somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেগম রোকেয়ার লেখা গল্প

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এখনও বেগম রোকেয়াকে আমাদের দেশে একটা শ্রেণীর মানুষ পছন্দ করে না । তাদের ভাষ্যমতে বর্তমানে নারীরা এই অবস্থানের জন্য আসলে বেগম রোকেয়াই দায়ী । সে যদি বাইরে না বের হয়ে আসতো তাহলে আমাদের দেশের মেয়েরা ঘরের ভেতরে পর্দার ভেতরেই থাকতো ! বেগম রোকেয়া অবশ্য এটাকে বলতো অবরোধ প্রথা । কেন বলতো সেটা তার লেখা থেকেই খানিকটা ধারণা পাওয়া যায় ।

বেগম রোকোর লেখা বই অবরোধবাসিনী আপনারা কি পড়েছেন? বইটা মূলত গল্প গ্রন্থ । ছোট ছোট ৪৭টা গল্প আছে এখানে । তবে এই গল্প গুলো আসলে তৎকালীন সময়ে মেয়েদের উপরে যে অবরোধ প্রথা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো সেগুলোর জলজ্যান্ত প্রমাণ । গল্প পড়ার সময়ে বারবার মনে হচ্ছিলো সেই সময়ে মুসলমান নারীদের কী ভয়ংকর অবস্থা ছিল । কয়েকটি গল্প লিখছি এখানে । বেগম রোকেয়া অনেকটা সাধু ভাষায় লিখেছেন তবে আমি এখানে আমার মত লিখছি ।

এক
পাটনার একটি বড় বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষ্যে সেখানে অনেক নিমন্ত্রিত মহিলা অতিথি এসেছেন । অনেকে এসেছেন সন্ধ্যার সময়ও । তাদের ভেতরে হাসমত বেগম একজন । দাসীরা এসে বেগম সাহেবদের পালকির পর্দা খুলে তাদের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছিলো পরে বেয়ারা এসে খালি পালকি এক পাশে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো । পরে আবার নতুন পালকি এসে হাজির হচ্ছিলো । হাসমত বেগমের পালকির আসার সময় ঘটলো বিপত্তি । বেয়ারা সেখানে যখন পালকি সরানোর জন্য এল তখনও হাসমত বেগম নামতে পারে নি । বেয়ারা ভাবলো যে পালকি থেকে বুঝি সবাই নেমে পড়েছে । পালকি নিয়ে তারা চলে গেল । নতুন পালকি এসে হাজির হল ।

পরে যথা ক্রমে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হল । সবাই নিজ নিজ গল্পে মশগুল হল । এমন সময়ে মহিলাদের কেউ কেউ জানতে চাইলো যে হাসমত বেগমে আসে নাই কেন । একজন বলল যে সে হয়তো এসেছে আবার চলে গেছে একজন বলল, তাকে দেখতে পেয়ে ছিল তবে পরে আর দেখে নি । এভাবেই রাত পার হয়ে গেল । সকালে যখন আবার পালকি নিয়ে যা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করতে যাবে তখন একটা পালকির ভেতরে হাসমত বেগমকে দেখতে পাওয়া গেল । তিনি রাতভর সেই পালকির ভেতরেই ছিলেন। তিনি পালকির থেকে নামার আগেই বেয়ারা পালকি নিয়ে চলে গিয়েছিলো বলে তিনি নামতে পারেন নি আর টু শব্দটিও করেন নি পাছে তার কন্ঠস্বর বেগানা পুরুষ শুনে ফেলে । অন্য দিকে ছেলেকেও কোন আওয়াজ করতে দেন নি যদি ছেলের কান্না শুনে কোন বেয়ারা চলে আসে ।

দুই
কয়েক ঘর জমিদারেরা মিলে এক সাথে হজ করতে যাচ্ছিলো । সাথে তাদের বউ খালা মামী মেয়েরাও ছিল । তারা সংখ্যায় ২০/২৫ জন হবে । কলকাতা স্টেশনে পৌছানোর পরে পুরুষেরা সকল মেয়েদের দায়িত্ব দলের একজন বয়স্ক হাজির দায়িত্ব দিয়ে নিজেদের কিছু কাজ করতে গেল । হাজি সাহেব মহিলাদের ওয়েটিং রুমে নিয়ে যাওয়ার সাহস পেলেন না । হাজির সাহেবের পরামর্শ মোতাবেগ মোটা বোরখা পোরা মহিলা প্লাটফর্মে উবু হয়ে বসে পড়লো । তারপর হাজি সাহেব তাদের সবার উপরে একটা মোটা শতরঞ্জি দিয়ে তাদের ঢেকে দিলেন । দুর থেকে তাদের দেখলে অনেকটা বস্তার মত দেখাচ্ছিলো । মহিলা ঐ অবস্থায় রেখে হাজি সাহেব তাদেরকে পাহারা দিচ্ছিলেন একপাশে দাড়িয়ে । কত সময় ধরে মহিলারা ওভাবে বসে রইলো ঢাকা অবস্থায় সেটা কেউ জানে না । এক সময় ট্রেন আসার সময় হল । একজন ইংরেজ কর্মচারি হাজি সাহেবকে বলল, মুন্সি তোমার মালের বস্তা সরিয়ে নাও ।
হাজি সাহেব বললেন, হুজুর এগুলো মালের বস্তা না আমাদের ঘরের মহিলা ।
কর্মচারি সেটা বুঝতে না পেরে পায়ের জুতা দিয়ে বস্তায় ঠেক মেরে বলল, এই মালের বস্তা সরাও ।
বিরিরা পর্দার অনুরোধে সেই ঠেক খেয়েও কোন শব্দ করলো না ।

তিন
ঢাকা জেলার কোন এক জমিদার বাড়িতে আগুন লেগেছে । আগুনের হাত থেকে জমিদার নিজের ঘরের জিনিস পত্র বের করার চেষ্টায় আছেন । বাড়ির মেয়েদেরও বের করতে হবে । কিন্তু এমন হঠাৎ করেই কয়েকটা পালকি জোগার করা বেশ ঝামেলার কাজ । তাই ঠিক হল যে একটা বড় রঙিন মশারির ভেতরে বাড়ির বিবিরা থাকবে । সেই মশারির চারদিকে চারজন ধরে থাকবে এবং পরে তাদের নিয়ে সবাই এক সাথে বের হবে । পরিকল্পনা মোতাবেক তাই করা হল । মশারির ভেতরে বিবিরা ঢুকে দৌড়াতে লাগলো । চারপাশে চারজন মশারির চারদিকটা ধরে দৌড়াতে লাগলো । কিন্তু দৌড়ে পেরে না উঠে বিবিগন হোচট খেল, দাঁত ভাঙ্গল । এক পর্যায়ে বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে গিয়ে অবস্থান নিল । দীর্ঘ সময় সেই ধাতক্ষেতের বসে থাকার পরে তাদের জন্য যখন পালকি এল তখন তারা একটু মুক্তি পেল ।

চার
২৫ বছর আগের ঘটনা । সেই সময়ে এক জমিদার বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে । বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত দুইটা বেজে গেল । এবার ঘুমানোর পালা । তবে অতিথিরা ঘুমালেও চোর তো আর ঘুমায় না । সে সুযোগ বুঝে ঘরের সিধ কেটে ঢুকলো ভেতরে । তবে একজন চৌকিদার ঠিকই খবর পেয়ে গেল । সে দ্রুত বাড়ির কর্তার কাছে খবর পাঠালো । কর্তারা ছিল ৫/৬ জন ভাই। তারা চোরকে ধরার জন্য বাড়ির চারিদিকে ঘুরতে লাগলো । চোরের এতো বড় সাহস যে জমিদার বাড়িতে ঢুকেছে ।
অবশ্য এদিকে চোর আছে মজের ভেতরে । চোর ঢুকেছে বিবিরা যে ঘুরে ঘুমিয়েছিল সেই ঘরে । চোর ঢোকার ফলে তারা সবাই একেবারে জড়সড় হয়ে শুয়ে রইলো । মুখ দিয়ে একটা টু শব্দটিও করলো না পাছে বেগানা চোর তাদের কন্ঠস্বর শুনে ফেলে । চোর নিশ্চিত মনে ঘরের সিন্দুক খুলে জিনিস পত্র নিতে লাগলো । একের পর এক মাল সামালা নিতে নিতে একজন বিবির পা থেকে গহনা খুলে নিল । এই দেখে অন্যান্য বিবিরা নিজেদের শরীর থেকে সব গহনা খুলে পাশে রেখে দিল । চোর তো দেখলো ভারি মজা । সে সব গহনা নিয়ে পুটলিতে ভরলো । এদিকে নতুন বিবিকিছুতেই তার কানের দুল খুলতে পারে না । এদিকে চোর বউয়ের কান কেটে সেই দুল পুটলিতে ভরে নিল কিন্তু নতুন বউ কোন আওয়াজ করলো না পাছে তার কন্ঠস্বর শুনে ফেলে চোর ।
চোর যখন বের হল তখন বিবিরা কান্নাকাটি শুরু করলো । তার আগে নয় । যদি বেগানা চোর তাদের কন্ঠস্বর শুনে ফেলে ।


এই তো কয়েকটা গল্প মাত্র । অনেকের কাছে মনে হতে পারে এসব তো আর বাস্তব নয়, বানানো গল্প । হ্যা সত্যি এসব বানানো গল্প । কিন্তু এই গল্প গুলোর উৎস তো বাস্তব । যারা গল্পটল্প লেখেন তাদের গল্পের উৎস তো বাস্তব ঘটনা কে কেন্দ্র করেই । এগুলো আর উড়ে আসে নি । খুব বেশি সময় আগেও নয়, আমাদের দেশে যখন মেয়েদের বাইরে যেত তখন রিক্সায় শাড়ি কিংবা অন্য কাপড় পেঁচিয়ে নিয়ে যাওয়া হত ।

আমাদের বাড়িটা একেবারে মুল সড়কের পাশে । আমাদের ওখানে তখন সইওয়ালা ভ্যান খুব প্রচলন ছিল । বিশেষ করে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য এই ভ্যান ব্যবহার করতো । যখন স্কুলে পড়ি তখন প্রায়ই দেখতাম সইওয়ালা এই ভ্যানের গুলো মাঝে কিছু ভ্যানের চারিদিকে আবার পর্দা দেওয়া থাকতো । কিছু কিছু ভ্যানের সইয়ের চারিদিকে শাড়ি পেঁচানো অবস্থায় দেখা যেত । এমন কি মাঝে মাঝে আমার মেঝ খালা যখন নানী বাড়ি আসতেন তখনও দেখা যেত এই ভাবে শাড়ি পেঁচানো এটা তো খুব বেশি আগের কথাও নয় । বেগম রোকেয়া কিংবা তার আগের সময়ের অবস্থাও যেন এমন কিছু ছিল সেটা তো অনুমান করা যায় । এমন কি এখনও অনেক মানুষ আছে যারা মনে করে যে মেয়েদের আসলে ঐ ভাবেই থাকা উচিৎ।

pic source

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:০০
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×