অর্পা আমার জন্য চা বানাতে বানাতে শুকিয়ে গেছে। আমি খুব চা খাইতো। তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো হয়তো লেখক স্বামীকে বিয়ে করা। চা বানিয়ে বেচারির একটা জীবন কেটে গেলো। যখনই আমার সাথে দুটো চারটে সুখদুঃখের কথা বলতে আসে সে, দেখে আমি মুখ গুঁজে টেবিল চেয়ারে বসে লিখছি। কাহাতক আর অমন থিয়েটারের দৃশ্য সহ্য করা যায়।
তবু রক্ষা সে ভদ্রলোকের মেয়ে। আমায় তেমন গালমন্দ করেনা। সেই যখন বিয়ের আগে প্রেম করতাম, অর্পা চিপস কোল্ডড্রিঙ্ক পছন্দ করতো। বছর ঘুরলে আশীর্বাদ কোলে আসবে সে খবর নেই! এখনো প্রতি বিকেলে লুঙ্গি চেঞ্জ করে প্যান্ট পায়ে গলিয়ে বাসার নিচে দোকান থেকে ওসব ছাইপাশ কিনে আনতে হয়। বেচারি শখ করে খায়। ভারি মায়া লাগে আমার। জানি রাতে ডাল আলুভর্তা আইটেম। তবু জীবনটাকে সুন্দর মনে হয়।
একটু একটু করে পেটের আকৃতিতে পরিবর্তন আসছে মেয়েটার।
নিজেকে বাবা বাবা লাগে। এই তো সেদিনও স্কুলে যেতাম। মা লালশাক দিয়ে ভাত খাইয়ে দিতো। ছোটবোনটা পেছন থেকে দাদাই বলে গলা জড়িয়ে ধরতো আমার। আজ নিজের ঔরসজাত কেউ গুটুগুটু পায়ে হাঁটবে, তাল সামলাতে না পেরে গলা জড়িয়ে ধরবে সে স্বপ্ন দেখি। জীবনটা এতো দ্রুত কেটে যায় কেন? শৈশব বুঝতে না বুঝতেই কৈশোর পেরিয়ে যৌবন এসে গেলো। আজকাল দায়িত্ববান মহাপুরুষের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলি।
আমি তেমন ধর্মে কর্মে বিশ্বাস করিনা। জ্ঞানীদের মোটা মোটা বই পড়ে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে মাথা বিগড়েছে। ওটিতে যখন অর্পা ধ্বংসের কষ্টে সৃষ্টির জন্যে অপার হয়ে কাতরাচ্ছিলো, আমি শক্তপুরুষ হু হু করে কেঁদে ফেলি। ডাক্তার আমার কোলে মেয়েকে তুলে দেয়। বিশ্বাস অবিশ্বাস ভুলে আমি ডাক ছেড়ে আজান দেই। কৃতজ্ঞ চোখে অর্পার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলি, আমি আজ থেকে সারাজীবন নিজ হাতে তোমাকে চা বানিয়ে খাওয়াবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৩৮