somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু-১

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আদুরে ছোট্ট ছেলেটা সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। প্রথম দিককার খুব বেশী স্মৃতি তার নেই। শুধু মনে আছে প্রথম দিন বাবা স্কুলে রেখে ফিরে যাবার সময় তার সে কি কান্না। মনে হচ্ছিলো তার ছোট্ট চেনা পৃথিবীটা থেকে সে ছিট্‌কে পড়েছে বহুদূর। মনে হচ্ছিলো আর কখনো যেনো সে খুঁজে পাবেনা তার খুব চেনা সেই অল্প ক’জন মানুষ, তার ছোট্ট ঘর আর তার অনেক যত্নে আগলে রাখা সেই বাক্স যাতে ছিলো তার ছোট্ট জীবনের এখানে সেখানে খুঁজে পাওয়া অমূল্য সব গুপ্তধন।

খুব বেশী সময় লাগেনি পরবর্তী জীবনে অভ্যস্ত হতে। বাঁধা রিকশায় স্কুলে যাওয়া আর ফেরা। মাঝের সময়টা টিচারদের দখলে। মায়ের কড়া নির্দেশে স্কুলের বাইরে অন্য কোথাও যাওয়া বারন। ক্লাসের ছেলেমেয়ে গুলো তখনো শুধুই সহপাঠী। দুই এক ক্লাস উপরে পড়া ভাইয়ারা লোকাল পাবলিক বাসে বাসায় ফেরে। দূরত্ব বেশী নয়। একই পথে সবাই যখন হাত নাড়িয়ে বাসে চলে যায়, ছেলেটার মনে হয় যেনো কল্পলোকের রাজপুত্রের বাহন হাওয়ায় ভেসে ভেসে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক সাহস সঞ্চয় করে বাবাকে একদিন বলেই ফেলে সে বাসে করে স্কুল থেকে ফেরার কথা। বাবা নিজে এ্যাড্‌ভেঞ্চার প্রিয় মানুষ। মায়ের ভীরূ চাহনি আর অনিশ্চয়তায় পূর্ণ মুখ এড়িয়ে বাবা রাজী।

পরদিন বাবা গেলেন ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে। কিভাবে রাস্তা পার হতে হয়, কিভাবে বাসে উঠতে হয়, বাসে কিভাবে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে হয়, কিভাবে বাস থেকে নামতে হয় তার তালিম চললো। বাস থেকে নেমে খানিক পথ রিকশায় যেতে হয়। এগিয়ে এলো মধ্যের কাছাকাছি, কালো পাথর কুঁদে বের করে আনা মূর্তির মত মধ্যম গড়নের এক রিকশাওয়ালা। তার রিকশায় করেই বাবা ছেলের বাড়ি ফেরা।

পরদিন থেকে ফেরার পথে বাঁধা রিকশা বাদ পড়লো। সেদিন বাস থেকে নামতেই এগিয়ে এলো আগের দিনের সেই চেনা মূর্তি। পৌঁছে দিলো গন্তব্যে। বিনিময়ে ছোট্ট অনভ্যস্ত হাতে পকেট থেকে একটা টাকা বের করে এগিয়ে দেয় ছেলেটা। ফিরে যায় রিকশা টুং টাং ঘন্টি বাজিয়ে। ক’দিনের মধ্যেই নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়ায় ব্যপারটা। এ যেনো এক অলিখিত চুক্তি। নেই চুক্তিভঙ্গের রূঢ়তা, নেই কোন ব্যতিক্রম।

একদিন তার নাম জানতে চায় ছেলেটা। রিকশা চালাতে চালাতেই একটু পিছন ফিরে মৃদু হেসে সে বলে... ‘বন্ধু’। তারপর থেকে দু’জন দু’জনকে বন্ধু নামেই ডাকে। সময় গড়িয়ে যায়। অসম বয়সের দু’টো মানুষের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়, কথার পরিধি বাড়ে। ততদিনে ক্লাসের সহপাঠিগুলোর মধ্যে কেউ কেউ বন্ধু হতে শুরু করেছে। তবে সেই প্রথম বন্ধুর মত আপন যেনো আর কেউ নয়। সব কিছুর ফাঁকে ছেলেটা অপেক্ষায় থাকে বন্ধুর রিকশায় বাড়ি ফিরবে বলে। সেও নির্দিষ্ট সময়ে ছেলেটার অপেক্ষায় থাকে দিনের পর দিন। বাবা মা হাসে ছেলের ছেলেমানুষি বন্ধুত্বের কথা শুনে, তবে বাধা দেয় না কখনো।

দূরে কিসের যেনো একটা মেলা। সেদিন বাসায় ছেলেটাকে পৌঁছে দিয়ে বন্ধু মায়ের সাথে দেখা করতে চায়। মায়ের কাছে তার আবদার ছোট্ট বন্ধুকে মেলায় নিয়ে যাবে। মা দ্বিধায় পড়ে যান। সিদ্ধান্তটা পরবর্তী দিনের জন্য মুলতুবি থাকে। রাতে যথারীতি বাবা মায়ের ঘরোয়া বৈঠক আর মা কে দুশ্চিন্তায় ভাসিয়ে বাবার জয়। পরদিন স্কুল ফেরত দুই বন্ধু খেয়ে নেয় ঝটপট। খাবার টেবিলে বসে ছেলেটা ভাবে তার এত বড় বন্ধুটার এত সংকোচ কেন? সেই দিনটা যেনো অন্যরকম। কারোই যেনো কোন তাড়া নেই। ফুরফুরে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে দু’জনে মেলায় হাজির। পরিচিত কাকে যেনো রিকশা গছিয়ে ছোট্ট ছেলেটার হাত ধরে মেলায় ঢোকে বন্ধু। বাইরের কারো কিছু না নেওয়ার ই স্বভাব ছেলেটার। কিন্তূ বন্ধুর আকুলতায় একসময় তারও হাত ভরে যায় খাবার আর খেলনায়। মায়ের দেওয়া টাকা ক’টি পকেটের অন্ধকারেই অলস পড়ে থাকে। বাড়ন্ত ভীড়ে ছেলেটাকে ঘাড়ে নিয়ে বের হয়ে আসে বন্ধু। বিকেল গড়িয়ে যখন প্রায় সন্ধ্যা তখন বাড়ী ফেরা আর জানালায় মায়ের উদ্বিগ্ন মুখ।

সময় গড়িয়ে যায়, দু’টো ক্লাস ডিঙিয়ে ছোট্ট ছেলেটা আর অত ছোট্টটি নেই। বন্ধু বেড়েছে। বাসায় ফেরার পথে বন্ধুকে সে স্কুলের গল্প শোনায়। লম্বা ঈদের ছুটি কাটিয়ে প্রথম স্কুল ফেরার দিন পেলো না সে বন্ধুকে। এমন আগেও মাঝে মাঝে হয়েছে। তাই ভাবে না সে। পরদিনও পায় না। তার পরদিনও না। বাবাকে বলে আগে জানা বস্তিটায় খুঁজে আসতে। পাওয়া যায় না। প্রতিদিন স্কুল ফেরার পথে বাস থেকে নেমে থমকে দাঁড়ায় ছেলেটা। একটু অপেক্ষা করে। অভিমানে চোখ ছলছল করে ওঠে। তারপর উঠে বসে অন্য কোন রিকশায়। আনমনা হয়ে শুধু ভাবে, এভাবে কেউ হারিয়ে যায়......? কেনো হারিয়ে যায়......?
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×