somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১লা জানুয়ারি, জন্মদিন, জন্ম নিবন্ধণ এবং নামের আগে গণহারে “মোঃ” প্রসঙ্গ

০১ লা জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদিও মানুষ একবারই জন্মায়- এবং এ নিয়ে কারো কোন সন্দেহই নেই, তবুও বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন আজ আমার দ্বিতীয়(ফেইক) জন্মদিন এবং এই জানুয়ারী মাসেই আমার আরেকটা(সত্যিকারের) জন্মদিন আছে!!! কেউ আবার এটা আমার দ্বিতীয় জন্ম বার্ষিকী মনে করবেন না যেন! যাহোক বাংলাদেশে জন্মালে ধর্মীয় জ্ঞানে আতেল কিছু লোকের কারণে মুসলিম ছেলেদের নামের আগে বাই ডিফল্ট “মোঃ” যুক্ত হয়ে যায়। এদেরকে জিজ্ঞাস করলে বলে যে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যেহেতু নামের আগে "শ্রী" যুক্ত করে লিখে থাকে, তাই মুসলিমদের নামের সাথে মুসলিম পরিচিতির জন্য মোহাম্মদ জুরে দেওয়া জুরুরি। অথচ আরব দেশেও আমাদের দেশের মতো নামের আগে এরকম গণহারে 'মোহাম্মদ' লাগানো হয় না, "মোঃ"-এর মতো সংক্ষিপ্ত রুপেতো নয়ই। কারো নামে যদি মোহাম্মদ থাকে তাহলে তা বানান করে পুরোটাই লেখা উচিত, কোনভাবেই সংক্ষিপ্ত রুপে নয়।

আমাদের দেশের অনেকের ধারণা মুসলিম ছেলে-মেয়েদের নামের আগে অতি আবশ্যক ভাবে “মোহাম্মাদ” বা মোসাম্মৎ থাকতে হবে। এটা আবার লেখা হয় ‍‍"মোঃ" বা "মোসাঃ" দিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে যার কোন অর্থই থাকেনা। একই ভাবে আমাদের দেশের অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী কিছু স্কুল কেরানিদের কল্যাণে স্কুলের ক্রমিক সারিতে আগের দিকে থাকা ছেলে/মেয়েদের বাই ডিফল্ট জন্ম তারিখ হয়ে যায় ১ লা জানুয়ারি!!

আমার বেলায় জন্মদিনের ব্যাপারটা আরও একটু বেশীই পরিহাসের ব্যাপার। কারণ আমার সত্যিকারের জন্ম তারিখও এই জানুয়ারীতেই। স্কুল জীবনের পড়াশোনা করেছি আর দশটা ছেলের মতো গ্রামের স্কুলে। বাবা-মা ‍তার ছেলের নাম আর জন্মদিন নিয়ে চিন্তা করার মতো সচেতন ছিলেন না। স্কুলের শিক্ষরাও কখনও কোন ছাত্রের ভর্তির সময় তার নামের সঠিক বানান এবং জন্মদিন জিজ্ঞাসা করেছেন বলে দেখিনি, এমন কি গ্রামের স্কুলগুলো থেকে প্রাইমারী শেষ করা একটি ছেলে/মেয়েকে কোন প্রকার সার্টিফিকেটও দেওয়া হতো না তখন। এখনও গ্রামের স্কুল গুলোর অবস্থা এরকমই। মোদ্দাকথা নামের বানান এবং জন্ম তারিখ সঠিক ভাবে লেখার ব্যাপারে যাদের সব চেয়ে বেশি সচেতন হওয়া উচিত, তাদের ই এই ব্যাপারে কোন মাথা ব্যাথা নাই।

এসএসসি পরীক্ষার জন্য নবম শ্রেণীতে যখন আমার রেজিস্ট্রেশন করা হয় তখন আমার স্কুলের ‘কেরানি স্যার’ তার ইচ্ছামতো আমার নামের আগে “মোঃ” এবং আমাকে একটা জন্ম তারিখ দিয়ে দিয়েছেন, আর সেই দিনটা হলো ১লা জানুয়ারি!! আমি ছিলাম ক্লাশে ফার্স্ট বয়, আমার কপালে ১ লা জানুয়ারি জন্মদিনটা জুড়ে গিয়েছে। ব্যাপারটা এমন যেন আমার জন্ম হয়েছে তার ফরমায়েশ মতো দিনে। X((X((X((

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শিক্ষিত অধিকাংশ বাংলাদেশিদের জন্ম তারিখ সনদপত্রে লেখা আছে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীর মধ্যে। এসএসসি পরীক্ষার জন্য নিবন্ধণের সময় এই জন্ম তারিখগুলো ইচ্ছামতো সাজানো হয়, এবং এতে চেষ্টা থাকে কি করে বয়স কম দেখিয়ে ছাত্রটিকে এসএসসি পাস করানো যায়। বাংলাদেশে সরকারি চাকুরির জন্য আবেদন করার বয়সসীমা ৩০ বছর। শিক্ষা-ব্যবস্থায় রাজনীতি নামক যে বিষফোড়া রয়েছে তার কল্যাণে যে সেশন-জট বাই ডিফল্ট পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের কপালে অবধারিতভাবে জুড়ে যায়, তার কারণে শিক্ষকরা চান তাদের ছাত্ররা কাগজে-কলমে তাদের ছাত্ররা কম বয়স নিয়ে পাশ করুক। তাই রেজিস্ট্রেশনের সময় ছাত্রদের বয়স ইচ্ছামতো কমিয়ে দেয়া হয়। এতে ভবিষ্যতে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকুরীতে চেষ্টা করতে সুবিধা হয়। আর এই সুবিধাটি ছাত্রকে পাইয়ে দিতে গিয়ে গ্রামের স্কুলের শিক্ষরা তাদের অজান্তেই অধিকাংশ ছাত্রের বেলায়ই ভবিষ্যতের একজন সম্ভাবনাময় ব্যক্তি তথা ছাত্রটির জন্মদিন এমনভাবে লিখে দেন যে সেই ছাত্রটি বাস্তব জীবনে কর্ম ক্ষেত্রে গিয়ে এই সুবিধার অসুবিধাটা টের পান।

কেউ হয়তো আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি আমার প্রকৃত জন্ম তারিখটাই বলবো। কিন্তু সারা জীবনের জন্য আমার জাতীয় পরিচয় পত্র, একাডেমিক পরিচয় পত্র, সকল সনদপত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ সকল আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে আমার এই মিথ্যে জন্ম তারিখ লেখা হবে, এবং প্রদর্শিত হবে। ব্যাপারটা যে কতোটা মান-হানিকর কেবল মাত্র এর ভুক্তভোগীরাই জানেন। বছরের প্রথম দিনে যে কেউ জন্মাবে না তা নয়। কিন্তু যখন গণহারে সবার জন্মদিন একই তারিখ হয়ে যায় তখন কি এই মিথ্যার বেসাতি খুব নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়ে না?

শোনা যায় ভিনদেশিরা আমাদের বাংলাদেশিদের জন্মতারিখ এবং নাম নিয়ে রীতিমত ব্যঙ্গ করে থাকে। কারণ তাদের কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কিংবা চাকুরীর প্রয়োজনে যখনই বাংলাদেশিদের কাগজপত্র দেয়া হয় তারা দেখে বাংলাদেশিদের অধিকাংশেরই নামের সাথে বাই ডিফল্ট “MD.” দুটো অক্ষর আছে যার অর্থ তাদের কাছে Master of Medicine! আর সবারই জন্ম তারিখ মোটামুটি জানুয়ারি এবং তা আবার অনেকেরই বছরের প্রথম দিন!!!

মঈন উদ্দিন আমল থেকে জন্ম নিবন্ধনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাস্তবে জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। যে কেউ আরো আছে স্কুল গুলোতে ভর্তির সময় বা রেজিস্ট্রেশন করার সময় নামের সাথে গণহারে “মোঃ”, “মোসাঃ” জুড়ে দেওয়ার ব্যাপার। আসল সমস্যা টের পাওয়া যায় বাস্তব জীবনে যখন এইসব নাম নিয়ে কোন কাজ করতে গিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×