পড়ালেখা করা সকল মানুষের জীবনে অন্তত একটা ডিকশনারি সব সময়ই থাকে । বিশেষ করে আমাদের মত ছাপোষা দেশে যেখানে ইংরেজি শিখতে পারাটা অন্যতম সেরা যোগ্যতা মনে করা হয়, সেখানে ডিকশনারি তো একটা থাকতেই হবে ছেলেমেয়েদের ঘরে । একটু বড় ক্লাসের বই পত্র কেনার সাথে সাথে বাবা মায়েরা একটা আলাদা করে ডিকশনারি কিনে নিয়ে আসতো । প্রথমে হয়তো একেবারে পকেট ডিকশনারি, পরে যখন উপরের ক্লাসে ওঠে তখন ডিকশনারির আকারও বড় হয় । কিন্তু এখন আর সেই ভাবে কেউ ডিকশনারি কিনে আনা হয় না । অবশ্য সেটার দরকারই নেই । এখনই আধুনিক যুগে বইয়ের পাতায় খুজে খুজে শব্দের অর্থ বের করার কোন দরকার পড়ে না। যেখানে কেবল টাইপ করলেই শব্দের অর্থ চলে আসে চোখের সামনে । প্লে স্টোরে কত গুলো ডিকশনারির এপ আছে তার কোন হিসাবও নেই । তার ভেতর থেকে একটা নামিয়ে ইনস্টল করে নিলেই হল । তারপর কেবল টাইপ কত আর শব্দের অর্থ বের কর । এছাড়া গুগল তো আছেই ।
কিন্তু আমাদের সময়ে এই ডিকশনারি ছাড়া আমাদের ঠিক যেন চলতোই না । আমাদের হাতে না ছিল মোবাইল আর তাতে ছিল স্মার্ট এপস । আমাদের শব্দের অর্থ জানার জন্য এই ডিকশনারিই এক মাত্র ভরসা ছিল । আমার জীবনের প্রথম ডিকশনারি ছিল ছোট একটা পকেট ডিকশনারি । তখন সেটার দাম ছিল সম্ভবত ২৫ টাকা । ছোট একটা পকেট ডিকশনারি । লাল রংয়ের একটা ডিকশনারি । বোধকরি আমাদের বয়সী সকলেই এই লাল রংয়ের পকেট ডিকশনারীর সাথে পরিচিত । নেটে একটা ছবি খুজে পেলাম । দুই পাশে যে ছোট ডিকশনারি দেখা যাচ্ছে সেই ছোট সাইজের ডিকশনারি বোধকরি আমাদের সবার বাসাতেই ছিল ।

নিচের ডিকশনারিটা এখনও আমার কাছে আছে । সম্ভবত স্কুল জীবনের কোন একটা সময়ে কেনা ।

এটা হল ইংরেজি থেকে বাংলা ডিকশনারি । আরেকটা ভার্শন ছিল যা ছিল বাংলা থেকে ইংরেজি। সেটার রং ছিল গাঢ় সবুজ । সেটা দেখতে এই রকম ছিল । এটা আমি কোন দিন কিনি নি ।

এরপর যখন আরো একটু বড় ক্লাসে উঠলাম তখন এডভান্স ডিকশনারি এল বাসায় । সেটা বড় সাইজের । সেটা দেখতে কেমন যে ছিল পরিস্কার মনে নেই এখন । তবে উপরের কাভার পেপারে একটু গাঢ় রং ছিল এই টুকু মনে আছে । স্কুল জীবন আমি সেই ডিকশনারি দিয়েই কাটিয়েছি । কলেজে উঠে নতুন একটা ডিকশনারি কিনলাম বটে তবে কেন জানি সেটা ঠিক আমার পছন্দ হল না । আমার পছন্দ ছিল বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রণিত ডিকশনারি । আব্বা কিনে দিয়েছে অন্যটা । তার উপরে কথা চলে না । আর তখন পছন্দ মত আরেকটা নতুন ডিকশনারি কেনার উপায় নেই । বাসায় বললেই বলবে শব্দের অর্থ বের হলেই হল । আবার নতুন কেন দরকার । তাই কেনা হয় নি আর।
কলেজে ক্লাস শুরুর পরপরই দেখতে পেলাম বন্ধু জামান কিনেছে বাংলা একাডেমির ডিকশনারি । তবে সেটা একটু পুরানো । আমারটা তখন একেবারে নতুন । ওকে বললাম ওরটা বদলে আমি আমার নতুনটা দিতে চাই । জামান অবশ্য এতো কিছু ভাবলো না । বদলে নিল এক কথাতেই । সেই থেকে ডিকশনারিটা আমার কাছে রয়েছে । বয়সের হিসাবে এটা সেই ২০০৫ সালে কেনা, তার মানে ১৮ বছর ধরে বইটা আমার কাছে রয়েছে ।

এইটার পরে আমি আরো একটা ডিকশনারি কিনলাম । নিজের পকেট খরচ জমিয়ে ডিকশনারিটা কিনেছিলাম । আমার মনে আছে যখন প্রথম গিয়াস স্যারের কাছে ইংরেজি পড়তে যাই তখন স্যারের কাছে এই ডিকশনারি দেখেছিলাম । সেটা ছিল আসল অক্সফোর্ড ডিকশনারি । আসল প্রিন্ট । কয়েক হাজার টাকা দাম । স্যার সেটাই পড়তেন সব সময় । আমারও কেনার ইচ্ছে ছিল কিন্তু উপায় ছিল না ।
কলেজে উঠার পরে একদিন লাইব্রেরিতে বই খোজ করতে গিয়ে দেখি সেই স্যারের মত ডিকশনারিটা । হাতে নেড়ে চেড়ে দেখলাম । তারপর কি মনে হল দাম জিজ্ঞেস করলাম । লাইব্রেিয়ান দাম বলেছিলো সম্ভবত আড়াইশ কি তিনশর মত ।
আমি অবাক হয়ে গেলাম । কারণ এটার দাম তো এতো কমে হওয়ার কথা না । পকেটে তখন টাকা ছিল । অন্য বই কেনার জন্য সম্ভবত টাকাটা ছিল । আমি অন্য কিছু চিন্তাই করলাম না । বইটা কিনে নিলাম । পরে অবশ্য জেনেছিলাম যে বইটা আসল বই না । ফটোকপি । তখনও আসলে ফটোকপি বইয়ের ব্যাপারে কোন ধারণা ছিল না । এই সেই ডিকশনারি ।

এই রকম আরো একটা ডিকশনারি আমি কিনেছিলাম ঢাকাতে এসেই । নীলক্ষেত থেকে । বইটার দাম সম্ভবত ছিল একশ আশি টাকার মত । সেটা বাসা রয়েছে । উপরের ডিকশনারি গুলো আমি এখনো নেড়ে চেড়ে দেখি প্রায়ই । তবে এগুলো আর পড়া হয় না । আসলে পড়ার দরকারও হয় না । যা অর্থ দরকার তার জন্য মোবাইল রয়েছে নেট রয়েছে । সেখান থেকে সব জানা যায় সহজেই ।
তারপর আমি ডিকশানরি কিনেছি ২০১৬ সালে বইমেলা থেকে । বাংলা একাডেমির বাংলা অভিধান । এটা এখনও আমার কাজে লাগে । যে কোন বাংলা বানানে যদি কনফিউশন হলে এটা ব্যবহার করি । এটা হচ্ছে তার ছবি ।

সর্বশেষ অভিধান কিনেছিলাম সম্ভবত ২০১৮/১৯ সালে । এটাও বইমেলা থেকেই কেনা । এটা ছিল বাংলা একাডেমির ঐতিহাসিক অভিধান । এটাও বেশ চমৎকার একটা বই ।

ডিকশানরি বা অভিধান এখন আর মানুষের কাছে অতিপ্রয়োজনীয় বই নয় । আগে যেমন অবধারিত ভাবে এই বইটা সবার বাসায় থাকতো এখন এই বইটা থাকে না । আমি যখন প্রথম টিউশন শুরু করি তখনও আমি ছাত্রছাত্রীদের এই ডিকশনারি ব্যবহার শিখিয়েছি । কিভাবে দ্রুত শব্দ খুজে বের করা যায়, শব্দের অর্থের সাথে আরও দরকার ব্যবহার খুজে পাওয়া যায় এই সব নিয়ে কথা বলেছি তবে যখন স্মার্টফোন কিনলাম তারপর থেকে এই ডিকশনারির ব্যবহার আস্তে আস্তে কমে গেল । এখন যে শব্দের অর্থের দরকার হয় সেটা কেবল টাইপ করেই বের করে ফেলতে পারি । বই খুজে আর বের করার দরকার পড়ে না ।
আধুনিকতা আমাদের জীবনে অনেক কিছু নিয়ে যেমন এসেছে ঠিক তেমন নি অনেক কিছু আমাদের জীবন থেকে নিয়েও গেছে । এই কাগুজে ডিকশনারি তাদেরই একটা ।
আপনাদের বাসায় এখনও কি ডিকশানারি আছে ?
আপনার ছেলেমেয়েরা কি এখনও এই কাগুজে ডিকশনারি ব্যবহার করে?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



