somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রম সাতক্ষীরা সাতক্ষীরা টু বেলগাছিয়া ( খন্ড-১/পর্ব১২)

২০ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ক্রমশ কোলাহলটা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে।পাশ ফিরে শুয়েও তার তীক্ষ্ণতা এতটুকু কমলো না। কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকি। ভেবেছিলাম খানিকবাদেই হয়তো শব্দটা মিলিয়ে যাবে। কিন্তু না! আমার অনুমান সঠিক ছিল না। মিলিয়ে তো যায়নি উল্টে পরিষ্কার মনে হলো শব্দটা যেন আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।ক্রমশ তার প্রাবল্য আরও স্পষ্ট হতে থাকে। এমন নিশুতি পরিবেশে চারদিকে গাছ গাছালিতে ঘেরা বন্য প্রকৃতির মাঝে সবাই যখন নিশিযাপন করছে; কেউবা আবার নাক ডাকানির মধ্যে দিয়ে গভীর ঘুমের সাক্ষ্য তুলে ধরছে আর ঠিক তখনই দূর থেকে ভেসে আসা উন্মত্ত জনতার কোলাহল আমার মনের সুস্থিতিকে বিপন্ন করে তুলেছিল। আমি ভীষণই অস্বস্তি অনুভব করি। কিছুক্ষণ পর আর এভাবে শুয়ে থাকা সম্ভব হলো না। চোখ ঘষতে ঘষতে উঠে বসি। মনে কুডাক ডাকতে থাকে, তাহলে কি সত্যিই দাঙ্গাবাজরা আমাদের সন্ধান পেয়ে গেছে? আগাম সতর্কতা সংকেত হিসেবে বিকালে হালদার বাবু এক প্রকার জোর করে আমাদেরকে গোলা ছাড়তে বাধ্য করলেন- তাতেও শেষ রক্ষা হবে না? ক্ষণিকেই দুর্ভাবনার গাঢ় মেঘ ভয়াল অন্ধকারের ন্যায় আমার মনোরাজ্যকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। মূহুর্তেই একটা অস্থিরতা দমকা হাওয়ার মতো সবকিছুকে এলোমেলো করে দেয়।আমি এক্ষণে জীবন অংকের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হলাম। আমার চিন্তাশক্তি যেন থমকে গেল। নাটকের যবনিকাপাতের মতোই চোখের সামনে ঘনান্ধকার নেমে এলো।পরের দৃশ্য অবশ্য আমার আর মনে নেই।

যখন জ্ঞান ফিরলো, দেখলাম দাদা বাপজান নুরুল চাচা স্বপন কাকার সঙ্গে আশেপাশের আরও কয়েকজন অপরিচিত ব্যাক্তি আমাকে ঘিরে বসে বা দাঁড়িয়ে আছেন। সবারই চোখেমুখে উৎকণ্ঠার শুকনো দৃষ্টি। সকলের এমন চাহনিতে এবার শুরু হলো আমারি অস্বস্তি। সর্বপ্রথমে যে প্রশ্ন মাথায় চলে আসে, পরিধেয় বস্ত্র ঠিক আছে তো? কোনক্রমে হাত দিয়ে অনুভব করি সেটা যথাযথই আছে। নিজের অন্তরে এমন নিশ্চিত হতেই মনে প্রশ্ন জাগে,তাহলে কি কারণেই বা তারা এমন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে আড়াল করি, আমি ছোট তাই বলে এতটা ছোট্ট নই যে আমার দিকে এমন হ্যাংলার মতো তাকিয়ে থাকতে হবে। যাইহোক এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে কোনো বিকল্প উপায় না পেয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়ে অন্য পাশ ফিরে আবার চোখ বন্ধ করি। উদ্দেশ্য এতগুলো লোকের সামনে থেকে নিজেকে আড়াল করা। উল্লেখ্য সেদিন গ্রামের অপরিচিত ব্যাক্তিরাই আমার প্রতি বেশি আন্তরিকতা দেখিয়েছিলেন। আমার অভিব্যক্তিতে সম্ভবত লাজুক লাজুক ভাব প্রকাশ পাওয়ায় তারা আমাকে অভয় দিয়ে জানালেন,
-তোমাদের আর কোনো ভয় নেই খোকা। আমরা সবাই এখন তোমাদের পাশে।
আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, ওনারা কেন একথা বলছেন কিম্বা আমারিই বা কি হয়েছে। অস্ফুটে বলে ফেলি,
-আপনারা কি তৈরির কথা বলছেন আমি তো ঠিক বুঝতে পারছি না?
এবার একজন আরেকজনকে আমার মাথার কাছ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বললে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি সরে যেতেই দৃষ্টি গেল, বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকারের পুরু চাদর উন্মোচন করে দূরের ঐ শহরের পানে। আগুনের লেলিহান শিখার মতোই পশ্চিম আকাশ তখন রীতিমতো দীপ্তময়। মাঝ আকাশ পর্যন্ত তার উজ্জ্বল্য বিকশিত।এতদিন শহরে থেকেছি কিন্তু এমন আলো ঝলমলে নৈশালোক প্রত্যক্ষ করার সু্যোগ ইতিপূর্বে কখনও হয়নি। আমি সরল মনে প্রফুল্ল চিত্তে বলেই ফেলি সেকথা,
-আহা! কি সুন্দর আলোয় আলোকিত রাতের আকাশ। বাবুদের ওখানে এতদিন থাকলেও রাতের বেলায় অন্ধকারে থাকতে হত। এই স্থানে এত উজ্জ্বল আলো কখনও চোখে পড়ে নি। মনে হয় জায়গাটা বাবুদের এলাকার চেয়েও উন্নত...

আমার কথা শুনে আশপাশের লোকেরা একে অন্যের সাথে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে। পাশেই একজনের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই দেখি ভদ্রলোক আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছেন। বুঝতে পারলাম না ওনার এমন করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকানোর কারণই বা কি। তার মধ্যে অন্য একজন অত্যুৎসাহী জানাল,
- তুমি এক দিক দিয়ে ঠিকই বলেছ খোকা।রাতের আকাশের আলো ঝলমল দেখতে আমরা সবাই কম বেশি পছন্দ করি।একটু আগে তোমার দাদার সঙ্গে এই কথাই হচ্ছিল। আমাদের আশেপাশের মানুষদের ভালোলাগার বহর সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই কোনো ধারণা নেই।প্রত্যেকে নিজের ভালোলাগাকে গুরুত্ব দেয়। ঠিক একই রকম ভাবে ভালোবাসে ওরাও যারা আরেকটা সম্প্রদায়ের রক্ত দিয়ে হোলি খেলতে বদ্ধপরিকর। তোমার দাদার সঙ্গে আলাপ না করলে বিষয়টি আমার কাছেও অজ্ঞাত থেকে যেত। যাইহোক এই অদ্ভুত ভালোলাগার আনন্দে এমনি একটা গোষ্ঠী হত্যাযজ্ঞের নেশায় মেতেছে। কাজেই বুঝতেই পারছো,এই অকাল আলো একজনের স্বপ্ন পূরণ আরেকজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার কৌশল; ভিটেমাটি সহায় সম্পত্তি নিশ্চিহ্ন করার অভিসন্ধি; সবংশে নির্মূল করার চক্রান্ত। এখন তুমিই বলো,
- আকাশে ওটা আসলে কিসের আলো?
আমি ঠোঁট দুটো সামান্য উন্মোচিত করে অস্ফুটে বলে ফেলি,
-বু..জ..তে...ই পারছি আলোটা তাহলে দা..ঙ্গা..র!

অস্বীকার করবো না, উনার প্রথমদিকের কথাগুলো আমার মাথায় উপর দিয়ে চলে গেছিলো। সেদিন বিকেল থেকে বহুবার দাঙ্গা কথাটা শুনে শুনে মনের মধ্যে প্রোথিত হয়ে গেছিল। এক্ষণে ভদ্রলোক দাঙ্গার স্বরূপ তুলে ধরাতে ভাসা ভাসা ধারণা স্বচ্ছ হলো।।তবু আমার মন যেন কিছুতেই তাতে সাড়া দিল না। কেবলই মনে হচ্ছে, না এসব কিছুই নয়; আসলে অন্য কোনো কিছু থেকে এই আলোর উৎপত্তি। আমি একটু কিন্তু কিন্তু করতেই উনি আবার বলতে লাগলেন,
-প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কোথাও বড়ধরনের আগুন লেগেছে। সবাইকে সচেতন করতেই তারা চিৎকার করছে। আমরা বাইরে এসব নিয়েই বলাবলি করছিলাম। কিন্তু তোমার অস্বাভাবিকতার কারণে আমরা এখানে এসে তোমার দাদার কাছ থেকে গোটা ঘটনাটা জানার পর স্পষ্ট হয় যে এটা নিছক দুর্ঘটনা বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা নয়। বরং ইচ্ছে করেই কোথাও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। লোকজন এসময় নাকি হিংসার উন্মত্ততায় মেতে ওঠেছে। নিজেদের উদ্দীপ্ত করতেই তারা একধরনের পৈশাচিক আনন্দে চিৎকার করছে। আগেও বলেছি তুমি গোঙাচ্ছিলে বলে মসজিদ থেকে চিৎকার করাতেই আমরা ছুটে এলাম।আর এসে শুনলাম তুমি নাকি এই হল্লা শুনেই জ্ঞান হারিয়েছ। তবে তোমাদের কোন ভয় নেই খোকা। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও..আজ রাতে আমরা মসজিদ পাহারা দিব। পাহারা দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই বাস্তবে বুঝতে পারলাম আমরা কতটা সংকটের মধ্যে পড়েছি। এক্ষণে দিনের বেলায় হালদার বাবুর সেই ভয়াল রূপটি আরও একবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

সে রাতে আর ঘুম আসেনি। একসঙ্গে এতজন লোকের কথাবার্তায় এমনিতেই একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল।আমরা মসজিদের দাওয়ায় বসে অনেক রাত পর্যন্ত গল্পগুজব করতে থাকি। গভীর রাতে প্রতিবেশীরা যে যার বাড়ি চলে যায়। আমরা ততক্ষণে বসে থাকি। শেষের দিকে একটা সময় আর চোখের পাতা খুলে রাখতে পারছিলাম না। অবশেষে সকাল বেলায় আমরা একটু ঘুমানোর সুযোগ পাই। সেদিন আমি অবশ্য অনেক বেলা করে উঠেছিলাম। উঠেই দেখি মসজিদের সামনে যথেষ্ট মানুষের ভিড়। বুঝতেই পারি বাকিরা অনেক আগেই উঠে গেছে। যাইহোক গ্রামবাসীরা ঠিক করে, এখন থেকে প্রত্যেক রাতে গ্রাম পাহারা দেওয়া হবে। দুদিন পরে আমরা খবর পাই গ্রামের এক লোকের বাজারে দর্জির দোকান ছিল। হামলাকারীরা দোকানটিকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।দোকানে পৌঁছানোর আগে পরিচিত একজন ভিন্ন সম্প্রদায়ের বন্ধু ওনাকে আপাতত বেশ কয়েকদিন ওদিকে যেতে নিষেধ করেছেন।ঘটনাটা শোনার পর আমরা প্রচন্ড বিমর্ষ হয়ে পড়ি।দাদা কেন জানি বারবার বলছিল,
-হালদার বাবুর গোলাটাকে নিশ্চয় ওরা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে।লোকটা বড্ড ভালো ছিল গো;বড্ড ভালো ছিল।
দাদা অনেকটা বিলাপের সুরে আরও বলল,
-শুধু আমাদের মতো ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে কাজে লাগানোর জন্যই উনি নিজের সম্প্রদায়ের রোষানলে পড়েছেন। দাদার উদ্বিগ্নতা আমাদেরকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল। কিন্তু অসহায় ভাবে হাহুতাশ করা ছাড়া আর যে কিছুই করার ছিল না। এসময় প্রতিদিন গ্রামে আপডেট খবর আসছিল। মসজিদটাই হয়ে উঠেছিল সর্বশেষ খবর পরিবেশনের কেন্দ্র। এমন একটা অসহিষ্ণু পরিবেশে গ্রামবাসীরা আমাদের প্রতি ভীষণই আন্তরিকতা দেখায়। কোনো অবস্থাতেই পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে গ্রাম না ছাড়তে আমাদের পরামর্শ দেয়। উল্লেখ্য এমন বিপদের সময় ওনাদের আন্তরিক ব্যবহার আমাদেরকে মুগ্ধ করেছিল।যেখানে একরাত থেকে পরেরদিন ফুফুর বাড়ি ছাড়ার পরিকল্পনা ভাবা হয়েছিল সেখানে পরবর্তী সময়ে ওদের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণে আমরা প্রায় মাসাধিক সময় ওখানে থাকতে বাধ্য হই।

সন্ধ্যার পর পরই আগত মুসল্লিদের মধ্যে থেকে দল বা উপদল তৈরি করে মূল রাস্তার সামনে ও পেছনে পাহারা দেওয়ার প্রথা চালু হয়।গ্রাম পাহারা দেওয়ার তাদের উদ্যমতা ছিল চোখে পড়ার মতো।প্রত্যেকেই লাঠিসোঁটা নিয়ে তৈরি থাকতো। মাঝে মাঝে নিজেদেরকে উদ্দীপ্ত করতে জোরে জোরে চিৎকার করত‌। আমরা গ্রামের মাঝে মসজিদে অবস্থান করতাম। রাতের বেলায় পাহারা আর সকাল বেলা ঘুম- এভাবে চক্রাকারে আমাদের দিন কাটছিলো। উল্লেখ্য এসময় আর আমাদেরকে রান্না করতে হতো না। গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকেই প্রতিদিন আমাদের জন্য খাবার আসতো। কিন্তু এভাবে থাকতে থাকতে আমরা অধৈর্য হয়ে উঠি।দাদা একদিন প্রস্তাব দিল,
- আপনাদের সহযোগিতা পেলে দলুজ বাড়িটির চারপাশে দেওয়াল তুলে পাকাপাকি ভাবে মসজিদ তৈরি করা যেতে পারে। গ্রামবাসীরা এককথায় রাজি হওয়াতে পরের দিন থেকে আমরা মসজিদের দেওয়াল তৈরির কাজে নেমে পড়ি। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা চারদেওয়াল বিশিষ্ট স্থায়ী মসজিদ তৈরি করতে সমর্থ হই।

জোবাইদা ফুফুর প্রতি শুরুতে তৈরি হওয়া অভিমান উত্তরোত্তর রাগে পরিনত হয়। শুরুতে যে কারণে ওনাদের দলুজ ঘরে আশ্রয় নিলেও ওনার নাম মুখে আনিনি। কিন্তু বেশ কয়েকদিন যেতেই মনের ক্লেদ ফ্যাকাশে হতে থাকে। একদিন সন্ধ্যায় দাদাকে জিজ্ঞেস করি ফুফুর কথা।দাদা নিচু গলায় পরে বলবো জানিয়ে আমাকে অন্য প্রসঙ্গে নিয়ে যায়। ঠিক দু'দিন পর আবার জিজ্ঞেস করতে, আশেপাশে কেউ নেই দেখে দাদা জানাই,
-জোবাইদা আপন বোন না হলেও আপন বোন অপেক্ষা কোন অংশে কম ছিল না। কিন্তু এমন একটা কাজ করেছে যার পর থেকে ওর নাম আমরা মুখে আনি না।ও আমাদের কাছে একপ্রকার মৃত।
আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে ফেলি,
-কি করেছে ফুফু?
-তুমি অনেকটা ছোট। এসব নিয়ে তোমার সঙ্গে আলোচনা আমার সাজে না।
রহস্য উন্মোচনের দ্বারে এসে ব্যর্থ হব? না তা হতেই পারে না। আমিও এবার জোর দিয়ে বলি,
- না আমি এখন এত ছোট নই। যথেষ্ট বড় হয়েছি।আজ তোমাকে বলতেই হবে।
আমার জেদের কাছে দাদা হার মানে। এবার চোখেমুখে কিছুটা সতর্কতার শর্ত চাপিয়ে জানালো,
-কেউ যেন কোনদিন না জানতে পারে দাদু। জোবাইদা বিয়ের পর মুবারকের এক দূর সম্পর্কে ভাইয়ের সঙ্গে পালিয়ে গেছে।তার পর থেকে ওর সঙ্গে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই।
এখানে আসা পর্যন্ত জোবাইদা ফুফুর সামনে না আসার কারণটি স্পষ্ট হয়। মনের অজান্তেই একটা একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
কিছুক্ষণ থেমে দাদা আবার বলল,
- জোবাইদা চলে যাওয়ার পর মুবারক আমাদের ওখানে বেশ কয়েকবার গেছিল। কিন্তু আমরা লজ্জায় আর ওদের বাড়িতে আসতাম না।
দাদার কথার সুর ধরে বলে ফেলি,
-এখন বুঝতে পারছি, কেন সেই প্রথম দিন থেকেই মনে মনে খুঁজে গেলেও একদিনের জন্যও ফুফুকে সামনে দেখতে পাইনি।

কয়েকদিন যেতেই হালদার বাবুদের খবরাখবর জানার জন্য দাদা উদগ্রীব হয়ে ওঠে। নুতন পরিবেশে নানান কাজে ব্যস্ত থাকলেও সামান্য ফুসরত পেলেই মুখে হালদার বাবু হালদার বাবু করতে থাকে।আগে কাছে থেকে মানুষটার মহত্ত্ব অতোটা চোখে পড়েনি। কিন্তু এখন দূর থেকে দাদার মুখ থেকে নানান গুণের কথা জানতে পেরে ও নিজের চোখে দেখা কিছু মহত্ত্বের পরিচয় উপলব্ধি করে মানুষটা আমার হৃদয়েও শ্রদ্ধার আসনে আসীন হন। দাদার ব্যাকুলতা দেখে একদিন গিয়ে খোঁজ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি। উপস্থিত সকলেই আমাকে নিষেধ করে; এমন বিশৃঙ্খলা অশান্তির সময় শহরে যাওয়া ঠিক হবে না বলে। অপ্রত্যাশিতভাবে ঠিক তখনই স্বপন কাকা এগিয়ে আসে। আমার ঘাড়ে হাত রেখে জানায়,
- আমিই যাব বাবুদের খোঁজ নিতে.
দাদা প্রথমে আপত্তি করলেও বাকিরা সবাই সম্মতি দিলে দাদাও অবশেষে সম্মতি জানায়। অস্বীকার করবো না এই প্রথম স্বপন কাকার কাছে একপ্রকার হীনমন্যতা উপলব্ধি করি। কাকার ধর্মীয় পরিচয় যে আমাদের চারপাশের পরিবেশে নিরাপদ এই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।



সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:২১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×