somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায়- জীবন এত ছোট কেনে? - কবিঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় । (বুক রিভিউ) !!!

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







“জীবন এতো ছোট কেন”

নীচু জাতের ছেলে নিতাই । তার বংশ পরম্পরায় ডাকাত । তাকেও ডাকাত হতে হবে । কিন্তু ভাগ্যে হয়ত তার জন্য অন্য কিছু লিখে রেখে ছিল । হয়ত এমন কিছু যার জন্য কেউ তৈরি ছিল না । নিতাইয়ের বংশ হচ্ছে ডোম মানে চুরি ডাকাতি করা । তাদের ছেলে হবে কিনা কবি ।

নিতাই পরিবার ছেড়ে তারা এক স্টেশনে ওঠে । সেখানেই দেখা হয় রাজার সাথে । রাজা তারা কবি গান শুনে মুগ্ধ হয় । তাকে ওস্তাদ বলা শুরু করে । ওইদিকে নিতাই স্টেশনেই কুলি মুটেগিরি শুরু করে । কিন্তু যারা মধ্যে কবিতা বাস করে তাকে কি আর বেধে রাখা যায় । কবিতা বের হয়ে আসবেই । তাই রাজা নিতাই কে নিয়ে প্রায় বসে বসে কবি গান তৈরি করে । নিজস্ব সুর আর কথা মিলিয়ে সুন্দর করে ছন্দ তৈরি করে ।

রাজার শ্যালিকা প্রতি দিন আসত দুধ দিতে । এভাবেই পরিচয় হয় নিতাইয়ের সাথে । নিতাইয়ের কবিতা আর গানে সেও মুগ্ধ হয় । তাই অনেক সময় টাকা বাকি রেখেও তাকে দুধ দিয়ে যেতো । নিতাইও তাকে ভাল লাগতে শুরু করে । নিতাই ভাবে এটা কি ভালবাসার টান । নিতাইয়ের কাছে তার কৃষ্ণবর্ন ভাল লাগে । তাই যদিও সে হাসে, তারপর সে লিখে ফেলে

“কালো যদি মন্দ হবে গো, কেশ পাকিলে কান্দো কেন গো”


“চাঁদ তুমি আকাশে থাকো – আমি তোমায় দেখব খালি ।

ছুতে তোমায় চাই নাকো হে – সোনার অঙ্গে লাগবে কালি ।”


কিন্তু নিতাই জানে রাজার শ্যালিকা বিবাহিত । তার সংসার আছে । সে জেনে বুঝে তার সংসার ভাঙ্গতে পারে না । তাই সে ঠিক করে চলে যাবে অনেক দূরে । যেখানে তাকে হয়ত নতুন ভাবে সব কিছু শুরু করতে হবে । তার চেয়ে বড় কথা মনের ব্যথ্যা দূর করতে হবে । ঠিক সেই সময় সেই স্টেশনে হাজির হয় এক ঝুমুর গানে দল ।

সেখানেই পরিচয় বসন্ত বা বসন এর সাথে । মেয়েটি নিতাই কে জড়িয়ে ফেলে । তার কথা গান আর নাচে নিতাই মুগ্ধ হয় । মনে হয় একেই খুজে বেরিয়েছে এত দিন । সে ঝুমুর গানের দলের সাথে স্টেশন থেকে চলে যায় । পিছনে ফেলে যায় তার পরিবার, রাজা, রাজার শ্যালিকা, স্টেশনের লোকজন যারা তাকে ভালবাসে । তবুও এটাই জীবন সে মেনে নেয় ।

বসন্ত ও ঝুমুর গানের সাথে নিতাইয়ের যাত্রা শুরু হয় । ধীরে ধীরে নিতাইয়ের নাম ডাক ছড়িয়ে পরে । অনেকেই তার কথা গানে মুগ্ধ হয় । নিতাই ধীরে ধীরে সবার মাঝে একটা পরিচয় তৈরি করে ফেলে । বসন্তের সাথেও তার দিন গুলো সুন্দর ভাবেই কাটতে থাকে । তবুও তার মাঝে মাঝে পেছনের কথা মনে হয় । আসার আগে শুনেছিল রাজার শ্যালিকা নাকি পাগলের মত আচরন করছে । সেটার দায় যেন তার ই ।

তবুও জীবন চলে নিরবধি । এক সময় বসন্ত অসুস্থ হয়ে পরে । তারপর নিতাই ও তার গাট ছাড়া হয়ে যায় । যেন বসন্ত তাকে মুক্ত করে দিয়েছে ঠিক তেমন । নিতাই দিশা হারিয়ে ফেলে । তার কোন কিছুতেই আর মন লাগে না ।

এরপর কি করবে নিতাই?

কবি বইটা যতখন পড়েছি আমি মুগ্ধ হয়েছি । সত্যি বলতে এত দারুন করে লেখা যে আমি বলতে পারছি না । বইটির প্রতিটি লাইন যেন জীবনের দর্শন তুলে ধরেছে । ছন্দ মিলিয়ে ফেল্লেই কবিতা হয় না । কবিতার জন্য গভীর ভাব থাকতে হয় । থাকতে হয় জীবনবোধ । জীবনের গভীরতা জানতে হয় । যারা কবিতা লেখেন তাদের শক্তি অনেক । তারা শব্দ জটে সুন্দর করে তুলতে ধরতে পারেন যেকোন কিছু ।

বইটির ভাল না লাগার দিক হচ্ছে সাধু ভাষায় লিখিত । এখন হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে সাধু ভাষায় লেখে বলেই কি খারাপ লেগেছে । আসলে তেমন নয় । আমরা যারা বর্তমানে বই পড়ি তারা অনেক আগে থেকেই এটার সাথে পরিচিত । সাধু ভাষা চলিত ভাষায় মধ্যে পার্থক্য সব কিছু । কিন্তু আপনি নতুনদের মধ্যে সাধু ভাষার বই কিভাবে জনপ্রিয় করবেন । চলিত ভাষার হলে বুঝতে সুবিধে হবে তারা পড়ার আগ্রহ পাবে(এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত) । আমি সাধু ভাষাকে ছোট করে দেখছি না । কিন্তু যারা নতুন বই পড়ুয়া আছে তাদের কাছে বই সহজ ভাবে পড়তেই তাদের ভাল লাগবে ।

বইটি অনেক প্রকাশনী প্রকাশ করেছে । আমি যেটি পড়েছি সেটি বায়ান্ন’৫২ থেকে প্রকাশিত । তাদের বইয়ের বাধাই আমার কাছে ভাল লেখে । এছাড়া কাভারটাও চমৎকার ।

“এই খেদ আমার মনে-
ভালোবেসে মিটল না এ সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়- জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে” ।।

বইঃ কবি
লেখকঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৫
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×