একটি গল্প লেখব বলে বসলাম। জীবনের গল্পটা একবার লিখা দরকার। এক একটা জীবনের গল্প এক একটা মহা কাব্য। কিন্তু কিভাবে শুরু করি বুঝতে পারছি না। আজকে সকাল থেকে মনটা বেপক খারাপ হয়ে আছে...
একটা ছোট্ট গল্প বলি এর আগে, এটা অবশ্য খুবি সাধারন মানের একটা গল্প... সবারই শোনার কথা। তাও বলতে ইচ্ছা করছে বলেই বলব। গল্পটা এই রকম ...
এক বিরাট বড়লোকের(টাকাওয়ালা...কেউ অন্য কিছু মনে করবেন না) মেয়ে একবার একটা রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহান করলো... তাকে বলা হল যে একটা খুবি দুঃখের একটা গল্প লিখতে হবে। সে একটা ফাটাফাটি টাইপের গল্প লিখলো। সে লিখল... একদেশে ছিল এক খুবি দুখি একটা মেয়ে... যাদের বাসার অবস্থা ছিল অনেক খারাপ . তাদের বাসায় এসিটা ছিল নষ্ট... তাদের কোন ড্রাইভার ছিল না... তাদের ফ্রিজ়টা এ কোন খাবার থাকত না। তাদের আইস্ক্রিম গুলা ছিল নষ্ট... তাদের কাজের বুয়া ছিল না কোন... তাদের বাগানের মালিটা ছিল অলস ... এত দুখি একটা মেয়ে সারাদিন কষ্ট করে জীবন কাটাতো ... ইত্যাদি ... এবং ইত্যাদি।
আসলেই গল্পটা অনেক দুখের... কি বলেন সবাই...
এবার আমি একটা গল্প বলি...
আজকের ঘুমটা রাতে ভালো হলেও মনটা অনেক খারাপ ছিল ... হমম... সেই গল্প বলা যাবে না। তো ঘুম থেকে উঠে ভাবলাম একটু ক্যাম্পাস এ যাই... গেলাম ... কিন্তু খারাপ লাগাটা কমছিল না। টংএ এককাপ চা খেলাম। বিষাদ চা টা এখন এত ভালো লাগে না খেলে মনে হয় কি যেন খাই নি। আহা আর কয়েটা দিন ...
তো একটা ছোটভাই ছিল সাথে ওকে বললাম যে ভাল লাগছে না চল বাসায় চলে যাই। আমাদের গোলচত্তর এ রিক্সা পাওয়া একটা যুদ্ধজয়ের চেয়ে কম না। রোদে দাড়ালাম অনেক্ষন। কিন্তু ওই পর্জন্তই।
একটা রিক্সা কে বললাম “মামা চলেন” ।
সে বলল “মামা একটু রেষ্ট নিতাম...”
বললাম “আপনি রেষ্টনেন আমরা অপেক্ষা করি ...”
বলল “আচ্ছা...”
একটু পরে রিক্সাওয়ালাকে দেখি পকেট থেকে একটা কৌটা বের করল। আমি বললাম “মামা এটা কি?”
বলল “মামা এইটা গুল...”
আমি গুল জিনিসটা আসলে কি সেটা চিন্তা করছিলাম একটু তখন সে বলতে থাকল “মামা দেশের কথা মনে হইলে বা টেনশান লাগলে এইটা নেই...”
আমি তখন বুঝলাম আসলে জিনিসটা কি।দেখলাম আংগুলের মাথায় একটু করে নিয়ে জিহ্বার নিচে রেখে দিল। বললাম “মামা এটাতে কি কাজ হয়... টেনশান কি কমে...?”
সে কোন উত্তর দিল না কিন্তু একটা হাসি দিল... এই টাইপের হাসির অর্থ হা অথবা না দুইটাই হয়।
ও বলতে থাকল “মামা কালকে দেশে চইলে যামু... এইখানে পোষায় না...”
বললাম “বাড়ি কই?”
বলল “লালমনিরহাট... প্রতিমাসে বাড়িতে মাত্র ২০০০ ট্যাকা পাঠানো যায়। বলেন এই টাকায় কি চলে।
আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না।
এই বলে সে পকেট থেকে টাকা বের করল। দেখাল পকেটে তার সারাদিনের আয়... ১৭০ টাকা।
বলল “রিক্সা ভাড়া আর খাওয়া বাবদ প্রতিদিন লাগে ২০০ ট্যাকা”
তার চোখের কোনায় একটা কিছু চিকচিক করে উঠতে দেখলাম। এটাকি গুলের প্রভাব নাকি তার টেনশান না ভুলতে পারার জন্য ... বুঝতে পারলাম না ... কিন্তু আমার চোখের কোনা ও ভারি হবে বলে মনে হচ্ছিল। তাই তাড়াতাড়ি তাকে “বললাম বাচ্চাকাচ্চা কয়টা...?”
বলল “দুইটা... মেয়েটাকে বিয়া দিছি ... আর ছেলেটা ক্লাস ৬ এ পড়ে।
পরে সে বলল কি কি মেয়ের জামাই কে দেবার কথা ছিল। সে কি দিতে পেরেছে তাও বলল। তবে না দেবার পাল্লাটাই বেশি ভারি ...
আমি বললাম “বিয়া কবে দিছেন?”
বলল “৪ বছর হয়ে গেছে”
আমি বললাম “ও... জামাই কি এখনো ওই জিনিস চায়...? ”
সে বলল “আসলে জামাইকে তো দিতে পারি নাই ... জামাই বলে আমাকে তো আর দেননি আমার বাচ্চাটাকেই দেন... কালকেই বাড়িতে ঝগড়া হইসে এই নিয়া... দিতে তো হবেই .. ”
বলে সে আমার চোখের দিকে তাকাল। আমি আর তার দিকে তার চোখের দিকে তাকাতে পারি নি। আমি মাটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কি বললব বুঝতে পারছিলাম না। পাশের ছোটভাইটা বলল মামা চলেন।
রিক্সা চলল তার গন্তব্যে... আমি চিন্তা করছিলাম যে জীবনের গন্তব্য কই?
মন খারাপ আরো খারাপ হয়ে গেল...
বাসার কাছে নেমে রিক্সাওয়ালাকে ১০০ টাকার একটা নোট দিয়ে বললাম “মামা রেখে দেন”
দিতে নিজের কাছেই খারাপ লাগছিল... মনে মনে বললাম ... “আমাদের ক্ষমা কর... ক্ষমা করো এই সমাজ ব্যাবস্থাকে...”
গল্পটা অনেক হাসির তাই না ????????? কি বলেন সবাই...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




