ইংরেজি স্যারের কাছে । মূলত এখানেই আমার এবং আমার প্রথম প্রেমিকার দেখা হত । ও একটু আগে আগে আসতো । স্যার পড়াতে ঢুকতেন নির্দিষ্ট সময়ে । আমরা এই সময়ে যা টুকটাক গল্প করতাম । জন্মদিনের দিন সে একটু আগে আগেই আসতে বলল । এই গল্পটা সম্ভবত আগেও করেছি আমি । যাইহোক অল্প করে বলি আরেকবার । আমি আগে আগে গিয়ে হাজির হলাম । সেই এসে হাজির । জীবনে সেইবারই আমি প্রথম ফুল পেলাম কারো কাছ থেকে । সাথে জমা হয়েছিলো আরো এক গাছি উপহার । এটা নিয়ে আর বাড়তি কিছু একাহনে লিখলাম না । এই পোস্টে গিয়ে পড়ে আসতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের জন্মদিনের স্মৃতি গুলোও বেশ চমৎকার ছিল । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পুরো ক্লাসের ভেতরে দশ বারো জনের একটা গ্রুপ তৈরি হয়ে যায় আমাদের । এদের সাথেই আমাদের মেলামেশা ছিল সব থেকে বেশি । একসাথে ক্লাসের সময় ছাড়াও বাইরে একসাথে আড্ডা দেওয়া, ঢাকার বাইরে একসাথে ট্যুর এসব হত । আর চলতো জন্মদিনের এক সাথে ভুড়িভোজ ।

মূলত নিয়মটা ছিল যে যার জন্মদিন আসবে সে গ্রুপের সবাইকে খাওয়াবে । আমাদের ভাষায় এটাকে বলে ট্রিট দেওয়া । এবং বাকি সবাই চাঁদা তুলে সেই বন্ধুকে কোন উপহার কিনে দিবে । আমাদের মাঝে আমাদের সিআর ছিল । সে থাকতো নিজের বাড়িতে । আমরা অন্যেরা এই জন্মদিনের ট্রিট বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে দিলেও সে এই খাওয়াটা দিতো নিজের বাসায় । এই খাওয়াটা হত সব থেকে চমৎকার । নির্দিষ্ট দিনে যদি ক্লাস থাকতো তাহলে আমরা ক্লাসের পড়ে সবাই একসাথে হাজির হতাম তার বাসায় । ছুটির দিন হলে সকাল সকাল হাজির হয়ে যেতাম । দুপুরের আগেই । খাওয়ার আগে আর পরে চলতো কত গল্প । তবে বেশির ভাগ সময়েই আমাদের ট্রিট হত রেস্টুরেন্টে । আমরা বেশি খেয়েছি পুরান ঢাকার নান্নার বিরিয়ানীতে । তখন আমাদের কারো কাছেই টাকা পয়সা ছিল না । নান্নাতে প্রতি প্লেট বিরিয়ানী তখন ১২০/১৩০ টাকায় পাওয়া যেত । অনেক বেশি পরিমান থাকতো সেখানে ।

এখানে একটা মজার ব্যাপার ঘটতো প্রায় প্রতিবার । আমাদের গ্রুপে তিনজন হিন্দু ধর্মের বন্ধু ছিল । যাদের ভেতরে দুইজনের কোন নিয়ম নীতি ছিল না আমাদের খাওয়ার ব্যাপারে । তবে একজন বেশ নিয়মের ভেতরে ছিল । যার ভেতরে একটা ছিল যে মাংস খাওয়া যাবে না । সে কোন প্রকার মাংস খেত না । তবে আমাদের সাথে প্রতিবার ঠিক ঠিক গিয়ে হাজির হত । এবং তারপর পাশের কোন হোটেল থেকে সে মাছ আর ভাত কিনে নিয়ে আসতো এবং একই সাথে খাওয়া দাওয়া চলতো । খাওয়াটা মূখ্য ছিল না, ছিল এক সাথে বসা এক সাথে আড্ডা দেওয়া । ধর্ম কোন দিন আমাদের বেড়িয়ার হয়ে দাড়ায় নি । পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আমরা এভাবেই কাটিয়েছি ।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরে অবশ্য সবাই নানান দিকে চলে গেছে । এখন সেই গ্রুপের তিন চার জন কেবল ঢাকার ভেতরে । তাও সবাই নিজের কাছে ব্যস্ত । এটা অবশ্য কারো দোষ না । তবে এখনও আমরা এক সাথে বসি মাঝে মাঝে । নান্নার বিরিয়ানীতে আর বসা হয় না ।

এখন অবশ্য কেবল নিজেদের জন্মদিনের পালন হয় না । এখন বন্ধু বান্ধবীদের ছেলে মেয়েদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যেতে হয় । আগেই বলেছি তখন আমাদের মত মধ্যবিত্ত পারিবারের মাঝে এসব অনুষ্ঠান পালনের চল ছিল না খুব একটা । তবে এখন এটা চালু হয়েছে খুব বেশি পরিমানে । বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়ার কল্যানে এসব অনুষ্ঠানের আবেদন বেড়েছে অনেক বেশি ।

আবার নিজের বাড়ির কথায় ফিরে যাই । বলেছিলাম আমাদের বাসায় সেই একবারই জন্মদিন পালন করা হয়েছিলো । এরপর আর জন্মদিন পালন করা হয় নি । বেশি ভাগ সময়ে বাড়ির কারো মনেই থাকতো না যে জন্মদিনের কথা । নিজেদের কাজের কর্মেই তারা ব্যস্ত থাকতো । তবে ভাইয়ের বিয়ে এবং আমার ভাতিজার জন্মের পরে অবশ্য এই ব্যাপার মনে রাখা হয় । কারণটা হচ্ছে আমার জন্মদিন আর আমার ভাতিজার জন্মদিন খুব কাছাকাছি । মাত্র দুইজনের পার্থক্য । পালন না করা হলেও বাসা থেকে ফোন আসে । জন্মদিনের কথা বলে বলা হয় আজকে যেত ভাল কিছু খেয়ে নিই আমি । আমার পছন্দের কোন খাবার । ডাক্তারের পরামর্শের কারণে আমি আমার অনেক পছন্দের খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়েছি অনেক দিন । এই দিনে মা বলে যে এক দিন খা । একদিন খেলে আসলে কিছু হবে না ।
যা বলছিলাম । জন্মদিন আমাদের পালন হয় নি আর। তবে আমার ভাজিতার হল । সেইবার তার প্রথম জন্মদিন ।
বিশাল এক কেক নিয়ে আসা হল । পুরো বাড়ি সাজানো হল জন্মদিনের কারণে । আমি তখন ঢাকাতে । আমাকে একপ্রকার জোর করেই বাসায় নিয়ে যাওয়া হল ।

আমার সব কিছু মনে নেই ঠিক মত । তবে কয়েকটা কথা মনে আছে । তখনও বিদ্যুৎ যেত সন্ধ্যার দিকে । বাসায় জেনারেটরের লাইণ ছিল তবে সেটা কেবল একটা ঘরের জন্য । লোক ডেকে পুরো বাসায় সংযোগ নেওয়া হল একদিনের জন্য । বিকেল থেকেই মানুষজন আসা শুরু করলো । সন্ধ্যায় যখন অনুষ্ঠান শুরু হবে ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চলে গেল । চিন্তা ছিল না কারণ জেনারেটর চালু হবে। কিন্তু যখন জেনারেটর চালু হল তখন পুরো বাড়ির লোড সেটা নিতে পারলো না । যে তার ছিল সেটা পুড়ে গেল । পুরো বাড়ি অন্ধকার ।
জেনারেটর লাইণ নেওয়া বলে আলাদা ভাবে অন্য কোন বাতির ব্যবস্থাও করা হয় নি ।

আমার বাবা রেগে আগুন । কোন কাজ যখন ঠিক মত হয় না তখন তার সামনে যাওয়ার উপায় থাকে না । এতো লোকজনের ভেতরে তার চিৎকার যেন থামে না । আমার বড় ভাই দৌড়ে গেল কাছের দোকানে । অনেক গুলো মোমবাতি কিনে নিয়ে আসা হল । ঘরে আবারও আলো জ্বললো । এর মাঝে একটা কাঁচের জগ পরে ভেঙ্গে গেল কিভাবে যেন । বড় ভাইয়ের এক বন্ধু সেই কাঁচ হাত দিয়ে পরিস্কার করতে গিয়ে হাত কেটে একাকার অবস্থা । বেচার সেই কাটা হাত দিয়ে ঠিকমত খেতেও পারে নি পরে ।

এরপরের বছর গুলো এখনও নিয়ম করে আমার ভাজিতার জন্মদিন পালন করা হয় । তবে এখন আর সেই ঘটা করে নয় । কেক নিয়ে আসা হয়। কাছের বন্ধুবান্ধবদের কেবল ডাকা হয় । এইবার সে ক্লাস নাইনে উঠেছে । এই তো পরশুদিন তার জন্মদিন আবার ।


একটা সময়ে নিজের জন্মদিন নিয়ে ছিল দারুন উত্তেজনা । কিন্তু একটা বয়স পার হওয়ার পড়েই বুঝতে পারলাম যে জন্মদিন মানেই হচ্ছে নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়া যে তোমার দিন আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে । তুমি আগের থেকে আরো একটু বেশি বুড়ো হয়ে যাচ্ছো । মৃত্যুর দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছো । এছাড়া এই জন্মদিনটা আমাদের মনেও করিয়ে দিন চলে যাচ্ছে । কত কিছু করার ছিল কত স্বপ্ন ছিল যার অনেক কিছুই পূরণ হয় নি । এই কারণে জন্মদিন গুলো আর আগের মত আনন্দ বয়ে আনে না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১:১২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×