somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উজান হাওয়া ( শেষ পর্ব)

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঝর্না চলে গেলে মুকুল শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইল । কতক্ষণ এভাবে ছিল তার কোনও হিসাব ছিল না । সন্ধ্যের একটু আগে রহিমাচাচিমা যখন তার সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো,
- তুমি এভাবে বসে আছ কেন? মুকুল তোমার কী হয়েছে ?
তখন সে থতমত খেয়ে,
- কোই না তো ! আমি এমনি বসে আছি । আমার কিচ্ছু হয়নি ।
চাচিমা যেহেতু বিষয়টা জানেন তাই তার মনের অবস্থা অনুমান করে প্রসঙ্গ বদল করলো।
- রান্নাঘরে কাজ আছে, বলে চলে গেল । রান্নাঘরের খাবার- দাবার সব ঠিক ঠাক দেখে,চোখ মোটামোটা করে ,
- একি ! তোমরা দুপুরে কিছু খাওনি ? যে ভাবের ভাত - তরকারি সেভাবেই পড়ে আছে। হায়! পোড়া কপাল, কিচ্ছু খাওনি । তা যাক, আব্বাকে বলে রাতে খাওয়ার আগে সব গরম করে নিও । আমি এখন আসছি ।
- আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি এসো ।
কয়েকপা গিয়ে আবার কী মনে করে চাচিমা ফিরে এসে মুকুলের পাশে দাঁড়িয়ে ,
- আচ্ছা মুকুল! এভাবে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করলে শরীর বাঁচবে বাবা?
- না না! আমি ঠিক খেয়েছি। তুমি চিন্তা করোনা । রাতেও ঠিক সময়ে খেয়ে নেবো ।
এবার চাচিমা মুকুলের মাথায় হাতবুলিয়ে,
- ঠিক আছে বাবা, সময়মত খেয়ে নিও কিন্তু ।
মুকুল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো ।

এদিকে ঝর্নার বিয়েরদিন ক্রমশ উপস্থিত হল । হাবিবুরচাচা যথেষ্ট ধুমধামকরে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন । বাড়িতে লোকজন থিকথিক করছে । গোটা পাড়া আমন্ত্রিত হওয়াতে যেন সবাই একপ্রকার উৎসবে মেতে উঠেছে । বাড়ির সামনে বিরাট প্যান্ডেল যেন সে উৎসবের সাক্ষ্য বহন করছে । পাড়ার আাট থেকে আশি সবাই সে উৎসবে মেতে উঠেছে । শুধু একটি বাড়িতে সে আনন্দ বা উৎসবের ছিঁটেফোঁটা স্পর্শ করেনি । সমুদ্রে নিমজ্জিত দ্বীপ যেমন নিজের নিমজ্জনের মাধ্যমে সমুদ্রের প্রবল জলোচ্ছ্বাসকে অভ্যুত্থনা জানাতে বাধ্য হয় । মুকুলের আব্বাও তেমনি ঝর্নার বিয়ের রোশনাইতে সামিল হয়েছিলেন । একটা বড় পেতলের ঘড়া নিয়ে নির্দিষ্ট দিন একটু আগেভাগে বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন । মুকুলের যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠেনা । যাওয়ার আগে বাড়িতে রান্নাকরা খাবার সময়মত খাওয়ার কথা মুকুলকে
তিনি স্মরণ করিয়ে গেলেন ।

আব্বা চলে যেতেই মুকুল চাচিমাদের বাড়িতে গেল । জোরেজোরে চাচিমা চাচিমা বলে চিৎকার করাতে ,
- আসছি । একটু দাঁড়া ।
- না, তোমাকে বাইরে আসতে হবেনা । একটু জরুরি কাজ আছে চাচিমা । তুমি আব্বাকে একটু লক্ষ্য রেখো ।
বলে মুকুল বেড়িয়ে গেল ।

এদিকে সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত এল , মুকুলের আর দেখা নেই । তৌফিকসাহেব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন । পথচলতি মানুষের কাছে কাতরভাবে জিজ্ঞাসা করলেন , তারা কেউ মুকুলকে দেখেছে কিনা । একদিন দুইদিন করে দিন যেতে লাগলো কিন্তু কোথাও মুকুলের কোনও সন্ধান পাওয়া গেলনা । একবছরের একটু বেশি হয়েছে স্ত্রীবিয়োগ হয়েছে, সম্বল ছিল ছেলেটা । কিন্তু এখন সেও নিরুদ্দেশ । কাজেই তৌফিকসাহেবের এখন জীবন্মৃত অবস্থা । উপরওয়ালার কাছে তাঁর একটাই প্রশ্ন,
- হে আল্লাহপাক! তুমি আমাকে আর কত পরীক্ষা নেবে ? রাতদিন নামাজের পাটিতে বিলাপ করেই এখন তাঁর দিন কাটছে ।

চাচিমার অবস্থাটা একটু বলা জরুরী । ঝর্নার বিয়ের দিন মুকুল যখন জরুরি কাজে বাইরে যাচ্ছি এবং আব্বাকে দেখার কথা বলেছিল তখন চাচিমা ঘরকুনো ছেলের বাইরে এমন কী জরুরি কাজ থাকতে পারে তা সন্দেহ করেনি । মাহারা ছেলেটাকে পেটে না ধরলেও তাকে নিজের সন্তানের মতই ভালো বাসে । তাই মুকুল নিরুদ্দেশ হবার পর চাচিমাও নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। চাচিমার দুইমেয়ের পর একটি ছেলে আছে। বয়সে ওরা মুকুলের চেয়ে বেশ ছোটো । তবে মুকুল ছিল যেন প্রথম সন্তান । এহেন সন্তানের খোঁজে একা তৌফিকসাহেব নন , চাচিমা ও তার স্বামী রহমানচাচা সহ পাড়ার অনেকেই সন্ধানে নেমে পড়েছেন । ইতিমধ্যে রহমানচাচা মানে রহিমাচাচিমার স্বামী একদিন একটি আশংকার কথা বললেন '
- আচ্ছা! তৌফিকভাই হাবিবুরভাই মুকুলকে কিছু করেনিতো?
- না না! রহমান, ওরা মানুষ ভালো । খামোকা ওদের নিয়ে এসব ভেবোনা ।

এদিকে গোটা পাড়ায় অবশ্য দুটি মত তৈরী হয়েছে । কারন বিষয়টি আস্তে আস্তে সবার কানে পৌঁছে গেছে । বেশিরভাগ কমবয়সীরা হাবিবুর চাচাকে ভিলেন বানিয়েছে । অনেকেইতো সন্দেহ করছে যে ছেলেটা এখনও বেঁচে আছে কিনা । অপরদিকে মুরুব্বীগোছের কয়েকজন হাবিবুরচাচার পাশে দাঁড়িয়েছেন । কোনও অবস্থাতেই পাড়ায় এসব বেয়াদবি বরদাস্ত করা যাবেনা । সুতরাং ঝর্নার বিয়ের বেশকিছু দিন আত্মগোপন করার পর হাবিবুরচাচা আবার প্রাকাশ্যে আসছেন। আর তখনই দৈবাৎ দেখা সাক্ষাতের সময় তৌফকসাহেবের কাছে মুকুলের খোঁজখবর নিচ্ছেন ।

তৌফিকসাহেব বাড়িতে উদাসভাবে বসে থাকেন । প্রায়ই বাড়িতে কেউনা কেউ এসে ওনাকে বোঝান যে মুকুল শীঘ্রই ফিরে আসবে, কিমবা তিনি যেন স্বাভাবিক কাজ কর্ম শুরু করেন । শূন্যে চেয়ে থেকে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ,
- কী আশায় আমি স্বাভাবিক হব? ওর মা ছিল , মা চলে গেল । ও ছিল, সেও নিরুদ্দেশ হল । আল্লা আমাকে কেনইবা আর রেখেছে ।
আগে রহিমাচাচিমা এবাড়িতে বেশি আসতো, মাঝে মাঝে ফজিলাচাচিমাও আসতো । এখন তাদের সঙ্গে এবাড়িতে প্রায় সারাক্ষণ থাকেন রহমানচাচাও ।

বিশেষ নোট - তৌফিকচাচা ও মুকুলের পরিনতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে গল্পের নাম আর' উজান হাওয়া ' রাখা যুক্তিযুক্ত নয় বিবেচনা করে গল্পকার পরবর্তীতে নাম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । সকল পাঠকবন্ধুদপরকে এই পরিবারের ভবিষৎ জানতে প্রকাশনার অপেক্ষায় থাকা নুতন নামে পরবর্তী দেখার অনুরোধ করা হচ্ছে।

বিঃদ্র - পোস্টটি শ্রদ্ধেয় ব্লগার সোনাবীজ ; অথবা ধুলোবালিছাই স্যারকে উৎসর্গ করলাম ।



সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০৬
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×