somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিয়মের বাধনে অসহায় এক ছাত্রের গল্প

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আমার মাস্টার্স এর পরীক্ষা চলছে । সেকেন্ড সেমিস্টার । অনেক ইচ্ছে ছিল কোন পাব্লিক বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ার । জাহাঙ্গীরনগর এ ভর্তি হলাম । দারুন এক বিশ্ববিদ্যালয় । সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয় এর সবুজ । প্রকৃতির জন্য সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে । যদি সুযোগ হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে যাবো । তবে সেটা স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয় । পূরন হবে না ।

বাংলাদেশে যত গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেয়া হয় তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর অন্যতম । সুনামের দিক থেকে প্রথম পাঁচ এর মধ্যেই থাকবে বলে আশা রাখি । এর সুনামের কারনে ই হয়ত প্রতি বছর এখানে ভর্তি যুদ্ধে ছেলে মেয়েরা চেষ্টা করে যায় । আমার খালাতো বোন দুবার চেষ্টা করেছে । তবে চান্স পায়নি ।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও চমৎকার । আমি রাজশাহীর আইবিএতে এমবিএ এর পরীক্ষা দিয়ে ছিলাম চান্স হয়ে ছিল শুধু তখন আমার বিবিএ এর সার্টিফিকেট বের হয়নি । তাই পড়তে পারিনি । তবে এতে দুঃখ নেই । হয়ত আল্লাহ যা করে ভালর জন্য ই করে । জীবনে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব করতে গেলে শেষ হবে না ।

আমি আসলে অন্য কিছু নিয়ে বলতে চাচ্ছি । সেটা থেকে দূরে চলে যাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে । আসলে মুল পয়েন্ট এ আসার আগে কিছু বলে নেয়া দরকার ।

আমি ছোট বেলা থেকে যেটা ঘৃণা করি সেটা হলো টাকা । যদিও টাকার পেছনেই ছুটছি । কারন সমাজের বাইরে যেতে পারিনি না । আমার বাবা কখনো আমাকে টাকার ব্যাপারটা চাপ নিতে বলেননি । তবে আমি পরিবারের বড় সন্তান তাই আমাকে বুঝতে হয় । শুধু বুঝি না এর বিপরীতে আমার দায়িত্ব গুলো পালন করার চেষ্টা করি । তবুও মাঝে মাঝে বাবার উপর চাপ পরে যায় ।

আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম তখন একটা কোচিং এ পড়তাম । এক বার স্যার আমাকে বাসায় পাঠিয়েছে কোচিং এর ফি নিয়ে আসার জন্য । প্রচন্ড অপমান বোধ নিয়ে বাসায় গেলাম । কারন যা আমাকে কোন দিন শুনতে হয়নি তাই শুনলাম । আত্মসম্মানে লাগল । আসলে তখন আমি মামা বাড়ি থেকে পড়াশুনা করতাম । তাই মামার দায়িত্ব ছিল কোভিং এর ফি দেয়া । কিন্তু তিনি তা করেননি । দু দিন কোচিং এ যাইনি ।

তারপর বাবা মামা কে প্রচন্ড ভাবে কথা শুনায় । তারপর মামা কোচিং এ গিয়ে স্যার আমার কাছে টাকা চাইতে নিষেধ করে । তারপর থেকে তারা আমার কাছে আর টাকা চায়নি । আমার বিবিএ এমবিএ সব এসবের ঝামেলা ছাড়াই শেষ করেছি । মাঝে মাঝে বাবা কে হেল্প করার জন্য ছোট খাট পার্ট টাইম জব করেছি । নিজের খরচটা যাতে চলে যায় সেটা যাতে বাবার উপর চাপ না দেয় সেটা করার চেষ্টা করেছি ।

তো এবার মুল কথায় আসা যাক,
আমার মাস্টার্স এর এবার সেকেন্ড সেমিস্টার শেষ হবে । তো টাকা জমা দিতে হবে । বাবার কাছে পুরো টাকা নেই । তাই আমি ভাবলাম কো-অর্ডিনেটর এর কাছে গিয়ে একটা হেল্প চাই । তিন ভাগের দুই ভাল তো এখন দিব আর বাকিটা পরের সেমিস্টারে ম্যাচ করে দিব ।

তো গেলাম অনেক আশা নিয়ে । স্যার রুমের সামনে পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে চিন্তা করলাম । তারপর বাবার কথা ভেবে ঢুকে পরলাম । বললাম স্যার আমি তো পুরো টাকাটা এখন দিতে পারব না । আমি কিছু টাকা ডিউ রাখতে চাচ্ছি । এক্সামের পর দিয়ে দেব । মনে হলো স্যার যেন কিছু শুনে নাই । আমাকে অনেক কিছু বললেন । নিয়মের বুলি দিলেন । কোন টাকা বাকি রাখা যাবে না । সব পেইড করে তারপর এক্সাম দিতে হবে । একাউন্টস এ ঝামেলা হবে । নতুন নিয়ম হয়েছে । আমাকে অনেক কথা শোনালেন । কিন্তু অনুমতি দিলেন না ।

মন ভার করে চলে আসলাম । জানতাম যে গত সেমিস্টারে অনেকেই টাকা ডিউ রেখে পরীক্ষা দিয়েছে । তাই এবার ও হয়ত দিবে । যখন তিনি ম্যানেজম্যান্ট আর নিয়ম এর কথা বললেন তখন খারাপ লাগল । এত এত চ্যারিটি করি মানূষের জন্য আজ নিজের জন্য কোন চ্যারিটি পাই না ।

তারপর অফিসের বসে কে বলতেই আমাকে বাকি টাকা দিয়ে বললেন যাও সব টাকা পে করে আসো । একটাও বাকি রাখবা না । বসের কাছ থেকে ধার নিলাম । টাকা পে করলাম । এডমিট কার্ড নিলাম । গতকাল প্রথম পরীক্ষা দিলাম । আজও দিলাম । তারপর জানলাম যে অনেকেই পুরো টাকা ডিউ রেখে পরীক্ষা দিচ্ছে । তাদের বলা হয়েছে এপ্লিকেশন দিতে । কবে নাগাদ টাকা পরিশোধ করবে ।

আমি শুনে চুপ করে রইলাম । কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম । কি বলব কিছু বলার ছিল না । একবার ভেবেছি স্যার কে যেয়ে বলি স্যার অনেকে তো পুরোটা ডিউ রাখছে । তাহলে আমাকে কেন নিয়ম আর ম্যানেজমেন্ট দেখালেন । তারপর ভাবলাম আমি তো বেয়াদপ না । তিনি আমাকে বেয়াদপ ভেবে বসতে পারেন । কিন্তু এটা তো আমার অধিকার । তাও স্যারের রুমে যায়নি । রুমের সামনে দিয়ে কয়েক বার হেটে গিয়েছি । ভেবেছি ঢুকে আমার মনের ভেতর থাকা কথা গুলো বলে দেই । তারপর ভাবলাম কি দরকার । চুপ করে চলে এসেছি ।

পরীক্ষা দিয়ে সোজা বাসায় চলে এসেছি । তারপর ভেবেছি, যদি বিদায় সংবর্ধনা হয় তখন স্যার কে কিছু কথা বলে আসব । না হলেও স্যারের রুমে যেয়ে বলে আসব । বলব ই ।

একটা কথা শুধু মাথায় ঢুকছে না, আমার ক্ষেত্রেই তার এত নিয়ম বের হলো । বাকিরা কি সালমান এফ রহমানের সন্তান নাকি । আমি জানি না । জানতেও চাই না । উনি সমতা নিয়ে অনেক লেকচার দেন । তাহলে কোথায় সমতা করছেন । জানি না ।

তবে কবি হয়ত এজন্য ই বলেছেন,
" শক্তের ভক্ত, নরমের যম"


ভাল থাকুন । সুস্থ থাকুন । বই পড়ূন । আপনার চারপাশ পরিস্কার রাখুন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৩০
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×