পত্রিকাগুলোতে সিটি নির্বাচন পরবর্তী বিশ্লেষণ পড়ে বুঝলাম চারটি সিটিতে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের হারের জন্য আওয়ামীলীগের কর্মী-সমর্থকরাই বেশি দায়ী। সিটি নির্বাচনে আওয়মীলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা মোট কাস্টিং ভোটের ৪০% পেয়েছেন। আওয়ামীলীগ যে কোনো নির্বাচনেই সাধারণত ৩৮-৪০% ভোট পেয়ে থাকে। গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ভোট পেয়েছিল ৪৪ বা ৪৫%। এবার সিটি নির্বাচনে ভোটারদের একটা বিরাট অংশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এই বিরাট অংশ গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগকেই ভোট দিয়েছিল এবং এরা আওয়ামীলীগের সমর্থক বলেই পরিচিত। এরা যদি সিটি নির্বাচনে ভোট প্রদান করত তাহলে নিঃসন্দেহে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়লাভ করত।
এই ভোটারদের ভোট না দেওয়ার কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে- এরা বেশিরভাগই গত সাড়ে চার বছরে এই চার সিটির মেয়রদের কাছে ঘেঁষতে পারে নি অথবা আওয়ামীলীগের বঞ্চিত নেতাকর্মী। আবার একটা অংশ চাকরি বা পড়ালেখার জন্য ঢাকা বা অন্য শহরে অবস্থান করছেন। শুধুমাত্র মেয়র নির্বাচনে একটা ভোট দেওয়ার জন্য এরা এলাকায় যেতে চায় নি। এরা ভেবেছে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা তো জিতবেই। শুধু শুধু আসা যাওয়ার ভাড়াটা লস করার দরকার কী? এরা ভুগেছে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে। আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা এই সমস্ত ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারেন নি। প্রচুর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করায় প্রার্থীরাও ভুগেছেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসসে।
অপরদিকে বিএনপি তাদের সমর্থক বলে পরিচিত প্রায় সকল ভোটারকে ক্লিন সুইপ করে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পেরেছে। সকল প্রকার অন্তঃকোন্দল ভুলে সকল নেতাকর্মী সিটি নির্বাচনে একাট্টা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এসেছে জয়।
কিন্তু সংসদ নির্বাচনে এমনটা হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামীলীগের যেই বিশাল ভোট ব্যাংক সিটি নির্বাচনে ভোটদান থেকে বিরত ছিল তারা সংসদ নির্বাচনে "নৌকা মার্কা"য়ই ভোট দিবে। কারণ, সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভোটাররা অন্তঃকোন্দল, বিভেদ ও বঞ্চনা ভুলে নিজের প্রিয় দলকেই ভোট দেন। তখন সবার মনে একটাই চিন্তা থাকে, "আমার একটা ভোটের জন্য যদি আমার দল ক্ষমতায় না আসে !! আমার একটা ভোটের জন্য যদি আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী না হন !! যাই, ভোটটা দিয়েই আসি।"
বুঝাই যাচ্ছে, সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থকরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছেন। অন্য কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আশা করি, সংসদ নির্বাচনে এমনটা ঘটবে না।