
মনা মামা ছিলেন একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন, আর মনা মামা তার বাবার ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করতেন। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল অনেক টাকা কামানো। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি তিনি রাজনীতির সাথেও জড়িত ছিলেন।
বাংলাদেশের অন্যতম দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে তিনি বিরোধীদলের একজন কর্মী ছিলেন। রাজনীতির প্রতিহিংসার কারণে তিনি অনেকবার নির্যাতিত হয়েছেন। তার পরিবার তাকে রাজনীতি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেও, মনা মামা তাদের কথা শুনতেন না। রাজনীতি তার নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল। রাজনীতির জন্য তাকে ২-৩ বার জেলেও যেতে হয়েছিল।
মনা মামার এই রাজনীতির জন্য তার পরিবার অনেকভাবে হয়রানির শিকার হয়। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে, বিরোধীদলের কর্মী হওয়ায়, আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাকে কঠোরভাবে দমন করতে চায়। সরকার দলীয় লোকেরা তাকে আক্রমণ করে, যার ফলে তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে বাধ্য হন। তার পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলাটি নিতে আগ্রহী ছিল না।
পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে দেশ ত্যাগ করার কথাবার্তা চলতে থাকে। মনা মামা শুনেছিলেন যে অবৈধ পথে আমেরিকা যাওয়া যায়। ঢাকার নাটু নামক এক দালালের সাথে যোগাযোগ হয়। দালাল তাকে আমেরিকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৩০-৩৫ লাখ টাকা দাবি করে। পরিবার থেকে সম্পত্তি বিক্রি করে প্রথমে তিন লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
দালাল মনা মামাকে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে ব্রাজিলের ভিসার জন্য চেষ্টা করে। এক মাস ইন্ডিয়াতে অবস্থানের পর ব্রাজিলের টুরিস্ট ভিসা ব্যবস্থা করে তাকে কলকাতা পাঠানো হয়। দিল্লিতে এক হোটেলে রাখার পর তাকে ইতুপিয়া এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল পাঠানো হয়।
ব্রাজিলে পৌঁছানোর পর নান্টু দালাল তাকে পেরুর বর্ডারের কাছে একটি ফ্লাইটে পাঠায়। পেরু থেকে তাকে ইকুয়েডর পাঠানো হয়। ইকুয়েডরের বর্ডারের কাছে তাকে দুইদিন বিশ্রাম দেওয়ার পর কলম্বিয়া নিয়ে যাওয়া হয়।
কলম্বিয়া থেকে পানামার উদ্দেশ্যে একটি নদী পাড়ি দিতে হয়। তারপর পানামার জঙ্গল পাড়ি দেওয়ার জন্য তিন থেকে চারদিন হাঁটতে হয়। পানামার একটি আর্মি ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর তাকে কোস্টারিকা বর্ডারে নিয়ে যাওয়া হয়।
কোস্টারিকার ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষে তাকে নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস ও গুয়েতেমালা পার করে মেক্সিকো নিয়ে যাওয়া হয়। মেক্সিকো থেকে আমেরিকার বর্ডারে ঢোকার চেষ্টা করার সময় আমেরিকান বর্ডার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
জেলে এক মাস থাকার পর ইন্টারভিউতে সফল হলে তাকে আমেরিকায় থাকার প্রাথমিক অনুমতি দেয়া হয় এবং দশ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয়। পরিবারের সহায়তায় জরিমানা পরিশোধ করে তিনি আমেরিকায় আশ্রয় পান।
মনা মামা নিউইয়র্কে একটি দোকানে কাজ শুরু করেন এবং তার নতুন জীবনের সূচনা হয়। শেষ পর্যন্ত তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় এবং তিনি সফল হন। মনা মামার ধৈর্য এবং স্বপ্ন তাকে নতুন জীবনে সফলতা এনে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



