কয়েক বছর আগের কথা। আমাদের বাড়ির দীর্ঘদিন এক মহিলা কাজ করেছেন । তারপর তার ছেলেদের অবস্থা একটু ভাল হয়ে গেলে আর তাকে কাজ করতে দেয় নি। তবে অভ্যাসের কারণে বলতে গেলে সারা দিনই আমাদের বাসায় থাকতেন। আমার মায়ের গল্প গুজব করতেন রান্না ঘরে বসে।
সেইবার ঈদে বাসায় গিয়েছি। বাসায় গেলে আমি সারাদিনই বলতে গেলে ঘরে থাকি। সেদিনও ঘরে শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলাম । সেই সময়ে বাইরে চিৎকার চেঁচামিচি শুনলাম। দুই মহিলা ঝগড়া করছে। এবং তাদের একজন হচ্ছে আমাদের বাড়ির সেই প্রাক্তন কাজের মহিলা। কথাবার্তা পরিস্কার কানে আসছিল । ঝগড়ার কথা বার্তা কানে যা আসলো তাতে বুঝলাম সেটা হচ্ছে কাজের মহিলার নাতির সাথে অন্য মহিলার ছেলে খেলা করার সময়ে কোন কিছু নিয়ে মারামারি বেধেছে । সেটাই নিয়ে ঝগড়া । এক পর্যায়ে অন্য বাচ্চারা জানালো যে কাজের মহিলার নাতির দোষ বেশি । সেই নাকি আগে মেরেছে।
এখন যখন ঝগড়ায় পেরে উঠছে না তখন কাজের মহিলা হঠাৎ বলে উঠল, হ্যা আমাদের বোনরা তো নাঙ্গের সাথে পালিয়ে যায় না !
এই লাইনটা আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে। এখানে বলে রাখি যে ঐ অন্য মহিলার এক বোন তার প্রেমিকার সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছিল । এখন ঝগড়া হচ্ছিল দুই ছেলের মারামারি নিয়ে। সে ঝগড়াতে যখন কথায় না পারছিল তখন কাজের মহিলা প্রতিপক্ষ কে ঘায়েল করতে তার বোনের একটা কথা টেনে নিয়ে এল ঝগড়ায়। এসব গ্রামের ঝগড়ার মানায় । কোন কথা থেকে কোন কথা চলে যায় তার কোন ঠিক না। অশিক্ষিত কাজের বুয়া টাইপের মানুষদের ঝগড়া এমনই হবে। স্বাভাবিক ।
ঐ কাজের মহিলার আরেকটা স্বভাব ছিল । গ্রামের কোন মানুষ কী করলো, কার সাথে কী ঝগড়া হল, কে কিভাবে টাকা পয়সা আয় করলো, কে ঘুমালো, কে পালালো, এই সব তথ্য সারাদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংগ্রহ করত। বিশেষ করে যখন থেকে তার ছেলেরা তাকে আর আমাদের বাসায় কাজ করতে দিত না, তখন সেতো সারাদিন বেকার হয়ে গিয়েছিল । কোন কাজ কর্ম ছিল না । সেই জন্য সবার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে এসে হাজির হত আমাদের বাসায় । আমি শুরু থেকেই দুই চোক্ষে দেখতে পারতাম না এই মহিলাকে । এমন কি এখনও পারি না। তবে সে প্রচুর কাজ করতে পারত। আমার বাসায় কাজের শেষ নেই। আমার মা একা পেরে উঠত না। বাধ্য হয়ে রাখতে হত তাকে। তবে আমি বাসায় থাকা কালে যদি এই অন্যের ব্যাপার নিয়ে গল্প করতে যেত আমি এক ধকম দিতাম। এই চোগলখোরী কুটনামী আর অন্যের ব্যাপারে কথা না লাগাতে না পারলে তার পেটের ভাত হজম হত না। শুধু আমাদের বাড়িতে না পুরো গ্রামে এই কাজ সে করে বেড়াতো।
আর ঝগড়ার মুখ ছিল একদম সবার সেরা । পুরো গ্রামে এমন কোন মানুষ নেই যে যার সাথে তার ঝগড়া বাঁধে নি। গ্রামের বলতে গেলে সবাই এই মহিলাকে দুই চোখে দেখতে পারত না । কেউ কেউ তো বাড়িতে ঢুকতে দিত না। এবং ঝগড়ার বিষয় যাই হোক না কেন এই মহিলা সব সময় পেছনের বিষয় নিয়ে আসতো । ঝগড়া শুরু হল এক ব্যাপার নিয়ে আরে সেটা চলে যেত অন্য দিকে ।
তবে অদ্ভুত কারণে সে আমার মাকে পছন্দ করত । যখন কাজ করতো তখন আমি দেখেছি সে আমার মায়ের উপরে কথা বলত না । যদি ঝগড়া চলত আমার মা যদি বলত চুপ কর তাহলে কথা বন্ধ করে দিয়ে চলে আসত ।
এই মহিলা যদি একটু পড়ালেখা জানতো তাহলে তাকে এই ব্লগে একটা একাউন্ট খুলে দিতাম । আমি নিশ্চিত সামুতে বেশ সুনাম করতে পারত। ঝগড়ার সময়ে যে যেভাবে নিজের বাক স্বাধীণতার প্রয়োগ করে আশা করি খুব নাম করত । এই কাজ করেই অনেকে অনেক মন্তব্য পাচ্ছে !
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২৩