চারটার দিকে বাসায় ফেরার কথা ছিল । তবে বৃষ্টির কারণে ঘন্টা খানেক পরেই রওয়ানা দিতে হল । যদিও তখনও বৃষ্টি বেশ ভালই পড়ছিল । আমি অন্য দিন ব্যাগে করে রেইনকোন নিয়েই বের হই কিন্তু আজকে কোন এক কারণে ব্যাগটাই নেই নি । অবশ্য সোজা বাসায় আসবো বলে একটু ভিজলে কোন সমস্যা নেই । আমার এক সময়ে অন্যতম পছন্দের কাজ ছিল বৃষ্টিতে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়া । চুয়াডাঙ্গা থাকতে আমি বৃষ্টি হলেই সাইকেল নিয়ে বের হয়ে পড়তাম । ঢাকাতে এসেও অভ্যাসটা ছিল বটে তবে সময়ের সাথে কমে এসেছে । কাল থেকে লম্বা ছুটি শুরু হচ্ছে, মনে হল আজকে একটু ভেজাই যায় । যদি জ্বর আসেও তবুও বাড়িতেই চলে যাবো, খুব একটা সমস্যা হবে না ।
সাইকেল নিয়ে বের হয়ে গেলাম ।
বৃহস্পতিবারের এই দিনে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম থাকে । অন্তত আমি যে রাস্তায় ফিরি সেই রাস্তাটা পুরোটাই জ্যাম হয়ে থাকে । তবে আমাকে খানিকটা অবাক করে দিয়েই দেখলাম যে জ্যামের পরিমান বেশ কম । তবে জ্যামে এসে পড়লাম মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে আড়ং পর্যন্ত আসতে গিয়ে । এই রাস্তায় সারি সারি গাড়ি দাড়িয়ে রয়েছে । অবশ্য কারণটা বুঝতে পারলাম আরো একটু পরেই ।
২৭ নম্বর থেকে আড়ং পর্যন্ত মিরপুররোড সমুদ্র তৈরি হয়ে গেছে । আমি সাইকেল নিয়ে সেই সমুদ্রেই নেমে গেলাম । এই পাশটাতেও তাও যাওয়া যাচ্ছে ঐ পাশে অবস্থা বেশ খারাপ । দেখলাম একটা লেগুনা বন্ধ হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে রাস্তার মাঝে, পানির মধ্যে । সম্ভবত ইঞ্জিনে পানি ঢুকেছে । এক যাত্রী পানির ভেতরে নেমে হাটা দিতেই পেছন থেকে হেল্পার চিৎকার করে বলছে ভাড়া দিয়ে যেতে । আরও কয়েকটা সিনএজি দেখলাম বন্ধ হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে । মানুষজন পানির ভেতরে হাটছে বাধ্য হয়ে । এমনি পানি ফুটপাত পর্যন্ত ডুবিয়ে দিয়েছে ।
আমি দাড়িয়ে থাকা গাড়ি গুলোর ভেতরে সাইকেল এগিয়ে নিয়ে চললাম । আমার স্নিকারের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে । প্যান্টটা একটু গোটানো দরকার ছিল তাহলে একেবারে এভাবে ভিজতো না ! আমার পানির ভেতরে এই সাইকেল চালাতে বেশ মজা লাগে । এই রাস্তাটা আমার খুব ভাল করেই চেনা । তাই কোথায় কী গর্ত আছে সেটা আামর মোটামুটি জানা । নির্ভয়েই সাইকেল চালাতে পারছিলাম ।
আমি যখন একদম প্রথম ঢাকাতে আসি তখন বর্ষায় প্রথমবারের মত আমি ২৭ নম্বরের পানি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম । প্রতিদিন এই রাস্তায় যাওয়া আসা করি, তাই এই রাস্তা পানির নিচে ডুবে যাওয়ার ব্যাপারটা আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না । একেকটা বাস যাচ্ছে আর ঢেউয়ের যে একটা প্রবাহ সৃষ্টি করছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না । আমার মনে আছে সেদিন আমি প্রায় ঘন্টা খানেকের উপরে এই ২৭ নম্বরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পানি দেখছিলাম । সেদিনও একটা বাসের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমার সব কিছু দেখতে এতো মজা লাগছিলো । পানি জমে যাওয়ার ব্যাপারটা আমার বরাবরই খুব ভাল লাগে । বর্ষায় আমাদের বাড়ির সামনে পানি জমে যায় । আমি সব সময় চাইতাম এই পানি যেন সহজে না কমে !
ঢাকাতে ১৫ বছর ধরে রয়েছি । এই ২৭ নম্বর রাস্তাটা যে কতবার খুড়াখুড়ি করা হল, কত ড্রেন তৈরি হল আবার ভাঙ্গা হল কিন্তু যেই লাউ সেই কদুই রয়ে গেল । মাত্র একঘন্টার বৃষ্টিতেই এই রাস্তা ডুবে সমুদ্র বন্দরে পরিনত হয় ! অবশ্য একটু যে উন্নতি যে হয় নি সেটা বলা যাবে না । আগে তো রাপা প্লাজা থেকে ধানমন্ডির দিকে যাওয়ার রাস্তা একেবারে অক্সফোর্ড স্কুল পর্যন্ত একেবারে ডুবে যেত । ডুবে যেত মানে একেবারে মহাসমুদ্রের মত অবস্থা ! এখন সেটা বন্ধ হয়েছে । তবে সাতাশের মোড় থেকে আড়ংয়ের রাস্তার কোন উন্নতি আর হল না ! এটা এখনও সমুদ্রবন্দরে পরিনত হয়েই চলেছে !
মোবাইলটা পলিথিনে মোড়া ছিল বলে সেটা আর বের করি নি । নয়তো কয়েকটা ছবি এড করে যেত !
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




