আমার চাকরি সূত্রে মাঝে মাঝে কিছু ফোন পেয়ে থাকি যা বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে থাকে। তখন আসলে জবাব দেয়ার মত কোন কিছু খুজে পাই না। কারণ আমি যেই সমাধান দিয়েছি সেটা তার জন্য বেশ ভয় এবং শংকার সৃষ্টি করে থাকে। আসলে আমাদের পরিস্থিতি এমনটা করতে বাধ্য করছে। মানুষ পরিস্থিতির স্বীকার বলেই আজ মানুষ ভয় ও শংকার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
ঘটনা -
সেই দিন একটি ফোন এসেছিল যে কেউ একজন তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও এটিএম কার্ড রাস্তায় ফেলে গিয়েছেন। যিনি ফোন করেছেন তিনি লাইসেন্স ও কার্ড দুটো পেয়ে আমাদের ফোন করেছিলেন। আমরা কোন একটা সমাধান করে দেব। এই ভেবেই তিনি আমাদের ফোন করেছেন।
আমি প্রথমে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তিনি কোথায় পেয়েছেন। আশে পাশে কাউকে খুজতে দেখেছেন কিনা। কতখন আগে পেয়েছেন। এসব কথা আমি তার কাছ থেকে জেনে নেই। যদিও আমার এই ধরনের প্রশ্ন করা ঠিক হয়েছে কিনা জানি না। তবুও করেছি।
তিনি আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সুন্দর ভাবে। এরপর তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন, এখন তিনি কি করবেন। এগুলো তার কাছে রাখা সম্ভব নয়। তিনি যার লাইসেন্স ও এটিএম কার্ড তাকে ফেরত দিতে চান। আমি তাকে বললাম গ্রুপে একটা পোস্ট করে দিন। তারপর মনে পর এটা ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড এর বাইরে চলে যাবে। কারণ এটা কনফেডেনশিয়াল তথ্য সম্বলিত।
তাই পরে বললাম আপনি নিকটস্থ থানায় জমা দিন। এই কথা শুনে লোকটা কিছুটা ভয় পেল। আমি যখন বলেছি সেটা স্বাভাবিক ভাবেই বলেছি। কিন্তু পরে উনি যেই উত্তর দিলেন আমি আসলে অবাক হয়েছি।
তিনি আমাকে বললেন, দেখেন ভাই আমি সাধারণ একজন মানুষ পুলিশের ঝামেলায় যেতে চাই না। আমি নিয়ে গেলে পুলিশ আমাকেই ফাসিয়ে দেবে না এটা গ্যারেন্টি কি। তাছাড়া আমাদের মত গরিব মানুষের পাশে কেউ দাঁড়াবেও না। আর থানা মানেই একটা না একটা ঝামেলার সৃষ্টি হবেই। আপনার কি অন্য কোন উপায় জানা আছে?
আমি ওনাকে বললাম যেই ব্যাংকের এটিএম কার্ড ওই ব্যাংকে গিয়ে খোজ নিতে পারেন। এতে করে আপনি কোন ঝামেলায় পরবেন না। আশা করি ব্যাংক আপনাকে এই বিষয়ে সহায়তা করবে। এরপর তিনি আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দিয়েছেন।
কিন্তু আমি কেমন যেন একটা অস্বস্তির মধ্যে পরে গেলাম। আমার বাবা উকিল, আমার বন্ধুরা উকিল। তারপরও আমি নিজেই পুলিশের কাছে যেতে বা থানায় যেতে আমার বাধবে। ওনার কথার ভেতর এমন কিছু ছিল যা আমি এড়িয়ে যেতে পারিনি। আমাকে বার বার এই প্রশ্নটাই করে যেতে হচ্ছে "পুলিশ জনগণের বন্ধু" এটা কতটা স্বার্থক ভাবে পালন করা হয়েছে?
আজ মানুষ থানা ও পুলিশের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে কেন? আপনি আমি যদি একটু চারপাশের পরিস্থিতি লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাবো যে এই পরিস্থিতির জন্য কিন্তু দায়ী অন্য কেউ নয়। আজ মানুষ তাদের সহায়তা নিতে ভয় কেন পাচ্ছেন। কোথায় এত শংকা। কেন তারা থানা ও পুলিশ সহায়তা নিতে চান না।
কারণ আর কিছু নয়। আমাদের সিস্টেম। আমাদের সিস্টেম এমন দাড়িয়েছে যে আমরা কুড়ে কুড়ে মরে গেলেও আমরা কারো দাড়ে গিয়ে সহায়তা চাইব না। সেই অবস্থা তারা সৃষ্টি করতে পারেনি। ক্ষমতা, দাপট ও টাকার কাছে সব কিছুই বিক্রি হয়ে যায়। এটা ধ্রুব সত্য। এই সত্যটা মনে হয় সেই মানুষটিও উপলব্ধি করেছেন তাই তিনি থানায় যেতে চাননি।
আবার এটাও হতে পারে তারা যে জিনিসটা ফেরত দিবে তার গ্যারান্টি কি? এসব ছোটখাটো কাজ তো তারা করবে না। অথচ এটা কিন্তু কোন ছোটখাটো কাজ না। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত ডকুমেন্টস। চাইলে এটা নিয়ে অনেক খারাপ কাজ করা যেতেই পারে। তাই এটাকে হেলাফেলা করাও যাচ্ছে না।
তবে এটার জন্য আলাদা একটা সার্ভিসের ব্যবস্থা করা যায়। লস্ট এন্ড ফাউন্ড সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। যদিও জানি না এই ধরনের সার্ভিস আছে নাকি নাই। যদি থাকে তবে অবশ্যই এটা সবাই কে জানানো উচিত। আর না থাকলে করা উচিত। যেখানে শুধু মাত্র এই কাজের জন্য ডেডিকেটেড ব্যক্তি থাকবেন। যিনি এই কাজ হ্যান্ডেল করবেন।
প্রশ্নে ফিরে যাওয়া যাক, আদৌ কি পুলিশ বন্ধু হতে পেরেছে?
এর উত্তর আসলে আমাদের কারো জানা নেই। সবাই খারাপ নয়। আবার সবাই ভালো নয়। কিন্তু সিস্টেমের মধ্যে পরে সবাই একই সরল রেখায় চলতে থাকে। এটাই হচ্ছে সত্য কথা। আপনি আমি এই সিস্টমের বাইরে যেতে না পারলেও এড়িয়ে চলি। সব সময় আমাদের কে সর্তক থাকতে হয়। একটা অজানা ভয় ও আশংকা নিয়ে আমাদের থাকতে হয়। এই বুঝি কিছু হল। কিছু বলার সময় পাওয়া যায় না। তার আগেই মুখে তালা মেরে দেয়া হয়।
এক দিন পরিবর্তন আসবে। কারো না কারো হাত ধরে আসবে। সেই অপেক্ষায় থাকতে হবে। নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে, নয়ত দেশ ছেড়ে দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:০৬