
ধরেন, আপনার পকেটে ৮০ টাকা রয়েছে। এই টাকা দিয়ে আপনি এখন দুপুরের ভাত খাবেন। এক প্লেট ভাত ১০ টাকা এবং একটা ডিম ৩০ টাকা। এই ৪০ টাকা দুপুরের খাবার এবং এরপরে রাতের জন্য বাকি ৪০ টাকা রেখে দিলেন। কিন্তু যখন হোটেলে ঢুকলেন তখন আপনার চোখ গেল বেশি ঝাল দিয়ে রান্না করা মুরগির মাংসের দিকে চোখে গেল। ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম ৭০ টাকা। এখন আপনি চাইলে আপনার কাছে থাকা পুরো ৮০ টাকা দিয়েই এক প্লেট ভাত আর আপনার পছন্দের মুরগির মাংস দিয়ে খেতে পারেন।মনের ইচ্ছে পূরণ করতে পারেন। কিন্তু তাতে সমস্যা হচ্ছে রাতে আপনি যে কী খাবেন সেটা সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই। হয়তো অভুক্ত থাকতে হতে পারে। এখন আপনি কী করবেন?
ধরেন আপনি র্যাশোনাল আচরণই করলেন। আপনি নিজের ইচ্ছেকে জলাঞ্জলি দিয়ে আপনি ৪০ টাকা দিয়ে ডিম দিয়ে ভাত খেলেন এবং বাকিটা রাতের জন্য রেখে দিলেন। কিন্তু হোটেল থেকে বের হয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে আপনি গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেলেন। মরার আগে আপনার কেবল একটা কথাই মনে হল যে মুরগির দিয়ে ভাত খেলেই হত। ইচ্ছে টা তো পুরণ হত !
আবার ধরেন আপনি আপনার ইচ্ছে পূরণ করলে মুরগি দিয়েই ভাত খেলেন কিন্তু বাড়ি যাওয়ার পথে মরলেন না। এবং রাতে আপনাকে অভুক্তই থাকতে হল। তখন ক্ষুধা পেতে আপনার মনে হচ্ছিল যে ডিম দিয়ে খেলেই বুঝহি ভাল হত। রাতে এই রকম না খেয়ে থাকতে হত না।
অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের অবস্থাও বুঝি এমনই। আমরা আসলে যাই সিদ্ধান্ত নেই না কেন যদি কপালে আমাদের খারাবী থাকে তাহলে সেটা আসলে কোন ভাবেই দুর করা যায় না। আমরা দুঃসময়ের জন্য জন্য কত প্রস্তুতিই না নিয়ে রাখি কিন্তু দেখা দেখা যায় সে সে সব আয়োজন রেখেই আমরা টুপ করে মরে যাই। আমাদের হাতে আসলে কিছুই থাকে না।
আমার মা সব সময় আমার টাকা পয়সা জমাতে বলে। আমি যখন কিছু টাকা খরচ করি কিংবা কোথাও বেড়াতে যাই, তখন তার মূল কথাই থাকে টাকা পয়সা খরচ না করে জমানো দরকার। কখন যে কোন বিপদে পড়ি তখন আসলে কেউ সাহায্য করতে আসে না। তখন জমানো টাকাই আমাদের সাহায্য করে। তার কথায় আসলে কোন ভুল নেই। সত্যিই তাই, আমাদের জীবনে কখন যে কোন বিপদ আসে তার কোন ঠিক নেই। তখন জমানো অর্থই আমাদেরকে সাহায্য করতে।
কিন্তু আমার বরাবরই মনে হয় যে এই ধরেন আমি মুরগির মাংস খাওয়ার ইচ্ছে করা সত্ত্বেও এবং আমার কাছে টাকা থাকা সত্ত্বেও আমি সেই শখ পূরণ না করে ডিম দিয়েই ভাত খেলামা। এবং বাড়ি যাওয়ার পথে বাসের নিচে চাপা পড়লাম? তখন? শেষ যে আফসোস! সমর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেবল ভবিষ্যতের চিন্তা করে আমি সেই শখ পূরণ করলাম না। আর সেই ভবিষ্যৎ আসার আগেই, সেই ভবিষ্যতের সুবিধা পাওয়ার আগেই যদি সব কিছু উর্ধ্বে চলে যাই তখন সেই আফসোসের সীমা থাকবে না। আসলে আমরা আমাদের জীবনের অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রন করতে পারি না। আমি যাই করি না কেন আমাদের সাথে কী ঘটবে তার অনেক কিছুই অন্যের কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে।
আমি তখন ঢাকাতে নতুন সাইকেল চালানো শুরু করেছি। বাংলামোটর হয়ে কাঠাল বাগান রাস্তার দিকে যাচ্ছি। এমন সময়ে তিন রাস্তার মোড়ে এসে দেখি দুই দিক থেকে দুইটা লড়ি আসছে। আমার মনে হল যে আমি এই দুই গাড়ির মাঝ দিয়ে পার হয়ে যেতে পারব। তবে আমার হিসাবে একটু ভুল। আমি একেবারে তাদের মাঝে গিয়ে পড়লাম। এখন অবস্থা এমন যে এই দুই গাড়ির একটাও যদি না থামে তাহলে আমার খবর শেষ। কিন্তু কপাল ভাল যে দুই গাড়ি হার্ড ব্রেক করল। আমি মাঝে বেঁচে গেলাম। একটা গাড়িও যদি না থামাতো তাহলে আজকে এই ব্লগ আমার লেখা হত কিনা সন্দেহ। কয়েক মাস পরে একই স্থানের ঘটনা। তারপর থেকে আমি আর ঝুঁকি নিয়ে সাইকেল চালাই না। আমি সিগনালে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কিছু সময়ে পরে হঠাৎ পেছন থেকে একটা রিক্সা এসে আমার সাইকেলের চাকার সাথে ধাক্কা দিয়ে দিল। আমি উল্টে পড়লাম। একেবারে রাস্তার উপরে। অথচ এখানে আমার কোন হাত ছিল না। তবুও আমার এই হাল হল। অথচ আগের ঘটনায় আমার সম্পূর্ণ হাত ছিল, সিদ্ধান্ত আমার ছিল তারপরেও আমার আমি রক্ষা পেলাম অন্যের কারণে। আর পরের ঘটনায় আমি বিপদে পড়লাম অন্যের কারণেই।
তাহলে আমাদের কী করা উচিৎ?
Image by Mohamed Hassan from Pixabay
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



