বিঃদ্রঃ গল্পের চরিত্র একেবারেই কাল্পনিক; যদি কোন ঘটনার সাথে মিলে তবে আমিই দায়ী থাকবো।
ইতোমধ্যে মাধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। আর কখনোই হয়তো আগের মতো করে হয়ে জড়িয়ে থাকবেনা মাধবীলতা আমার দেহের জানালার গ্রীল ধরে। তবু স্বপ্ন এখন গানের সুরে,
"একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে
আমরা ধরা পড়ে যাব জেনো ঠিক
ধুয়ে যাবে যত আছে অভিমান
ধুয়ে যাবে সিঁদুরের টিপ
আর চটিটাও ছিঁড়ে যাবে তক্ষুনি
তাই পালানো যাবেনা যে কোথাও
রাস্তা যেমন তেমনি
শুধু লোকজন সব উধাও "
সেবার যখন সম্মোহিত হয়েছিলাম প্রিয়তমার আত্মা দ্বারা; আমার মাথার উপর প্রচন্ড বেগে ফ্যান ঘুরছিলো। তারপর অনেক দিন পেরিয়েছি-সেই ফ্যান এখন আরো বেশি করে ঘুরে; ঘুরে আসেনা স্মৃতি,জ্বালা,প্রেম। কেমন জানি হয়ে গেছি; একটা বিশাল পাথর হয়তো জন্মছে ভেতরে যেখানে ভালোবাসা থাকে।
কয়েকদিন আগের কথা জহির রায়হানের "স্টপ জেনোসাইড" দেখে প্লেলিষ্টে কিছু জাগরণের গান এড করে- শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি- আর ঘুমের মধ্যে আমি চলে গেলাম ১৯৭১ এ, আমার মাথায় একটা স্বাধীন বাংলার পতাকা লাগানো, যুদ্ধের ময়দানে আমি খুব যুদ্ধ করছি। এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা যে কেউই দিতে পারবে।
আর যেবার মাধবী আসে স্বপ্নে নয়; একবারে আমি জেগেই থাকি- আমার টেবিল,আমার বেড, আমার দেয়াল- সবকিছুর মধ্যেই আচমকা সে চলে আসা শুরু করে- এইতো সেদিন রাতে;তখন ২ টার মতো বাজে...
আমি রুমের লাইট অফ করে অপরাজিতাটার পাশের জানালাটা খুলে দিলাম, বাইরে থেকে নৈশ প্রহরীর বাঁশির শব্দ আসে মাঝে মাঝে, আর মাথার উপর থেকে আসে ফ্যান ঘুরার শব্দ- বসে বসে আমার আগের স্ট্যাটাস- ব্লগে লিখাগুলো পড়তেছিলাম। আমি তখন জীবন্ত একটা মানুষ;একদম ই ঘুম নেই চোখে।
হঠাৎ নৈশ প্রহরীর বাঁশির শব্দ আর থামেনা- কানের মধ্যে একটানা শুধু পু......
অপরাজিতার লতার পাশে জানালাটা মেলে আছে- বাহির থকে হলুদ আলো সেখানে ভিন্ন একটি মাত্রার জন্ম দিয়েছে; এরইমধ্যে আমি কানের ভেতরের শব্দটা পুওওও থেকে ক্যাএএএন...... এ রূপান্তরিত হয়েছে,আর আমি এটিও সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম ওটা প্রহরীর বাঁশির শব্দ ছিলোনা।
অপরাজিতার পাশের জানালা মেলানো, সেখানে পড়েছিলো হলুদ আলো, অপরাজিতার ছায়া পড়েছে আমার সামনের দেয়ালে- জানলার গ্রীল ধরে রাখা লতা ; তার ছায়াটা অন্য কোন মানবীর ছায়া ঢেকে দিলো-
পেছনে জানালার দিকে তাকাতেই- মাধবী তার সমগ্র দেহে উপস্থিত আমার জানালার পাশে, কানের উপর অপরাজিতার ডগাটা গুঁজে দিব্বি দাঁঁড়িয়ে আছে,
আমি কি স্বপ্ন দেখছি?
-না ,আমি এসেছি সত্য।
এতো রাতে, এখনতো তোমার বরের সাথে শুয়ে থাকার কথা।
-দেহটাকেতো শুয়িয়েই রেখে আসলাম। হাসি খুশি থাকি সারাবেলা, মনে করতে চাইনা কিছুই - তবু মাঝরাতে তোমাকে খুব মনে পড়ে। আমাকে ক্ষমা করেছোত।
আচ্ছা তোমার মাথায় সিঁদুর কই???
- আমিতো দেহ নই,আমিতো পোড়ামন।
ফ্যানের শব্দ শুনতে পাচ্ছি, ক্যাননন... শব্দটা শুনা যাচ্ছে না- দেয়ালের ছায়াতে শুধু জানালার গ্রীল আর তাকে জড়ানো অপরাজিতা। লতার ডগাটা দুলছে...
এগুলো স্বপ্ন , আমি এটি বিশ্বাস করতে পারিনা। কেননা আমি জীবন্ত জেগে ছিলাম। আমি সম্মোহিত হচ্ছি কারো আত্মা দ্বারা।
পরশু রাতঃ
ইচ্ছে হচ্ছিলো আজ সে আসুক, লাইট অফ; অপরাজিতার পাশের জানালাটা মেলিয়ে - এবার তাকিয়ে আছি দেয়ালে ,যেখানে ছায়া পড়েছে গ্রীলে জড়ানো অপরাজিতার। অপেক্ষায় রাত শেষ , আসেনি সে...
ফজরের আজানের পরপর-
চোখে হালকা ঘুম এসেছে-
এরই মধ্যে টের পেলাম সেই উষ্ণতার। আমার পাশে এসে কেউ বলছে, আঙুলের ভাজে আঙুল রেখে হাতটা সেইভাবে আবার ধরবে একটু সময়ের জন্যে???
তুমি এসেছো?
-আমিতো তোমার সাথেই থাকি, হঠাৎ নীরব হয়ে যাই শুধু।
[তখন তার হাত ধরে আছি আমি, সে যখন পাশে বসে থাকে একটা উষ্ণতা অনুভব করি, কিন্তু তার নাকের প্রশ্বাসে বের হয় ঠান্ডা বাতাস- আর তার হাত হয়ে থাকে হিম শীতল]
আমি কিন্তু তোমাকে অনেক ভুলে গেছি, তোমাকে ভেবে আগে কান্না আসতো,এখন একদমই আসেনা, তোমার বিয়ের দিনেও আমার কোন খারাপ লাগা ছিলোনা।
- এই যে আমার ছায়া, তোমার উপর দিয়ে রাখি বলেই আমাকে ভুলতে পারোনা, আমার অন্তঃমন যখন আর তোমাকে মাঝরাতে সঙ্গ দিবেনা- ক্রমে ক্রমে বদলে যাবে তুমি,তুমি ভুলে যাবে সব।
তবে তুমি এভাবে আসো কেন প্রতিবেলা? আমার কষ্ট জীবন্ত রাখতে?
-এইরকমই ভাবো তুমি? আরে, তুমি যে আমায় জড়িয়ে থাকো সারাবেলা, নিজের মনটাকে তো ভাসিয়ে দিয়েছো, খবর রাখোনা নিজের মনের। প্রতি রাতে আমার দেহ থেকে আত্মাটাকে টেনে কে নিয়ে আসে ,হুম??
প্রশ্ন রেখে চলে গেলো সুবহে সাদিকের সাথে, জানিনা অভিমান করেছে কিনা- জানিনা আমার মন জিদ করে আছে কিনা। না আমি তাকে আর ডাকি, না সে আর আসে...
বাইরে আলো বেড়েছে- জানালার গ্রীল ধরে রাখা অপরাজিতার ভেতর মিশে গেছে কেউ নাকি চলে গেছে...
সম্মোহনঃমাধবী চলে গেছে...