somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহায্য

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছাওয়ালটারে বাঁচান, ছার...

বুয়ার এই ঘ্যানঘ্যান শুনতে আর ভালো লাগেনা নীরবের। বিয়ে করে মাত্র সে সংসার পেতেছে। টাকা-পয়সা যা ছিল, সব খরচ করে উল্টো ধার-দেনায় জড়িয়ে পড়েছে। কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার; অথচ কমিউনিটি সেন্টার, স্টেজ, গাড়ী, গানের পার্টি, ফটো, ভিডিও, খাওয়া-দাওয়া সব মিলিয়ে কয়েক লাখ টাকা খরচ না করলে -বিয়ের পর দশজনের কাছে মুখ দেখানোই মুশকিল। ওর মতো মধ্যবিত্ত চাকুরের কাছে খরচটা বোঝা-ই। কিন্তু কে শোনে কার কথা! তিন-চার মাস হয়ে গেল, এখনো ক্রেডিট কার্ডের বিলই শোধ হয়নি। হানিমুনে যাওয়ার চিন্তা তাই আর মাথায় আনে নি। কিন্তু কলিগদের “কি ব্যাপার? সমস্যা কি?” মার্কা ইঙ্গিতে, অফিসে সে নাস্তানাবুদ। সহকর্মীদের কেউ মালদ্বীপ, কেউ হানিমুন করতে মালয়েশিয়া ঘুরে এসেছেন। সে যদি থাইল্যান্ড, অন্তত নেপাল-ভুটানও না যেতে পারে তাহলে প্রেস্টিজের আর থাকে কি! অবশ্য সেন্টমার্টিন-কক্সবাজারও আছে, কিন্তু তারও তো খরচ কম নয়! এ মাসে বোনাসটা পাওয়ার কথা। তাই বেতন-বোনাস মিলিয়ে, আর বাকীটা ধার করে, যেভাবেই হোক হানিমুনটা এবার সেরে ফেলাই ওর প্ল্যান।

এরমধ্যে বুয়ার এই ঘ্যানঘ্যান দিনদিন অসহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছেলেটাকে সে দেখেছে, বুয়ার সাথেই, আসে মাঝে-মধ্যে। বয়স চারের মতো, তবে খুব দুর্বল। বুয়ার আবার স্বামী নেই। বউ-বাচ্চা রেখে কোথায় যে সে গেছে, তার কোনও আর পাত্তা নেই। গরীব বাপ, মেয়ের বিয়ে দিয়েই মুক্তি পেয়েছে। এখন বাসায় বাসায় কাজ করেই জীবন চলে ওদের। ছেলেটার আবার ঠাণ্ডা লেগে থাকে। খুব খারাপ হওয়ায় সেবার অনেকের হাতে পায়ে ধরে ডাক্তার দেখিয়েছে। ডাক্তার বলেছেন - ওর হার্টে ছিদ্র আছে। খুব তাড়াতাড়ি অপারেশন না করালে কি হবে তা বলা মুশকিল। কাজেই আরও টাকার দরকার, প্রায় লাখ তিনেক। এরপর থেকে প্রতিদিন এই ঘ্যানঘ্যান, কখনো কান্নাকাটি। মায়ের কান্না দেখে ছেলেটা অবাক হয়ে থাকে, কিছু একটা বোঝে, হয়তো বোঝে না। মা ছাড়া অন্যদের সামনে লজ্জায় বোধহয় কাঁদতেও পারেনা।

এই বিরক্তি থেকে বাঁচতেই হোক, অথবা ভালোমানুষ হওয়ার কারণেই হোক, বেতন পেয়ে বুয়ার হাতে হাজার পাঁচেক টাকা দিয়েছে নীরব। তারপর, সপ্তাহ-খানেক ব্যাংকক থাকার ভিসা, যাওয়া-আসার টিকেট আর অফিসের কাজ নিয়ে ছুটতে ছুটতে বুয়ার চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে।

হানিমুন এবং কেনাকাটা শেষ করে ওরা যখন ফিরেছে, রাত তখন অনেক। পরদিন বুয়ার আশায় বসে থেকে হতাশ হয়েছে। প্রচণ্ড বিরক্তিতে টাকা দিয়ে সাহায্য করতে চাওয়ার চেষ্টাটাকেও যখন বোকামি মনে হচ্ছে, দারোয়ানের কাছে তখন জেনেছে - বুয়ার ছেলেটা মারা গেছে। শুনে আবারও খারাপ লেগেছে, এরপর অন্য বুয়া ঠিক করে দিতে বলে সে বাসায় ফিরেছে।

***** ***** ***** ***** *****

বছর পাঁচেক পেরিয়ে গেছে। ক্যারিয়ারে নীরবের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মাল্টিন্যাশানাল একটা কোম্পানিতে সে এখন বেশ ভালই আছে। ওর ঊর্ধ্ব-ঊর্ধ্বতন বস সেদিন চল্লিশ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছেন। নীরব অবশ্য সে পর্যায়ে এখনো পৌঁছায়নি, তবু ভবিষ্যৎ বলে যে একটা ব্যাপার আছে সেটা তো আর শেষ হয়ে যায়নি!

ওর একটি ছেলেও হয়েছে। বয়স এখন সাড়ে তিন। খুব দুষ্টু আর আদুরে। সারাদিন বাসায়ই থাকে। তাই বাবা কখন ফিরবে আর ওকে নিয়ে বাইরে যাবে - এই আশাতেই পথ চেয়ে থাকে। নীরব বাসায় ফিরলে ওর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছেলের মুখে বাবা ডাক শুনে নীরবের বুকটা ভরে আসে। ফোলা ফোলা নরম গাল, কালো বড়ো বড়ো চোখ, ছোট গোলগাল একটা মুখ আর ছোট ছোট হাত-পা নিয়ে নরম তুলো তুলো ছোট্ট ওই শরীরটার কি যে জাদু - নীরব শুধু মুগ্ধ চোখে দেখে, কখনো ছেলের মধ্যে নিজের ফেলে আসা শৈশবকে খোঁজে। সবকিছুর পর ছেলে যখন ওর বুকে ঘুমিয়ে পড়ে, সব না-পাওয়া ভুলে নিজেকে তখন খুব সুখী একজন মানুষ বলে ওর মনে হতে থাকে।

ক‘দিন ধরে ছেলেটির খুব জ্বর। নীরব ওকে হাসপাতালে নিয়েছে। বিভিন্ন টেস্ট করিয়েছে। সবকিছুর পর রিপোর্ট হাতে পেয়ে ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। ব্লাড ক্যান্সার। দেরী হয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছেন হতাশ না হতে। অনেকেই বলেছেন - দেশের বাইরে নিয়ে যেতে। কিন্তু যেখানেই হোক, সবকিছুর জন্য টাকা চাই, কম করে হলেও লাখ তিরিশেক। নীরব পাগলের মতো যার কাছে পেরেছে হাত পেতেছে। ডিপিএস ছিল, ভেঙ্গেছে; বউয়ের গয়নাগাটি, নিজের শেয়ার যা ছিল সবই বিক্রি করেছে। অনেকেই অনেকভাবে সাহায্যও করেছে। ওর সেই ঊর্ধ্ব-ঊর্ধ্বতন বস, অফিসের সবাই, বেশ ভালো একটা আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। তবুও যেটুকু যোগাড় হয়েছে- প্রয়োজনের কাছে সেটা সামান্যই রয়ে গেছে।

সপ্তাহ-খানেক হয়েছে, নীরবের ছেলেটি মারা গেছে। কত সান্ত্বনা, কত দীর্ঘশ্বাস; তবু ওই মুখটাই বারবার ওর মনে ভেসে আসে। সেই কালো চোখ, সেই দুষ্টু হাসি, আর সেই বাবা ডাক! থেকে থেকে ভেতরটা ওর শূন্য হয়ে আসে, যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেতে যেতে চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×