এবার নিয়ে গত ৮ মাসে পাঁচ বার বাস বদল করতে হচ্ছে। আল্লাহ জানে কপালে এবার কি আছে। প্রতিটি বাসায় কোন না কোন ঝামেলা হবে। তবে এই শেষ বারেরটা একটু বেশি হয়ে গিয়েছে। হাতি আর জলহস্তির জন্য একটা বাসায়ও দেড় দু মাসের বেশি থাকতে পারিনা। এগুলারে পয়দা করছে কে।
একে তো ভীষন রোদ তারপর ছাতা নিয়ে বের হইনি। এক জায়গায় দেখলাম আখের রস বিক্রি করছে। আমি আর অর্চি দুজন মিলে আখের রস নিলাম। অর্চি নিমিষেই শেষ করে ফেলল। আমি খুব আয়েশ করে রস খাচ্ছি। অনেকটা রাজা বাদশা স্টাইল। আহা!!! কি শান্তি। অর্চি আমার উপর বিরক্ত। তবুও আমি এভাবেই খাচ্ছি।
হঠাত অর্চি বলল, তোর জমিদারগিরি শেষ হয় না। আমি উদাস ভাবে তাকিয়ে বললাম, আগের দিনের জমিদারদের একটা আলাদা ঘর থাকত সেখানে সুরা পান সহ নানা বিনোদন এর আয়োজন থাকত। কি জীবন ছিল। ‘ তোর এই উদাস কথা বন্ধ কর, বাসা খুজতে হবে না হলে দুদিন পর গাছ তলায় জায়গা হবে’ অর্চি বিরক্ত হয়েই বলল। অগ্যত রস শেষ করে আবার বাসা খোজায় মনযোগ দিতে হলো।
একে তো ব্যাচেলর তার উপর জলহস্তি সাইজের একজন সাথে, তাকে দেখেই রিজেক্ট করে দেয়। আমি অর্চিকে বললাম, দোস্ত গাছ তলায় থাকার একটা অভিজ্ঞতা নিলে কেমন হয়। ও যেভাবে তাকাল তাতে মনে হচ্ছে পারলে এখানেই আমাকে মাথার উপর তুলে আছড় মারে। কিন্তু দেহ জলহস্তির মত হলেও মনটা হামিংবার্ডের মতই হালকা ও তুলার মত নরম।
দোস্ত এই বাসাটাই শেষ, আর আজ কোন বাসায় যাব না, অর্চি বলল। আমিও বললাম ঠিক আছে। না হলে আগের বাসার আঙ্কেলের পা ধরে বসে যাব। কি বলিস। অর্চির মনে হল আমাকে অন্য কোন জগতের বাসিন্দা। কারন আমি সচরাচর কারো পা ধরব এটা সে কল্পনাতেই ভাবতে পারে না।
এসব ভাবতে ভাবতে পাচ তলা বাসার দোতলায় বাড়িয়ালার দরজায় নক করলাম। এক আঙ্কেল দরজা খুলে দিল। বলল কলিং বেল কি চোখে দেখা যায় না। আমি তাড়াতাড়ি দরজা লাগিয়ে কলিং বেল বাজালাম। উনি আবার দরজা খুলে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। যেন এলিয়েন তার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। উনি আমাকে বললেন, এটা কোন ধরনের অভদ্রতা। এভাবে কেউ করে নাকি। দরজা তো খুলে ছিলাম লাগিয়ে দিয়ে কলিং বেল বাজানোর মানে কি!!! আমি বললাম, আঙ্কেল বাসা ভাড়া নিতে এসছি। শুনলাম আপনার ছাদের রুমটা খালি। ‘ কে বলেছে খালি?’ আঙ্কেল আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন। তারপর দড়াম করে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলেন।
আমরা নিচে নেমে আবার উপরে উঠলাম। তারপর কলিং বেল বাজালাম।
আবার সেই আঙ্কেল দরজা খুলে দিলেন। আমাদের হাতে টুলেট এর বোর্ড দেখা জিজ্ঞেস করলেন ফ্যামেলি সহ থাকবে। আমি আর অর্চি দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে বললাম। আঙ্কেল আমরা ওইটাপের না। উনি রেগে বললেন, এই ছেলে তুমি আমার সাথে ফাইজলামি করো। আমি বললাম, আপনি তো আমার বেয়াই না। ফাজলামি কেন করব। আমার বাসা থেকে এখন বেরিয়ে যাবে। যাও, বলে আবার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলেন। সব আশা ভরসা শেষ। কেন জানি মনে হচ্ছে এই বাসাতেই আমাদের ঠিকানা হবে। তবে আর একবার চেষ্টা করা যাক। দানে দানে তিন দান। এবার হবেই।
এবার অর্চি বলল তুই কোন কথা বলবি না আমি বলল। আমিও সুবোধ বালকের মত কথা মেনে নিলাম। ঢাকার রাস্তায় দেখেছি সুবোধের নাকি সময় ভাল যাচ্ছে না। তাই আমারও মনে হয় সুবোধের মতই অবস্থা।
অর্চি কলিং বেল বাজিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। এবার দরজা খুলে দিল এক পিচ্চি ছেলে।
- কি চাই?
- বাবু কি নাম তোমার
- কি চাই?
- তোমরা কি বাসা ভাড়া দিবে?
- কি চাই
মনে হচ্ছে যেন রোবট এর সাথে কথা বলছে। ঘরের ভিতর থেকে এক মহিলা কন্ঠে ঢাক শোনা গেল। রূপ কে এসেছে। আম্মু দুই জন আঙ্কেল এসেছে। আমি অর্চি দুজন এবার দুজনার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম কিরে বয়স কত। এরপর সুন্দর মুখের হাসি খুশি এক আন্টি এলেন।
- কি চাও বাবারা?
- আন্টি বাসা ভাড়া নিতে চাচ্ছিলাম
- তা কে কে থাকবে
- আমরা তিন বন্ধু
কিন্তু বাবা, ব্যাচেলর তো ভাড়া দেয়া যাবে না। বলে আন্টিকে একটু বিমর্ষ দেয়া দেখাল। মনে তার জীবনেও আনন্দের অভাব। ব্যাচেলর ছেলে পেলে থাকলে হয়ত মজা হবে। এই বুইড়া বেটা মনে হয় রস কস হীন। না না এই মজা মানে হলো একটূ মনে খুলে কথা বার্তা বলা। এই আরকি।
ঠিক সেই সময়ে টাকলু আঙ্কেল আবার এলেন। তাকে এখন অনেকটা গরিলা টাইপ দেখা যাচ্ছে। গায়ে টাউস এক পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরে আছে।
এই, তোমরা আবার এসেছ। বলেছি না তোমাদের কে বাসা ভাড়া দেয়া যাবে না। বলে তিনি রাগত্ব স্বরে বললেন। তখন আন্টি বললেন, দেখ ছেলে গুলো কত আশা নিয়ে এসেছে। তাছাড়া পাচ তলার ছাদে তো গত তিন মাস কেউ ভাড়ার জন্য আসেনি। ওদের ভাড়া দিয়ে দাও। তোমরা কয় মাসের ভাড়া অগ্রীম দেবে।
তখন আমি বললাম আন্টি আমরা তিন দিনের ভাড়া অগ্রীম দেব। এই কথা শুনে বাড়িয়ালা আঙ্কেল হাসবে না কাদবে বুঝতে পারল না। তিনি আমাকে বললেন “এই ছেলে তুমি বেশি ফাজিল। তিন দিনের ভাড়া অগ্রীম হয়। তিন মাসের হয়’’। “ইয়ে মানে আঙ্কেল আসলে একটা গান আছে না বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না, বন্ধু তিন দিন” আসলে তিন বিষয়টার উপর জোর দেয়ার জন্যই বলা হয়েছে। তাছাড়া আপনি একটা বিয়ে করেছেন আরো তিনটা বাকি আছে।
আঙ্কেল কিছু না বলে আমার আর অর্চির মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন। তোমরা কে কি কর। আমি বললাম আমি অনলাইন ওয়েব ডেভলপার আর ও টেলি কমিউনিকেশন এ জব করে আর আমাদের সাথে এক হাতি আছে ও ফ্রী ল্যান্সিং করে।
হাতি মানে কি!! আঙ্কেলের চোখে বিস্ময়। তোমরা কি হাতি ঘোড়া বাঘ ভাল্লুক এসব পালো নাকি। কুকুর বিড়াল আছে নাকি। এসব কথা জিজ্ঞেস করলেন। যাক এতখনে আঙ্কেল কিছুটা হলেও আমাদের পক্ষে ইন্টারস্টেড হচ্ছেন। “ আসলে আঙ্কেল ওর সাইজে একটু হাতি হাতি ভাব আছে, তবে এটা নিয়ে আপনাকে টেনশন করতে হবে না।
আমরা ওকে বলে দেব যেন সাবধানে চলাফেরা করে” আমি এই কথা বলে আঙ্কেলের বিস্ময় কাটাতে চাইলাম । হলে বলে মনে হলো না। তবে তিনি আমাদের বাসা ভাড়া দিতে রাজি হলেন। সাথে অনেক শর্ত জুড়ে দিলেন। সেটা বাংলাদেশ, আমেরিকা, চীন, ভারত, সাউথ কোরিয়া, নর্থ কোরিয়া সব মিলিয়ে যেন বানানো হয়েছে। এই সংবিধান ছাপালে নির্ঘাত আঙ্কেল বড় লোক হয়ে যেত। বাসায় উঠেই এই আইডিয়া দিতে হবে।
তবে শেষ পর্যন্ত বাসা পাওয়া গিয়েছে তাতেই আমি খুশি। এর আগে যেসব বাসায় থেকেছি সব বাসাতেই ছাদে যাওয়া নিষেধ ছিল। আর এই বাসাটাই ছাদে। এর চেয়ে খুশির খবর কি হতে পারে।
(অফিস বন্ধ । তাই আর কি করা । বসে থাকলে যা হয় আরকি । মাথায় কিছু এলে সেটা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা ।)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১১