somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমন্বিতা (পর্ব-২)

২২ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ডাক্তারবাবুর ঘোষণার পরে আর দেরি না করে বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে কাকাবাবুর ব্যাগের ভেতরে ছোট্ট একটি ডাইরি থেকে পাওয়া সপ্তর্ষি দার ফোন নম্বরে কল লাগালাম। প্রথম কলেই লাইন পেয়ে গেলাম। আমি সংক্ষেপে ঘটনাটি জানিয়ে দিলাম। সপ্তর্ষি দা বাড়ি ফেরার রাস্তায় ছিলেন। যে কারণে উনি আর বাড়ি না ফিরে সরাসরি ঘটনাস্থলে চলে আসার কথা জানালেন এবং চলেও এলেন। আরো ঘন্টাখানেক পরে ওনার মিসেসও চলে এলেন। ভদ্রমহিলা সম্পর্কে ইতিপূর্বে আমার অত্যন্ত অসম্মান বা বীতশ্রদ্ধা চলে এসেছিল । সপ্তর্ষি দা আমার সাথে ওনার পরিচয় করিয়ে দিলেন কিন্তু আমার মন উনার সাথে কোন সৌজন্য দেখাতে সায় দিচ্ছিল না। উনি আমাকে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। ওনার কান্না নাটক কি আসল, সে বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। তবে যেকোনো কান্না আমাকে বিহ্বল করে তোলে। এতক্ষণ আমি এক রকম ছিলাম। কিন্তু ওদের আগমনের পর বাস্তবে আমিও শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়লাম। ইতিমধ্যে বৌদির কান্না বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।কান্না শহর-গ্রাম, শিক্ষিত-অশিক্ষিত মহিলাদের বোধহয় এক করে দেয়। উনি বিলাপ করে বেশ সুর করে করেই কেঁদে চলেছেন। হসপিটালে আগমান রোগীর পরিজন বা পথচারী কয়েকজন অত্যুৎসাহীকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। কেউ বুকে হাত বেঁধে কেউবা প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে কান্না দেখতে লাগলেন। কয়েকজনের ফিসফিসানি কথাবার্তা আমার কানে এলো।সপ্তর্ষি দাকে উদ্দেশ্য করে একজন জানতে চাইলেন মৃত ব্যক্তি ওনার শ্বশুর মহাশয় কিনা। সপ্তর্ষি দা সে কথায় কর্ণপাত করলেন না। আমিই ঘটনাটা ওদের জানিয়ে দেই। আমার কথা শুনে বেশ কয়েকজনের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। শশুর মশাই মৃত্যুতে বৌমার এমন কান্না! চোখ মুখ দেখে বুঝলাম তারা রীতিমতো বিস্মিত। জানিনা তাদের কথা শুনে কিনা, কিন্তু এবার বৌদি মাটিতে আছাড়-পিছায় খাচ্ছেন। এক্ষণে বৌদির আচরণ আমার বেশ নাটকীয় ও বিরক্তিকর ঠেকলো। মনের ভাষা বুঝতে না দিয়ে যথারীতি সহানুভূতির সুরে বৌদিকে নিরস্ত্র করতে বাধ্য হলাম। অত্যুৎসাহীদের সুরে তাদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আসলে শ্বশুর মশায়ের সঙ্গে বৌমার অসম্ভব মধুর সম্পর্ক ছিল। যে কারণে উনি এতটা ভেঙে পড়েছেন।
আচমকা ভদ্রমহিলা আমার হাত ধরে আরো উচ্চঃস্বরে কাঁদতে লাগলেন। সপ্তর্ষি দা কিছুতেই ওনাকে শান্ত করতে পারছেন না। আমি যথারীতি বৌদিকে সান্ত্বনা দেওয়ার কাজে দাদাকে সাহায্য করতে লাগলাম। এভাবে বেশ কিছুক্ষন অতিবাহিত হল। সপ্তর্ষি দা বারেবারে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন।আমি একবার অফিসে খোঁজ নেওয়ার কথা বলতেই উনি রাজি হয়ে গেলেন। ফলে একসময় বৌদিকে একা ফেলে আমরা দুজনে চলে গেলাম হসপিটালের রিসেপশন সেন্টারে। সেখানে যাবতীয় নিয়ম নীতি পালন করে অবশেষে গভীর রাতে মৃতদেহ হাতে পেলাম। আগে থেকেই একটা গাড়ি রিজার্ভ করা ছিল। সে রাতে ওদের সঙ্গে কাকাবাবুর মরদেহ নিয়ে আমিও গ্রামে পৌঁছে গেলাম। পরেরদিন দুপুরবেলা কাকাবাবুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

আগেই বলেছি কাকাবাবু আমাদের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ওনার দুটি সন্তান বর্তমান। সপ্তর্ষি দার সঙ্গে বোন লগ্নজিতার বয়সের যথেষ্ট ব্যবধান ছিল। লগ্নজিতা আমার ঠিক এক ক্লাস নিচে পড়তো। বাড়ি থেকে স্কুল বেশ কিছুটা দূরে হওয়ায় আমরা একসঙ্গে দলবেঁধে স্কুলে যেতাম। গ্রামের মাস্টারমশাই, কিছু জমি-জায়গা ও গরু থাকায় সে সব সামলিয়ে স্কুলে যেতে প্রায়ই দিন দেরি করতেন। কাকাবাবুর এই দেরীতে স্কুলে আসা নিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে বেশ অশান্তি ছিল। কিন্তু ওনাকে কোনদিন কারোর সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখিনি।যেমন দেখিনি ওনাকে কোনদিন আগেভাগে স্কুলে আসতেও। যাইহোক প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকদের বাক্যবাণে সাময়িক কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও পরের দিকে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যেত। শৈশবের সেই দিনগুলোতে এতোটা না বুঝলেও এখন বুঝি কেন কাকাবাবু অন্যান্য শিক্ষকদের অভিযোগ নিরবে হজম করতেন। সমাজে এমনও মানুষ দেখা যায় হাজার অসুবিধাতেও তাদের মুখের হাসি কখনো ম্রিয়মাণ হয়ে যায় না।

লগ্নজিতা সহ আমরা পাড়ার পাঁচ-ছয়টি বাচ্চা মাটির রাস্তা ধরে অনেক আগেই স্কুলে পৌঁছে যেতাম। রাস্তায় যেতে যেতেও আমরা নানা রকম খেলা খেলতাম। জায়গায় জায়গায় ফেনাসাজি বা ফনিমনসা, বাবলা গাছ দেখে আমরা হঠাৎ হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়তাম। এই সব গাছে এক ধরনের মাথা উঁচু পোকা দেখা যায়। আমরা তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বড় মহিষ ছোট মাহিষ খেলতাম। স্কুলে পৌঁছে অবশ্য আমাদের অন্য খেলা ছিল। আর এই খেলার জন্যই মূলত স্কুলে আগে ভাগে পৌঁছে যাওয়া। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে কোন পার্টিশন দেওয়াল না থাকায় আমাদের খেলার জায়গাটি ছিল যথেষ্ট বড়। প্রচুর ছুটোছুটি হুটোপুটি লুকোচুরি খেলে আমরা ঘেমে নেয়ে যেতাম। বৃষ্টি বাদলের দিনেও আমাদের খেলায় কোন বিঘ্ন ঘটতো না। নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী দেওয়ালে চারটি শ্রেণীর জন্য চারটি ব্লাকবোর্ড ছিল। তবে নোনা ধরা বোর্ড গুলিতে জায়গায় জায়গায় কোন কালো রং অবশিষ্ট ছিল না। ঠিক এগারোটার সময় আমাদের প্রধান শিক্ষক মহাশয় নিজেই ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজাতেন। আমরা পড়িমড়ি করে যে যার শ্রেণি অনুযায়ী ব্ল্যাক বোর্ডের সামনে বাড়ি থেকে আনা তালপাতা বা খেজুর পাতার চাঁটায়ে বসে পড়তাম। শৈশবের সেই দিনগুলো নিয়ে হরেক কাহিনী আজও আমাদেরকে স্মৃতিমেদুর করে তোলে।

আমি তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। আমাদের এক বন্ধু একদিন খেলতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে লগ্নজিতার ব্যাগের উপরে। ব্যাগের মধ্যে রাখা শ্লেটটি সঙ্গে সঙ্গে কয়েক টুকরো হয়ে যায়। লগ্নজিতা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। ওর মা ওকে প্রচন্ড শাসন করতেন। কথায় কথায় মায়ের প্রসঙ্গ প্রায়ই তুলতো। আমরা গোল করে ওকে ঘিরে ধরে এর ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকি।ছোট বুদ্ধিতে সেদিন উপস্থিত বন্ধুদের টিফিন খাওয়ার পয়সা একত্রিত করার কথা বললে কেউ রাজি হয়নি।আমি আর সাতপাঁচ না ভেবে লগ্নজিতাকে আমার শ্লেটটি দিয়ে দেই। আমাদের দুজনারই শ্লেটটি বেশ পুরোনো হওয়ায় ওর বাবা-মা বিষয়টি বুঝতে পারবে না বলে আমার মনে হয়েছিল। অপরদিকে বাড়িতে শাস্তি পাওয়ার ভয় আমারও ছিল। শ্লেট ভাঙ্গার গল্প ফাঁদলে বাড়িতে যে কয়েক ঘা খেতে হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম। তবে লগ্নজিতারকে সাহায্য করার প্রসঙ্গটি বাদ দিলেও সামান্য শাস্তির বিনিময়ে নতুন শ্লেট পাওয়ার আগ্রহ আমাকে বেশি আমোদিত করে তুলেছিল।

শ্লেট ভাঙার দায় গ্রহণ করাটা আমার পক্ষে সুখকর হয়নি।সেদিন সন্ধ্যা বেলা পড়তে বসে মা বারকয়েক শ্লেট নিয়ে বসার কথা বললে আমি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলি। কাঁদতে কাঁদতে ঠিক কি বলেছিলাম মনে নেই। তবে মা কান্না থামিয়ে কি হয়েছে উনি জানতে চাইছিলেন। ভেবেছিলাম তাহলে বুঝি শাস্তিটা মকুব হয়ে গেছে। এবার পরিষ্কার করে শ্লেট ভেঙে গেছে বলাতে টপাটপ কয়েকটি চড়-থাপ্পড় ছুঁটে এলো আমার দুই গাল ও মাথা লক্ষ্য করে। এরকম শাস্তি যে কপালে জুটবে তা জানতাম। কাজেই মায়ের হাতের মার আমার কাছে যন্ত্রণার কারণ হয়নি। কিছুক্ষণ পর মায়ের হাত বন্ধ হল, কিন্তু মুখ চলতে থাকলো সমানে। আমার চোখ মুখ ও নাক দিয়ে তিন রকম জল ঝর্নার ন্যায় প্রবাহিত হতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর অবশেষে মাতৃদেবীর করুণা হল। উনি শাড়ির আঁচল নিয়ে আমার চোখ মুখ মুছতে লাগলেন। ঘোষণা করলেন পরের শ্লেটটি পেতে বেশ দেরি হবে। আমি অবশ্য ঘোষণা শুনেই মায়ের গলা জড়িয়ে ধরলাম।

লগ্নজিতা জানতো আমার মা-ও প্রচন্ড বকাবকি, প্রয়োজনে মারধরও করে। পরেরদিন সবাই যখন একসঙ্গে হাঁটছি তখন ও হালকা করে আমার জামা টেনে একটু পিছিয়ে হাঁটতে ঈশারা করে। কানে কানে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করে,মা আমাকে বকেছে কিনা।আমি মুখে কিছু না বলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতে ও আবার জিজ্ঞাসা করে, মুখের কালশিটে মারের কারণে হয়েছে কিনা। এবারও আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে, ও ওর ফ্রক তুলে গাডার দেওয়া প্যান্টের ভিতর থেকে ছোট্ট একটি তেলের শিশি বার করে আমার হাতে ধরিয়ে দেয়। তেলের শিশি নিয়ে কি করবো জানতে চাওয়াতে,
-স্যরি নিখিলেশ দা আমার জন্য তোর মার খেতে হয়েছে। এখন এই তেলটা মারের জায়গায় একটু মালিশ করে নিবি।
আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেলি,
- ধ্যৎ আমার একদম লাগেনি। তুই শিশি নিয়ে যা। তোর মা খোঁজ করলে আবার তোকে পিটুনি দেবে।

সেদিন নিশ্চিত মারের হাত থেকে রক্ষা করাতে লগ্নজিতার মনে ঘটনাটা দারুণভাবে রেখাপাত করেছিল। ও জানতো আমি একটু খেতে পছন্দ করি।প্রায়ই ওর প্যান্টের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে তালের বড়া, লিচু, চিংড়ি মাছের বড়ার মতো নানান খাবার নিয়ে আসতো। প্রত্যেকবারই আমি ওকে এসব আনতে বারণ করতাম। ও আমার কথা না শুনে পাল্টা যুক্তি দেখাতো, ও নিজের খাওয়ার জন্যই মায়ের কাছ থেকে ওগুলো নিয়ে আসে। আমি না খেলে আবার কাঁদো কাঁদো মুখ করত। ওর করুণ মায়াবী মুখ দেখে আমি ওকে আর ফেরাতে পারতাম না। একদিন তো অবাক করে প্যান্টের মধ্যে কাগজে মোড়া একটুকরো মুরগির মাংস পর্যন্ত নিয়ে এসেছিল। আমি মুখে না না করেছিলাম বটে, তবে মাংসের প্রতি আমার একটু বেশি লোভ থাকায় খুব তৃপ্তি করে খেয়েছিলাম। পাশাপাশি ওকে জানাই শুধু শুধু আমাকে খাওয়াস অথচ আমি যে তোর জন্য কিছু আনতে পারি না। ও পাল্টা জবাব দেয়, নিখিলেশ দা তুই খুব ভালো ছেলে। সেদিন তুই যেভাবে আমাকে বাঁচিয়েছিলি তা আমি ভুলতে পারবোনা রে। আমিও পাল্টা বলেছিলাম, বোকা মেয়ে! কি এমন করেছিলাম যে সেসব এখনো মনে রাখতে হবে।

পঞ্চম শ্রেণীতে হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ায় ওর সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটা কমে গিয়েছিল। সেভেন-এইট থেকে দেখতাম পাড়ার অনেকের সঙ্গে ও বেশ হেসে হেসে কথা বলছে, যা দেখে কেন জানিনা একটা হীনমন্যতায় ভুগতাম। শৈশবের সেই দিনগুলোকে তখন থেকে খুব মিস করতে থাকি। ওর উপরে একটি অলিখিত অধিকার মনে মনে যেন দাবি করতাম। ভাবতাম ও যেন সেই আগের মতই আমার সঙ্গে যেচে যেচে কথা বলুক। কিন্তু তা না পাওয়াতে ক্ষোভে অভিমানে ওদের বাড়ির সামনে যাওয়াই একসময় বন্ধ করে দিলাম। পরে টিউশনি বা স্কুলে যাওয়া আসার পথে কত বার দেখা হয়েছে কিন্তু এক দিনের জন্যও আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি।

কলেজে গিয়ে আবার লগ্নজিতার সঙ্গে আমার দেখা হয়। যার মধ্যে সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটির কোন মিলই পেতাম না। আমি যে তার পরিচিত, এটি ভেবেই তখন কষ্ট পেতাম। প্রায়ই দেখতাম বন্ধুদের সঙ্গে করিডোরে আড্ডা দিচ্ছে। একই জায়গায় বাড়ি হওয়াতে আমার পরিচিত কয়েকজনকে তার সম্পর্কে বিশেষ খোঁজখবর নিতে শুনতাম। আমার কান ঝালাপালা হয়ে যেত। মনের মধ্যে এক দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হতো।যা কোনদিন কারো সঙ্গে শেয়ার করতেও পারেনি। তাদের প্রতি এতোটুকু ক্ষুন্ন না হয়ে যতটা সম্ভব অবিচল রেখে নিজের অক্ষমতার কথা জানিয়ে দিতাম। অবশেষে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালীন যখন তার বিয়ের সম্বন্ধ কানে এলো তখন এটুকু বলে নিজেকে প্রবোধ দিতে পেরেছিলাম যে অন্তত পরিচিত কারো সঙ্গে নয়, বরং অপরিচিত একজনের সঙ্গেই তার বিবাহ হচ্ছে এটাই আমার বড় সান্ত্বনা। পাত্র জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পদস্থ অফিসার, নাগপুরে পোস্টিং। যেদিন ও বিয়ে করে চলে যায়, আমি ছাদের উপর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ওর যাওয়া দেখেছিলাম। আমার ভিতরটা যে কতটা খাক হয়ে গেছিল তা কেবল অন্তর্যামীই জানেন।

কাকাবাবুর অন্তেষ্টির দিনে লগ্নজিতার অত্যন্ত সরল বেশভূষা আমাকে কৌতুহলী করেছিল। চারিদিকে আগরবাতি কর্পূরের গন্ধে পরিবেশটিকে দুঃখের অনল সাগর বলে মনে হলেও তার মধ্যে নিজেকে সংবরণ করতে পারিনি। ফিসফিসিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলাম তার পতিদেবতার কথা। সারল্যে টলমলে চোখে সংক্ষেপে শুধু এটুকু জানিয়েছিল, বছর দুয়েক আগে রোড এক্সিডেন্টে স্বামী মারা গেছেন। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ,ঠিক শুনছি তো। প্রশ্নটিই আমি আবার করতেই, তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে নিখিলেশ দা। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে অবশ্যই আসবি। শ্বেতা চলে যাওয়ার পর থেকে আমি আর কোন শ্রাদ্ধ বাড়িতে যাই না।কাজেই কাকাবাবুর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে থাকতে পারবোনা আগাম জানিয়ে দেওয়াতে সেদিন কথা দিতে হয়েছিল যে পরে অন্য একদিন অবশ্যই ওদের সঙ্গে দেখা করতে যাবো।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:
১-পর্বটি একটু বড় হওয়াতে শেষাংশটি সমগ্রটা দেওয়া গেলনা। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে বাকি অংশটি পোস্ট করার আশা রাখি।
২-ছবিটি আমার ছাত্র শ্রীমান সুজিত কুমার দাসের আঁকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৮
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×