somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রম সাতক্ষীরা টু বেলগাছিয়া ( খন্ড-১/পর্ব-সপ্তম)

০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নাহা! আসমার মাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাত্র একটা দিনের মধ্যে চাচিমা যে কোথায় চলে গেছিলেন তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। আজও বিষয়টা ভেবে আমি অবাক হই। কাবুল চাচা অবশ্য স্ত্রীকে খোঁজার ব্যাপারে চেষ্টার কসুর করেননি। প্রায়ই সকালবেলা চাচা বের হতেন। নতুন নতুন জায়গায় খুঁজতে যেতেন।পাড়াপড়শি, আত্মীয়-স্বজন অনেকেই এ কাজে ওনাকে সহযোগিতা করতেন। প্রথমদিকে আমরা খুব আশাবাদী ছিলাম যে এভাবে খোঁজাখুঁজির মধ্য দিয়ে একদিন ঠিকই চাচিমাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। উল্লেখ্য পাড়াগাঁয়ে এসময়ে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর। অন্যের দুঃখ কষ্টকে সবাই নিজের মত করে ভাবতো। যে কারণে চাচিমার নিরুদ্দেশ হওয়াটা কাবুল চাচার একার সমস্যা হয়ে থাকেনি। গোটাপাড়া শুদ্ধু সবাই যেন নিজেদের মধ্যে সে সমস্যা ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। পড়ন্ত বিকালে কাবুল চাচার ফেরার জন্য আমরা সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। এ সময় প্রত্যেকটা দিন কতইনা যাতনাময় হয়ে কেটেছিল। কোন কোনদিন মাগরিবের নামাযের আগে ফিরলেও বেশিরভাগ দিনই চাচা সন্ধ্যের অনেক পরে বাড়ি ফিরতেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্য কাজের মধ্যে থাকায় দিনের বেলায় সময়টা কিভাবে অতিক্রান্ত হয়ে যেতো তা টের পেতাম না।তবুও তার মধ্য দিয়ে ভাবতাম আজই বাড়ি ফিরে যেন চাচিমার ফিরে আসার খবর শুনতে পাই। কিন্তু বাড়ি ফিরলে সময়টা যেন কিছুতেই কাটতে চাইতো না। প্রায়ই সন্ধ্যায় চাচার বাড়ির সামনে আমরা ঘুরঘুর করতাম। উল্লেখ্য এভাবে অপেক্ষা করাটা পাড়া শুদ্ধু আমাদের সকলেরই একপ্রকার রোজনামচা হয়ে গেছিল। চাচাকে দেখে প্রথমদিকে কেউ না কেউ চাচিমার কথা জিজ্ঞেস করলেও পরের দিকে উনার শূন্য হাতে ফিরে আসা দেখে আমরা সেদিনকার মত ফলাফল বুঝে যেতাম এবং যে যার মত নীরবে বাড়ি চলে যেতাম। কিন্তু হায়! সপ্তাহ পেরিয়ে মাসে গড়ালো, তবুও চাচিমাকে আর ফিরে পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে যে কথা না বললেই নয়।নারীহৃদয় হলো ভালোবাসার মহাসমুদ্র।হাজার দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে মায়েরা সংসারকে একসূত্রে বেঁধে রাখেন। যে সংসারে মায়েরা অনুপস্থিত সে সংসার ভালোবাসার মহাসমুদ্র থেকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত। কাজেই চাচিমাকে ফিরে না পাওয়ায় ওদের সংসারটাকে মনে হয়েছিল অতল গহবরে নিমজ্জিত হয়েছে। আর ওদের দুর্দশা অন্তর থেকে উপলব্ধি করায় ওনাকে না পাওয়ার বেদনায় আমি যে কতটা অস্থির হয়ে উঠেছিলাম তা কেবল অন্তর্যামীই জানেন।

ওদিকে আরেকটি বিষয় আমার ছোট্ট হৃদয়কে ক্রমাগত কুঠারাঘাত করছিল। চোখের সামনে প্রত্যক্ষ করেছিলাম ওবাড়ির গতিশীলতা একপ্রকার থমকে গিয়েছিল। রান্নাবান্নার পাঠ বহুদিন আগেই উঠে গিয়েছিল। যদিও এখানে কাবুল চাচার ভাইদের অবদান প্রশংসনীয়। ভাই বোনের সংখ্যাও নেহাত কম ছিলনা। দুই বোনের বিয়ে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী গ্রামেই। প্রতিদিনই এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে ওদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে যেত। পাড়ার সকলেই ছোট ছোট দুই ভাই-বোনকে খুব স্নেহের চোখে দেখতেন। প্রায়ই কেউ-না-কেউ তাদেরকে পাশে বসিয়ে সান্ত্বনা দিতেন। যার যেভাবে সম্ভব তাদেরকে সঙ্গ দিয়ে দুঃখ ভোলানোর চেষ্টা করতেন।

উস্কোখুস্কো চুলের আসমাকে মাঝে মাঝে সকালে আমাদের বাড়ির মাটির দাওয়াইতে বসে কাঁদতে দেখেছি। উপর্যুপরি কান্নাকাটি করায় চোখদুটি সারাক্ষণ যেন ফুলে থাকত। এমনই একদিন সকালে একটু বেলা করে দাদার কামরা থেকে নামতেই দেখি তাকে ঘিরে সকলে বিষণ্ণ মুখে বসে আছে। প্রত্যেকেরই ভারাক্রান্ত মুখে উদাস সে চাহনি।মাকে তার মধ্যেও পরম যত্নে আসমার মাথায় তেল দিয়ে চুল আঁচড়ে দিতে ও চোখের জল মুছিয়ে দিতে দেখেছিলাম।তার ফোলাফোলা ঠোট দুটোতে সারাক্ষণই যেন কান্না জড়িয়ে ছিল। এ প্রসঙ্গে যে কথা না বললেই নয়, মাকে আমার বোনদেরকে এমন করে কোনদিন চুল বেঁধে দিতে বা এমন করে স্নেহ করতে দেখিনি। আর একপাশে উসকো খুসকো চুলের জহরকে দেখে মনে হত মাথার উপর দিয়ে যেন তার সদ্য মহাপ্রলয় বয়ে গেছে। ঈষৎ লালচে লালচে ধুলোয় পাকানো চুল গুলো দেখে মনে হয়েছিল কতদিন বুঝি ওর মাথায় কোন তেল পড়েনি। চুলের সঙ্গে চেহারার অদ্ভুত সামঞ্জস্যতা তৈরি হয়েছিল তার। রুগ্নতাতেও সে পৌঁছে গিয়েছিল একরকম চূড়ান্ত সীমায়। হাঁটা-চলাতেও কেমন যেন স্থবির হয়ে গিয়েছিল।জহরের এমন চেহারা দেখে কিছুটা শিউরে উঠে মুহূর্তে পৌঁছে যেতাম অতীতে। তুলনাটা বড্ড একপেশে লাগতো। আগের শক্তপোক্ত, নালিশ সর্বস্ব জহরের সঙ্গে সেদিনকার জহরের মধ্যে কোন মিলই খুঁজে পেতাম না।রুগ্ন শরীরের পাংশু মুখের জহরকে দেখে ভীষণ মায়ায় হৃদয়টা ভরে যেত।

এমন একটি বিষন্নতার পরিবেশ যে কোন কঠিন হৃদয়ের ব্যক্তিকেও ব্যথিত করে তুলতে বাধ্য। সেখানে তো আমি বরাবরই একটু বেশিমাত্রায় আবেগপ্রবণ। স্বভাবতই এমন দৃশ্য আমাকে বিহ্বল করে তুলেছিল। কিন্তু তারই মধ্যে ছোটবেলার সেই দিনগুলিতে নিজের আবেগকে সংযত রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করতাম। যদিও লড়াইটা ছিল আমার নিজের সঙ্গে নিজেরই। গহরের খুনিকে আমি মনের অন্তরে যে কোন প্রকারে লুকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর ছিলাম। কাজেই বাড়ির সকলের মতো গোল হয়ে বসে দুঃখে ভাগীদার হওয়ার মত সাহস আমার ছিল না।আমার অপরাধপ্রবণ মনকে সবকিছুর মূলে দায়ী করে দূর থেকে উঁকি মেরে যত দ্রুত সম্ভব এস্থান থেকে চম্পট দেওয়ার রাস্তা খুঁজতাম। যদিও তার মধ্যে মুহূর্তে জহরকে এক দৃষ্টিতে দেখে মনে মনে কিছুটা স্বস্তি পেতাম। ছেলেটার আচরণ ছিল উল্লেখ করার মতো। দুঃখ মানুষকে পূর্ণতা দান করে; আচরণকে করে করে সংযত।জহরের মধ্যে যেন আমি তারই প্রতিফলন পেয়েছিলাম। রাতারাতি সে যেন অভিজ্ঞতায় পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে উঠেছিল। বয়সে আসমার চেয়ে সামান্য বড় হলেও ওর আচরণ বড় মানুষকেও হার মানাতো।কি অসম্ভব স্নেহের সঙ্গে ছোট বোনকে আগলে রাখত সারাক্ষণ। কিছুতেই কাছ ছাড়া করত না। বাড়ির সকলেই জহরের বোন প্রীতির ভীষণ প্রসংশা করত। একদিকে জহর অন্যদিকে আসমাকে নিয়েই আমার বিষণ্ণতার জগৎ তৈরি হয়েছিল। দাদার সঙ্গে সারাদিন কাজে থাকলেও ছোট্ট আসমার কষ্টে আমার অন্তরটা যেন ফেটে যেত। অথচ কাউকে সেকথা বোঝাতে পারিনি কখনও। এভাবেই এর তাঁর সান্নিধ্যে কেঁদে-কেটেই দুই ভাই বোনের সমস্যাসঙ্কুল দিনগুলি পার হচ্ছিল।

এরই মধ্যে ঘটে গেল অপ্রত্যাশিত এবং আকর্ষণীয় একটি ঘটনা। সেদিন দুপুরে কাজের বাড়িতে খেয়েদেয়ে সবে একটু শুয়েছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ থাকতো খেজুর পাতায় নির্মিত চাটাই। খেজুর পাতার নির্মিত চাটাই তৈরি ছিল এ সময় গ্রামগঞ্জের মায়েদের অবসর বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। দ্বিপ্রাহরিক আহারের পর কোথাও বা দলগত কেউবা একাএকা চাটাই করে সময় কাটাত। খেজুর গাছও খুব সহজলভ্য ছিল। ফলে বেশীরভাগ বাড়িতে চাটাই ছিল বসা শোবার একমাত্র মাধ্যম।আর এই খেজুর পাতার চাটাই ছিল আমার কাছে খুবই বিরক্তিকর একটি উপাদান। চাটাইয়ের উঁচু উঁচু দাড়গুলো শরীরে ফুটে যাওয়ায় শুতে আমার খুব অস্বস্তি লাগত। যে কারণে ঘুম এলেও তা যেন চোখে ধরা দিতে চাইতো না। কিন্তু কোন উপায়ও ছিল না। বাধ্য ছিলাম বিভিন্ন কাজের বাড়িতে চাটাইতে শুতে। যাইহোক অন্যান্য বাড়িগুলোর মতোই সেদিনও আমি ছিলাম পোটের পাশে,আর দাদা ছিল দেওয়ালের দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দাদার হাল্কা নাক ডাকার শব্দ কানে আসে। বুঝতে পারি দাদা বাস্তবে স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করেছে।পরিশ্রান্ত শরীরের কারণেই হোক অথবা বয়সের ভারেই হোক একটু শুলেই দাদা ঘুমিয়ে যেত। যদিও সে ঘুমের গভীরতা ছিল বরাবরই কম। দাদার নাক ডাকার শব্দ কানে এলে ততক্ষণে আমারও কিছুটা অবসন্নতা গ্রাস করতো। সেদিনও সামান্য একটু ঢুলু ঢুলু ভাব চোখে অবশ্য এসেছিল।এমন সময় সামনে পা ঘষার শব্দে তন্দ্রালু ভাব যায় কেটে। পোটের উপর বাপজানকে দেখে রীতিমতো চমকে উঠি। ধড়ফড় করে উঠে বসি।প্রথমে যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না, যে ঠিক দেখছিতো;স্বপ্ন নয়তো? কিন্তু মুহূর্তে আমার ভুল ভেঙে যায়। আমার ধড়ফড় করে উঠার শব্দে বা যে কোন কারনেই হোক, তন্দ্রালু চোখে, কি হয়েছে? কি হয়েছে? বলতে বলতে কিছুটা অবাক হয়ে লুঙ্গি ঠিক করতে করতে দাদাও উঠে বসে।সামান্য চোখ ঘষে নিয়ে দাদা তাকিয়ে থাকে বাপের দিকে। বাপজানও হাসি হাসি মুখে দাদার দিকে তাকিয়ে থাকে। অনেকদিন পর বাবা ছেলে একে অপরকে কাছে পেয়ে মুহূর্তেই আবেগপ্রবণ হয়ে উঠে। বাপজানকে দেখে দাদা বলে উঠলো,
-হেগা বড়খোকা কিছু হয়েছে? এসময় তুমি!
-না না বাপজান তোমার চিন্তা করার মতো কিছু হয়নি। আসলে তুমি কাজ ছেড়ে দেওয়াতে দোকানে খুব অসুবিধা হচ্ছিল। অনেকদিন ধরে বাবুর সঙ্গে এটা নিয়ে কথা হতো।আজ সকালে হঠাৎ বাবু মশাই বললেন, তোমার বাপের কাছে নিয়ে চলো ওনার সঙ্গে একটু দেখা করে আসি। তাই ওনাকে সঙ্গে নিয়ে আসা।
বাবু মশাইয়ের কথা বলতেই দাদা খুব ব্যস্ত হয়ে উঠল। আনন্দের আতিশয্যে কিছুটা গোঙাতে গোঙাতে,
-অ্যা.অ্যা.. বাবু মশাই এসেছেন? তা বসতে দিয়েছিস কোথায় বড় খোকা?
-উনি একবার গাড়ি থেকে নিচে নেমেছিলেন। সকলের সঙ্গে কথা বলে আবার গাড়িতে গিয়ে বসেছেন।
দাদা চোখ দুটো বড় বড় করে কিছুটা আপন মনে বলে উঠলো,
-কত বড় মানুষ উনি! অথচ একটুও গরিমা নেই। আমাদের মত তুচ্ছ মানুষদের বাড়িতে এলেন।
দাদা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবারো জানতে চাইলো,
-হ্যাঁ খোকা,তা তুই একবার ওনাকে বাড়িতে উঠে বসতে বলিস নি?
-বলেছিলাম। উনি আমাকে ব্যস্ত না হয় বরং তোমাকে খোঁজার পরামর্শ দিতেই আমি আর জোর করতে পারিনি।
-তাহলে তুই বাবুকে এখানে আনলি না কেন?
-আমি জানতাম তুমি বাড়িতে আছো। আজ বাড়ি এসে জানলাম তুমি টুকটাক কাজ করছ। কোথায় কাজ করছ, কখন তোমাকে পাবো? এসব বিষয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকায় বাবুকে আর সঙ্গে নিয়ে খোঁজাখুঁজি করতে রাজি হইনি। যদিও আমার বেরিয়ে আসার সময় বাবু মশাই বলেছিলেন যে উনি আসবেন কিনা। আমি অবশ্য ওনাকে অসুবিধা আছে জানিয়ে ওখানেই অপেক্ষা করতে বলে এসেছি।
দাদা কিছুটা চিন্তিত ভাবে মুখে হাত ঘষতে ঘষতে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকলো।
দাদাকে কিছুটা খুশি করার জন্য কিনা জানিনা বাপজান দাদার উদ্দেশ্যে আবার বলে উঠলো,
-তবে বাবু মশাইয়ের আসার মুহূর্তের মধ্যে বাড়ির সামনে একটা মেলা শুরু হয়ে গেছে। এমন ধুলো উড়িয়ে মোটরগাড়ি তো গ্রামের মানুষ ইতিপূর্বে কখনোই দেখেনি। সবাই যে যেভাবে পারছে গাড়ি দেখতে আসছে। বাবুমশাই তাদের সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছেন।ওনারও নাকি খুব ভালো লাগছে মানুষজনকে এভাবে কাছ থেকে দেখতে পেয়ে।
-বলিস কি খোকা? গাড়ি দেখতে লোক ভিড় করেছে ভালো কথা। কিন্তু কেউ গাড়ির ওপর চড়ে বসে নি তো?
-একদম যে বসেনি তা নয়।আমি কয়েকজনকে বলেছিলাম, অমন করে গাড়ির উপরে উঠে নেই। কিন্তু বাবুমশাই উল্টে তাদেরই দুই একজনকে ডেকে ডেকে গাড়িতে তুলে নিয়েছেন, দেখে আমি নিজেই বেকুব হয়ে গেলাম।
বাবা-ছেলের মধ্যে অদ্ভুত উত্তেজনায় কথোপকথনটি চলতে লাগলো। আমি পাশে থেকে যথাসম্ভব নীরবে তার উপলব্ধি করতে থাকি। কথা থেকে বুঝতে পারি দাদার সঙ্গে দেখা করবেন বলে স্বয়ং হালদার বাবু বাপজানকে সঙ্গে এসেছেন।ইতিপূর্বে দাদার নিজ মুখে বলা গল্পগুলো যে নিছক গল্প নয় বাস্তব তা মুহূর্তে চোখের সামনে প্রতিভাত হয়। হালদার বাবুর মহত্ব, উদারতা নিয়ে আমার মনে আর কোনো সংশয় থাকে না। শহরের বিলাসী জীবন ছেড়ে ধুলোবালি রাস্তা ধরে গ্রামে এসে এক নগণ্য কাঠমিস্ত্রির খোঁজ করছেন বলে দাদার জন্য রীতিমতো গর্বে বুক ভরে গেল। যাই হোক আর বিলম্ব না করে সেদিনের মত কাজ বিরত রেখে তিনজনেই দ্রুত বাড়ির উদ্দেশ্যে পা চালালাম।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ১ -ছোটবেলায় অসুস্থ অবস্থায় খেলাধুলা করলে বড়রা বকা দিতেন।বকা খেয়ে আবার সুড়সুড় করে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তাম। কিন্তু মন চলে যেত খেলার মাঠের দিকে। আপনারা অনেকেই জানেন অতিসম্প্রতি আমি সপরিবারে একটা রোগ মুক্ত হয়েছি। এই মুহূর্তে দুজনেই সুস্থ। কিন্তু আমার গত পোস্টটি ছোটবেলার সেসময়কার মত একটু অনিয়মের মধ্যে করাতে শ্রদ্ধেয়া আপুনি করুনাধারা আমাকে অন্তত ওনার কমেন্টে একটি বাক্যে লিখে পোস্ট শেষ করতে বলেছিলেন। আমি ওনার কথা অনুযায়ী ওনার কমেন্টের উত্তর একটি বাক্যে দেই। বাকি কমেন্টগুলোর উত্তরও ভয়ে ভয়ে দিয়ে কোনোক্রমে শেষ করি।

অপর একজন জনপ্রিয় ক্রিটিক ব্লগার মা.হাসান ভাই অবশ্য আমাদেরকে অসুস্থতার সময়টাকে কিরপিনের হানিমুন কাটানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।আমার তেরো বছরের বৈবাহিক জীবনে এমন পরামর্শ নিঃসন্দেহ অভিনব এবং গ্রহণীয় বটে। তবে উড়ো খৈ গোবিন্দোয় নমো: মত এত ভালো পরামর্শ সেদিন ফেলতে পারিনি।স্বভাবতই আপুনি ও মাহা ভাইকে সম্মান দিতেই কয়েকদিন ব্লগে কমেন্টিং ও পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকি। প্রতিদান দিয়ে উপকার কোনদিন শোধ করা যায়না। আবার উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে কিছু একটা না করলেও নয়। এমতাবস্থায় এই ক্ষুদ্র নৈবেদ্যটি ওনাদের দুজনকে উৎসর্গ করলাম।

২-সপ্তম লাইক প্রদান করে পোস্টটিকে নির্বাচিত করায় অনুপ্রাণিত বোধ করছি। কৃতজ্ঞতা জানাই মাননীয় কাল্পনিক ভালোবাসা ভাইকে।



পর্ব-১০



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:০৫
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×