somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বিনোদিনী টী স্টল

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অর্ধবয়সী অথচ যুবকের মতো শক্তিশালী ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ীর সামনের সীটে অতি উৎসাহি চোখ জোড়া নিয়ে বসে আছি আমি। আবিরের সাথে অনেকটা জোর করেই সামনের আসনটা দখলে নিয়েছি। তার সাথে অবশ্য চুক্তি হয়েছে হোটেলে ফেরার পথে সামনের আসনটা অবশ্যই তাঁর দখলে দিয়ে দিতে হবে। হাতের ক্যানন ক্যামেরা দিয়ে একের পর এক ছবি তুলছি ইচ্ছে মতো। গাড়ীটা এতো আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে সহজেই চলে যাচ্ছে যে, মনে হচ্ছে কোন একটা বিষধর সাপ বুঝি বড় কোন কদম গাছের ডালের উপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে মনের আনন্দে ছুটছে। আমাদের সামনের পাহাড়গুলোর মাথা আর বুক কেটে তৈরি সরু রাস্তাটা বড় কোন অজগর সাপের মতোই দেখাচ্ছে। ছুটছে তো ছুটছেই, অজানার পথে।

গাড়ীর আসন থেকে নিচের দিকে তাকালে বুকটা ধকধক করে উঠে। এই বুঝি শেষ! শক্ত হাতে স্টিয়ারিং এ ধরা উঠতি বয়সী ড্রাইভার বলে উঠল- সাহেব কী ভয় পাইতেছেন ? আমি বললাম-না, না। ভয়ের কী আছে। আমাদের দেশেও তো এই রকম রাস্তা রয়েছে। তোমাদের যেমন আছে চেরাপুঞ্জি, দার্জিলিং ; আমাদের আছে নীলগিরি, নীলাচল আর চিম্বুক পাহাড়। ড্রাইভার আমার কথা শুনে আরো দ্রুত বেগে গাড়ী টানতে থাকে। পিছন থেকে আবির চিৎকার করে বলে উঠে- ‘আরে ভাই আস্তে যাও না। আমাদের জন্য না হয় তোমার মায়া নেই, তোমার গাড়ীর জন্য তো একটু মায়া রাখা উচিত।’

আবির আর আমার ক’দিনের জন্য বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিংয়ে আসা। সারাদিন দু’জন মিলে এই পাহাড় থেকে ঐ পাহাড়ে গাড়ী নিয়ে ছুটাছুটি করছি বাঁধনহীন পাখির মত। সারা দিনের পাহাড় আর মেঘ দেখার ক্লান্তি নিরিবিলি এক হোটেলের রুমে রাতের ঘুমের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটে। আমরা যে হোটেলে উঠেছি সেটির খাবারের দাম বেশী হওয়ায় আবির খোজাখুজি করে পাশেই একটা কমদামের রেষ্টুরেন্ট আবিস্কার করেছে। নাম, বিনোদীনি টী স্টল। নামে টী স্টল হলেও তাতে কিন্তুু ভাতের ব্যবস্থা রয়েছে।

আজ রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসার সময় আবির আমার দিকে তাকিয়ে বলল-একটা বিষয় খেয়াল করেছিস ?
আমি একটু ব্যঙ্গ করে বললাম
- বিষয় তো অনেকই আছে মামা, তাই নির্দিষ্ট করে বল্ ।
- ঐ যে ‘বিনোদিনী টী স্টল’ এর ম্যানেজার মেয়েটা।
- হুম, কি হয়েছে মেয়েটার ?
- আচ্ছা বলতো সে আমাদের দিকে এমন করে তাকায় কেন ?
আমি হেসে হেসে বললাম, ‘আরে আমাদের দিকে না, বল শুধু তোর দিকে।’

(২)
পরদিন সকালবেলা। বিনোদিনী টী স্টলে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে খেয়াল করলাম আসলেই মেয়েটি আমাদের খেয়াল করছে। আমার চোখে চোখ পরতেই কেমন জানি একটু মুচকি হাসি দিল সে। কিছুটা লজ্জায় আমার চোখের দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য হলাম।
-আপনি কী বাংলাদেশ থেকে এসছেন ?

আমার কাছে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটা একটু শীতল জলের মত হৃদয়ে স্পর্শ করলো। তাকিয়ে দেখি ঐ মেয়েটি। আমাদের টেবিলের পাশেই দাঁড়ানো। তাঁর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
- হ্যাঁ, বাংলাদেশ থেকে। তবে আপনি জানেন কিভাবে ?
- এই ক’দিন আপনাদের দু’জনকে একটু খেয়াল করছিলাম। প্রতিদিনই এই টেবিলটায় বসেন আপনারা। আপনাদের কথাগুলো মাঝে মাঝে আমার কানে ভেসে আসছিল। তাই ধারণা করছি আপনারা বাংলাদেশেরই লোক।

এবার আমার তাঁর সাথে আরো কথা বলতে ইচ্ছা করছে । আমি বললাম,
- আপনি বাংলাদেশে কখনও গিয়েছেন ?
- যাইনি, তবে আমি যেন একটা বাংলাদেশেই আছি।
- আপনার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
- আসলে আমাদের বাসায় ছোট একটা বাংলাদেশ আছে। আয়তনে খুবই ছোট। কিন্তুু ভালবাসায় বিশাল।

আমি তাঁর কথার কিছুই বুঝতে পারছিনা। আজ স্টলটাতে এত ব্যস্ততা যে, আমার আর কথা বাড়ানোর ইচ্ছা হয়নি। কাল কথা হবে- বলে মেয়েটার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলে চলে এলাম। তবে আমার কানের মধ্যে ‘ছোট বাংলাদেশ’ শব্দাটা যেন গেথে আছে। আমি এর শিকড় টেনে তুলতে কিছুতেই পারছিনা যেন।

(৩)
আবিরকে আজ কিছুতেই ঘুম থেকে উঠানো যাচ্ছে না। গতকালের জার্নিটা শরীরের প্রতিটা হাড়কে নাড়িয়ে দিয়েছে ঠিকই তবে চা আর মেয়েটার না বলা কথাগুলো শুনার নেশা আমাকে পেয়ে বসেছে। তাই আবিরকে উঠানো যে প্রায় অসম্ভব, তা বুঝতে পেরে আমি একাই রওয়ানা দিলাম ‘বিনোদিনী টী স্টল’ এর দিকে। সকালের দার্জিলিংটাকে অসাধারণ লাগছে আজ। যেন ঘুমকাতুরে কোন কিশোরীর টগবগে চোখ।

আমাকে দেখেই চেয়ার থেকে উঠে গেল মেয়েটি। মুখে একটু হাসি নিয়ে ইশারায় তাঁর পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে বলল- বসুন প্লীজ। আমিও একটু হাসিমুখে বললাম, আপনার নামটা কিন্তু জানা হয়নি।
- অহ, আমি মায়া।
- আপনি গতকাল আমাদের বাংলাদেশ নিয়ে কী একটা বলতে চেয়েছিলেন তাই আজ শুনতে আসলাম।
- হুম, আমি আমাদের বাসার চোট্ট এক বাংলাদেশের কথা বলছিলাম। আপনি যদি আরো জানতে চান বা দেখতে চান তাহলে আমাদের বাসায় আসতে পারেন।
আমি কোন কিছু না ভেবেই বলে উঠলাম- চলুন, আমি এখনই যাব।


চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে দু’জনই পাশাপাশি হাটতে শুরু করেছি। মায়া আমার কাছে জানতে চাচ্ছে, কেন আমাদের দার্জিলিং আসা, আমি কি করি, বাড়ীতে কারা আছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। হাটতে হাটতে একটা বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালাম আমরা। টিনের চালের বাড়ীটার যেন পুরোটাই কাঠের তৈরী। সামনের দিকটাতে সারি সারি ফুলের টব গম্ভীর ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমার একটা গাদা ফুল ছিড়ে নেওয়ার ইচ্ছে হলো। কিন্তু পারিনি। হাত দিয়ে আলতো করে ছোঁয়ে দিলাম শুধু। মায়াকে জিজ্ঞেস করি- এই ফুলগুলো এত বড় হওয়ার রহস্যটা কি ?

মায়া আমাকে তাদের সাজানো-গোছানা ড্রয়িং রুমটাতে বসিয়ে ভেতরে চলে গেল। আমি রুমটার প্রতিটি জিনিস খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি। বেতের তৈরি সোফা সেটটি যেন আমাদের বাসারটির মতই। দেয়াল থেকে শুরু করে পর্দা পর্যন্ত সবকিছুতেই সবুজের মিশ্রণ। মনে মনে ভাবি, হয়তো মায়া সবুজ খুব পছন্দ করে। শোকেজে রাখা আমাদের বাঙ্গালী লেখকদের বই গুলো যেন আমার দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে আছে। আমি যেন তাদের আত্মার আত্মীয়।

আসো ‘পিসিমা’ শব্দটি কানে আসতেই তাকিয়ে দেখি মায়া রুমটাতে প্রবেশ করছে। তার ঠিক পেছনেই দাড়িয়ে আছেন ধবধবে সাদা কাপড় পড়া একজন বয়স্ক মহিলা। ফর্সা আর লম্বাটে মুখমন্ডল। মায়াবী। দেখেই কেমন যেন শ্রদ্ধায় মাথা নত হওয়ার মত শারীরিক অবয়াবয়। আমি বসা থেকে উঠতে চাইতেই মায়া বলে উঠল- বসেন, বসেন।

রুমটাতে যেন কঠিন নীরবতা আচ্ছন্ন করেছে। কেউ যেন কথা বলার কোন প্রসঙ্গ খুঁজে পাচ্ছি না। আমি হঠাৎ বলে উঠলাম, ‘মায়া, আপনি না ,বলেছেন আমাকে ছোট্ট বাংলাদেশ দেখাবেন।’ মায়া বলে উঠল, অবশ্যই দেখাব। আগে আমার পিসিমার সম্পর্কে একটু জানুন।
- উনার নাম বিনোদিনী। আমাদের টী স্টলের নামটা খেয়াল আছে ?
- হ্যাঁ, বিনোদিনী টী স্টল।
- ঠিকই বলছেন, উনিই সেই বিনোদিনী। আমার আদরের পিসিমা। এবার আপনাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসার কারণটাও বলছি।
আমি খেয়াল করলাম মায়ার পিসিমা চুপচাপ বসে আছেন। আমার দিকে কেমন জানি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন তিনি। মায়া তাঁর দিকে তাকিয়ে বলল- পিসিমা, উনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন।

এবার মায়া আমার দিকে চোখ ফিরিয়ে বলতে থাকে-
১৯৭১ সাল। আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এপারে সহায় সম্বলহীন লক্ষ লক্ষ শরনার্থী আশ্রয় নেয়। এই পিসিমার জন্মস্থান আপনাদের বাংলাদেশেই।
আমি মায়াকে কথাটুকু শেষ করতে না দিয়েই বলে উঠলাম- বাংলাদেশে !
- হ্যাঁ, বাংলাদেশে।

তারপর একটু দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে থাকে সে।
লক্ষ লক্ষ শরনার্থীর সাথে এই পিসিমা তাঁর এক বছরের বাচ্চা আর স্বামীকে নিয়ে শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। আমার বাবা তখন ছোটখাটো এক পুলিশ অফিসার। যুদ্ধের সময়টাতে বাবা একটা আশ্রয় কেন্দ্রে কর্তব্যরত ছিলেন। চারদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য তখন কলেরা রোগের মহামারি লেগে যায়। একদিন পিসিমার স্বামী কলেরায় আক্রান্ত হন। দুদিন পর মারা যান তিনি। ক’দিন যেতে না যেতেই পিসিমার আদরের ধন বাচ্চাটাও মারা যায়। একা হয়ে যান পিসিমা। সম্পূর্ন একা। চারদিকের লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝেও একা। যে স্বামী ছিল তার চলার সঙ্গী, যে বাচ্চাটা ছিল নতুন স্বপ্ন দেখার ভরসা, তাদের হারিয়ে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে যান। অচেনা পথে হাটতে থাকেন একা একা।

আমি মায়ার কথা শুনতে শুনতে আনমনে কী যেন ভাবতে থাকি। পিসিমার দিকে চোখ যেতেই দেখি, তিনি শাড়ির আচল দিয়ে চোখ মুছার চেষ্টা করছেন।
আমি বললাম- তারপর।
- তারপর, বাবা পিসিমাকে রাস্তায় পেয়ে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে আসেন। এবং আজ পর্যন্ত বাবা পিসিমাকে আপন বোনের মতই ভালবাসেন, শ্রদ্ধা করেন।

(৪)
‘এবার আসুন আপনাকে পিসিমার রুমটা দেখাচ্ছি’ বলেই মায়া আমাকে পাশের রুমটায় নিয়ে গেল। রুমটাতে ঢুকতেই একদিকে বিশাল এক পতাকা চোখে পড়ল। বাংলাদেশের পতাকা। তার পাশেই রয়েছে আমাদের মানচিত্র। রুমটার চারদিকের দেয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বেগম রোকেয়ার ছবি। আরো আছে দোয়েল, মাছরাঙ্গা, শালিকের ছবি। এই গুলোর ঠিক নিচের সারিতেই স্থান পেয়েছে হাওরের ছবি। নিজেকে প্রশ্ন করি, এটা কী আমাদের হাকালুকি না টাঙ্গুয়ার হাওর। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি এদিক সেদিক। মায়া হঠাৎ ঘরের কোনায় রাখা সিডি প্লেয়ারটি ছেড়ে দিলে আমার কানে মধুর সুরে প্রবেশ করলো, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।’

গানটা শুনার সাথে সাথেই নিজেকে অচেতন মনে হল আমার। হৃদয়টা যেন খিচুনি দিয়ে উঠল। আমি ফ্লোরের মাঝে চুপিসারে বসে পড়লাম। মা’কে হারিয়েছি এই ক’বছর হলো। মায়া’র পিসিমা আর তার গড়ে তোলা এমন রুমটা দেখে কেন জানি মায়ের কথা মনেপড়ল খুব। মায়া জানাল, এই সব নাকি তাঁর পিসিমার নিজের হাতের কাজ। গত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে তিনি নিজ হাতে এঁকেছেন এই ছবিগুলি। সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশের লোকজ, আধুনিক গানের অনেক সিডি। ষোলই ডিসেম্বর, একুশে ফেব্রুয়ারী, এই দিনগুলোতে তিনি চুপচাপ বসে থাকেন নীরব এই রুমটাতে। কাঁদেন, সময়ে অসময়ে।

কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। আমার যাবার সময় হয়েছে। কিন্তুু আমি কীভাবে বিদায় নিব! আমি যে বিদায় বেলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তাছাড়া এই রুমটাতে আমার আরো কিছু সময় বসে থাকতে ইচ্ছা করছে। তবুও তো যেতে হবে, যেতে হয়।
- মায়া, আমকে যে এখন যেতে হবে ।
- হুম, যাবেনই তো। রাতের খাবারটা খেয়ে যান না প্লীজ ।
- না, না, অন্যদিন।
মায়া এবার কপাল ভাঁজ করে বলে, অন্যদিন ! কবে সেই অন্যদিন ?
আমার আর কিছু বলার ছিল না। বলিও নি।

এবার পিসিমার কাছে গিয়ে তাঁর হাত দুটো আমার হাতে নিয়ে বললাম, যাই পিসিমা। উনি দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছেন। হয়তো অনেক কিছুই বলতে চান তিনি। তবে পারেন নি। তাঁর মনের কথা গুলো অব্যক্তই রয়ে গেল। মায়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কাল কয়টায় যাচ্ছেন ?
- ভোর ছয়টায় গাড়ী। হোটেল থেকে পাঁচটায় বের হব।
মায়াদের বাসার দরজা খুলেই দেখি অন্ধকার নেমে আসছে। একা একা যেতে পারবেন তো, মায়া আমাকে বলল।
- আশা রাখছি পারবো।

(৫)
হোটেল থেকে টেক্সী করে স্টেশনে যাচ্ছি। পথে ‘বিনোদিনী টী স্টল’ চোখে পড়তেই দেখি স্টলটা বন্ধ রয়েছে। বন্ধই তো থাকবে। এই সাতসকালেই মায়া এসে খুলবে না। ড্রাইভারকে বললাম, একটু থামান না ভাই। গাড়ী থেকে নেমেই বন্ধ স্টলের বারান্দায় দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। গত ক’দিনের কিছু স্মৃতি বদ্ধ স্টলটির মধ্যে উড়াউড়ি করছে যেন। আমি কি জন্য দাড়িয়ে রইলাম, এর কোন জবাব নেই। জানি, পৃথিবীতে কোন কোন প্রশ্নের জবাব থাকে না। স্মৃতিকে পেছনে ফেলে গাড়ীতে উঠলাম আমি। আবির হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ড্রাইভারকে বললাম, চলেন ভাই।

টেক্সীতে উঠা মাত্রই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামলো। দার্জিলিং এ নাকি বৃষ্টির সময় অসময় নেই। কিছু সময় পর যখন আমরা স্টেশনে পৌছলাম তখনও অঝর বৃষ্টি। আমি আর আবির টেক্সীতেই বসে রইলাম। বৃষ্টির জন্য নামার সাহস পাচ্ছি না। আশপাশ খেয়াল করছি, সব কিছু যেন ঝাপসা লাগছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা মেয়ে, পাশে শাড়ী পড়া একজন মহিলা। জানালার কাচটা ঝাপসা থাকায় ভালভাবে চেহারা ভাসছে না। কাচটা নামাতেই মায়ার চেহারাটা ভেসে উঠল। আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম- মায়া।

আমাকে দেখে সে ছাতাটা নিয়ে দৌড়ে আসল গাড়ীটার কাছে। আমি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই নেমে পরলাম গাড়ী থেকে। কোন ভাবে একটা চাউনির নিচে আশ্রয় নিলাম আমরা চারজন। আমি একবার মায়া’র দিকে একবার তাঁর পিসিমার দিকে তাকিয়ে বললাম- কী দরকার ছিল ! বাকহীনা পিসিমা তার হারানো সন্তানের মতো আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি আমার চোখের জল আটকাতে পারিনি।
মায়া একটা গাদা ফুল আমার দিকে ধরিয়ে বলল- খুব পছন্দ, তাই না ?
- হুম, খুব।

গাড়ী হর্ন দিয়ে জানিয়ে দিল আমাদের যাবার সময় হয়েছে। আমি আর আবির তাড়াহুরো করে গাড়ীতে উঠলাম। মায়া তার পিসিমাকে নিয়ে পাথরের মত দাড়িয়ে রইল। আমার হাত ইশারা দেখেই তারা দুজন একই সাথে ইশারায় বিদায় জানালো আমাদের। গাড়ী চলছে আমাদের নিয়ে। গত ক’দিনের সব মুহুর্তগুলো আমার মাথার মধ্যে গিজগিজ করে আক্রমন করছে। মনে মনে ভাবি, কেন এমন হয়। সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে আমাদের অনেকের সাথে পরিচয় ঘটে, তাদের কিছুদিন মনে রাখি, আবার ভুলি। আবার নতুন কারো সাথে পরিচয়, আবার ক’দিনের বন্ধন। এভাবেই চলছে আমাদের বাধাহীন জীবন।

কাছের কোন এক সিডির দোকান থেকে বাতাসে ভেসে আসছে আমার প্রিয় শিল্পী শুভমিতা’র একটা গান-
আমার দিন কাটে না, আমার রাত কাটেনা।
শুনো শুনো সুজন আমার ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:০৪
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×