somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদিতির সাথে আমার বিয়েটা হয়েছে পারিবারিক ভাবেই. (গল্প) লিখক তাইমুর মাহমুদ শমীক)

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে জয়েন করবার পর আব্বা আম্মা ধরেবেঁধে আমার বিয়েটা দিয়ে দিলেন।
মেয়ের ফ্যামিলি ব্যাক গ্রাউন্ড ভালো।
 মেয়ে নিজে সংস্কৃতি মনা। গান, নাচে পারদর্শী। রূপবতী, মিষ্টি হেসে কেমন করে যেন কথা বলে। দেখতে ভালো লাগে। এদিকে আমি কথা বলি কম। বলবার কথা খাতা কলমে লিখে ফেলি। দিন শেষে সেটা কিভাবে যেন গল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। অদিতি আমাকে প্রথম চুমুটা খেয়েছিলো ছাইপাশ গল্প পড়েই।

বাসর রাতে জড়ো সড়ো হয়ে বসে ছিলো। আমি তাকে জীবনানন্দ দাশের কবিতা শুনিয়ে সহজ করি। খুব ধকল গেছে বেচারির ওপর সারাদিন। একটা সময় নিশ্চিন্ত ভবঘুরে পথিকের মতো সে আমার কোলে দামী শাড়িসমেত মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। আমি তার কপালে চুমু খেয়ে নিজের ফেলে আসা ব্যাচেলর জীবনের কথা ভাবতে থাকি। এই মেয়ে আমাকে শাড়ির আঁচলে বেঁধে রাখবে ভেবে মন কিছুটা খারাপ হয়। আমি হলাম নগরীর কাক পাখি। এখানে সেখানে ছন্নছাড়া ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অগো ছালো চুলে ক্লাস নিতে যাই। প্রথম প্রথম আমার কলিগরা বিব্রত বোধ করতো। এ আবার কেমন স্যার! কথায় কথায় সাহিত্য টেনে নিয়ে আসে। টিচার্স রুমে ছাত্রছাত্রীদের ভীড়। তারা কখনো স্যারের কাছে আসে তাদের নিজস্ব প্রোডাকশন হাউস থেকে শর্টফিল্ম করবে, তাই স্ক্রিপ্ট লিখে দেবার আবদার নিয়ে। কখনো ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে। অদ্ভুতুড়ে স্যারকে নিয়ে হয়েছে জ্বালা। তিনি কাউকে নিরাশ করেন না। কাউকে ঝাড়ি মেরে ফিরিয়ে দেননা। চুপচাপ থাকেন বেশিরভাগ সময়। আর হাসেন মিটিমিটি।

আমার একটা বড়গল্প ছাপা হয়েছে দ্বিতীয় আলো পত্রিকায়। গল্পের প্রধান নারী চরিত্রের নাম আশা। এই আশাকে আমি চিনি। আশাও আমাকে চেনে। সে আমাকে ডাকে স্যার। আমি তাকে ডাকি এই মেয়ে। ক্লাসে প্রথম যেদিন তাকে দেখি, ভয়াবহধরণের চমকে উঠতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিই। বছর তিনেক আগে নীরা মারা গেছে। আমার প্রেমিকা নীরা। আজিমপুর গোরস্থানে ঠিক কোথায় তার কবরটা আছে, আমার মুখস্ত। তার অনাকাঙ্খিত দেহমরণ আমাকে গল্পকার বানিয়েছে। কতো কতো রাত তার কথা ভেবে শহর হেঁটেছি। বুয়েটসংলগ্ন পলাশিবাজারের লোকাল দার্শনিক মারজান পাগলার কাঁধে হাত রেখে শেয়ার করেছি আমার উপচে পড়া দুঃখ কথন।

আজ সেই নীরা আশা রূপে গালে হাত দিয়ে আমার ক্লাসে বসে আছে। চোখের জল বড় বেয়াদব। আমার চোখে অবাধ্যের মতো এসে সে ভীড় করে। আমি সেদিনের ক্লাসটা ঠিকভাবে নিতে পারিনি।
বাসায় ফিরে জামাই আদর খাই। অদিতি বড় ভালো মেয়ে। আমার প্রিয় খাবারগুলো আশ্চর্য দক্ষতায় মায়ের মতো করে রান্না করে রাখে। ব্যালকনিতে বসে ঘন্টাখানেক বিষন্ন গোধুলির আকাশে তাকিয়ে থাকতে দেখে অদিতি শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে আমাকে ঝেড়ে কাশতে বলে। আমি বিয়ের আগেও ঝেড়ে কেশেছি।
নীরার কথা তাকে খুলে বলেছি সব। এবার নীরা আশা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে শুনলে তার নতুন বউসুলভ ভদ্রতা হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য কেটে যাবে। এক বিচিত্র বাঙালি কষ্টে আমি নিভৃতচারী আরো নিজের মাঝে গুটিয়ে যেতে থাকি।


আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট, ইসলামি পরি ভাষায় যাকে বলে মাশাল্লাহ। তারা গবেষণা করে বের করে ফেললো, আমার গল্পের প্রধান নারীচরিত্র আমার ছাত্রী। সে সারাক্ষণ আমার ব্যক্তিগত ডেস্কে বসে থাকে। আমি তাকে জন কিটস এর কবিতা শুনিয়ে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা করি। তাকে নিয়ে শিশুপার্কে ট্রেনে চড়ি। লালবাগে কেল্লার চূড়ায় তাকে যত্ন করে বসিয়ে মিস্টার টুইস্ট চিপস খাইয়ে দেই। এদের মাঝে একজন বলছিলো, আশার ব্যাগে আমার কিনে দেয়া ফার্মেসিতে পাওয়া যায় বিশেষ প্যাকেটও পাওয়া গেছে।

আমি অস্বীকার করবোনা, আশাকে দেখলে আমার নীরার কথা মনে পড়ে। ক্লাস নেবার সময় মেয়েটা আমার দিকে অদ্ভুত সরলতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। আমি যখন বুঝতে পারি, আমিও তাকিয়ে আছি তখন চোখ ফিরিয়ে নিই। কিন্তু তাই বলে জাদুকরী বেলুন, রোমান্টিক ট্রেন, প্রেমে বুঁদ হওয়ার কবিতা, লিটনের ফ্ল্যাট ওসব নিছকই বানোয়াট কথা। আমি এক গোবেচারা বিবাহিত পুরুষ। আমাদের প্রেমে পড়তে নেই। আমাদের হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকার কথা মনে পড়তে নেই। ফিরে এসেছে ওর কথা ভেবে ওকে নিয়ে গল্প লিখতে নেই। আমাদের ক্লাস শেষে বাজার করে বাড়ি ফিরতে হবে। নাভির উপর লুঙ্গি পড়ে ভাবতে হবে সংসার গোছাবার কথা। মাঝে মাঝে আশার দিকে তাকিয়ে নীরাকে ভোলার চেষ্টায় অদিতিকে আদরটাদর করে বংশবৃদ্ধির অশুদ্ধ কল্পনায় আমার একটা জীবন কেটে যাবে ঠিক।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৭
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×