somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুড়িগঙ্গাকে নিয়ে কিছু কথা....

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুড়িগঙ্গা বর্তমানে মৃতপ্রায় একটি নদী। ঢাকার সাথে যোগাযোগের প্রধানতম এ নদী আজকের এ দশার জন্য দায়ী কারা?? ঢাকাকে বাংলাদেশের রাজধানী করা হয় ১৬১০ সালে। ১৬১০ থেকে স্বাধীনতা পূর্ব পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা যে পরিমান দূষিত হয়নি গত ৪০ বছরে তার চেয়ে কয়েকশগুন বেশী হয়েছে। আসুন দেখি কি কারনে অনিন্দ্য সুন্দরী বুড়িগঙ্গাকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদীগুলোর তালিকায় আসতে হলো।

# বিশেষজ্ঞদের মতে ঢাকা শহরের লোকালয় থেকে প্রতিদিন সৃষ্ট আবর্জনার পরিমান ৪৫০০ টন। যার ৮০% বুড়িগঙ্গায় ডাম্প করা হয়।


# ২০,০০০ টন ট্যানারি বর্জ্য প্রতিদিন মিশে যায় বুড়িগঙ্গার পানিতে।


# বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে গড়ে উঠা ৯টি শিল্প এলাকা (টঙ্গী, তেজগাঁও, হাজারীবাগ, তারাবু, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, ঢাকা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন এবং ঘোড়াশাল) থেকে প্রতিদিন বুড়িগঙ্গার পানিতে মিশ্রিত তরল বর্জ্যের পরিমান ৬০,০০০ কিউবিক মিটার।

# ওয়াসা এর মতে তেজগাও লেক থেকে প্রতিদিন ১২,০০০ কিউবিক মিটার বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় মিশ্রিত হয়।


# টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্ট্রী থেকে প্রতিবছর বুড়িগঙ্গায় ৫৬ মিলিয়ন টন বর্জ্য ত্যাগ করা হয়।


# শিপ রিপেয়ার ইন্ড্রাস্ট্রিগুলোর বর্জ্য ডাম্প করা হয় বুড়িগঙ্গায়।


# দৈনিক গড়ে ৫০০০ যান্ত্রিক নৌ-যান চলাচল করে বুড়িগঙ্গা দিয়ে। যাদের সব ধরনের বর্জ্যের শেষ ঠিকানা হলো বুড়িগঙ্গা।


# ভূমিদস্যু এবং ক্ষমতাসীনদের কবলে পড়ে বুড়িগঙ্গা এখন নাব্রতা সঙ্কটে আছে।


আমাদের এসকল অসচেতনতার কারনে বুড়িগঙ্গার আজকের অবস্থা কি???

# ৪ মিলিয়ন মানুষ দূষিত পানি পান করে নানা-রকম পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।


# বুড়িগঙ্গায় এখন কোন মাছের আবাস নেই বল্লেই চলে। নদী তীরে চাষ-বাষও বন্ধ।


# বুড়িগঙ্গায় এখন পানিতে অক্সিজেনের পরিমান জিরো। তাই বিশেষজ্ঞরা একে নদী না বলে সেপটিক ট্যাংক বলেন।


# শোধন ছাড়া নদীর পানি যে কোন কাযে ব্যবহারের অযোগ্য। পানির রং হয়ে গিয়েছে ঘন কালো সুপের মত।

# বুড়িগঙ্গার তলদেশে বেশ কিছু স্থানে ১০ ফিট স্তর জমেছে পলিথিনের।


বুড়িগঙ্গাকে পরিশোধিত করার উপায় কি??


২০১০ এর জানুয়ারীর প্রথম দিকে বিআইডব্লিউটিএ বুড়িগঙ্গার ৩ কিলোমিটার এলাকা পরিস্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৩টি বুলডোজার ও ১০০ মানুষের এ প্রকল্প ব্যয় ছিলো ২.৫ মিলিয়ন ইউরো। ৩,০০,০০০ কিউবিক মিটার বর্জ্য নদী থেকে নিস্কাশন করা হয় সেবার।

কিন্তু পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ন ভিন্ন। কোন মোবাইল প্রকল্প দিয়ে বুড়িগঙ্গাকে কিউর করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদি বাস্তব সিদ্ধান্ত।

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিলে কয়েকবছর সময় লাগিয়ে বুড়িগঙ্গাকে বাচানো সম্ভব। কিছু পদক্ষেপ নিম্নরূপ হতে পারে :


১। বিশ্বব্যাংকের মতে ঢাকার প্রধান ৪টি নদী (বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, তুরাগ ও বালু) এ গুলোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে ৭০০০ শিল্প প্রতিষ্ঠান। এদের প্রত্যেকের বর্জ্য নিস্কাশনের জন্য নিজস্ব ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ব্যবহারের উপর আইনীভাবে চাপ প্রয়োগ করা উচিত।

২। ১৯৯৫ সালে একটি আইন প্রনয়ণ করা হয়েছিল সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ব্যবহার করার জন্য। কিছুটা ব্যয়বহুল বিধায় নদীভিত্তিক ৯০% প্রতিষ্ঠান তা মানছে না। একটি টাস্কফোর্স গঠন করে মনিটরিং এর মাধ্যমে সবাইকে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ব্যবহারে উতসাহিত করা উচিত। প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।


৩। সরাসরি নদীতে সবধরনের বর্জ্য নিক্ষেপ আইন করে নিষিদ্ধ করা উচিত।
৪। যান্ত্রিক যানবাহন নদীতে ধোয়া বন্ধ করা উচিত।


৫। নদীর দখলকৃত অংশ উদ্ধার করা উচিত। প্রয়োজনে ড্রেজিং এর মাধ্যমে এর গভীরতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
৬। হাজারীবাগ ট্যানারীকে শহরের বাইরে স্থাপন করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হউক।


৭। তেলজাতীয় পদার্থ নদীতে মিশ্রনের ব্যাপারে যাত্রী ও মালবাহী জাহাজগুলোকে সাবধান করা প্রয়োজন। সরকারী আইন অনুযায়ী প্রতিটি জাহাজে একজন করে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য থাকে। এ ব্যাপারে তাকে প্রশিক্ষনও দেওয়া যেতে পারে।
৮। গঙ্গাকে দূষনের হাত থেকে বাচানোর জন্য ভারত সরকার গঙ্গাতে সুয়েজ বর্জ্য না ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ৩৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আলাদা একটি প্লান্ট তৈরী করে শুধু মানব বর্জ্য থেকে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য। কোটি মানুষের শহর ঢাকার সুয়েজ বর্জ্যের জন্যও আলাদা প্ল্যান্ট করা যেতে পারে।
৯। বিআইডব্লিউটিএ বুড়িগঙ্গার তীরে ৩২৬টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্তি করেছে যার মধ্যে ৫০% উচ্ছেদ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের তদবিরকে উপেক্ষা করে বাকিগুলোকেও উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা উচিত।

১০। ১৯৭৭ সিঙ্গাপুর নদীরও বুড়িগঙ্গার মত অবস্থা ছিল। তৎকালীন সিঙ্গাপুর সরকার গুরুত্বের সাথে সিঙ্গাপুর নদী পরিস্কারের উদ্যোগ নেয়। চাইলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর সরকার থেকে কারিগরী সহযোগীতা পেতে পারে। ইল্যান্ডের থেমস নদীকে পরিস্কার মাধ্যেমে ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে এবং এখনও সেই ক্লিনিং পোগ্রমাটি চালু আছে যাতে নদীটি আবারো দূষিত হয়ে না যায়।






বুড়িগঙ্গাকে নিয়ে

রয়টার্সের রিপোট।

Click This Link

Click This Link

ফেসবুকে একটি গ্রুপ আছে Save da Buriganga River



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৫
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×